এক প্রখ্যাত ইংরেজ কবি বলেছিলেন, ভালবাসা হবে কি হবে না সে সম্পর্কে যে দিন কেউ নিশ্চিত হয়ে যাবে, সেই দিন থেকে ভালবাসার মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ভালবাসা হলো প্রকৃতির লীলা খেলা, হলে হবে, না হলে না হবে। নানা কারণে একজনের আর একজনকে ভাল লাগতেই পারে। অনেক দূর বন্ধুত্ব রূপে এগিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তা ভালবাসা অবধি শেষ পর্যন্ত না গড়াতে পারে! তার কারণ ভালবাসা যুক্তি বুদ্ধির উপর।
‘তুমি’ শব্দের মাধুর্য
‘তুমি’ এই একটিই শব্দ যেন ভালবাসার অমোঘ মন্ত্র। তুই নয় কেন! আপনিই বা নয় কেন! তুই এখন অনেক কাছের শব্দ। আপনি শব্দটি আগে খুব প্রচলিত ছিল। এখন সিরিয়ালেও প্রেমিক-প্রেমিকা, বর-বউরা আপনি বলে। কিন্তু ‘তুমি’র মধ্যে এক মধু মাখা রহস্যময়তা আছে। এ যেমন বিরহের পূর্বাভাস দেয়, তেমনই মিলনের।
আড়ালের রহস্য
“তোমাকে বকব, ভীষণ বকব, আড়ালে।” এই ‘আড়ালে’ শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘তুমি’র আসল রহস্যময়তা! তুমি আমার এত নিবিড়, এত কাছের যে তোমাকে পাশে নিয়েও আমি আড়ালে রেখে দিই। তুমি রক্ত করবীর নন্দিনীর মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াও, মনের গভীরে আগুন জ্বালাও, কিন্তু আমি তোমায় আটকেও রাখি না। তবু তুমি আমার কাছেই থাকো, আর সেই তুমি একান্ত আমার।
কল্পলোকের বাসিন্দা
তবে কি সেই তুমি আমার কল্পলোকের বাসিন্দা! না তো, তুমি তো রক্ত-মাংসের হয়েই আছো আমার কাছে! তাহলে কেন আমার থেকে তুমি আলাদা হয়ে যাও? যদি তুমি আমার একান্ত আপন হও, তাহলে বিরহের দিনেও তো আমি তোমার পাশে বসে থাকবো। তোমার সঙ্গেই গুনগুন করে উঠব আমার একান্ত নিভৃত সঙ্গীত।
রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি’র মধ্যে তো সকলেই আছেন। প্রেমিকা আছেন, ঈশ্বর আছেন। প্রেম ও পুজা সেখানে মিলেমিশে গেছে। রবীন্দ্রনাথ যখন বলছেন, “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা,” তখন এক সাথে শিল্প ও অনুভূতি দুটোই বোঝায়, তেমন বোঝায় প্রেমিকাকে, ঈশ্বরকে।
প্রেমের মাধুরী
যদি প্রেমকেও ধরো, তাহলে সেখানেও রয়েছে আমার মনের মাধুরী। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায়, “তোমার কাছে রয়েছে পড়ে।” আমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি, “এক অদৃশ্য তুমি” কে উদ্দেশ্য করে এক কবিতা লিখে চলেছেন এক কবি।
ভালবাসার অপেক্ষা
হতেও পারে প্রত্যেক কবির এই “তুমি” একজনই। আবার এ-ও হতে পারে এই “তুমি” -ই হলো সেই ভালবাসা, যার জন্য আমরা অপেক্ষা করে রয়েছি অনন্তকাল। ভালবাসার আসল কথা হলো, তোমার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আসল মানুষটা কে চাই।
মনের মুক্তি
যে মানুষটি তার মনের মধ্যে থাকা হিংসা, বিদ্বেষ এবং বিরক্তির সঙ্গে থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কাউকে গভীরভাবে ভালবাসার মধ্যে আসলে নিজেরই মনের মুক্তির সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে।
ভালবাসার কাহিনি
তুমিই তো সেই মানুষ যার জন্য আমার অপেক্ষা ছিল হালভাঙা, পাল ছেঁড়া নৌকার মতো! এই তুমি কি আর আজকের তুমি? হাজার হাজার বছর ধরে ভালবাসার এক একটি কাহিনির ভিতর দিয়ে তুমি এসেছো। তোমার দু’চোখে অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার এক রুপকথা।
স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা
তোমার হাত কাউকে স্পর্শ করে থাকার জন্য ব্যাকুল। আর তা দেখে আমি কি তোমায় স্পর্শ না করে থাকতে পারি! রবীন্দ্রনাথ যেমন গেয়ে ওঠেন- “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা।”
বিরহের সঙ্গীত
এই গানটি শেষ হয়- “তুমি আমারই, তুমি আমারই বলতে বলতে।” পৃথিবীর সমস্ত গান, কবিতা আসলে বিরহের। এ কথা লিখেছিলেন জালালুদ্দিন রুমি, ও লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর ছিন্নপত্রে লিখেছিলেন করুণ রাগিনির কথা। যা আছে বলেই আমাদের মিলন সম্ভব হয়।
ভালবাসার শক্তি
স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, একমাত্র ভালবাসাই হলো সেই শক্তি যার সামনে “মৃত্যু” -ও হয়ে যায় “প্রেমিক”।
ভালবাসার মূল পয়েন্টসমূহ
- ভালবাসার অনিশ্চয়তা: ভালবাসা হবে কি হবে না, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।
- ‘তুমি’ শব্দের মাধুর্য: ‘তুমি’ শব্দটি ভালবাসার মধুরতা ও রহস্যময়তা বহন করে।
- আড়ালের রহস্য: ‘আড়ালে’ শব্দটি ভালবাসার নিবিড়তা ও গোপনীয়তা প্রকাশ করে।
- কল্পলোকের বাসিন্দা: ভালবাসার মানুষটি কল্পলোকের নয়, বাস্তবের।
- রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি’: রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি’ প্রেমিকা ও ঈশ্বর উভয়কেই বোঝায়।
- প্রেমের মাধুরী: প্রেমের মধ্যে মনের মাধুরী ও অনুভূতির মিশ্রণ থাকে।
- ভালবাসার অপেক্ষা: ভালবাসার জন্য অপেক্ষা করা একটি অনন্তকালীন প্রক্রিয়া।
- মনের মুক্তি: গভীরভাবে ভালবাসার মাধ্যমে মনের মুক্তি ঘটে।
- ভালবাসার কাহিনি: ভালবাসার কাহিনির মধ্যে দিয়ে ভালবাসার মানুষটি আসে।
- স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা: ভালবাসার মানুষটির স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা থাকে।
- বিরহের সঙ্গীত: বিরহের সঙ্গীত ভালবাসার তীব্রতা বাড়ায়।
- ভালবাসার শক্তি: ভালবাসার শক্তি মৃত্যুকেও প্রেমিকে পরিণত করতে পারে।
শেষে বলি, ভালবাসাই আমাদের দেখা করিয়ে দিতে পারে সেই ‘তুমি’র সঙ্গে, যার জন্য সারাটা জীবন আমরা অপেক্ষা করে থাকি।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.