ব্যবসা ও বাণিজ্য

আঙুলের ছোঁয়ায় টাকা লেনদেন: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অভূতপূর্ব সাফল্য

মোবাইল ব্যাংকিং: সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কীভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছে? জানুন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। কীভাবে এই সেবা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনকে পরিবর্তন করে চলেছে, তা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

বর্তমানে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বাস করছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব এখন গ্রামে পরিণত হয়েছে। আমাদের সকল কাজের জন্য মূলত একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। সেটি হলো ‘মোবাইল’ বা ‘স্মার্টফোন’। এই ক্ষুদ্র যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা বর্তমানে সকল কাজ খুব সহজে ও অল্প সময়ে সম্পন্ন করতে পারি।

বর্তমানে এই ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যাংকিং ক্ষেত্রের সকল সেবা গ্রহণ ও প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে আমাদের সময় যেমন কম অপচয় হচ্ছে তেমনি কোন ঝুঁকি ছাড়া অনেক বড় অংকের টাকা খুব সহজে লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে। যে কোন সময় নিজের মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করার এক অনন্য সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিং কি এবং এর ইতিহাস

মোবাইল ফোন বা একটি ট্যাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রাহক তার নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সকল কিছু মোবাইলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গ্রাহক নিজে ব্যাংকে না গিয়ে যে কোন সময় অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।

বিশ্বে প্রথম ১৯৯৯ সালে মোবাইল ওয়াপ পদ্ধতির মাধ্যমে স্মার্টফোন নেটওর্য়াক ব্যবহার করে ইউরোপীয়ান ব্যাংকে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। খুব সহজে এই পদ্ধতিতে আমরা দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠাতে পারি। ফলে এই পদ্ধতি বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রাহকের কাছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে ২০১০ সালে এই পদ্ধতির যাত্রা শুরু করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এটি ছাড়াও এই পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান বিকাশ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিকাশের মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণ মোবাইল ব্যাংকি সেবার আওতায় দ্রুত যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং

বাংলাদেশে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। এই পদ্ধতিকে ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছেন। এই পদ্ধতি নিয়ে ১৯টি ব্যাংক মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে প্রতি মাসে ৩৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে।

এই পদ্ধতির গ্রাহক সংখ্যা হলো দেশের ১৫ শতাংশ মানুষ। যা প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখের মত। এতে শতকরা ২ টাকা খরচ হয়। ২০১২ সালে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। যা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। পরে আরও নগদ, রকেট, এমক্যাশ, শিওরক্যাশ সহ ১৫টির বেশি কোম্পানি এ সেবা দিয়ে আসছে।

তবে দেশের লেনদেনের প্রায় ৭০ শতাংশ লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে। তবে দেশের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর বাজার

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আরো ১০ বছর আগে বাংলাদেশে চালু হয়েছিলো। চালুর পর থেকে অত্যন্ত সহজ লেনদেনের ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে দেশে মোট গ্রাহকের সংখ্যা হলো সাড়ে ৯ কোটির মত।

বিজ্ঞাপন

প্রতি মাসে এই পদ্ধতিতে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মত। গত এক বছরে এই খাতে গ্রাহক বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ২৬.৩৫ শতাংশ এবং এজন্টে বেড়েছে ৬.২১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন এ পদ্ধতিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে একজন গ্রহক বর্তমানে এত বেশি সুবিধা পায় যা বর্ণনা করা কঠিন। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে দিনের ২৪ ঘন্টা ও বছরের সব দিন লগইন থাকা যায়। যাতে যে কোন সময় প্রয়োজন মত টাকা লেনদেন করার সুবিধা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে আগে শুধু একই ব্যাংকের মধ্যে লেনদেন করা যেত। কিন্তু বর্তমানে সকল প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যাংকেও লেনদেন করার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার আভাস দিয়েছে। এতে করে আরো বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারবে গ্রাহকরা।

ইউটিলিটি বিলগুলো – গ্যাস, পানি ও ফোন বিল খুব সহজে পরিশোধ করা যায়। চেক বইয়ের আবেদন ও চেক পেমেন্ট বাতিল করা যায়। সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ইত্যাদি জানা যায়। অ্যাকাউন্ট থেকে খুব সহজে লেনদেনের বিস্তারিত হিসাব সহজে পাওয়া যায়।

মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধাভুগীরা

মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধাভুগীর তালিকায় সকল গ্রাহকই পড়ে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোন ঝামেলা ছাড়া গ্রাহকরা নিজেরা ইচ্ছেমত লেনদেন করতে পারেন। এতে করে ব্যাংকে গিয়ে যে গ্রাহকের সময় নষ্ট হতো তা আর হচ্ছে না। ফলে ওই সময় অন্য কাজ করতে পারছেন সাধারণ মানুষ। সার্বিকভাবে এটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

বিজ্ঞাপন

কারণ এ সময়ে গ্রাহক অন্য কাজ করবেন তাতে দেশের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। যা অর্থনীতির চাকায় একটু একটু করে ধাক্কা দিতে সক্ষম হবে। এতে দেশের অভ্যন্তরীন অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে।

শিক্ষার্থী ও মোবাইল ব্যাংকিং

শিক্ষার্থী – মোবাইল ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন দেশের সকল শিক্ষার্থীরা। সাধারণত দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার জন্য গ্রামের বহিরে শহরে পাড়ি জমান। তখন তাদের আর্থিক অংকটা আসে গ্রাম থেকে। খুব সহজে গ্রামের সাধারণ মানুষরা তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ শহরেও পৌঁছে দিতে পারেন।

এতে তাদের মধ্যে থেকে কারো শহরে যেতে হয় না অথবা শিক্ষার্থীদের গ্রামে আসতে হয় না। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের ফি এখন খুব সহজে এই পদ্ধতির মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।

গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষরা

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। বেশির ভাগ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাদের সঞ্চিত অর্থ নিজেদের কাছে জমা রাখতো। আবার টাকা লেনদেন করতো মানুষের হাতে-হাতে এতে করে বিশাল অংকের টাকা দেশের কোন কাজে লাগে না।

আবার তারা ব্যাংক থেকে টাকা রাখতে বা তুলতে বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হয়ে এই ব্যবস্থার বিমুখ হয়। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং এর সহজ পদ্ধতি ও সুবিধা পেয়ে এই সেবার আওতায় আসছে। এতে দেশের লেনদেন আগের চেয়ে অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রবৃদ্ধি

দেশের সকল শ্রেণির মানুষকে অর্থিক সেবার আওয়ায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং এর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’। এতে করে গ্রামের সাধারণ মানুষ যাদের কোন ব্যাংকে অ্যাকউন্ট নেই তারাও প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত হবে।

এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় অল্প খরচে গ্রাহকদের দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সুবিধা দিতে পারছেন প্রতিষ্ঠানগুলো। এই পদ্ধতির প্রসারের ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংক শাখা না থাকা সত্ত্বেও বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পরিশেষ

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাপনে যেসব পরিবর্তন এসেছে। তেমনি মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক লেনদেনের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এতে করে নিরাপদে ও খুব সহজে দেশের যেকোন প্রান্তের মুহুর্তের মধ্যে টাকা প্রেরণা করা যায়। আবার নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের লেনদেনে এক ধরনের বিশাল গতির পরিবর্তন হয়েছে।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading