সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্ব

জাপানের সহায়তা, বিদ্যুৎ সংকট এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে বাংলাদেশের যাত্রা

বিজ্ঞাপন

প্রথম প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২৩

এখানকার সময়ের মেট্রোরেল বা শাহজালাল বিমানবন্দরের যে এক্সটেনশনটা হচ্ছে যেটা খুবই সুন্দর, যেসব ইকোনমিকাল জোন বানানো হচ্ছে, যে প্রোজেক্টগুলো বাংলাদেশের জন্য গেম চেঞ্জার এরকম প্রজেক্ট গুলোতে জাপান বিনিয়োগ করতেছে নিয়মিত।

আর এদিকে জাপানের কারিগরি সহায়তায় আমরা কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গুলোর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারতেছি খুবই সহজে। বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের সামনে যে মহাপরিকল্পনা আসছে সেটাতেও জাপানের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

কিন্তু এখানে জাপানের ভূমিকা নিয়ে কিছু এক্সপার্টরা মানে বিশেষজ্ঞরা কিছু সমালোচনা দাঁড় করিয়েছেন। বাংলাদেশের এতদিনের বন্ধু যখন বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করতে গেছে তখন কেন তাদের বিরুদ্ধে সবাই আঙ্গুল তুলতেছেন?

দেখেন বিদ্যুৎ আর জ্বালানি খাতে অবস্থা যে আমাদের দেশে ভালো না এটা আপনারা অনেকেই জানেন। আপনি বিদ্যুৎ বিল অনেক দিতেছেন, সরকারও এদিকে প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে কিন্তু তারপরও এর বিহিত হচ্ছে না। অন্যান্য রেন্টাল খাতেও যে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে তা আমরা এ ব্যাপারে সবাই অবগত আছি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যুতের যে ঘাটতি এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বিশ্ববাজারে এই বিদ্যুতের জ্বালানি অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানির অনেক বেশি দাম এবং এটা আমাদের আমদানি করতে হয় আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা মিটাতে।

বিশেষ করে কোভিডের পরবর্তী সময়ে আর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পর এটার হার আরো অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে আমাদের রিজার্ভের ডলার খরচ করে জ্বালানি আমদানি করা লাগতেছে।

এ কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভটা আছে ওইটার উপরে প্রচন্ড পরিমাণে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে গত মে মাসের গ্রাফ দেখলে দেখা যায় গত ৬ বছরের মধ্যে আমাদের রিজার্ভের ডলার ৩২.১৫ বিলিয়নে নেমে এসেছে (প্রকৃত রিজার্ভ এখন সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলার, সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক)। যেখানে আমরা সাধারণত ৪০ বিলিয়ন থাকতে দেখেছি।

তাহলে এইটার অবস্থা কতটা খারাপ একবার ভেবে  দেখেন। এখন আবার আমাদের জ্বালানির দাম কিছুটা কমতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আমাদের রিজার্ভের ডলারের পরিমাণও কমে এসেছে। এখন আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুতের জন্য আমাদের যে জ্বালানি প্রয়োজন সেটা আমরা আমদানি করতে পারছি না কারণ আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ নেই এবং আমরা সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর দেশ এখনো পর্যন্ত।

এই কারণে এই অসহনীয় গরমে আমাদের লোডশেডিং সহ্য করা লাগতেছে যেটার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা আমাদের অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন হলো, এখন আমাদের কি করা উচিত?

এখন আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতটাকে নিয়ে একটু নতুনভাবে চিন্তা করা উচিত। আর যাতে আমরা এই টাইপের জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আর নির্ভর না থাকি এই ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও আমাদের বিগত যে এনার্জি পলিসি গুলো আছে সেগুলো রিওরিয়েন্টেড করে নতুন করে শুরু করতে হবে যাতে আমরা বিদ্যুৎ সংকট থেকে আমাদেরকে বাঁচাতে পারি। এর জন্য আমাদের জাপানের সহযোগিতা নিয়ে যে এনার্জি মাস্টার প্ল্যানটা হতে যাচ্ছে সেটার দিকে অগ্রসর হওয়ার দিকটা নিশ্চিত করা লাগবে।

কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে, জাপান এইখানে বেশি ফোকাস করতেছে অনির্ভরযোগ্য ও অনেক দামি ফসিল ফুয়েল উৎপাদনের দিকে। এইটা করার পর বাংলাদেশ আবারো যদি এনার্জি মাস্টার প্ল্যান এ জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে ফোকাস করে তাহলে এটা আমাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। রিসেন্টলি আমরা চোখের সামনে দেখেছি চার্জার ফ্যানের দাম কিভাবে বেড়ে চলেছে।

আমরা যে মাস্টার প্ল্যানের কথা বলতেছি এই মাস্টার প্ল্যানের একটা পুরো নাম আছে, যেটাকে বলা হয় ‘INTEGRETED ENERGY AND POER MASTER PLAN (IEPMP)’। এক্সপার্টরা বলে এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করলে আমাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে গোল গুলো আছে সেইটা কোনদিনও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে জি-সেভেন দেশগুলো এই নবায়নযোগ্য শক্তির উপর অনেক ফোকাস করছে। জি-সেভেন দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা। এ দিকে জাপান এই জি-সেভেন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং জাপান এই নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করে 0যাচ্ছে। জাপানের উচিত এনার্জি মাস্টার প্লানে আমাদের দেশের এই খাতে বিনিয়োগ করা।

এখন বলি কেন আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি প্রয়োজন, আমরা সবাই জানি একটা সময় জীবাশ্ম জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে এবং এর দাম দিনদিন বৃদ্ধির দিকেই অগ্রসর হবে তাই যত দ্রুত এই জ্বালানির পরে আমাদের নির্ভরতা কমবে তত দ্রুত আমরা অর্থনৈতিক দিক এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো জটিলতা থেকে মুক্তি পাবো।

বিজ্ঞাপন

আমরা যদি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে আত্মনির্ভর হতে পারি তাহলে এটা হবে আমাদের সার্বিক দিকের একটা প্লাস পয়েন্ট। বর্তমান অবস্থায় আমাদের দেশের সর্বনিম্ন ১০% নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করার কথা কিন্তু সেখানে আমরা উৎপাদন করতেছি মাত্র ৩%। যেখানে আমরা যদি সোলার প্যানেলে শিফট করি তাহলে আমরা ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সেইভ করতে পারি। এখানে জাপান আমাদের সহায়তা করতে পারে তাদের প্রযুক্তিগত জায়গা থেকে। জাপান অলরেডি তাদের দেশে সোলার এনার্জিতে অনেক ইনভেস্ট করেছে।

মেট্রোরেলে জাপান শুধু মেট্রোরেল দিচ্ছে না সাথে দিচ্ছে টেক সাপোর্ট সেখানে যদি সোলারের ক্ষেত্রে শুধু টেক সাপোর্ট টুকু দেয় তাহলেই আমাদের জন্য বিদ্যুতের দিকে এক অভাবনীয় দ্বার উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা যায়।

আমাদের দেশ একা এই নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে কখনই পারবে না। লাগবে জি-সেভেন দেশগুলোর মত এবং টেক এক্সপার্ট দেশের সহায়তা। আমাদের রিসেন্ট নেওয়া প্ল্যান ‘Mujib Climate Prosperity Plan’  সেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ৪০% নবায়নযোগ্য শক্তির ভিতরে প্রবেশ করব এই কথা উল্লেখ করা আছে। সেক্ষেত্রে জাপানের মতো টেক এক্সপার্ট জি-সেভেন দেশগুলো যদি প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে তাহলে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০% নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে পারব। যেটা কিনা অন্যান্য দেশের জন্য একটা বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা যায়।

আর এইটার মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়নের দেশ হিসেবে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হতে পারি ইনশাল্লাহ।

ছবি: Image by evening_tao on Freepik

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

চন্দ্রকান্ত সেন

ছাত্র, জ্ঞান আহরোণের প্রয়াসে আছি। অধ্যায়নরত আছি-নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি কলেজ, যশোর (২য় বর্ষ)। জেলা: নড়াইল।

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading