গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস। প্রায় আধঘণ্টা স্থায়ী এ বক্তব্যে তিনি জাতির বর্তমান অবস্থা, ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ সফল আন্দোলনকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ছাত্র জনতাকে বিনা বিচারে সুপরিকল্পিতভাবে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার জন্য আন্তর্জাতিক বিচারের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান।
জুলাই গণহত্যা ফাউন্ডেশন গঠন
তিনি জুলাই গণহত্যা ফাউন্ডেশন গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের সকল অপকর্ম জনসমক্ষে আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার জন্য একটি আর্কাইভ অথবা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান।
আকস্মিক বন্যার প্রভাব
আকস্মিক বন্যার প্রভাবে জাতির অস্থিতিশীল অবস্থায় তিন বাহিনী ও সাধারণ জনতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নয়ন
বিবদমান বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নয়ন এবং বিবদমান সমস্যা সমাধানের জন্য সকল ব্যবসায়ীগণকে আলোচনায় বসার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানান।
জাতীয় সংস্কার
তার বক্তব্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো জাতীয় সংস্কার। তিনি ছয়টি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন:
১. নির্বাচনীকালীন সংস্কার
সুজনের প্রধান মোঃ বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার প্রণয়ন করা।
২. পুলিশ সংস্কার
বিগত সরকারের আমলে পুলিশ নিয়োগে যে দলীয়করণের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল তা থেকে বের হওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম আনয়নে বর্তমান সরকার একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান বর্তমান সরকার প্রধান প্রফেসর ইউনুস। ঘুষ বাণিজ্য, গায়েবী মামলা, গুম, সরকার বিরোধীদের ধরে নিয়ে গিয়ে আয়না ঘরের মতো টর্চার, রিমান্ডে নিয়ে হত্যা এমন কোন মানবাধিকার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড নেই যা পুলিশ বাহিনী করেনি। তাই সাধারণ জনতার আস্থা ফেরানোই এ কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ যার দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন সচিব সফর রাজ খান।
৩. বিচার ব্যবস্থা সংস্কার
দলীয় নিয়োগদানের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা বিগত সরকারের নিজ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় যার ফলে বিকেন্দ্রীকরণের পরেও এটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। আইন ও শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সক্রিয় করতে বর্তমান সরকার একটি কমিশন গঠন করবে বলে জানান প্রফেসর ইউনুস। কমিশনের প্রধান দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাইম মোমিনুর রহমান যিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই নেত্রীর জামিন প্রদানে সৎ, সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।
৪. দুর্নীতি সংস্কার
বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতির অমানিশায় ছেয়ে আছে প্রতিটি সরকারি অফিস। যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক তখন দুর্নীতি ও ঘুষের পরিমাণ এভারেস্ট চুম্বি যার ফলে আমরা লোডশেডিং এ ব্যবহৃত জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না। সুখবর এই যে এক দশক ধরে যে প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তার প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি বারবার বলেছেন দুদক কার্যত অকার্যকর কারণ তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে থাকতে হয়। কমিশন প্রধানের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী।
৫. জনপ্রশাসনমূলক সংস্কার
জনপ্রশাসনমূলক সংস্কারের লক্ষ্যে আব্দুল মুইদ চৌধুরীকে প্রধান করে কমিশন গঠন করেন বর্তমান নির্বাহী সরকার। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে আব্দুল মুইদ যোগদান করেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা যিনি ২০০১ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাবেক প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করবে অনেক বেকারদের আগামী ভবিষ্যৎ। বয়স বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফলাফল এখন তার কাঁধে। তাছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় নিয়োগ প্রার্থীরা হতাশ। তাই জনপ্রশাসন সংস্কার যেন হয় সময়োপযোগী ও আধুনিক।
৬. সংবিধান সংস্কার
ইউনুস সরকারের সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছেন শাহদীন মালিক, একজন বাংলাদেশী বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও আইন কর্মী। নাগরিক সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন স্বীকৃত। সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ ও সংশোধনী সংস্কার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা তাই শাহদীন মালিকের উপর সর্বাধিক।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.