সবচাইতে উত্তম খেজুর হলো আজওয়া খেজুর, তারপর লীনা খেজুর, আর একটি আছে নিম্নমানের খেজুর। আজওয়া খেজুর সম্পর্কে তাফসীরে ও ইতিহাসে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হলো সালমান ফারসি (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী। সালমান ফারসিকে মুক্ত করার জন্য রাসুল (সাঃ) এক ইহুদির বাড়িতে ৩০০ খেজুর গাছ রোপণ করেছিলেন।
সালমান ফারসির মুক্তির কাহিনী
সালমান ফারসি (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ১০ বার গোলাম হিসেবে বিক্রি হন। সর্বশেষ যে ইহুদির কাছে তিনি বিক্রি হয়েছিলেন, সেই মনিবকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে কিসের বিনিময়ে মুক্ত করবেন?” তখন মনিব বললেন, “আমার বাগানে ৩০০ খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে। সেই ৩০০ গাছে খেজুর ধরলে তুমি মুক্ত হতে পারবে।” এটা ছিল একটি অসম্ভব বিষয়, কারণ একজন গোলাম ৩০০ খেজুর গাছ কোথায় পাবে?
রাসূল (সাঃ) এর সহায়তা
সাহাবী সালমান ফারসি (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর দরবারে গিয়ে বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), আমার মুনিব আমাকে এমন একটা শর্ত দিয়েছে যে কোনোদিন মুক্ত হতে পারব না।” রাসূল (সাঃ) বললেন, “আমাকে বলো তোমার মুনিব কি শর্ত দিয়েছে?” সালমান ফারসি (রাঃ) বললেন, “৩০০ খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে, সেই গাছগুলোতে খেজুর ধরলে মুক্ত করে দিবে।”
আনসারদের সহযোগিতা
তখন রাসূল (সাঃ) মদিনার আনসারদেরকে ডেকে বললেন, “তোমরা গুনে গুনে ৩০০ খেজুর গাছের চারা আমার কাছে নিয়ে আসবে।” মদিনার প্রতিটা আনসারের বাড়িতে খেজুর গাছের চারা ছিল। আনসাররা নিবেদিত প্রাণ। তারা সবাই ভাগ করে ৩০০ খেজুর গাছের চারা রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে আসলেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, “এগুলো সব ইহুদির বাড়িতে নিয়ে চলো।”
রাসূল (সাঃ) এর নিজ হাতে রোপণ
৩০০ খেজুরের গাছ ইহুদির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল। রাসুল (সাঃ) সাহাবীদেরকে বললেন, “খবরদার, কেউ একটা গাছ রোপণ করবে না। আমি নিজের হাতে ৩০০ গাছ রোপণ করব।” এরপর রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে গাছগুলো বপন করলেন।
খেজুর ধরার ঘটনা
এক বছর পর দেখা গেল ২৯৯টা গাছে খেজুর ধরেছে, শুধু একটা গাছে খেজুর ধরেনি। এই গাছটা ছোট হয়ে আছে। তখন রাসুল (সাঃ) সাহাবীদেরকে ডেকে বললেন, “এই একটা গাছে খেজুর ধরেনি কেন? এটা ছোট হয়ে আছে কেন?” সাহাবীরা উত্তর দিলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করেন, এই গাছটা আমি লাগিয়েছিলাম।” রাসুল (সাঃ) সেই গাছটা তুলে, আর একটা চারা রোপণ করলেন। এক বছর পর খেজুর ধরল এবং সালমান ফারসি (রাঃ) মুক্ত হলেন।
আজওয়া খেজুরের উৎপত্তি
পরবর্তীতে ইহুদীরা নির্বাসিত হয়ে যাওয়ার পর এই খেজুর বাগানগুলো মুসলমানদের দখলে চলে আসে। আরবের খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হলো কলা গাছের মতো। একটার গোড়া থেকে আরেকটা বের হয়। ঝাড় হয়, বড়টা কেটে ফেললে ছোটটা বড় হয়। শত শত বছরের খেজুর গাছের ঝাড় নষ্ট হয় না।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই কারণে তাফসিরকারকরা অনুমান করেন ও ঐতিহাসিকগণ বলেন, আল্লাহ রাসুল (সাঃ) ইহুদির বাড়িতে যে খেজুর গাছ রোপণ করেছিলেন, ঐ বাগানটাই হলো আজওয়া খেজুর।
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.