আত্মসংশয় ও অন্ধকার মনোবিজ্ঞান: মানসিক শক্তি ও আত্মসম্মান পুনরুদ্ধার
আত্মসংশয়ের প্রভাব ও মুক্তির উপায়: অন্ধকার মনোবিজ্ঞান থেকে মুক্তির কৌশল
আমাদের কাছে যেটুকু রিসোর্স আছে, যেটুকু যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে তার বেশি কোন লক্ষ্য নির্ধারণে আমাদের মধ্যে আত্মসংশয় তৈরি হতে পারে। আবার কিছু কিছু সময় দেখা যায় আমরা নিজেদের থেকে অধিক ভালো কিছু প্রত্যাশা করে থাকি যা সবসময় বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ফেব্রিকেটেড জীবন দেখে দেখে আমাদের নিজেদের জীবন নিয়ে এক ধরণের সন্দেহ বা সংশয় তৈরি হতে পারে।
আত্মসংশয়ের প্রভাব
আত্মসংশয় মূলত আমাদের নিজের যোগ্যতার প্রতি সন্দেহ তৈরি করে, আমাদের ক্ষমতা ও কাজের ধরণ ও প্রকৃতির উপর সন্দেহ তৈরি করতে পারে। সর্বোপরি নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার অক্ষমতা আমাদের নিজের অস্তিত্বকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া, প্রকৃত কাজ বা লক্ষ্যের জন্য নিজের মধ্যে দীর্ঘসূত্রতা বেড়ে যাওয়া, ভয়ানক সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা সহ ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’ এর মত মানসিক জটিল সব সমস্যা তৈরি হতে পারে।
অন্ধকার মনোবিজ্ঞান
আমার আলোচনার বিষয় যতটা ‘আত্মসংশয়’ নিয়ে তারচেয়ে বেশি কিন্তু ‘অন্ধকার মনোবিজ্ঞান’ নিয়ে। যদিও আত্মসংশয় নিজের ভুলের জন্যেও জন্মায় তবুও ‘অন্ধকার মনোবিজ্ঞান’ -এ এক ধরণের কৃত্রিম আত্মসংশয় আমাদের মধ্যে ঢুকানো হয়। অন্ধকার মনোবিজ্ঞান নিয়ে আধুনিক যে পাঠ যেটা কিন্তু প্রায়শই মানুষের মধ্যে কীভাবে আত্মসংশয় ঢুকানো যায় এবং তার মানসিক নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নেওয়া যায় সেটাতে প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আত্মসংশয়ের লক্ষণ
আত্মসংশয়ের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
ক্রমিক | প্রশ্ন |
---|---|
১. | আমি কি প্রায়ই আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ করি? |
২. | আমি কি অন্যদের মতামতকে আমার নিজের মতামতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই? |
৩. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যথেষ্ট ভালো নই? |
৪. | আমি কি নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পাই? |
৫. | আমি কি প্রায়ই আমার সাফল্যকে ভাগ্য বা অন্যদের সাহায্যের ফলাফল মনে করি? |
৬. | আমি কি প্রায়ই আমার ভুলগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করি? |
৭. | আমি কি প্রায়ই অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করি? |
৮. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি ব্যর্থ হবো? |
৯. | আমি কি প্রায়ই আমার কাজের জন্য প্রশংসা গ্রহণ করতে অস্বস্তি বোধ করি? |
১০. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যা অর্জন করেছি তা যথেষ্ট নয়? |
১১. | আমি কি প্রায়ই আমার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করি? |
১২. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে অন্যরা আমার চেয়ে বেশি যোগ্য? |
১৩. | আমি কি প্রায়ই আমার কাজের মান নিয়ে সন্দেহ করি? |
১৪. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না? |
১৫. | আমি কি প্রায়ই আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি? |
১৬. | আমি কি প্রায়ই আমার অতীতের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করি? |
১৭. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি যথেষ্ট পরিশ্রম করছি না? |
১৮. | আমি কি প্রায়ই আমার সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে অনিশ্চিত থাকি? |
১৯. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের সাহায্য ছাড়া সফল হতে পারবো না? |
২০. | আমি কি প্রায়ই আমার কাজের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি না? |
২১. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি আমার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবো না? |
২২. | আমি কি প্রায়ই আমার আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করি? |
২৩. | আমি কি প্রায়ই আমার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করি? (পুনরাবৃত্তি) |
২৪. | আমি কি প্রায়ই মনে করি যে আমি অন্যদের চেয়ে কম যোগ্য? (পুনরাবৃত্তি) |
২৫. | আমি কি প্রায়ই আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত থাকি? |
আত্মসংশয়ের মাত্রা নির্ধারণ
এই ২৫টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ তে নিজেকে দিন এবং নিচের এই ফলাফল অনুযায়ী আপনার মধ্যে থাকা আত্মসংশয় কতটুকু আছে তা নির্ধারণ করুন।
আত্মসংশয়ের মাত্রা | প্রশ্নের সংখ্যা (হ্যাঁ) |
---|---|
মৃদু আত্মসংশয় | ৫-১০ |
মধ্যম আত্মসংশয় | ১১-১৭ |
তীব্র আত্মসংশয় | ১৮-২৫ |
আত্মসংশয় থেকে মুক্তির উপায়
এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শুধুমাত্র (ক) ও (খ) পর্যায়ে থাকা কিছু মানুষজন নিজ উদ্যোগে আত্মসংশয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু (গ) পর্যায়ে যারা চলে গেছেন তাদের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো আবশ্যিক বলে আমি বিবেচনায় নিচ্ছি। কারণ আপনাদের নূন্যতম আত্মসম্মানবোধও নাই।
আত্মসম্মান ও আত্মসংশয়
আত্মসংশয় ও আত্মসম্মান শব্দ দুটি কিন্তু একে অন্যের হাত ধরে চলে; অনেকটা ব্যাস্তানুপাতিক। আপনি যদি কোনো ক্ষেত্রেই নিজেকে নিজের কাছেই স্বীকৃতি দিতে না পারেন, মেনে নিতে না পারেন তাহলে আপনার মধ্যে আত্মসম্মান টা থাকলো কোথায়?
অন্ধকার মনোবিজ্ঞান থেকে মুক্তি
অন্ধকার মনোবিজ্ঞানে আপনার কাজ, সিদ্ধান্ত এবং মতামতকে ক্ষীণ করে দেখানো হতে পারে। ভালো কাজ করলেও ক্রমাগত গ্যাসলাইটিং করা হতে পারে। এছাড়াও ক্রমাগত নেতিবাচক ফিডব্যাক আপনাকে আত্মসংশয়ে ফেলে দেবে। সুতরাং আগে নির্ধারণ করা উচিত আপনি যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা যথেষ্ট শক্ত ও যৌক্তিক, আপনি যে মতামত দিচ্ছেন সেটা ভুলও হতে পারে কিন্তু সেটা আপনার কাছে মূল্যবান। আপনি জীবনে যে স্বপ্ন দেখেছেন বা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তা অন্তত আপনার কাছে আগে শক্ত ও যৌক্তিক হতে হবে।
উপসংহার
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ মৃতপ্রায়। স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। যার স্বপ্ন যত কম এবং অস্পষ্ট তার জীবনের প্রাণশক্তি ঠিক ততটাই ক্ষীণ ডিমলাইটের মতন। খুব সম্ভবত আমরা আমাদের প্রধান প্রধান কাজগুলো এড়িয়ে যাই; যেটা উচিত নয়। চাই আপনার ভালো লাগুক বা না-লাগুক আপনাকে কিছু তিতা কাজ করতে হতে পারে আপনার স্বপ্ন পূরণে।
আত্মসংশয় জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং সময়ে আসতে পারে। খারাপ সময়গুলোতে আসতে পারে। আত্মসম্মান লোপ পেতে পারে কিন্তু স্বপ্নের জন্য এবং আপনার তৈরি লক্ষ্যের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। মানে যদি সত্যিই এই সমস্ত মানসিক সংশয়, দ্বন্দ্ব এবং অনিশ্চতা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিরন্তর কাজ করে নিজেকে ‘আউট-পারফর্মার’ হিসেবে হাজির করতেই হবে। যে কাজ বেশি তিতা লাগে আগে সে কাজ দিয়েই আপনাকে শুরু করতে হবে।