কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Ai) অগ্রগতি: আমাদের জীবনে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
প্রযুক্তির উদ্ভাবন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যে গতিতে বর্তমান প্রযুক্তির উদ্ভাবন চলছে সে গতির সাথে তাল মেলানো আমাদের জন্য কি সম্ভব হচ্ছে? আমরা সবাই কি এই নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি? অথবা, খুব দ্রুত সেসব সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আসতে পারে তার জন্য আমরা সবাই কি প্রস্তুত?
আমি ভাবছি একজন শিক্ষকের কথা, শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) এর API ব্যবহার করে স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে একটা বড় স্ক্রিনে এমন একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা কে ভিজুয়্যালি প্রদর্শন করা সম্ভব যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী সুশৃঙ্খলভাবে তাদের প্রশ্ন রাখতে পারবেন এবং উত্তরসহ প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা পাবেন। এমন ক্লাসে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী থাকলেও হয়তো সমস্যা হবে না। আর এই শিক্ষক কখনো ভুল পড়াবে না।
আমি ভাবছি, একজন স্থাপত্যবিদ সম্পর্কে, শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) এর API ব্যবহার করে আপনি এটাকে কম্পিউটার সিস্টেম এবং প্রিন্টারের সাথে যুক্ত করলেই আপনার পুরো নকশা দাঁড়িয়ে যাবে। আপনি যেভাবে আপনার বাড়ি/প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি বানাতে চাইবেন সেভাবেই একটি নকশা তৈরি হয়ে যাবে। এমনকি ঐ নকশায় চলতে গেলে আপনার ব্যয়ের হিসাব এবং প্রয়োজনীয় রিস্ক ফ্যাক্টর সম্পর্কে পর্যন্ত জানা যাবে।
আমি ভাবছি একজন ডাক্তার সম্পর্কে। শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) এর API ব্যবহার করে এমন একটি রুম তৈরি করা যেতে পারে যেখানে কম্পিউটার সিস্টেমের সাথে একাধিক মেডিক্যাল সংক্রান্ত ডিভাইস যুক্ত করে আপনার শরীরের প্রায় অনেকাংশের ‘Diagnosis’ করা সম্ভব এবং সেভাবে প্রেসক্রিপশনও তৈয়ার করে দিতে পারবে। হাতেগোনা কিছু রোগ থাকবে যার জন্য হয়তো আপনাকে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। মানে অদূর ভবিষ্যতে সেটারও হয়তো প্রয়োজন পড়বে না।
একজন তথাকথিত লেখক হিসেবে আমি নিজেও নিজেকে নিয়ে ভাবছি, কারণ ইতিমধ্যেই আমরা সবাই অনেক বড় বড় লেখক হয়ে গেছি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) এর API ব্যবহার করে হাজারো বই প্রকাশ পাচ্ছে আমাজন স্টোরে। এমনকি এসব বই বিক্রিও হচ্ছে।
আমি ভাবছি একজন চিত্রশিল্পী সম্পর্কে, শুধুমাত্র এআই (Midjourney Ai) এর API ব্যবহার করে বহু ওয়েবসাইট এখন পরিচালিত হচ্ছে যারা খুব দুর্দান্ত ছবি এঁকে দিচ্ছে।
আমি ভাবছি একজন নাটক/সিনেমা/সিরিজের পরিচালক সম্পর্কে, শুধুমাত্র এআই টেকনোলজি (যেমন: SORA) ব্যবহার করে খুব দ্রুত ঘরে বসে নাটক/সিনেমা/সিরিজ তৈরি করা সম্ভব হবে। প্রায় মানুষের মত অভিনেতা/অভিনেত্রীর মত এসব দৃশ্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাবো। তাছাড়াও বর্তমানের অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়তো আরো কিছু নাম কামাবে কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তবুও কি তাদের প্রয়োজন পড়বে?
