রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় সিস্টেম খাবার: অল্প টাকায় পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবারের গল্প

সিস্টেম খাবার কি?

সিস্টেম খাবার আসলে কি ধরনের খাবার বা এই মিলের মধ্যে কি থাকতে পারে? এটি খুব বেশি মানুষের কাছে পরিচিত নয়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি ব্যাপার হলো সিস্টেম। কারণ বর্তমানের বাজারে এত অল্প টাকায় এক বেলা খাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনেও পাওয়া যায় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে স্টেশন বাজার এলাকায় অবস্থিত একটি হোটেলে মাত্র ২০ টাকায় সিস্টেম খাবার পাওয়া যায়। অল্প দামের এই খাবারের মেন্যুতে থাকে ৬ পদ। যার মধ্যে ডাল ভর্তা, আলু ভাজি, আলু ভর্তা, শাক ভাজি, বেগুন ভাজি ও অর্ধেক সিদ্ধ ডিম।

সিস্টেম খাবারের প্রবর্তক

বর্তমানের বাজারে এই দামে যে খাবার হোটেল মাদারিপুর দিয়ে থাকে সেটি বেশ প্রশংসার দাবিদার। আর এই খাবারের প্রবর্তক হলেন ব্যবসায়ী মানিক মিঞা। অল্প দামের এই খাবার দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তার হোটেল। দুপুর বেলা হোটেলে শিক্ষার্থীদের ভিড় হয় প্রতিদিনই।

মানিক মিঞার জীবনগল্প

নতুন ধরনের এই খাবারের প্রবর্তক রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা নয়। বরং জীবিকার সন্ধানে সুদূর কুমিল্লা থেকে রাজশাহী আসেন মানিক। শুরুতে রিক্সা চালিয়ে কোনো রকম জীবনযাপন করতেন। কিন্তু পরে নিজে একটি খাবারের দোকান তৈরি করেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সেই দোকান হোটেলে রূপ নেয়। যেখানের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেন্যু হলো এই সিস্টেম। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি এই হোটেল চালিয়ে আসছেন।

হোটেল মাদারিপুরের অন্যান্য খাবার

এছাড়া হোটেলে আরো সব খাবারও বেশ মানসম্মত ভাবেই পরিবেশন করা হয়। গরুর মাংস, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, মাছ ও খিচুরি বেশ বিখ্যাত এই হোটেলের। ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়, এক যুগের বেশ সময় অর্থাৎ ১০ বছর আগে এই সিস্টেম একই হোটেলে পাওয়া যেতো মাত্র ৬ টাকায়। বিভিন্ন সময় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে ৬ টাকা থেকে এই মেন্যুর দাম হয়েছে ২০ টাকা। এছাড়া এই হোটেলের অন্যান্য খাবারের দামও অন্য যেকোনো হোটেলের তুলনায় বেশ কম।

সিস্টেম খাবারের মেন্যু

সিস্টেম খাবারের ছয় পদের মধ্যে রয়েছে:

  • এক প্লেট ভাত
  • অর্ধেক ডিম
  • বেগুন ভাজি
  • আলু ভর্তা
  • শিম ভর্তা
  • আলু ভাজি

ডাল অবশ্য সবার জন্য ফ্রি। দোকানে মাছ-মাংস থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সিস্টেমের কদরই সবচেয়ে বেশি।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

হোটেল মাদারিপুরের পাশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬ থেকে ৭টি আবাসিক হল। আর হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের চেয়ে ওই হোটেলে দুপুরে অল্প টাকায় অধিক ভালো খাবার পাওয়া যায়। ফলে হলের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ওই হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসতে পারেন। আগে শুধু রাতে এই খাবার তৈরি করা হলেও গত প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কারণে দুপুরেও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মানিক মিঞা।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্টির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মামুন হোসেন বলেন, “আমি ক্যাম্পাসে আসার পর প্রথম এক বন্ধুর সঙ্গে মাদারিপুর হোটেলে খেতে গিয়েছিলাম। সেদিন প্রথম সিস্টেম খাবারের নাম শুনি এবং আগ্রহ নিয়ে সেই মেন্যু অর্ডার করি। তারপর খেয়ে বেশ ভালো লাগে। তারপর মাঝে মাঝে ওই হোটেলে গিয়ে রাতে খাওয়া হয়। আবার টাকার সংকট চললে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, “ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে শুনতাম সিস্টেম খাবার ভালো। কিন্তু শুরুর দিকে দাম শুনে যেতে ইচ্ছে হয়নি। কারণ ২০ টাকায় আসলে এত খাবার আর সেটি খাওয়া যায় এটি বিশ্বাস হচ্ছিলো না। পরে এক বন্ধু জোর করে আমাকে সেখানে নিয়ে যায়। যাওয়ার পর সেখানে প্রথমবার খেয়েই ফ্যান হয়ে যাই। এখন মাঝে মাঝেই এই হোটেলে আসা হয়। আর ২০ টাকায় যে খাবার দেওয়া হয় সেটি আসলেই অবিশ্বাস্য। এটি আসলেই প্রশংসার দাবিদার।”

সিস্টেম খাবারের ভবিষ্যৎ

সিস্টেম খাবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মানিক মিঞা জানান, “শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও ভালোবাসার কারণে আমরা এই খাবারের মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন পদ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সিস্টেম খাবার একটি আশীর্বাদস্বরূপ। অল্প টাকায় পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার পাওয়ার এই সুযোগ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় সুবিধা। মানিক মিঞার এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading