মনোবিজ্ঞান

করোনাকাল (Coronavirus): এক অভিজ্ঞতা, এক জীবনবোধ

- Advertisement -

২০২০ সালের শেষভাগে, বিশ্ব এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল যা কেবলমাত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। করোনাভাইরাস (Coronavirus), যা COVID-19 নামে পরিচিত, দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং অবশিষ্টদের জীবনকে অনিশ্চয়তায় ভাসিয়ে দেয়।

এই আর্টিকেলটি সেই সময়কালের এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। লেখক, যিনি একজন সাধারণ মানুষ, প্রাথমিকভাবে করোনার বিস্তার সম্পর্কে অস্বীকার করলেও, পরবর্তীতে নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর বাস্তবতা উপলব্ধি করেন।

এই লেখাটি শুধু লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি কিছু। এটি একটি সম্পূর্ণ সমাজের ভয়, হতাশা এবং অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। লকডাউন, চাকরি হারানো, প্রিয়জনের মৃত্যু, এবং ভবিষ্যতের প্রতি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়ে, মানুষ ধীরে ধীরে তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলে।

এই লেখার মাধ্যমে লেখক শুধুমাত্র সেই সময়কালের ভয়াবহতা বর্ণনা করেননি, বরং মানবজাতির দৃঢ়তা ও সহনশীলতার প্রতিও আলোকপাত করেছেন।

প্রথম প্রথম মনে হয়েছে, “কই আমরা তো আক্রান্ত হই নাই (করোনা ভাইরাসে)!” তারপর বললাম, “কই আমি তো আক্রান্ত হচ্ছি না!” কিন্তু আমিও যখন আক্রান্ত হলাম তখন বুঝতে পারলাম প্রকৃত অর্থেই এমন একটি ভাইরাস বিদ্যমান এবং এর থেকে রেহাই মিলেনি আমাদের অনেকের।

- Advertisement -

প্রত্যেকদিন গণনা হতে শুরু করলো, “আজ কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন?” ক্রিকেট ম্যাচের স্কোর যেমন খুব মনোযোগ দিয়ে আমরা দেখি ঠিক তেমনি দেখতে শুরু করলাম বিভিন্ন দেশে মানুষের মৃত্যুর ঢল। সর্বশেষ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে যখন মানুষ অক্সিজেন না পেয়ে হাসপাতালের রাস্তায় কোনোভাবে হাঁটছে এবং একসময় ওখানেই পড়ে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছেন। এই ভিডিওগুলো আজও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে বিদ্যমান।

নাটকীয়ভাবে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পরিবর্তন হতে শুরু করলো। কেউ কেউ নিশ্চয় ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন, “আমার হাতে আর বেশিদিন নাই!” এদেশ বাংলাদেশ, এদেশেও মানুষ মানুষের জানাজা পর্যন্ত পড়াতে ভয় পেতে শুরু করলো। একের পর এক চাকুরী হারাতে শুরু করলো। চারপাশে আর কোনো আড্ডা নাই, আলোচনা-সমালোচনা নাই, মানুষ বাড়িতে বসে বসে শুধু দিন গুনছিল এর থেকে কবে রেহাই পাওয়া যায়।

লকডাউন থেকে শাটডাউন শুরু করা হলো চারপাশে। একপাশে ডাক্তার তো আরেকপাশে পুলিশের পাহারা চলমান; দিনের পর দিন। কিন্তু কোনোভাবেই ঠিক ক্ষতিটা সামাল দেওয়া গেল না। এত এত মানুষের প্রাণ চলে গেল। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে যেটুকু সম্ভব নিজের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলাম, কাছের মানুষদের ফোনকল করে মাফ চাইলাম। সে সময় একদিনের জন্য হলেও মনে হয়েছে, “পৃথিবীটা আর কোনোদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।”

প্রত্যেকদিন মিডিয়া পাড়ার অনর্থক ডিবেট আমাদের আগ্রহের প্রধান কারণ হয়ে উঠলো। পড়ে থাকা সিনেমা বা বই একবার দেখার/পড়ার ইচ্ছে হলো। পা বন্দি জীবনে ওটুকুই ছিলো খোরাক। মধ্যবিত্তরা চরম সংকটে। শহুরে মানুষ বলছে, “গ্রামে যারা আছেন ওদের কথা ভেবে ভয় লাগছে।” আবার গ্রামে যারা আছেন তারা বলছে, “শহরে যারা আছেন ওদের কথা ভাবতেই দমবন্ধ হয়ে আসছে।”

এরপর ভাক্সিন বাজারে আসলো… পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করলো… উপর আল্লাহ্‌’র শুকরিয়া, আজ যারা এ যাত্রায় বেঁচে গেছি…

- Advertisement -

এই যে, আমরা যারা বেঁচে গেলাম তারা নতুন করে জীবন শুরু করলাম। নতুন করে জীবনের নকশা আঁকালাম। আমাদের সরকার কারিনা (পড়ুন করোনা) ভাইরাসের কুইক রিকোভারি দিতে সক্ষম হলেন এবং কুইক রিস্টার্ট করাতেও বাধ্য হলেন। কিন্তু ‘কুইক রিকোভারি’ ঠিক থাকলেও ‘কুইক রিস্টার্ট’ বোতামে চাপ দেওয়াটা উচিত হয় নাই। হোক সেটা দেশের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে করা হয়েছিলো বা যে কোনো কারণে!

বহু মানুষ তার কাছের মানুষকে হারিয়েছেন, বহু মানুষ তার চাকুরী হারিয়েছেন, বহু মানুষ আর্থিকভাবে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বহু যুবক/যুবতী তাদের স্বপ্নগুলো হারিয়েছেন… একবার ভাবুন তো, এমন কোনো গাড়ি যার কাছে প্রয়োজনীয় পেট্রোল নাই, ফিটনেসবিহীন, ঠিকমতো গিয়ার কাজ করছে না এমন গাড়ি নিয়ে ফের হাই-রোডে ৭০-১০০ কিলো./ঘন্টা বেগে কুইক রিস্টার্ট নেওয়া কি প্রাকটিক্যালি সম্ভব? উচিত?

আজ যে চারপাশে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। পানিক ডিজওর্ডার ও অ্যাংজাইটি দেখা দিচ্ছে। একাধিক রিসার্চ পেপারের এই দাবী দিন দিন স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে চোখে পড়ছে। কিন্তু আজও আমরা মানুষে মানুষের মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কিনা খেয়াল করছি না। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাকে এক কাতারে রাখতে পারছি না। মানুষ তো দূর আমরা নিজেই নিজেদের দিকে একবিন্দু ঠাহর হয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছি না।

তবে মনে হয়, এবার এক্সিডেন্ট যদি হয় তাহলেও খুব বেশি অবাক হবো না। ড্রাইভার ছাড়া এ বাসে হাজারো যাত্রী, চলছি হাই-রোডে…

- Advertisement -

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান

পরিচয়: আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। আমি একজন বহুমুখী ব্যক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার পেশাগত জীবন বিস্তৃত। লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, অডিও ও ভিডিও সম্পাদক, ছবি সম্পাদক, ইউটিউবার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে কাজ করি। মাইক্রোসফটের একজন ডেভেলপার এবং অ্যাপ ডেভেলপারও আমি। More »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button