বিসিএস ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলা সাহিত্য প্রশ্নাবলী (পর্ব – ০৩)
প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের গভীরে প্রবেশ
বাংলা সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
বাংলা সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দুই ক্ষেত্রেই আমরা পেয়েছি অসাধারণ সাহিত্যকর্ম ও বীরত্বের কাহিনী। এই আর্টিকেলে আমরা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যকর্মের বিশ্লেষণ করবো। এখানে আমরা সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম, বিখ্যাত গ্রন্থ, এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস ও নাটকের উপর আলোকপাত করবো। আশা করি, এই আর্টিকেলটি পাঠকদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে এবং বাংলা সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াবে।
১. ‘বনফুল’ কার ছদ্মনাম?
- (ক) প্রমথ চৌধুরী
- (খ) বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
- (গ) যতীন্দ্রমোহন বাগচী
- (ঘ) মোহিতলাল মজুমদার
উত্তর: (খ) বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
ব্যাখ্যা: বনফুল বাংলা সাহিত্যের প্রথম জীবনী নাটক রচয়িতা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম। প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম বীরবল। আর মোহিতলাল মজুমদারের ছদ্মনাম কৃত্তিবাস ওঝা, সত্য সুন্দর দাস।
২. ‘একাত্তরের ডায়েরী’ কার লেখা?
- (ক) সুফিয়া কামাল
- (খ) জাহানারা ইমাম
- (গ) সেলিনা হোসেন
- (ঘ) নীলিমা ইব্রাহিম
উত্তর: (খ) জাহানারা ইমাম
ব্যাখ্যা: ‘একাত্তরের ডায়েরী’ একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ দিনলিপিতেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নীলিমা ইব্রাহিমের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সেলিনা হোসেনের কালজয়ী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস।
৩. “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা” গানটির রচয়িতা কে?
- (ক) রাধানিধি গুপ্ত
- (খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- (গ) কাজী নজরুল ইসলাম
- (ঘ) অতুলপ্রসাদ সেন
উত্তর: (ঘ) অতুলপ্রসাদ সেন
ব্যাখ্যা: “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা” – গানটির কবি, গীতিকার এবং গায়ক অতুলপ্রসাদ সেন। এই গানটি ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের মনে ব্যাপক উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিল। বাংলা গানে সর্বপ্রথম ঠুমরি আমদানির পথিকৃৎ হলেন গায়ক অতুলপ্রসাদ সেন।
৪. কোনটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গ্রন্থ নয়?
- (ক) ব্যথার দান
- (খ) দোলনচাঁপা
- (গ) শিউলিমালা
- (ঘ) সোনার তরী
উত্তর: (ঘ) সোনার তরী
ব্যাখ্যা: ব্যথার দান গল্প গ্রন্থটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। দোলনচাঁপা কাজী নজরুল ইসলামের একটি কাব্যগ্রন্থ এবং শিউলি মালা কবির আরও একটি গল্পগ্রন্থ। অপরদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্মবিধৌত পূর্ববঙ্গের পটভূমিতে লেখা জীবন ও কীর্তির ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের জিজ্ঞাসামূলক একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো সোনার তরী।
৫. কোন রাজবংশের আমলে চর্যাপদ রচনা শুরু হয়?
- (ক) পাল
- (খ) সেন
- (গ) তুর্কি
- (ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: (ক) পাল
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ। অনুমান করা হয় চর্যাপদ পাল রাজবংশের আমলে রচনা করা শুরু হয় এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের শাসনামলেই এর বিকাশ ঘটে।
৬. ‘রতন’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন গল্পের চরিত্র?
- (ক) পোস্টমাস্টার
- (খ) গিন্নি
- (গ) ছুটি
- (ঘ) সুভা
উত্তর: (ক) পোস্টমাস্টার
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পের জনক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত সামাজিক ছোটগল্প পোস্টমাস্টার এর চরিত্রের নাম রতন যিনি গল্পটিতে পোস্টমাস্টার চরিত্রে ছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আরো একটি সামাজিক গল্প ‘ছুটি’র প্রধান চরিত্র ফটিক। প্রকৃতি ও মানবকে নিয়ে লিখিত কবিগুরুর আরো একটি গল্প ‘সুভা’ এর প্রধান চরিত্র শুভা ও প্রতাপ।
৭. ‘মা জননী কান্দে’ কোন ধরনের রচনা?
