আল্লাহর বাণী
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “وَ اِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ ؕ وَ یَمۡکُرُوۡنَ وَ یَمۡکُرُ اللّٰهُ ؕ وَ اللّٰهُ خَیۡرُ الۡمٰکِرِیۡنَ” (সূরা আনফাল, আয়াত ৩০)।
অর্থ: আর কাফেররা যখন প্রতারণা করতো আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেওয়ার জন্য। তখন তারা যেমন ছলনা করত, তেমনি আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তায়ালার ছলনা সবচেয়ে উত্তম।
মদিনায় ইসলামের বিস্তার
মদিনায় যখন ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল এবং রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামদের হিজরতের জন্য আদেশ দিলেন, অধিকাংশ সাহাবীরা হিজরত করার ফলে মক্কা শহরটা যেন ফাঁকা হয়ে গেল। রাসূল (সাঃ), হযরত আলী (রাঃ), আবু বকর (রাঃ) তখনো হিজরত করেননি। মক্কার মুশরিকরা অস্থির হয়ে গেল, যে আমাদের শহর থেকে এত লোক বের হয়ে গেল তা আগে তারা কল্পনাও করতে পারেনি।
দারুন নদওয়া বৈঠক
মক্কার বড় বড় নেতারা দারুন নদওয়া বৈঠকে বসল এবং বলল এখনি আমাদের কিছু একটা করতে হবে নইলে উপায় নেই। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উদবা বিন রাবিয়া, সাইবা বিন রাবিয়া, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান, তাইমিয়া বিন আদি, নজর ইবনে হারেজ, আবুল বুখতারী, জামাহ বিন আসওয়াদ, হাকিম বিন হেজাম, নাবিয়া মুনাবাম হাজ্জাজের দুই ছেলে, সুমাইয়া বিন খলফ বেলাল (রাঃ) মুনিব।
শয়তানের উপস্থিতি
তাদের পরামর্শ সভার সময় শয়তান এক মুরুব্বির বেশে ওই বৈঠকে হাজির হল। তখন একজন তাকে প্রশ্ন করলেন আপনি কে, কোথা থেকে আসছেন, কি চান। শয়তান উত্তর দিল, আমার বাড়ি নজদে, আমি এই পথে যাচ্ছিলাম শুনতে পেলাম আপনারা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছেন। তো আমিও চাচ্ছিলাম আপনাদের এই বৈঠকে বসবো, আপনাদের কথা শুনবো, প্রয়োজন হলে পরামর্শ দিব যদি আপনারা কিছু মনে না করেন।
প্রথম প্রস্তাব: বন্দি করা
প্রথমে আবুল বুখতারী প্রস্তাব করল যে, মোহাম্মদ (সাঃ) কে ধরে একটা ঘরে বন্দি রাখা হোক। সেই ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া হবে, ছোট্ট একটা খিরকি থাকবে সেখান দিয়ে যেন খাবার ঢুকে দেওয়া যায়। যতদিন পর্যন্ত তার মৃত্যু না হয়, ততদিন পর্যন্ত তাকে ঘরে বন্দি রাখা হোক। শয়তান বলল, না এটা আমার কাছে পছন্দ হয়নি। তাকে বন্দি করলে তার দলের লোকজন যুদ্ধ করে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাব: দেশান্তর করা
হিসাব ইবনে আমর প্রস্তাব করলেন, মোহাম্মদ (সাঃ) কে একটা উটের উপর তুলে দেশান্তর করে দেওয়া হোক। শয়তান বলল, না, মোহাম্মদ (সাঃ) যেখানে যাবে সেখানেও মানুষ তৈরি করবে এবং আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
তৃতীয় প্রস্তাব: হত্যা করা
আবু জেহেল প্রস্তাব করল, কুরাইশ বংশের প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে শক্তিশালী যুবক ধারালো তরোয়াল নিয়ে একসাথে হামলা করে মোহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করবে। শয়তান বলল, এই পরিকল্পনা আমার কাছে ভালো লেগেছে। এভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আজ রাতেই মোহাম্মদ (সাঃ) এর বাড়ি ঘিরে, সারারাত ঘিরে রেখে সকালে তাকে হত্যা করা হবে।
আল্লাহর পরিকল্পনা
তখন আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল আমিনকে পাঠালেন রাসূল (সাঃ) এর কাছে। জিব্রাইল আমিন এসে রাসুল (সাঃ) কে বললেন, আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকেন, আজ রাতে আপনি বিছানায় অবস্থান করবেন না। রাসূল (সাঃ) এই সংবাদ পেয়ে, হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন আজ রাতে আমার বিছানায় তুমি থাকবে, এই কম্বলটা মুড়ি দিয়ে থাকবে, কোন অকল্যাণকর জিনিস এটার ভেতর প্রবেশ করবে না ইনশাল্লাহ।
রাসূল (সাঃ) এর হিজরত
রাসূল (সাঃ) হিজরতের জন্য প্রস্তুতি নিলেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সাথে পরিকল্পনা করলেন। তারা মক্কা থেকে মদিনার পথে যাত্রা শুরু করলেন। হিজরতের সময় তারা গুহায় আশ্রয় নিলেন এবং আল্লাহর সাহায্যে মক্কার মুশরিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে মদিনায় পৌঁছালেন।
মদিনায় আগমন
মদিনায় পৌঁছে রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবীরা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে মনোনিবেশ করলেন। মদিনার মানুষ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল এবং ইসলাম দ্রুত মদিনায় বিস্তার লাভ করল।
মক্কার মুশরিকদের ষড়যন্ত্র এবং আল্লাহর পরিকল্পনা
১. আল্লাহর বাণী:
- আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফাল, আয়াত ৩০-এ বলেন, কিভাবে কাফেররা রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আল্লাহ তাদের ছলনার উত্তম প্রতিদান দিয়েছিলেন।
২. মদিনায় ইসলামের বিস্তার:
- মদিনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার পর রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামদের হিজরতের আদেশ দেন।
- অধিকাংশ সাহাবীরা হিজরত করার ফলে মক্কা শহর ফাঁকা হয়ে যায়।
৩. দারুন নদওয়া বৈঠক:
- মক্কার বড় বড় নেতারা দারুন নদওয়া বৈঠকে বসে রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।
- শয়তান এক মুরুব্বির বেশে বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তাদের পরামর্শ দেয়।
৪. প্রথম প্রস্তাব: বন্দি করা:
- আবুল বুখতারী প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ (সাঃ) কে বন্দি করার জন্য, কিন্তু শয়তান এই প্রস্তাব নাকচ করে।
৫. দ্বিতীয় প্রস্তাব: দেশান্তর করা:
- হিসাব ইবনে আমর প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ (সাঃ) কে দেশান্তর করার জন্য, কিন্তু শয়তান এই প্রস্তাবও নাকচ করে।
৬. তৃতীয় প্রস্তাব: হত্যা করা:
- আবু জেহেল প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করার জন্য, এবং শয়তান এই প্রস্তাব সমর্থন করে।
৭. আল্লাহর পরিকল্পনা:
- আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল আমিনকে পাঠিয়ে রাসূল (সাঃ) কে হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।
- রাসূল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে তার বিছানায় থাকতে বলেন এবং নিজে হিজরতের প্রস্তুতি নেন।
৮. রাসূল (সাঃ) এর হিজরত:
- রাসূল (সাঃ) এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) মক্কা থেকে মদিনার পথে যাত্রা শুরু করেন।
- তারা গুহায় আশ্রয় নেন এবং আল্লাহর সাহায্যে মক্কার মুশরিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে মদিনায় পৌঁছান।
৯. মদিনায় আগমন:
- মদিনায় পৌঁছে রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবীরা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে মনোনিবেশ করেন।
- মদিনার মানুষ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় এবং ইসলাম দ্রুত মদিনায় বিস্তার লাভ করে।
উপসংহার
মক্কার মুশরিকদের ষড়যন্ত্র এবং আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা সর্বদা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করেন এবং তাদের জন্য উত্তম পথ নির্ধারণ করেন। আমাদের উচিত আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলা।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.