ব্যবসা ও বাণিজ্য

বাংলাদেশে বীমা: প্রয়োজনীয়তা, ইতিহাস ও সুবিধা

বীমা কেন করবেন? জানুন বিস্তারিত

আপনার ভবিষ্যত নিরাপদ রাখতে বীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ? বীমা আপনাকে আকস্মিক বিপদের সময় আর্থিক সুরক্ষা দিতে পারে। বাংলাদেশে বীমার সুবিধা ও ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে চলাফেরা ও জীবনযাপনের জন্য নানা ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়। একবিংশ শতাব্দির সভ্য সময়ে মানুষের বিপদ, বিপর্যয় ও অঘটন থেকে রক্ষার জন্য নানা পথের আবিস্কৃত হয়েছে। সেসব পথ বা পদ্ধতির মধ্যে বীমা সবচেয়ে অন্যতম একটি।

বীমা করা কেনো প্রয়োজন?

এটির মাধ্যমে একজন মানুষ বা গ্রাহক বিভিন্ন আকস্মিক বিপর্যয়ের ক্ষতি কাটাতে পারেন। দেশের বিভিন্ন বীমা কোম্পানি অনেক ধরণের পলেসির মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে থাকে। যদিও এখনকার দিনের মতো সুন্দর ব্যাংকিং সিস্টেমে মানুষ বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করারে অধেতুক মনে করেন।

তবে এই ধারণা একেবারে সেকেলে। কারণ বীমার মাধ্যমে দেশের বৃহত সংখ্যক মানুষ বিভিন্নভাবে উপকার ভোগ করেছে। তবে কিছু অসাধু কোম্পানির জালিয়াতির ফলে এই সেক্টরের বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুটা কমে গেছে। সাবধানতার সাথে পলেসি গ্রহণ করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি পাওয়া সম্ভব।

বীমার ইতিহাস

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে বীমার শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ৭৬টি বীমা কোম্পানী রয়েছে। এর মধ্যে একটি জীবন বীমা এবং একটি সাধারণ বীমার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে।

দুটি বিদেশী বীমা কোম্পানিও আছে এর মধ্যে রয়েছে। যারা বিভিন্ন পলেসির মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের বিপর্যয় থেকে রক্ষায় বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। বীমার শুরুতে সেভাবে মানুষের আস্থা না থাকলেও প্রতিনিয়ত এটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।

যদিও দেশের বীমা কোম্পানীগুলোর জন্য সেভাবে কোনো আইন না থাকায় অনেক সময় গ্রাহীতারা হয়রানীর শিকার হন।

বীমা কেনো প্রয়োজন?

পৃথিবীতে বসবাসের সময় মানুষের নানা ধরনের বিপদের সম্মুখিন হতে হয়। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, চিকিৎসা, শিক্ষা ও সৌখিনের বিষয়ে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এসব বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য শর্তসহ বীমা খুবই কার্যকরী হয়।

অর্থাৎ কোনো মানুষের পরিবারে যদি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একজন হয় তাহলে সেই পরিবারের সদস্যদের জন্য জীবনবীমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে সামাজিক ভাবে একটু ছোট চাকরি করলে নিজেদের স্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য চিকিৎসা বীমা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

কারণ এই বীমার আওতায় শর্ত সাপেক্ষে পরিবারের সবাই স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ ওষুধের সব সাপোর্ট পেয়ে থাকে। সব মিলিয়ে শর্ত সত্ত্বেও সকল ধরনের বীমা সাধারণ মানুষের বিপর্যয়ের সময়ে বেশ কার্যকরী হয়।

বিজ্ঞাপন

দেশে যেসব ধরণের বীমা চালু আছে –

দেশে মূলত দুই ধরনের বীমা সেবা চালু আছে। সেগুলো হলো জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা। এরমধ্যে জীবন বীমায় একজন ব্যক্তি নিজের বা পরিবারের কোন সদস্যের জীবন বীমা করাতে পারেন।

এতে গ্রাহক মৃত্যুর পর পরিবার অথবা নমিনি করা ব্যক্তিকে বীমাকৃত অর্থের পুরোটাই প্রদান করা হবে। অন্যদিকে সাধারণ বীমার মধ্যে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, যানবাহনসহ যত ধরনের বীমা হয়।

বীমা করার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরী

দেশের মানুষের মধ্যে এখনো পর্যাপ্ত জ্ঞান বা ধারণা না থাকার কারণে বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়িয়ে কোম্পানীগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। এ জন্য যেকোনো ধরনের বীমা করার আগে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকা জরুরি। এছাড়া যেসব বিষয় একান্ত জানা প্রয়োজন সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো –

১. প্রিমিয়াম জমা দেয়ার নিয়মাবলী এবং সময়সীমা পার হয়ে গেলে কী করণীয় এটির বিষয়ে আগে থেকে জানতে হবে।

২. বীমার সব প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার পর কি পরিমাণ টাকা ও কতদিনের মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে এটির বিষয়ে ধারণা নিতে হবে।

৩. মেয়াদ পূর্তির পর যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে কী ধরনের আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. বীমার কোম্পানীর বিষয়ে আগে থেকে ভালো ধারণা নেওয়া।

বীমার সুবিধাগুলো

বীমার সুবিধা আসলে এভাবে লিখে বা বলে বোঝানো সেভাবে সম্ভব নয়। কারণ মানুষের জীবনের বিপর্যয়ের কথা যেমন লিখে সেভাবে প্রকাশ করা যায় না। তেমনি বিপর্যয়ের সময় যারা পাশে থাকে বা যেসব প্রতিষ্ঠান কিছুটা সাহায্য করে তাদের সম্পর্কে বলে বোঝানো যায় না। তবে বেশ কিছু সুবিধা বাইওে থেকে বোঝা যায়। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো –

১. বীমার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়।

২. বীমার গ্রহীতা কোনো কারণে মারা গেলে সেই পরিবার পলেসির পূর্ণ অর্থ পেয়ে থাকেন।

৩. বীমার আওতায় কোম্পানী থেকে অন্যান্য কিছু সেবাও পাওয়া যায়।

৪. একটি পলিসির মাধ্যমে অনেক সময় পরিবারের সবাই সেবা গ্রহণ করতে পারে।

৫. কোম্পানীতে ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রেও গ্রাহকরা সুবিধা পান।

পরিশেষ

সার্বিকভাবে গ্রহীতারা কোনো ভূয়া কম্পানীর আওতায় না পড়লে উপকৃত বেশি হোন। এছাড়া বীমা সঞ্চয়পত্রের মতো কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট সময় প্রিমিয়ামের টাকাসহ বেশি অর্থ পাওয়া যায় কোনো ধরনের ক্ষতির সম্ভবনা ছাড়া।

বীমা বা পলিসি গ্রহণ করলে কোনো ধরণের ক্ষতির সম্ভবনা থাকে না। তাই পলিসির মাধ্যমে টাকা জমা প্রদান অন্যান্য সব আর্থিক দিক বিবেচনায় লাভের একটি প্রক্রিয়া। তাই সঠিকভাবে জেনেশুনে বীমা করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

ছবি: Image by chandlervid85 on Freepik

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button