- (ক) কাব্য
- (খ) নাটক
- (গ) উপন্যাস
- (ঘ) প্রবন্ধ
উত্তর: (ক) কাব্য
ব্যাখ্যা: পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের গ্রাম্য গীত কবিতার ছন্দে রচিত একটি গাথা কাব্য হলো – ‘মা জননী কান্দে’। এছাড়া কবির রচিত আরো দুটি গাথাকাব্য হলো – ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ও ‘নক্সি কাঁথার মাঠ’। এছাড়া ধানক্ষেত, রাখালী, বালুচর, সুচয়নী, মাটির কান্না ইত্যাদি তার রচিত কাব্যগ্রন্থ।
৮. Ballad কী?
- (ক) লোকগীতি
- (খ) লোকগাথা
- (গ) গীতিকা
- (ঘ) গাথা
উত্তর: (গ) গীতিকা
ব্যাখ্যা: Ballad এর পরিভাষা হলো প্রাচীন কাহিনী সম্বলিত সাদামাটা কবিতা বা গান; গাথা। ঈদে কবিতার আদিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় গাথা ব্যালাড কে। ইতালীয় শব্দ ‘Ballarc’ থেকে এই শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ, নৃত্য করা। কবিতার সাথে নৃত্যের মিশ্রণে গাথার সৃষ্টি। তবে প্রাচীন ও বর্তমান ব্যালাড-এ অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মধ্যযুগের ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ ব্যালাডের উদাহরণ।
৯. কোনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস?
- (ক) কাঁদো নদী কাঁদো
- (খ) কাবিলের বোন
- (গ) রাঙ্গা প্রভাত
- (ঘ) প্রদোষে প্রকৃত জন
উত্তর: (খ) কাবিলের বোন
ব্যাখ্যা: আল মাহমুদ রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হলো ‘উপমহাদেশ’ ও ‘কাবিলের বোন’। এছাড়া আরো কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হলো – নেকড়ে অরণ্য, জলাংগী, জাহান্নাম হইতে বিদায় (শওকত ওসমান); নিষিদ্ধ লবান, নীল দংশন (সৈয়দ শামসুল হক); রাইফেল রোটি আওরাত (আনোয়ার পাশা)। অন্যদিকে, মনোসমীক্ষামূলক উপন্যাস ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ এর রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। আবুল ফজল রচিত উপন্যাস ‘রাঙা প্রভাত’। শওকত আলী রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’।
১০. ‘কপালকুণ্ডলা’ কোন প্রকৃতির রচনা?
- (ক) রোমান্সমূলক উপন্যাস
- (খ) বিয়োগান্ত নাটক
- (গ) ঐতিহাসিক উপন্যাস
- (ঘ) সামাজিক উপন্যাস
উত্তর: (ক) রোমান্সমূলক উপন্যাস
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্স ধর্মীয় উপন্যাস হলো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’। ট্রাজেডি ও রোমান্সের মিলনে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। সামাজিক সংস্কারের সাথে অপরিচিতা অরণ্যে কপালিকের পালিত কন্যা কপালকুণ্ডলার সঙ্গে নবকুমারের বিয়ে এবং সমাজ বন্ধনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এ উপন্যাসে ফুটে উঠেছে।
১১. নিম্নোক্ত কোন উপন্যাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধত্তর সময়ের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে?
- (ক) দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপাড়ের বৃত্তান্ত’
- (খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’
- (গ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘যাও পাখি’
- (ঘ) অভিজিৎ সেনের ‘রাহু চন্ডালের হাড়’
উত্তর: (খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’
ব্যাখ্যা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম উপন্যাসটিতে বিভাজনপূর্বক পূর্ব বাংলার একটি পরিবার, ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের সময়কার পরিস্থিতি, দেশত্যাগ, উদ্বাস্তুদের জীবন, নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা, পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্থান পেয়েছে।
১২. বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট বলা হয় কাকে?
- (ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- (খ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- (গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- (ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম
উত্তর: (খ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদান রাখায় এবং অতুলনীয় সাহিত্যকর্মের কারণে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট বলা হয়।
১৩. “আমার সোনার বাংলা” রবীন্দ্র সংগীতের প্রথম কত পংক্তি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত?
- (ক) ৬
- (খ) ৮
- (গ) ১০
- (ঘ) ১২
উত্তর: (গ) ১০
ব্যাখ্যা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতিবিতান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমার সোনার বাংলা’ ১৯০৫ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। এই গানের প্রথম ১০ চরণ কে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৪. কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ রবীন্দ্র সংগীতের প্রথম কত পংক্তি বাজানো হয়?
- (ক) ১০
- (খ) ৪
- (গ) ৫
- (ঘ) ৮
উত্তর: (খ) ৪
ব্যাখ্যা: আমার সোনার বাংলা গানের প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত। তবে কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রথম চার চরণ বাজানো হয়।
১৫. ২০২৩ সালের সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার কে পান?
- (ক) পবিত্র মোহন দে
- (খ) মরহুম সেলিম আল-দীন
- (গ) নির্মলেন্দু গুণ
- (ঘ) ডক্টর ফেরদৌসী কাদরী
উত্তর: (খ) মরহুম সেলিম আল-দীন
ব্যাখ্যা: ২০২৩ সালে ৯ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করে। তার মধ্যে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন ডঃ মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল-দীন) (মরণোত্তর)।
১৬. সাহিত্যের প্রধান লক্ষ্য কি?
- (ক) মনোরঞ্জন করা
- (খ) সৌন্দর্য সৃষ্টি করা
- (গ) লেখকের প্রতিষ্ঠা
- (ঘ) সমাজের সমালোচনা করা
উত্তর: (খ) সৌন্দর্য সৃষ্টি করা
ব্যাখ্যা: সাহিত্যের প্রধান লক্ষ্য হলো সৃজনশীলতা বা সৌন্দর্য সৃষ্টি করা। সাহিত্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরী তার ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে বলেছেন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো মনোরঞ্জন করা নয়।
১৭. কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ –
- (ক) বিষের বাঁশি
- (খ) চক্রবাক
- (গ) অগ্নিবীণা
- (ঘ) বিদ্রোহী
উত্তর: (গ) অগ্নিবীণা
ব্যাখ্যা: কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’। এই কাব্যে কবি ভারতীয় পুরাণ ও পশ্চিম এশীয় ঐতিহ্য অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ এ কাব্যের প্রথম কবিতা এবং দ্বিতীয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’। ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে কাজী নজরুল ইসলাম কাব্যটি উৎসর্গ করেন।
১৮. কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন _______ তুলিতে।
- (ক) কুসুম
- (খ) পুষ্প
- (গ) কমল
- (ঘ) গোলাপ
উত্তর: (গ) কমল
ব্যাখ্যা: “কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে/দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে” কবিতাংশটির রচয়িতা কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। কবিতাংশটির মূলভাব হলো, পৃথিবীতে সুখ লাভ করতে হলে অবশ্যই দুঃখকে স্বীকার ও জয় করতে হয়।
১৯. মীর মশাররফ হোসেন এর ছদ্মনাম –
- (ক) গাজী মিয়াঁ
- (খ) বীরবল
- (গ) যাযাবর
- (ঘ) বনফুল
উত্তর: (ক) গাজী মিয়াঁ
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমান-মানসের নবজাগরণের অগ্রপথিক, প্রথম বাঙালি মুসলিম নাট্যকার, উপন্যাসিক মীর মোশাররফ হোসেনের ছদ্মনাম হলো: গাজী মিয়া, উদাসীন পথিক, গৌরতটবাসী, মশা। অন্যদিকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম, বীরবল। বিনয় কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ও বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় এর ছদ্মনাম যথাক্রমে ‘যাযাবর’ ও ‘বনফুল’।
২০. শওকত ওসমান রচিত গ্রন্থ –
- (ক) নেকড়ে অরণ্য
- (খ) যাত্রা
- (গ) কালো ঘোড়া
- (ঘ) ফেরারি ডায়েরী
উত্তর: (ক) নেকড়ে অরণ্য
ব্যাখ্যা: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হলো নেকড়ে অরণ্য, জাহান্নাম হইতে বিদায়, দুই সৈনিক এবং জলঙ্গী। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘যাত্রা’ ও ‘কালো ঘোড়া’র লেখক যথাক্রমে শওকত আলী ও ইমদাদুল হক মিলন। আলাউদ্দিন আল আজাদ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনলিপি হলো ‘ফেরারি ডায়েরী’।
২১. কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
- (ক) সাম্যবাদী
- (খ) ফনিমনসা
- (গ) অগ্নিবীণা
- (ঘ) চিত্তনামা
উত্তর: (গ) অগ্নিবীণা
ব্যাখ্যা: কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণার দ্বিতীয় কবিতা হলো বিদ্রোহী। সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় বাই ডিসেম্বর জানুয়ারি সংখ্যায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হলে তার কবি খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
২২. ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’ কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল?
- (ক) নেপালের রাজ দরবার থেকে
- (খ) গোয়ালঘর থেকে
- (গ) পাঠশালা থেকে
- (ঘ) কান্তজির মন্দির থেকে
উত্তর: (খ) গোয়ালঘর থেকে
ব্যাখ্যা: ১৯০৯ সালে অধ্যক্ষ বসন্ত রঞ্জন রায় পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের গোয়াল ঘর থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’ উদ্ধার করেন। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবার থেকে ‘চর্যাপদ’ আবিষ্কার করেন।
২৩. “তুমি অধম, তাই বলি আমি উত্তম হইবো না কেন?” – উদ্ধৃতাংশটি কোন গ্রন্থের?
- (ক) বিষবৃক্ষ
- (খ) দুর্গেশনন্দিনী
- (গ) কপালকুণ্ডলা
- (ঘ) কৃষ্ণকান্তের উইল
উত্তর: (গ) কপালকুণ্ডলা
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও ঔপন্যাসিক সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘কপালকুণ্ডলা’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্সধর্মী উপন্যাস। অরণ্যে কাপালিক পালিতা কপালকুণ্ডলা কে ঘিরে এই উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে। এই উপন্যাসের নায়ক নব কুমারের একটি বিখ্যাত উক্তি, “তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?” তাছাড়া নবকুমারকে উদ্দেশ্য করে কপালকুণ্ডলার উক্তি “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছো” বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তিরূপে ব্যবহৃত ও চর্চিত।
২৪. আবু ইসহাকের ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ কোন কবি অনুবাদ করেন?
- (ক) দুশান জাজবিভেল
- (খ) ইমানুয়েল জাসরিন
- (গ) এলেন গিন্সবার্গ
- (ঘ) ইমরে কার্তেজ
উত্তর: (ক) দুশান জাজবিভেল
ব্যাখ্যা: সূর্য দীঘল বাড়ি আবু ইসহাকের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ বিভাগের পর পর চারটি বড় ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমিতে রচিত উপন্যাস। একাধিক বিদেশী ভাষায় উপন্যাসটি অনূদিত হয় এবং দুশান জাজবিভেল নামক এক কবি এটি অনুবাদ করেন। এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৯ সালের শেখ নিয়ামত আলী ও মসি উদ্দিন শাকের নির্মিত চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের প্রথম অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র।
২৫. কোন গ্রন্থটি ঢাকা হতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল?
- (ক) মেঘনাদবধ কাব্য
- (খ) দুর্গেশনন্দিনী
- (গ) নীলদর্পণ
- (ঘ) অগ্নিবীণা
উত্তর: (গ) নীলদর্পণ
ব্যাখ্যা: দিন বন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। নাটকটি বাংলাদেশের মেহেরপুর অঞ্চলে নীলকরদের অত্যাচার ও নীল চাষীদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে রচিত হয়েছে। অন্যদিকে, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হলো ‘অগ্নিবীণা’।
২৬. “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।” এই উক্তিটি কোন পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় লেখা থাকতো?
- (ক) সওগাত
- (খ) মোহাম্মাদী
- (গ) সমকাল
- (ঘ) শিখা
উত্তর: (ঘ) শিখা
ব্যাখ্যা: মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র হিসেবে ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত বার্ষিক ‘শিখা’ পত্রিকার স্লোগান ছিল, “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।” পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আবুল হোসেন। একাধারে পাঁচ বছর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। আবুল হোসেনের পরবর্তী সম্পাদক ছিলেন ড. কাজি মোতাহার হোসেন, মোঃ আব্দুর রশিদ ও আবুল ফজল।
২৭. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখা নাটক কোনটি?
- (ক) কবর
- (খ) বহিপীর
- (গ) পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
- (ঘ) ওরা কদম আলী
উত্তর: (খ) বহিপীর
ব্যাখ্যা: বাংলাদেশের সাহিত্যে চেতনা প্রবাহ রীতি ও মনঃসমীক্ষা ধর্মীয় উপন্যাসের অন্যতম স্রষ্টা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সামাজিক সমস্যা মূলক নাটক ‘বহিপীর’। এছাড়া তারা আরো কয়েকটি নাটক ‘তরঙ্গ ভঙ্গ’, ‘উজানে মৃত্যু’ ও ‘সুরঙ্গ’। অন্যদিকে ‘কবর’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘ওরা কদম আলী’ নাটকের রচয়িতা যথাক্রমে মুনির চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক ও মামুনুর রশীদ।
২৮. “বুকের রক্তে লিখেছি একটি নাম বাংলাদেশ” বাক্যের ক্রিয়াটি কোন কালের?
- (ক) পুরাঘটিত অতীত
- (খ) পুরাঘটিত বর্তমান
- (গ) সাধারণ বর্তমান
- (ঘ) সাধারণ অতীত
উত্তর: (খ) পুরাঘটিত বর্তমান
ব্যাখ্যা: ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলে এবং তার ফল এখনো বর্তমান থাকলে তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলে। যেমন: বুকের রক্তে লিখেছি একটি নাম বাংলাদেশ, এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, এতক্ষণ আমি অংক করেছি।
২৯. মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যটি কোন ধরণের কাব্য?
- (ক) পত্রকাব্য
- (খ) মহাকাব্য
- (গ) সনেট
- (ঘ) গীতিকাব্য
উত্তর: (ক) পত্রকাব্য
ব্যাখ্যা: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যটি পত্রকাব্য ধরণের। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রকাব্য হিসেবে পরিচিত।
৩০. ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের লেখক কে?
- (ক) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- (খ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
- (গ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- (ঘ) আনন্দমোহন বাগচী
উত্তর: (ক) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ব্যাখ্যা: বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাঙালি জীবনের বিপর্যয় এবং উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত।