সম্পাদকীয়

বিপ্লব ও সভ্যতার দ্বন্দ্ব: শোষণের প্রতিক্রিয়া ও রাষ্ট্র সংস্কার

বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা, শোষিত মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ

বিজ্ঞাপন

বিপ্লব সাধারণত প্রচলিত নিয়ম ও রীতির বাইরে গিয়ে ঘটে। সংবিধান ও আইন মেনে বিপ্লব আনা প্রায় অসম্ভব, কারণ বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্যই হলো বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা ও নিয়মের পরিবর্তন। ইতিহাসে দেখা যায়, বিপ্লবীরা প্রায়শই প্রচলিত আইন ও সংবিধান ভেঙে নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

‘সভ্য’ ও ‘সভ্যতা’ শব্দগুলো খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু এর মধ্যে থাকা অসভ্যতাও একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। শোষিত মানুষ যখন মুক্তি পায়, তখন তার আচরণ আমাদের চোখে ‘সভ্য’ মনে না হলেও, তা তার শোষণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্বাভাবিক। শোষিত মানুষের চোখে পৃথিবীর রঙ ধূসর ও বিবর্ণ, এবং তার আচরণ ততটাই ভয়ংকর যতটা শোষণ সে সহ্য করেছে। হঠাৎ মুক্তির স্বাদ তাকে পাগল করে দিতে পারে, এবং সে সহজে ‘সাধারণ’ হতে পারে না।

‘সভ্য’ হওয়া মানেই তো ভয় পাওয়া। নিয়ম রীতি মেনে চলার এক তীব্র প্রচেষ্টা। ফতোয়া ধরে জীবন কাটানো। সংবিধান ও আইনের বই মাথায় নিয়ে সামনে চলা। যুক্তরাষ্ট্রের মত শক্তিশালী প্রশাসন আজ পর্যন্ত ‘Gun Cultures’ রুখে দিতে পারেনি। আরো স্পষ্ট করে বলা উচিত, কিছু কিছু মানুষদের কথা মেনে নিলে আপনাদের ‘সভ্য’ রাষ্ট্রে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। গোয়েন্দা সংস্থার অবস্থান হতে পারে বাড়াবাড়ি। রাষ্ট্রের পুরো প্রশাসনিক কাঠামোর কোনরুপ অস্তিত্বের দরকার নাই। কারণ ‘সভ্য’ রাষ্ট্র!

আন্দোলন চলমান প্রক্রিয়া। আন্দোলনে একবার হাজারো জীবনের বিপর্যয় ঘটবে আর আমরা স্বাধীন হয়ে যাবো এত সহজ বোধহয় নয়। আন্দোলন যারা-ই করেন তারাও ভালোভাবে জানেন যে, আজ ‘ক’ বিষয় কেন্দ্রিক আন্দোলন হচ্ছে তো আগামীকাল ‘খ’ বিষয় কেন্দ্রিক আন্দোলন করতে হতে পারে। পুনরায় এই ‘খ’ বিষয়ক আন্দোলন আগের ‘ক’ বিষয়ক আন্দোলনের পরিপন্থীও হতে পারে। তাছাড়াও যা কিছুই অর্জন তার রক্ষা করা আন্দোলন করার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন।

গতকাল রাতের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র এবং আগত সময়ের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন হতে পারে তা চায়ের স্টলের বুদ্ধিজীবী হয়ে অনুমান করাও সম্ভব নয় (আমাদের বেশিরভাগের অবস্থা তাই)। আমরা তো ভুক্তভোগী নই, ভয়ানক শোষিতও নই, না বুকে বুলেট নিয়ে লিখছি। এত এত ঘটনা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ আমাদের সত্যতা যাচাইকরণে তীব্র ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে। যা দেখছি তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। কিন্তু হুট করেই হাজারো জীবনের বিপর্যয় কে হটিয়ে পাল্টা ন্যারেটিভ যদি তৈরি-ই করতে হয় তাহলে এই শুরুটার শুরু করা উচিত হয় নাই।

বিজ্ঞাপন

আপনি এই প্রাণগুলোর বিপর্যয় তো মানেন! স্পষ্ট খোলা চোখে দেখেছেন নিশ্চয়। কিন্তু এই গল্পের সূচনা গত এক মাসের নয়। কারো কারো জন্য দীর্ঘ পনেরো বছরের হয়রানির, মৃত্যুর এবং অনেক শোকের। সত্য হলো, আমরা কেউ-ই চাই না, মানে আমরা অতি সভ্যরা অন্তত চাই না আরো রক্ত ঝড়ুক। এক পতাকার নিচে অবস্থান নিয়েছে দেশ ছেড়ে যাবে বলা ছেলেটিও। কেন? খামোখাই তো প্রাণ দেন নাই। কারো কারো মতে অভিমান শুধু এক পক্ষের থাকা ন্যায়সঙ্গত কিন্তু বাকি সমস্ত পক্ষের অভিমান নাই? থাকা চলবে না?

হুট করে পাল্টা ন্যারেটিভ! আপনি রাস্তায় ছিলেন? হয়রানি কাকে বলে এবং কত প্রকার দেখেছেন জীবনে? খুব কাছের মানুষকে হারাতে দেখেছেন? নৈরাজ্য, দুর্নীতি, লুট দেখেও না দেখার ভান করেন কেন? সামান্য কি ডিস্টোপিয়ান দৃশ্য সামনে দেখেছেন তো হায়… হায়… সর্বনাশ ঘটে গেছে! আপনাদের প্রতি আলাদা করে কিছুই বলার নাই। একটা মিমস্‌ দেখেছিলাম, লেখা, “বলো চ্যাটের বাল এন্ড মুভ অন!”

রাষ্ট্র সংস্কারের আরো অনেক কিছু বাকি। যা কিছুই অর্জন করেছেন তা রক্ষা করুন। আমাদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে যারা আঘাত হেনেছে তাদের ব্যবস্থা নিন এবং পুনরায় উঠে দাঁড়ান। নতুবা তথাকথিত রাজনীতি পুনরায় আমাদের উপর ভর করতে যাচ্ছে। বিদেশের ‘Invasion’ নয়, স্বদেশের সংষ্কার চাই! কারো ধর্মে আর কোনরুপ আঘাত চাই না। নৈরাজ্য, ধ্বংস, লুট, দুর্নীতি, নিপীড়ন থেকে মুক্তি চাই।

আর রক্ত চাই না! ঘুম আসে না আজকাল। রক্তের ছবি রোজরোজ দেখতে দেখতে ফিলিস্তিনের মত অভিজ্ঞতাও নেওয়া হয়ে গেল। আরো মৃত্যু আমাদের মত চায়ের স্টলের বুদ্ধিজীবীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত/বিকল/অচল করে তুলবে। সব মনে রাখা হবে!

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading