তু ঝুথি মে মক্কার (Tu Jhoothi Main Makkaar): একটি আধুনিক প্রেমকাহিনীর মনোজ্ঞ ব্যাখ্যা

তু ঝুথি মে মক্কার (Tu Jhoothi Main Makkaar)

ব্যক্তিগত রেটিং: ৬.৫/১০
গান: ৯/১০
সংলাপ: ৭/১০
আইএমডিবি রেটিং: ৬.২/১০
রোটেন টমেটোস: ৩১% ফ্রেশ
রান টাইম: ২ ঘন্টা ৮ মিনিট
জনরা: রোমান্টিক কমেডি


কাহিনী সংক্ষেপ

স্পয়লার এলার্ট!

প্রথমেই বলতে হয় এ মুভিটির মূল কেন্দ্র বা প্রটাগনিস্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন রনবীর কাপুর (মিকি)। তার বিপরীতে ছিলেন শ্রদ্ধা কাপুর। এছাড়া মিকির বাবা ও মায়ের ভূমিকায় ছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়া ও বনি কাপুর। রনবীরের কাছের বন্ধু হিসেবে ডাব্বাস ছিলেন পুরাই অসাধারণ। বেশ মানিয়েছে তারপরে ও মনে হচ্ছিলো যেন আদিত্য থাকলে ফ্রেন্ডশিপ কেমিস্ট্রি টা আরো সুন্দর হতে পারতো!

মুভির ধরন

এটি মূলত একটি রোমান্টিক ফ্যামিলি ড্রামা। আর হ্যাঁ, লাভ রঞ্জনের সিনেমা মানেই লাভগুরুর প্রসপেক্ট থাকবে। তবে এদিক থেকে ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা ২’ মুভিটা আমার দৃষ্টিতে উনার সেরা কাজ। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে আর থাকাটাই বুঝি সমীচীন।

প্রধান চরিত্র ও কাহিনী

সোনার চামুচ মুখে দেয়া একটাই ছেলে মিকি, বাবার নিকট থেকে পাওয়া উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কার, বিজনেস দেখাশোনা করে। মিকির আরো একটা অদ্ভুত টাইপের ব্যক্তিগত ব্যবসা আছে। সেটা হলো যে সুন্দর করে, নিজের আবেগঘটিত জটিলতা না রেখে এবং কোন দোষ না দেখিয়ে সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা, ব্রেকাপ-মেকার ‘মিকি’।

কাহিনীর মোড়

মিকির দাদু অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। তার ক’দিন পর ডাব্বাসের সাথে কিঞ্চির বিয়ে চূড়ান্ত কিন্তু কিঞ্চির অতিরিক্ত মৃত্যু শোক দেখে ডাব্বাস মিকির সাথে বন্দোবস্ত করে যে ওর আর কিঞ্চির বিয়েটা ভেঙে দেবার জন্যে। মিকি তো মহাখুশি কিন্তু বিপাকে পড়লো স্পেনে ডাব্বাসের ব্যাচেলর পার্টি তে।

প্রেমের গল্প

ব্যাচেলর পার্টি তে একটি আইটেম সং এ আবির্ভূত হোন শ্রদ্ধা (তিন্নি)। তিন্নিকে দেখেই তো মিকি ক্রাশ খেয়ে গেলো, আর তিন্নির পিজ্জায় কামড় দেয়া দেখে ভালোবেসে ফেললো। তারপর তো দুজনের একে অপরের কাছে আসা, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করা মানেই ভালোবাসি এটা আবার উনার পছন্দ না মানে আমাদের হিরোইনের।

সম্পর্কের জটিলতা

মিকি তো তা না! সে তো প্রেমে পড়েছে, সত্যিকার প্রেমে কিন্তু তিন্নি সেটা কিছুতেই মানতে নারাজ। অনেক চেষ্টার পর পাত্রী রাজি হলো কিন্তু শর্ত হলো যাই হোক কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। চলছে প্রেম ঘটা করেই, এর মধ্যে মিকির পরিবারের সাথে তিন্নির পরিচয় হয়েছে। ডাব্বাসের বিয়েতে দুই পরিবারের পরিচয়। মিকির মা তো বলেই দিলেন শ্রদ্ধার আর মিকির ঘটনাবহুল লাভ স্টোরি।

