বিনোদন শিল্পের শুরুর দিকে হলিউড একটি অংশ হিসাবে বিদ্যমান ছিল, এটি ২০ শতকের প্রথম দিকে চলচ্চিত্র শিল্পে আত্মপ্রকাশ করে। হলিউডের উদ্ভাবন এবং একটি বিনোদনমূলক ক্ষেত্র হিসাবে বিকাশের জন্য বেশ কয়েকজনের অবদান অনস্বীকার্য।
হলিউডকে বিনোদনের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার অন্যতম কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন D.W.GRIFT, যিনি ছিলেন একজন অগ্রণী চলচ্চিত্র নির্মাতা। গ্রিফিথের যুগান্তকারী ফিল্ম ‘দ্য বার্থ অফ এ নেশন (১৯১৫)’ প্রথম হলিউড মিডিয়াতে প্রদর্শন করা হয়।এই চলচ্চিত্রের সাফল্য হলিউডকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একটি পছন্দসই স্থান হিসাবে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
হলিউডের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন টমাস এডিসন, মোশন পিকচার ক্যামেরার উদ্ভাবক, যিনি প্রথম দিকের চলচ্চিত্র নির্মাণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিলেন। এডিসনের আবিষ্কার, কাইনেটোগ্রাফ নামে পরিচিত এটি হলিউড এবং এর বাইরে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছিল।
হলিউড তার সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য, অনুকূল আবহাওয়া এবং থিয়েটার এবং সঙ্গীতের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের কারণে আরও বিশিষ্টতা অর্জন করেছে।
সময়ের সাথে সাথে, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, ইউনিভার্সাল পিকচার্স এবং কলম্বিয়া পিকচার্সের মতো বড় ফিল্ম স্টুডিওগুলি হলিউডে তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে, ফিল্ম শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে এর খ্যাতি মজবুত করে। এই স্টুডিওগুলি প্রতিভাবান অভিনেতা, পরিচালক, লেখক এবং অন্যান্য শিল্প পেশাদারদের আকৃষ্ট করেছিল, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের কেন্দ্র তৈরি করেছিল।
হলিউড বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সংস্কৃতির প্রভাবের জন্য পরিচিত। এটি অগণিত আইকনিক চলচ্চিত্র তৈরি করেছে, অসংখ্য তারকাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছে এবং ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ এবং সঙ্গীত নির্মাণের মাধ্যমে বিনোদনের ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করে চলেছে। হলিউড সাইন, একটি বিশিষ্ট ল্যান্ডমার্ক পাহাড়ের উপর অবস্থিত যা আশেপাশের এলাকাকে উপেক্ষা করে, বিনোদন শিল্পের একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতীক হয়ে উঠেছে।
কিন্তু বর্তমানে হলিউডের লেখক,নির্মাতারাদের দেখা যাচ্ছে রাজপথে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে হাঁটতে কারন, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন না। একটা ব্যাবসা সফল মুভি আমরা দেখেছি কয়েক বিলিয়ন ডলার ইঙ্কাম করতে। সেক্ষেত্রে তারা আজ কেনো তারা রাজপথে? তারা কি তাদের নায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে না? নাকি তাদের দাবিয়ে রাখা হচ্ছে?
তো এখন পুরো হলিউড বন্ধ হতে চলেছে।কাজ করতে রাজি আছে না শিল্পী না লেখক। আর এই লেবার শর্টেজ কোভিড ১৯ থেকেও অনেক বেশি। জুলাই ১৪, ২০২৩ SAG-AFTRA মানে শিল্পী সমিতির যে সংগঠন তারা আন্দোলনের করে যেটার মূল ভিত্তি ছিল ৯০% ভোট।
এই ভোটে অংশ নেয় সকল লেখক, টিভি ও অন্যান্য মিডিয়াতে কাজ করা শিল্পীরা। তাদের ভিত্তিতেই এই আন্দোলনটি কার্যকর ভূমিকায় বর্তমানে হলিউডের রাজপথে বিদ্যমান। সহজ কথায় জীবিকা নির্বাহের জন্য সঠিক মূল্য পাওয়া এবং ভবিষ্যতে AI থেকে তাদের জীবন সুরক্ষা করার জন্যই এই আন্দোলন।
তারা চায় সিনেমাতে নতুন নীতিমালা যেখানে তাদের নিয়ম কানুন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বর্তমানে পরিস্থিতিতে আগে নিয়ম নীতি মেনে পারিশ্রমিক দেয়ার ব্যাপারটা বন্ধ করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করাই এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। প্রথমে এই আন্দোলনটি হয়েছিল মে ২, ২০২৩ এ যেখানে শুধু ছিল।
হলিউডের লেখক সমিতি যেটা কিনা পরিচিত WGA নামে এবং শিল্পী সমিতি SAG-AFTRA এর সাপোর্টে ১৪ জুলাই ২০২৩ সালে পুনরায় এই আন্দোলন আরেকটি রূপ নেয়। এটা হলিউডের দ্বিতীয়বারের মতো বড় আন্দোলন, যেখানে শিল্পী সমিতি এবং লেখক সমিতি মিলে একটি বড় ধরনের আন্দোলন করছে।
এই আন্দোলনের মূল কারণ কি?
কারণ WGA অর্থাৎ লেখক সমিতি এখনো সেই ১০ বছর আগের নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে তাদের পারিশ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে যেটা বর্তমানের সময় জীবিকার জন্য উপযুক্ত না এছাড়াও তাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে কারণ চ্যাট জীপিটির মত AI তাদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদেরই রিপ্লেস করে দিতে সক্ষম।
এখানে শিল্পী সমিতের দাবি তাদের AI দিয়ে রিপ্লেস করা যাবেনা বরঞ্চ তাদের কাজের সঠিক মান নির্ধারণের জন্য বা মান উন্নয়নের জন্য রিসার্চ এর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে AI ব্যবহারের উপরে শিল্পী সমিতির এবং লেখক সমিতির উভয়ের কন্ট্রোল লাগবে। অন্যদিকে তাদের চাই একটি অনটাইম ফান্ডিং এবং এবং জব সিকিউরিটি।
ঠিক এরকমই শিল্পী সমিতির আবেদন। যেখানে এআই দিয়ে তাদের বহুরূপী বানিয়ে ব্যবহার করা এবং তাদের ব্যবহার করার পর তাদের পারিশ্রমিক না দেয়ার যে ব্যাপারটা তার উপরেও তাদের কন্ট্রোল দাবি করেছেন।তো শিল্পী ও লেখক সমিতির জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়ন ও স্ট্রিমিং সাইটগুলোর সাথে লেখক এবং শিল্পিদের যে স্বচ্ছতার ব্যাপারটা এইটা পরিপূর্ণভাবে প্রনয়ন করাই এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।
যেখানে এই লেবার শর্টেজ হলিউডে অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে ধারণা করা যায়। যার ফলস্বরূপ আমাদের প্রতীক্ষিত অনেক মুভি পিছিয়ে যেতে পারে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নেটফ্লিক্স, ডিজনে এবং আমাজন প্রাইম এর মত ইন্টারন্যাশনাল সাইটগুলো হুমকির সম্মুখীন হবে, কারণ পুরো হলিউড এর কাছে নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়ার মতো কন্টেন্ট আছে। তাহলে কি এই আন্দোলন না থামলে হলিউড বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশ্ন টা কিন্তু রয়েই যায়…