লোডশেডিং: আধুনিক জীবনের নতুন লুকোচুরি খেলা

আজকাল ছোট-বড় সকল মানুষের মুখে একটাই কথা, তা হলো, “লোডশেডিং”। সেই ছোটবেলার লুকোচুরি খেলার মতো হয়ে গেছে বিষয়টা। বিদ্যুৎ এলেই যেন একটা আতঙ্কে থাকছে সবাই, এই বুঝি চলে গেলো! এই বলতে বলতেই চলেই গেলো বিদ্যুৎ। আর এই আতঙ্ক শুধু বড়দের মধ্যেই নয়, ছোট-বড়-মাঝবয়সী সকল মানুষের মধ্যেই একই অবস্থা।

লোডশেডিং এর সুবিধা

লোডশেডিং এর ফলে কত রকম সুবিধা হচ্ছে। এই যেমন ধরুন, অলস ব্যক্তিকে গতিশীল করে তোলা। চলুন আজ লোডশেডিং এর এমনই কিছু সুবিধা সম্পর্কে জেনে আসি।

১. বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়া

লোডশেডিং এর ফলে বিদ্যুৎ বিল কমে গেলে প্রথমেই একদল কিপ্টে লোক মহাখুশি হবে। তারা চির কৃতজ্ঞ থাকবে এই লোডশেডিং এর কাছে। এনারা ছাড়াও এই উপকারে উপকৃত হবে সকল মানুষ।

২. শরীরকে সুস্থ রাখা

লোডশেডিং এর ফলে গরমে ঘেমে মানুষের শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য বের হয়ে যাবে। এতে মানুষের অসুস্থতা দিনে দিনে কমতে শুরু করবে।

৩. বাজে আড্ডা এবং চুরির পরিমাণ কমবে

লোডশেডিং এর ফলে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কেউ বাজারে আড্ডা দিবে না। ফলে তাস খেলা, জুয়া খেলা কমে যাবে। আর এই লোডশেডিং এর ফলে চোরও ঠিক মতো চুরি করতে পারবে না। ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। হয়তো লোডশেডিং দেখে চুরি করতে এসে বেচারা বুঝতেই পারলো না কোথায় কতটা আলো পড়বে। হঠাৎ-ই আবার বিদ্যুৎ চলে আসলো তখন একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া আরকি।

৪. দ্রুত ঘুমানো

লোডশেডিং এর ফলে রাত জেগে টিভি বা মোবাইল চালানো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে রাতে সবাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। আর এতে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকবে।

৫. শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম হবে

লোডশেডিং এর ফলে মানুষের নিয়মিত ব্যায়াম হবে। ভাবছেন কিভাবে? দেখুন মানুষ এখন বেশিরভাগ জায়গায় লিফট ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই লোডশেডিং এর ফলে মানুষের এই লিফটে আটকে যাবার ভয়ও আছে। তাই লোকে লিফট ব্যবহার না করে তখন সিড়ি ব্যবহার করবে। ফলে সকলেরই নিয়মিত একটা ব্যায়াম কিন্তু হয়ে যাবে। আর সময়ের অভাবে যাদের শরীর চর্চা হয় না তাদের জন্যও উপকার হবে।

৬. কাজের গুরুত্ব বোঝা এবং গতিশীল হওয়া

লোডশেডিং এর ভয়ে মানুষ বিদ্যুৎ আসা মাত্রই এই বিদ্যুৎ সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় কাজগুলোই আগে দ্রুত সেরে নিবে। এতে মানুষ যেমন তার কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে তেমনি নিজেকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারবে। এছাড়াও মানুষের যে কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা সেটাও কমে যাবে।

লোডশেডিং এর সামাজিক প্রভাব

লোডশেডিং এর ফলে আমরা নানাবিধ সুবিধাও পেয়ে থাকি। আর এজন্যই স্কুল থেকে কলেজের সিলেবাসে পর্যন্ত এই নিয়ে “প্যারাগ্রাফ (ছোট আকারের গদ্য রচনা) লিখতেও বলা হয়। “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” – নিয়ে এই সব প্যারাগ্রাফে এত এত নেতিবাচক কথা লেখা থাকে যে, আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। বিশ্বাস না হলে নিজেই পড়ে দেখুন। অন্যদিকে যদি কোনদিন পরীক্ষার খাতায় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” নিয়ে ইতিবাচক কথা লিখতে বলা হয় তাহলে কি লিখবেন! কখনো এটা নিয়ে ভেবে দেখেছেন কি!

লোডশেডিং এর ইতিবাচক দিক

১. হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা

হাতে হারিকেন নিয়ে কখনো রাস্তা হেঁটেছেন? আচ্ছা, রাতে জোনাকির আলো কীভাবে আধুনিক দুনিয়ার এই নিয়ন আলোয় দেখবেন বলুন? তারজন্য হলেও সময় সময় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” হওয়া জরুরি। বর্তমানের ছেলে-মেয়ে প্যারাগ্রাফ তো পড়ছেই না, তারা স্মার্টফোনে গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, যদি স্মার্টফোনে চার্জ-ই না দিতে পারে তাহলে গেম খেলবে কীভাবে! হ্যাঁ, এজন্য হলেও সময় সময় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” হওয়া জরুরি। এতে করে তারা পরীক্ষার খাতায় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” নিয়ে ভালো করে প্যারাগ্রাফ লিখতে পারবে, নম্বরও পাবে ভালো।

২. রোমান্টিক মুহূর্ত

আবার ধরুন, শহুরে রাস্তায় রাস্তায় এত এত লাইট দেখে প্রেমিকার হাত ধরতে শঙ্কায় থাকেন। হুট করে যদি চারপাশটা অন্ধকার হয়ে যায় তাহলে প্রেমিকার হাত সহাস্যে ধরে ফেলতে পারবেন। এজন্য হলেও সময় সময় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” হওয়া জরুরি।

৩. কর্মসংস্থানের অভাব

সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে, বাংলাদেশকে পৃথিবীর সপ্তম দুখী দেশ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর পেছনের কারণ জেনে লাভ কি বলুন? যদি এর পেছনের কারণ হয় কর্মসংস্থানের অভাব তাহলেও “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” সময় সময় হওয়া জরুরি। এতে করে কাউকেই একটানা ডেস্কে কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। অশ্রু আর ঘামে হয়ে যাবেন একাকার। কেউ টের পাবে না যে, আপনি বিচ্ছেদে কাঁদছেন!

৪. সামাজিক যোগাযোগের অভাব

তিক্ত গরমে রাস্তায় কোন একদিন ছাতা নিয়ে আপনার প্রেমিক অথবা প্রেমিকার কাছে দাঁড়াবেন। দেখবেন, আপনাদের চলার রাস্তা সহজ হয়ে গেছে। এমনকি আপনাদের জীবনের রাস্তাও সহজ হয়ে যেতে পারে। কারণ স্মার্টফোনে আর নেই সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যাচার। আরো বড় বিষয় হচ্ছে, স্মার্টফোনে চার্জ থাকলে তবেই তো সোশ্যাল মিডিয়ায় সে যেতে পারবে। ফেসবুকের নোটিফিকেশন আর টুপ করে আপনার মনের দিক থেকে তার মনের দিক আলাদা করে দেবে না, দিতে পারবে না। তাই এজন্য হলেও সময় সময় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট” হওয়া জরুরি।

লোডশেডিং এর প্রভাব

“সিগারেটের আলোয় পড়ে উচ্চমাধ্যমিকে টপার” – এমন শিরোনামে শুধু দুই একটি নিউজ দেখেছেন। এখন নিউজ শিরোনামে একাধিক এমনও দেখতে পারেন যে, “হারিকেনের আলোয় পড়ে বিসিএস ক্যাডার, ছিলো না কেরোসিন পর্যন্ত!” বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও জাতির উন্নয়ন কিন্তু ঠেকে থাকবে না।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading