সফলতার সাথে সুখ: জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা
কীভাবে সফলতার পাশাপাশি জীবনে হাসিখুশি ও আনন্দ ধরে রাখবেন
সফলতার পরও হাসতে না পারার কারণ
অনেকেই মনে করেন যে, শুধুমাত্র সফলতাই জীবনের হাসিখুশি, সুখ এবং আনন্দ এনে দিতে পারে। সফলতা অবশ্যই সুখের কারণ হতে পারে, কিন্তু সেই সফলতা যেন যান্ত্রিক না হয়ে যায়। ২০০০ বছর আগে বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, “যদি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাসিখুশিভাবে বেঁচে থাকাই না যায় তবে সেই জীবনের সফলতা কোথায়?”
তাই সফলতার সাথে সাথে জীবনে হাসিখুশি থাকাটাও খুবই জরুরি। কারণ আপনি যদি সুখ বা আনন্দ না পান তবে তার প্রভাব আপনার সফলতার পথেও বাধার সৃষ্টি করবে। তাই সফলতার অর্জনের পাশাপাশি জীবনে হাসিখুশি থাকার উপায় সম্পর্কে জানুন।
নিজেকে ভালোবাসুন
মানুষের মাঝে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, আর তা হলো নিজের প্রতি অনীহা, নিজেকে না বোঝা। এর কারণ হল, নিজেকে ভালো না বাসা। কেউ যদি নিজেকে ভালোই না বাসে তবে সে অন্যকে ভালোবাসবে কীভাবে? যে নিজেকেই চিনতে অক্ষম সে অন্যকে চিনবে কিভাবে? যে নিজেই সুখী নয় সে অন্যকে সুখী করবে কিভাবে? এতগুলো “কীভাবে?” প্রশ্নের একটা-ই উত্তর! তা হল নিজেকে ভালোবাসা।
নিজেকে ভালোবাসলে জানা যায় এবং বোঝা যায় আমার আমি টা আসলে কি চায়! আর মানুষ যখন নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে সক্ষম হয়, তখন সে অন্যকেও সন্তুষ্ট রাখার বিভিন্ন উপায় বা পথ খুঁজে পায়। আর এতে সফলতার পাশাপাশি নিজেকে এবং নিজের চারপাশকে ভালো রাখা সম্ভব।
নিজের আবেগকে বাঁচিয়ে রাখুন
জীবনে প্রতিটা মানুষের কিছু শখ থাকে, কোনো কিছুর প্রতি গভীর আবেগ থাকে। যা মানুষ করে থাকে তার খুব ভালোলাগা এবং ভালোবাসা থেকে। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে এই কাজগুলাই আমাদের চরম আনন্দে বাঁচিয়ে রাখে। অনেক সময় মানুষ তার এই শখটাকেই পরবর্তীতে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। এতে দুই দিক থেকে লাভ হয়। প্রথমত, সেই কাজে বিরক্তি আসে না তাই সেখানে আনন্দ পাওয়া যায়।
আর দ্বিতীয়ত, যে কাজে বিরক্তি আসে না সেখানে সফলতার পথেও তেমন বাঁধা থাকে না। সুতরাং সফলতা অর্জন এবং সুখ লাভ দুটোই সম্ভব। তাই অবশ্যই নিজের গভীর আবেগগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই জরুরি।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে ঘুমানোটা খুবই জরুরী। আর এই ঘুমটা যেন ৮ ঘন্টা হয়। কিন্তু বর্তমানে নানান টেকনোলজির কারণে মানুষ রাতের পর রাত জাগে এবং সকালে ঘুমায়। ঘন ঘন রাত জাগার ফলে একদিকে যেমন সকালের ক্লাস মিস হয় তেমনি এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলও খুবই খারাপ হয়।
ইনসোমনিয়া, মানসিক অশান্তি, হতাশা, মাথা ব্যাথা, নিম্ন রক্তচাপ জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে এই অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে। এজন্য অবশ্যই রাতে ঠিক সময়ে শুয়ে পড়া ও সকালে ঠিক সময়ে উঠার অভ্যাস আয়ত্ব করা উচিত। এতে শরীর মন দুটায় ভালো থাকে।
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন
মানসিক সুস্থতা ও বিকাশের জন্য যে খাদ্য উপাদান দরকার তা যদি মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মেজাজ খিটখিটে হবে। এতে পড়াশোনা থেকে বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন ঘটে। তাই প্রতিদিনের জীবনে খাদ্যাভাস একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। অতিমাত্রায় জাঙ্ক ফুড অথবা ফাস্ট ফুড খেলে দীর্ঘমেয়াদী ফলস্বরুপ অতিমাত্রায় সুগার ও কোলেস্টেরল জমে শরীর মোটা হওয়া, স্থূলত ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিবে।
সেজন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাক সবজি, ফল মূল, দুধ এসব কিছু নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ খাদ্যাভাসের দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন
পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হল রাগ। তাই রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। অনেক সময় এই রাগের কারণেই সুন্দর বিষয়গুলোও নষ্ট হয়ে যায়। এটা যেমন একদিকে মানুষের ইমেজ নষ্ট করে তেমনি পরবর্তীতে রাগ কমে গেলে তা নিজেকে অস্বস্তিতে ফেলে। এবং ভালো সময়টাও খারাপ হয়ে যায়।
ফলে পরবর্তী কাজগুলোতে প্রভাব ফেলে। এতে সফলতা এবং হাসিখুশি বা সুখ আনন্দ কোনো কিছুই লাভ করা যায় না।
অতিরিক্ত চাপ বা স্ট্রেস না নেয়া
জীবনে চলার পথে নানা সমস্যা হতেই পারে। তার জন্য অতিরিক্ত চাপ বা স্ট্রেস নেয়া যাবে না। এটা মস্তিষ্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর থেকে মানুষ ডিপ্রেশনে বা আরও অন্যান্য সমস্যায় পড়ে। হতাশা, মন খারাপ যে কারণেই হোক না কেন, মনে রাখতে হবে সব কিছুরই একটা সমাধান আছেই।
তাই সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভাবতে হবে ভালো আছি। তবেই জীবনে হাসিখুশি, সুখ, আনন্দ লাভ করা সম্ভব।
পরিবারকে প্রাধান্য দিন
জীবনে হাসিখুশি বা ভালো থাকার একটি বড় মাধ্যম হল ‘পরিবার’। আমরা বেশিরভাগ সময়ই এই পরিবারকে কম সময় দিয়ে থাকি। কারণ আমরা সবসময়ই ভাবি পরিবার তো আমারই। দিনশেষে তারা সঙ্গেই থাকবে তাই তাদেরকে পরে সময় দিলেও চলবে।
কিন্তু এতে করে হয় কি পরিবারের সাথে একরাশ দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে আপনি যতই সময় দেন না কেন তা আর আগের মতো হবে না। ততদিনে তাদের মাঝেও একটা পরিবর্তন চলে আসবে। আর এই সাধারণ বিষয়টায় আমরা বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে চাই না।
ইন্টারনেটের এই যুগে মানুষের কাছে সেই ভার্চুয়াল জগতটায় তার কাছে অতি কাছের হয়ে গেছে। বেড়েছে নতুন নতুন যোগাযোগ। এতে খুব কাছের মানুষটিও হারিয়ে যায় সেই নতুনের ভীড়ে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই বলতে পারবে না তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে শেষ কবে খুব জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে, গল্প করেছে এবং একই টেবিলে খাবার খেয়েছে।
কিছু কিছু মানুষ বলতে পারলেও অনেকেই তা বলতে পারবেনা। আমাদের সমস্যাটা এখানেই। পরিবারকে সময় দিলে মনের অনেক ক্লান্তিও দূর হয় যা মানুষকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই পরিবারকে সময় ও প্রাধান্য দেয়া উচিত।
তথ্যবহুল টেবিল
বিষয় | প্রভাব | করণীয় |
---|---|---|
নিজেকে ভালোবাসা | আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি | নিজেকে প্রাধান্য দিন |
আবেগকে বাঁচিয়ে রাখা | আনন্দ ও সফলতা | শখকে গুরুত্ব দিন |
পর্যাপ্ত ঘুম | শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা | নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস |
সঠিক খাদ্যাভাস | মানসিক বিকাশ | স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ |
রাগ নিয়ন্ত্রণ | সম্পর্ক উন্নয়ন | রাগ কমানোর কৌশল |
স্ট্রেস কমানো | মানসিক শান্তি | চাপমুক্ত থাকার উপায় |
পরিবারকে সময় দেয়া | মানসিক স্বস্তি | পরিবারের সাথে সময় কাটানো |
উপসংহার
জীবনের সফলতা এবং সুখ একে অপরের পরিপূরক। শুধুমাত্র সফলতা অর্জন করলেই জীবনে হাসিখুশি থাকা যায় না। সফলতার পাশাপাশি জীবনে সুখী ও আনন্দিত থাকা খুবই জরুরি। এজন্য নিজেকে ভালোবাসা, নিজের আবেগকে বাঁচিয়ে রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভাস, রাগ নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস কমানো এবং পরিবারকে প্রাধান্য দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো মেনে চললে জীবনে সফলতার পাশাপাশি সুখ ও আনন্দও পাওয়া সম্ভব।
সবসময় একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সময় খুব সীমিত তাই তাকে দুশ্চিন্তায়, হতাশায় না রেখে অর্থাৎ অহেতুক কোন কাজে ব্যয় না করে মূল্যবান কাজগুলোতে ব্যয় করা উচিত। এতে সফলতার সাথে সাথে নিজে এবং নিজের চারপাশের সবাইকে ভালো রাখা সম্ভব।
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.