একটা কাল্পনিক গল্প নিয়ে চলে এসেছি আপনাদের মাঝে। বলছি ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নেটফ্লিক্স’ এর সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্ট সি (The Silent Sea)’ এর কথা।
পৃথিবীর পানিশূন্য অবস্থা
পৃথিবীতে এখন পানিশূন্য। নদী-নালা, খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে, আর এই পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সব রকমের কৃষি কাজ। তাই বিজ্ঞানীরা ‘ভার্টিকাল গার্ডেনিং’ করে ফসল উৎপাদন করছে। মানুষেরা এখন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছে পানি কিনার উদ্দেশ্যে। বলতে গেলে গোটা দুনিয়া এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে চলে এসেছে।
চাঁদে পানির সন্ধান
অদূর ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে শেষ হয়ে গেছে পৃথিবীর সর্বশেষ বিন্দু পানির ফোটা। শুকিয়ে গেছে সাগর, এক গ্লাস পানির জন্য চারিদিকে পড়ে গেছে মানুষের হাহাকার। পানি ছাড়া কীভাবে পৃথিবীতে টিকে থাকবে মানুষ? তখনই মানুষের শেষ ভরসা হিসেবে ধেয়ে এলো আজব এক খবর, চাঁদের মাটিতে নাকি পানি পাওয়া গেছে।
কিন্তু মানুষদের এই শেষ ভরসার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো এক দুশ্চিন্তার প্রশ্ন, “কীভাবে এই চাঁদের পানি পৃথিবীতে আনা যায়?”, “মানুষের কি বিপদই বা অপেক্ষা করছে চাঁদে?”
মিশনের প্রস্তুতি
এরপর গল্পে দুইজন অফিসারকে দেখা যায়, তাদের মধ্যে একজনের নাম ‘মি. কিম জেছং’। তারা দুইজন ‘ছং জিয়াং’ নামের একটা বিজ্ঞানীর সাথে দেখা করতে যায়। এই বিজ্ঞানী অত্যন্ত শানিত স্বভাবের ও প্রাণী প্রেমিক। মি. কিম জেছং বিজ্ঞানীকে একটি মিশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
বিজ্ঞানী ‘ছং জিয়াং’ যখন মিশনটা কিসের জিজ্ঞেস করে তখন সে জানায় তাকে চাঁদে যেতে হবে। জিয়াং অনেক ভাবনা চিন্তার পর মিশনটিতে যেতে রাজি হয়ে যান। পরেরদিন জিয়াং একটা জায়গায় যায় যেটা মূলত সরকারের অধীণে ছিল। সেখানে ১১৭ জন মানুষের একটি স্মৃতিস্তম্ভ বানানো রয়েছে। এই ১১৭ জন মানুষ মূলত আজ থেকে ৫ বছর আগে চাঁদে যাওয়ার পথে একটি দুর্ঘটনার কারণে মারা যায়।
মিশনের শুরু
সেখানে গিয়ে ‘জিয়াং’ এর সাথে ‘ক্রু’ এর ক্যাপ্টেন সহ আরো তিনজন ক্রুমেম্বারদের দেখা হয়, যাদের মধ্যে একজন পেশায় চিকিৎসক। এরপর সেখানে তাদের মিশনের হপড ডিরেক্টর সেছ আসে, যার নির্দেশে তারা এই মিশনে যাচ্ছে। এরপর পুরো ক্রুটিমকে মিশন সম্পর্কে সকল ধরণের তথ্য বিস্তারিত ভাবে বোঝানো হয়। তাদেরকে একটি ক্যাপসুল সম্পর্কে বলা হয় যেটা তাদের আনতে হবে এবং বলা হয় তাদের কাছে মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় আছে।
চাঁদে যাত্রা ও দুর্ঘটনা
তারপর তারা সবাই চাঁদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় এবং তাদের রকেট টেক অফ করে এবং চাঁদে গিয়ে ক্রাশ হয়। এটার কারণ রকেটে সমস্যা হয়েছিল যার কারণে ইঞ্জিন চালু হচ্ছিলো না। কিন্তু ক্রাশ হওয়ার পরেও কারো কোন ক্ষতি হয় না।
স্টেশনে রহস্যময় ঘটনা
রকেট থেকে বের হওয়ার পর একটু পরে তাদের সিনিয়র যে তাদের নিয়ে এসেছে সে মারা যায়। তাদের স্পেস সুট এর অক্সিজেন কমে যাওয়াতে তারা স্পেস স্টেশনে যায় এবং তারা একটি মৃতদেহ দেখতে পায় যেটা ছিল এর আগে যে ক্যাপশন নিতে এসেছিল তার।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো মৃতদেহটি ছিল পানিতে ডুবে মরার। কিন্তু স্টেশনের ভেতর কেউ কিভাবে ডুবে মরতে পারে? এরপরে তারা যখন স্টেশনে একটি রুম খুলে তখন দেখে অনেকগুলো মৃতদেহ আর সবগুলোই কিভাবে মারা গেছে পানিতে ডুবে। এটা দেখে তারা সবাই আরো অবাক হয়ে যায়। এবং একটি মৃতদের হাতে একটি ক্যাপসুল ছিল। ক্যাপসুলটি নিতে যায় আর লোনা ওয়াটার এক কেমিক্যাল আক্রান্ত হয়।
লুনা ওয়াটারের রহস্য
যে ক্যাপসুলটি তারা সকলে নিতে এসেছিল, লুনা ওয়াটার কেমিক্যাল আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীর থেকে একদম মোটরের মতো পানি বের হচ্ছিল এবং একটু পরে সে মারা যায়। ডাক্তার বলে ঐ রকম পানি বের হওয়া কোনদিনও দেখেনি। ডাক্তার লুনা ওয়াটার সম্পর্কে রিসার্চ করে এবং বুঝতে পারে যে লোনা ওয়াটার ভাইরাসের মতো কাজ করে।
ডক্টর জেয়াং বলে লোনা ওয়াটার স্পেস স্টেশনের সকল মানুষের তোদের মরার কারণ। লোনা ওয়াটার মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর মাল্টিফাই হতেই থাকে। এই মাল্টিফাকে কন্ট্রোল করতে পারলে পৃথিবীকে বাঁচানো যাবে, পৃথিবীর পানির অভাব মেটানো যাবে। এরপর ডক্টর জিয়াং মিস্টর হাং একটি স্টোরে যায় যেখানে অনেকগুলো লুনা ওয়াটার ক্যাপসুল দিয়ে ভরা এবং তারা সেটা সংগ্রহ করে।
লুনার আক্রমণ
আর তখনই ওদের গ্রুপ মেম্বারের উপর হামলা করে একটি শিশু যার নাম লুনা। তখন সকলে লুনার উপর হামলা করে এবং লুনা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন একটি ক্যাপসুল ভেঙে যায় আর সেখানে পানি তৈরি হতে শুরু হয়ে যায়। তারপর লুনা আবার সেখানে আসে এবং লুনা ওয়াটার নেয়। উনাকে মারার জন্য লুনা ওয়াটারে গুলি করে তখন লোনা ওয়াটার ক্যাপসুলটি ফেটে যায় এবং লোনার কাটা অংশগুলো হিল হতে লাগে।
তখন তারা বুঝতে পারে যে লুনা ওয়াটার দিয়ে লুনাকে মারা সম্ভব নয়। লুনা ওয়াটার ক্যাপসুলের রহস্য শুধু লুনাই জানে, তাই তারা লুনাকে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটি লুনা ওয়াটার ক্যাপসুল দিয়ে ফাঁদ তৈরি করে রাখে। লুনাকে ধরে ফেলে, তারপর ডাক্তার জিয়াং একটি হার্ডডিক্স পায় যেখানে তারা দেখতে পায় জিয়াং বোন লুনা ওয়াটার বাচ্চাদের উপর পরীক্ষা করছিল এবং এতে অনেক বাচ্চা মারা যায় কিন্তু শেষের একটি বাচ্চা বেঁচে যায়। আর সেই বাচ্চাই হলো এই লুনা।
শেষ পর্ব
এরপর পুরো স্টেশনে পানি দিয়ে ভরে যায় এবং তারা স্টেশন থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই দেখতে পায় ডক্টর জিয়াং এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে। তখন সে নিজেকে একটি রুমে বন্ধ করে। চোখ খুলেই দেখতে পায় সে ঠিক হয়ে গেছে। অন্য ডাক্তার তাকে জানায় যে লুনার রক্ত এই ইনফেকশন ঠিক করতে পারে এবং সেই রক্ত দিয়েই তাকে ঠিক করা হয়েছে।
তখন তারা সকলে স্পেস স্টেশনের বাইরে যায়। তারা দেখে লুনা স্পেস স্যুট ছাড়াই চাঁদে নিঃশ্বাস নিতে পারে, তার কোন অক্সিজেন প্রয়োজন হয় না। তখন সেখানে একটি রেসকিউ আসে এবং তাদের সবাইকে উদ্ধার করে। এর ৮ পর্ব এখানেই শেষ হয়।
উপসংহার
সিরিজটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। পুরো সিরিজটাই ছিল রহস্যজনক। তাই আমি সিরিজটি সম্পর্কে লিখলাম। হয়তোবা আপনি সিরিজটি পড়ে অতটা মজা পাননি যতটা আমি দেখে পেয়েছি। অবশ্যই সিরিজটি দেখবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর প্রথম পর্ব দেখার পর আপনি সিরিজটির প্রেমে পড়ে যাবেন এবং পুরো সিরিজটা দেখবেন।
আজ এই পর্যন্তই। খোদা হাফেজ!
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.