সুরাইয়ার গল্প: প্রতিভা ও সংগ্রামের এক অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা
প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রতিভার বিকাশ ও জীবনের অনিশ্চয়তা
২০১৮ সালের কথা। প্রথম ফেইসবুক আইডি খুলে অনেক নতুন বন্ধু বানাই, যার মধ্যে সুরাইয়া একজন। সবার মতো তার সাথেও কথা বলা শুরু করি, এবং ধীরে ধীরে আমরা পরিচিত হয়ে উঠি। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি পড়ছ?” সে উত্তর দেয়, “আমি পড়াশুনা করি না। ছোটবেলায় ক্লাস চার পর্যন্ত পড়েছি।”
এই উত্তর শুনে আমি অবাক হই, কারণ এই যুগে এসেও কেউ পড়াশুনা না করা বিরল। তারপর সে ব্যাখ্যা করে যে সে কেন পড়াশুনা করে না। তার কথা শুনে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সে একজন প্রতিবন্ধী, হাঁটাচলা করতে পারে না। শুধু সে একা নয়, তার চার ভাইবোনও প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধী হলেও তার অনেক প্রতিভা ছিল। সে ইসলামি গান লিখত, কবিতা লিখত, ছবি আঁকত। এবং সেগুলো আমাকে দিত। কোনো প্রতিবন্ধকতা তার প্রতিভাকে থামাতে পারেনি। তার লেখালেখি সবাই পছন্দ করত, এবং এক সময় সে ছোটখাটো গীতিকার হিসেবে পরিচিত হয়।
সুরাইয়ার পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল না। তার মা তাদের সবার দেখাশোনা করত। হঠাৎ একদিন তার মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়, বিশেষ করে তাদের দেখাশোনা করার দিক থেকে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই তাদের সহায়তা করত।
এরপর থেকে আমাদের কথা বলা কমে যায়, কারণ আমি পড়াশুনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে সে মাঝে মাঝে তার লেখা গান ও কবিতা আমাকে পাঠাত। অনেক দিন কেটে যায়, একদিন সে আমাকে মেসেজ করে জানায় যে তার ভাই খুব অসুস্থ, এবং তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করতে বলে। কিছু দিন পর তার ভাই মারা যায়।
তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে সুরাইয়ার পোস্টগুলো দেখে মনে হতো যেন তার দিনগুলো শেষ হয়ে আসছে। কে জানতো সেই সময়টা এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে হঠাৎ শোকের ছায়া নেমে আসে। কখনো ভাবিনি তাকে এত তাড়াতাড়ি হারাতে হবে। তার গান ও কবিতাগুলো আজও আমার কাছে আছে, কিন্তু সেই প্রতিভাবান সংগ্রামী মানুষটি আর নেই।
সুরাইয়ার জীবনের গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন কতটা অনিশ্চিত এবং মূল্যবান। তার অদম্য স্পৃহা এবং প্রতিভা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। তার স্মৃতি এবং সৃষ্টি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
“আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুন,” এই দোয়াই করি বোন। আমিন।