স্বপ্নের এক অধ্যায়: নিতোর সংগ্রাম ও সফলতার গল্প
প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সফলতার পথে নিতোর যাত্রা
আজকের গল্পটি হল স্বপ্নের এক অধ্যায়। আমার নাম নিতো। আমি পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলাম এবং সবসময় নিজের মধ্যে কিছু একটা করার তীব্র ইচ্ছা অনুভব করতাম। কিন্তু যেন কোনো কিছুতেই আমি এগিয়ে যেতে পারছিলাম না। পড়াশোনা শেষ করেও কোনো চাকরি জোটাতে পারছিলাম না, নিজের ইচ্ছাগুলোকে কাজে লাগাতে পারছিলাম না। মনের ভেতরে অজস্র ইচ্ছা জমে থাকলেও কিছু একটা করার পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
প্রথমে সেলাই শিখতে শুরু করি, কিন্তু তাতে মন বসছিল না। কারণ আমি যা করতাম, তার কোনো মূল্যায়ন হতো না। গ্রামে বসবাস করার কারণে আমার পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পেতাম না। গ্রামের লোকেরা একটু বেশি টাকা পেলে আর সেই কাজ করতে চায় না, এবং যদি কেউ কাজ করেও দেয়, তার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না।
আমি কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না, কিন্তু কাজের সঠিক মূল্যায়ন না পেলে আমার ভেতরে রাগ জমা হতো। কাউকে কিছু বলতে না পারলেও, কাজের প্রতি অনিহা জন্মাতে থাকতো। এভাবে কিছুদিন চলার পর, সেলাই করা ছেড়ে দিলাম, কারণ মনে হতো এটা আমার জন্য নয়।
সবসময় নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিল আমার মধ্যে। একদিন মনে হলো, চলো নতুন কিছু শুরু করি। তাই শুরু করলাম কাপড়ে আঁকা। আঁখি রং এবং তুলি নিয়ে আমি কাপড়ে নানান ছবি আঁকতে লাগলাম। কাজটা ভালোই চলছিল, আমি উপভোগ করছিলাম। কিন্তু তারপর এক্সাম এসে পড়ল। পড়াশোনার চাপে কাপড়ে আঁকার কাজটি বন্ধ করে দিতে হলো।
এখনো সেই কাজ আবার শুরু করা হয়নি। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার জীবনে কোন পথ অনুসরণ করবো? কোন কাজে আমি সফল হতে পারবো? এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে পাইনি। তারপর ভাবলাম, আমার ঘরবাড়ি সুন্দর করে সাজাবো, নিজের হাতে সব জিনিসপত্র তৈরি করবো। ছোটখাটো কিছু তৈরি করেছিলাম, সেগুলোও ভালো হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর ইচ্ছা করেনি। আমি এখনো জানি না, আমি কি করবো?
অনলাইনে নানান প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখে মনে হলো, এই প্রোডাক্টগুলো আমি কেন না বিক্রি করি? সেই চিন্তা থেকে শুরু করলাম ব্যবসা। প্রথম দফায় কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে এলাম এবং সেগুলো বিক্রি করে সামান্য লাভও করলাম। কিন্তু এই ‘কিন্তু’ শব্দটি আমার পিছু ছাড়ছিল না।
দ্বিতীয় দফায় আর প্রোডাক্ট কেনা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আবার ভাবলাম, না, আমাকে কিছু করতেই হবে, প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। তাই নিয়মিত জবের পড়া শুরু করলাম। এতে বিরক্তি অনুভব করলেও, আর কোনো ‘কিন্তু’ মানতে চাই না। আমার এবার কিছু একটা করতেই হবে। এখনকার পরীক্ষাগুলো খুব কঠিন, এটা সবাই জানে। তবুও প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করলেও, মূল পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। কিন্তু এই ‘কিন্তু’ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু।
পরবর্তী প্রচেষ্টায়, আমি আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলাম এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। এবার লিখিত পরীক্ষায়ও সফল হলাম, কিন্তু ভাইভাতে ব্যর্থ হলাম। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর, আমি বুঝতে পারলাম যে ‘কিন্তু’ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এক ধাপ এক ধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছি, এখন পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নয়।
পরবর্তীতে, আমি আমার প্রস্তুতি আরও ভালো করে নিলাম এবং এবার ‘কিন্তু’ আর কোনো জায়গা পেল না। অবশেষে, আমি চাকরিটি পেয়ে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এবার আমার জীবনে ‘কিন্তু’ এর অবকাশ ঘটলো। আমি আমার জীবন থেকে ‘কিন্তু’ কে সরিয়ে ফেলতে পেরেছি।
আমি অত্যন্ত খুশি এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা যদি চান এবং ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম থাকে, তাহলে অবশ্যই জয়ী হতে পারবেন, ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