টুইস্ট ও ক্লাইম্যাক্স

এবার মেয়ে কে তার ফ্যামিলি ফেস করতে হবে, সবাই সবকিছু বিবেচনা করে মত দিলেন বিয়েতে। টুইস্ট টা ঘটলো এখানেই মিকির পরিবারের অতিরিক্ত আতিথ্য বা অতিমাত্রায় ভালোবাসা টা নিতে পারলেন না তিন্নি, ও সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবেই হোক ব্রেকাপ করতে হবে। আরো একটা টুইস্ট হলো উনি সেই ব্রেকাপের দায়িত্ব টা দিলেন প্রফেশনাল কনসালটেন্ট মিকির হাতে। না তারা ভয়েস আপ্লিকেশনে করে কথা বলছে যার কারনে কেউ কাউকে চিনতে পারে নি।

মিকি প্রথম বুঝতে পারলো ওদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবার পর। মহাসমারোহে দুই পরিবার বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত আর এদিকে মিকি আর তিন্নির মধ্যে চলছে সম্পর্ক ভাঙনের আয়োজন। মিকির শুধু একটা প্রশ্ন কেন?

শেষ পরিণতি

আর মিকি উত্তর টা পেয়ে যায় বিয়ের আগের রাতে। ক্লাইমাক্স টা ছিলো অনুমেয়। মিকি একটা এসএমএস সেন্ড করে তিন্নিকে আর বলে এই এসএমটা ওর হবু বর কে দিতে। আমরা তো জানিই, বর সেই মিকি বেচারি নিজেই। বিয়ের দিন মিকি তিন্নি কে বিয়ে করতে বলে বেঙ্গালুরু নাকি দিল্লি মানে মিকি অথবা জব যে কোন একটা। তিন্নি তাহলে কি বেছে নিলো?

বিয়ে হলো না বরং সব দোষ গিয়ে পড়লো মিকির ওপর। ডাব্বাস আর কিঞ্চির বেবি শাওয়ারে অনেক দিন পর দেখা দুজনের। দুজনের প্রেমে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটলো। আর সে রাতে মিকির ভাগ্নের থেকে ব্যাপারটা জানতে পারে তিন্নি। তিন্নি শেষ বারের জন্য দেখা করতে বলে মিকি কে। কেন সে জানায় নি তিন্নিকে? উল্টো ম্যানুপুলেট কেন করলো?

মুভির মূল্যায়ন

মিকি জানায় ম্যানুপুলেট তো সে হয়েছে, সব দোষও ওর নিজের কাধে নিয়েছে। তিন্নি কান্নায় ভেঙে পড়ে আর ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে বলতে জড়িয়ে ধরে। তারপর তিন্নি মিকির মা কে ব্যাপার টা জানায়, মিকির গোটা পরিবার যায় এয়ারপোর্টে তিন্নিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। ওরে বাবা! সে কি যাত্রা! আপনি এমন যাত্রা খুব কমই করেছেন।

অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো…

সমালোচনা

লাভ রঞ্জনের গতানুগতিক স্ক্রিপ্ট। উনি উনার সেই পরিচিত লাভগুরু কনসেপ্টের বাইরে যান নি। কমেডি হিউমার ভালোই ছিলো, তবে আরো বেশি ভালো করার জায়গা ছিলো। দুটো ধনী পরিবারের ছেলে মেয়ের ‘মডার্ন লাভ কালচার’, ব্যাচেলরদের বিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনার একটা দর্শন প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। পুরোই রোমান্টিক মাসালা আর কিছু কোয়ালিটি কমেডি করার চেষ্টা ছিলো।

সংলাপ ও মিউজিক

সংলাপ চলনসই। মনে গেঁথে যাবে এমন সংলাপ নেই। তবে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে যা আছে তা জুতসই।

এই সিনেমার প্রাণ হলো এর মিউজিক। প্রীতম দাদা বরাবরের মতো তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কোরিওগ্রাফি অনবদ্য। স্ক্রিনপ্লে খুবই ভালো ছিলো, যেটা দুর্বল চিত্রনাট্যের অভাব বুঝতে দেয়নি।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading