সহমর্মিতার সংজ্ঞা
সহমর্মিতা হলো একজন ব্যক্তির সেই গুণ যা থাকলে তিনি অন্য কোন ব্যক্তির দুঃখ, কষ্ট বা ব্যথিত হওয়ার খবর শুনলে নিজেও সমভাবে দুঃখিত বা ব্যথিত হন। অপরের ব্যথায় একইভাবে ব্যথিত হওয়ার নামই সহমর্মিতা।
পরিচিতি
আসাদ সাহেব ও হাসান সাহেব পরস্পর প্রতিবেশী এবং ভালো বন্ধু। তাদের উভয়ের পরিবারের মধ্যে রয়েছে একটি পারিবারিক বন্ধন। আসাদ সাহেবের পরিবারের লোকজনের হাসান সাহেবের পরিবারের লোকজনের সাথে অনেক বেশি সখ্যতা রয়েছে।
পারিবারিক সম্পর্ক
উভয় পরিবার একে অপরের বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সময় একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করে। নিজেদের সুখে-দুখে, আনন্দে, আমোদে একসাথে মিলেমিশে উপভোগ করে। আসাদ সাহেবের সন্তানদের সাথে হাসান সাহেবের সন্তানদেরও অনেক সুন্দর বন্ডিং রয়েছে।
ভ্রমণের পরিকল্পনা
আসাদ সাহেব এবারের শীতে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। তিনি হাসান সাহেবকে বললেন, “চলুন আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি।” কিন্তু হাসান সাহেবের জরুরী কাজ থাকায় তিনি যেতে পারলেন না। তিনি বললেন, “আপনারাই যান, সামনেবার ইনশাল্লাহ একসাথে যাব।” আসাদ সাহেব স্বপরিবারে কক্সবাজার গেলেন এবং অনেক আনন্দ ফুর্তি করলেন।
দুর্ঘটনা
কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে তাদের বাসে একটি ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্ট হলো। এতে আসাদ সাহেবের পরিবারের সবাই কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও আসাদ সাহেবের ছোট ছেলের বাম পা ভেঙে গেল। লোকেরা তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করলো এবং আসাদ সাহেব তার প্রতিবেশী হাসান সাহেবকে ফোন করে দুর্ঘটনার খবরটি জানালেন।
হাসান সাহেবের সহমর্মিতা
হাসান সাহেব তার জরুরি মিটিং বাতিল করে একটি প্রাইভেট কার রিজার্ভ করে হাসপাতালে রওনা দিলেন। তিনি অন্তরের মধ্যে এতটাই ব্যথা অনুভব করছিলেন যেন তার নিজের ছেলে আহত হয়েছে। হাসান সাহেব দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে আসাদ সাহেবের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিলেন। সন্তানের মতো করে আসাদ সাহেবের সন্তানের সেবা করলেন।
সহমর্মিতা কিভাবে প্রকাশ করতে হয়?
সহমর্মিতা প্রাণিজগতের এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য। সহমর্মিতা আছে বলেই পৃথিবী এখনো শান্তিময়, পৃথিবী এখনো এত সুন্দর। সহমর্মিতা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারলে একজন মানুষ প্রকৃত শান্তি সুখের সাগরে ভাসতে পারে। সহমর্মিতা প্রকাশের সর্ব উৎকৃষ্ট পন্থা হলো অন্যের বিপদে, অন্যের ব্যথায় নিজে ব্যথিত হওয়ার পাশাপাশি তার পাশে দাঁড়ানো এবং তার উপকারে আসার চেষ্টা করা।
সহমর্মিতা একটি মহান গুণ
সহমর্মিতা একটি মহান গুণ যা মানুষকে মহান করে। এই গুণটি শুধু মানুষেরই নয়, যে কোন প্রাণীরও থাকতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর মধ্যে সহমর্মিতা থাকে তবে নিঃসন্দেহে তাকে মহান জীব হিসেবে পরিগণিত করা যায়।
সহমর্মিতা একটি পবিত্র গুণ
সহমর্মিতা একটি পবিত্র গুণও বটে। বিভিন্ন ধর্ম সহমর্মিতাকে পবিত্রতার একটি গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পবিত্র ধর্ম ইসলাম সহ অন্যান্য ধর্মে সহমর্মিতা অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি গুণ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। ইসলামে সহমর্মিতাকে এক মহান সওয়াবের কাজ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মানব সভ্যতার শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহমর্মিতার গুরুত্ব
সহমর্মিতা মহান কারণ এটি মানুষকে উদার করে, মহান হিসেবে অপর মানুষের কাছে পরিগণিত করে। সহমর্মিতার গুণটি আছে বলেই পৃথিবীতে এখনো শান্তি বিরাজমান। সহমর্মিতার গুণটি আছে বলেই পৃথিবী এখনো এত সুন্দর, সভ্যতা এখনো অবিচল। সহমর্মিতা না থাকলে পৃথিবী অস্থিতিশীল হয়ে যেত এবং মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়তো।
নিশ্চিতভাবে! আমি আপনার আর্টিকেলটি পুনরায় লিখে দিচ্ছি নিচের নির্দেশনা অনুযায়ী:
যেকোনো সম্পর্কে সহমর্মিতার গুরুত্ব
সহমর্মিতার অপরিসীম গুরুত্ব
যে কোন সম্পর্কেই সহমর্মিতার গুরুত্ব অত্যন্ত অপরিসীম, যদি সেই সম্পর্কটি ইতিবাচক হয়। যদি সম্পর্কটি নেতিবাচক হয় অর্থাৎ শত্রুতামূলক হয়, সেই ক্ষেত্রে সহমর্মিতা নাও থাকতে পারে। তবে ইতিবাচক যেকোনো সম্পর্কের জন্যই সহমর্মিতা এক অপরিহার্য শর্ত।
সম্পর্কের মধুরতা ও শক্তিশালী বন্ধন
যদি আপনি একজন মানুষকে তার মতো করে না ভাবতে পারেন, নিজেকে তার জায়গায় কল্পনা করে তার ব্যথাগুলো অনুভব করতে না পারেন, যদি আপনি তাকে বুঝতে না পারেন, তার মতো করে চিন্তা করতে না পারেন, তার পাশে থাকতে না পারেন, তার ব্যথার সময় তার মত করে ব্যথিত হতে না পারেন, তবে আপনি তার সাথে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করতে পারবেন না। আর যদি একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করতে না পারেন, তবে সম্পর্কটি মধুর হবে না। তাই যে কোন মধুর সম্পর্ক এবং শক্তিশালী বন্ধনের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো সহমর্মিতা।
সহমর্মিতার প্রভাব
সহমর্মিতা যেমনভাবে একজন মানুষকে মহান করে গড়ে তোলে, ঠিক তেমনি সম্পর্কের বন্ধনকেও শক্তিশালী করে এবং একটি সম্পর্ককে মধুর করে। তাই যে কোন সম্পর্কে সহমর্মিতার গুরুত্ব অপরিসীম।
সহমর্মিতার অভাব কেন হুমকি স্বরূপ
সহমর্মিতা একটি মহান গুণ এবং একটি পবিত্র গুণ। যে সকল গুণাবলী এই মানব সভ্যতার শান্তি এবং সমৃদ্ধি রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সহমর্মিতা। সহমর্মিতা মানুষকে মহান করে, পবিত্র আত্মার অধিকারী করে, মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। সহমর্মিতা মানুষে মানুষে সম্পর্ককে গভীর করে, বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। সহমর্মিতার মতো গুণ আছে বলেই পৃথিবী এখনো বসবাসযোগ্য।
সহমর্মিতার অভাবের প্রভাব
সহমর্মিতার মতো এই মহান গুণটি যদি মানুষের মধ্যে থেকে উঠে যায়, যদি সভ্যতায় সহমর্মিতার অভাব দেখা দেয় তাহলে অপরিহার্যভাবে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। সহমর্মিতা না থাকলে একজন মানুষ অপর মানুষকে খুন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। খুন, রাহাজানি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি সহ বিভিন্ন নৈরাজ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যারা সংঘটিত করে তাদের হৃদয়ে সহমর্মিতার গুণটি নেই বলেই তারা এগুলো করতে সক্ষম হয়।
মানব সভ্যতার হুমকি
তাই যদি সহমর্মিতার অভাব দেখা দেয় একজন মানুষের মধ্যে তবে সেই মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে, সে এমন কর্মকাণ্ড করে বসে যে তাকে তখন মানুষ বলে মনে হয় না। আর যদি পুরো মানব সভ্যতায় সহমর্মিতার অভাব দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে এই মানব সভ্যতাটি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যাবে, একটি বসবাসের অনুপযুক্ত, হিংস্র, মানবতাহীন, অমানবিক সভ্যতায় পরিণত হবে।
সহমর্মিতার অভাবের ফলাফল
সহমর্মিতা না থাকলে মানবতা থাকবে না আর মানবতা না থাকলে এই সভ্যতায় শান্তি থাকবে না। অশান্ত সমাজে বসবাস করা যায় না, বসবাসের অনুপযুক্ত, অশান্ত, অস্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থা আমাদের কাম্য নয়। তাই এটা বলা খুবই যুক্তিযুক্ত যে, সহমর্মিতার অভাব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ।
শেষ কথা
আমাদের আলোচনার সর্বোপরি বিষয়বস্তু এতোটুকুই যে সহমর্মিতা এক মহান এবং পবিত্র গুণ। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষের উচিত নিজের হৃদয়ে সহমর্মিতার গুণটি লালন করা। সহমর্মিতার গুণটি সঠিকভাবে হৃদয়ে লালন করার মাধ্যমে এই মানব সভ্যতাকে শান্তিপূর্ণভাবে রক্ষা করা সম্ভব।
সহমর্মিতার অভাব আমাদের মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ, তাই এই বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চর্চা বজায় রাখতে হবে।
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.