আমি ভাবছি রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে, বর্তমানের কিছু এআই (বিশেষ করে Replika Ai) বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড হিসেবে মানুষের জীবনে সাংঘাতিক প্রভাব ফেলেছে। অদূর ভবিষ্যতে ‘সিফরা’ এর মত অটোমেশন রোবট উপহার পাওয়া যাবে। সে পারফেক্ট, সব জানে, অনেক সুন্দর/সুন্দরী। তখনও কি আমাদের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে?
আমি ভাবছি, ব্লগিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে, শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) এর API দিয়ে অটোমেশন চলবে। মানে কি-ওয়ার্ড বা শব্দের বা আইডিয়ার দ্বারা তৈরি হবে পোস্ট এবং কন্টেন্ট। এর সাথে যদি CCTV ক্যামেরা সব জায়গায় সেট করা যায় তাহলে সাংবাদিকের আর প্রয়োজন নাও হতে পারে।
অনুবাদ শিল্পের কি হবে? শুধুমাত্র এআই (ChatGPT Ai) বা Bing এর API দিয়ে যে কোন ভাষায় আপনার লেখা অনুবাদ করা বর্তমানেই চলছে। কিন্তু এর ‘Accuracy Rate’ যদি আরো ভয়ানক হয়? মানে ৯৯.৯৮% শতাংশ! তাহলে?
কোন পরিস্থিতি বুঝার জন্য সাংবাদিকদের প্রয়োজন পড়বে না, না সেটা উপস্থাপন করার জন্য কোন উপস্থাপক/উপস্থাপিকা প্রয়োজন পড়বে… এআই নিজে ফেস রিকগনিশন করে পরিস্থিতি দেখে নিঁখুত তথ্য দিতে সক্ষম। এবং একই সাথে এর সাথে কামেরা, স্যাটেলাইট ও ব্রডকাস্টিং ডিভাইস দিয়ে তা সরাসরি টেলিভিশনে প্রকাশ করা সম্ভব।
‘Fact Checking (সত্যতা যাচাই)’ করে দিচ্ছে এআই! যদিও আজ এই ‘Accuracy Rate’ একটু কম কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটা মানুষের মত করে জটিল সব ব্যাখ্যাও দিতে পারবে।
কন্ডিশনিং এআই অটোমেশন রুমে প্রয়োজন পড়বে না রান্না করবার, চা বা কফি বানাবার, না এসির রিমোট নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। সিনেমায় প্রজন্ম মিলেনিয়াম’রা যা দেখেছিলেন তা হাস্যকর ছিলো কিন্তু এবার সত্যিই এটা ঘটছে এবং আরো বিস্তার ঘটবে।
কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এআই অটোমেশন দিয়ে কৃষি কাজ করা সম্ভব এবং ফলনও অনেক বেশি পাওয়া যাবে। আমাদের কৃষকরা তখন কই যাবে? আর যে কোন প্রজেক্টে প্রোগামিং সম্পন্ন হবার পর এআই খোদ নিজেই নিজেকে তৈরি করতে সক্ষম হবে ফলে প্রোগামার এবং ডেভেলপারের অস্তিত্বও থাকবে কি?
কোন দোকানে ব্যক্তির ইনভেস্ট করা ছাড়া আর বিশেষ কোন কাজ থাকবে না। দোকানদার খোদ নিজেই এআই অটোমেশনে চলবে। অর্ডার দিন, আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যান। গার্মেন্টস শিল্পে একটি এআই অটোমেশন দিয়ে হয়তো এক লাখ কর্মীকে ছাঁটাই করা সম্ভব হবে। কই যাবে ওরা তখন?
মানি এর মধ্যেও কিছু কাজ মানুষকে তো করতেই হবে। কিছু জিনিস তবুও টিকে থাকবে। যেমন ফেসবুক আসার পর চিঠির বক্স। আমাদের গ্রামে ঐ বক্স আজকাল আর দেখি না। শুনেছি, মানুষ খুব একটা ব্যবহার করে না।
কিন্তু যেটা ‘Inevitable’, যা আমরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি, এমন পৃথিবীর জন্য আমরা কি প্রস্তুত? যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়াটা ভালো।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.