উপন্যাস: দত্ত পরিবার

উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ০৩)

হাসান ও স্নেহার রহস্যময় রাত

Disclaimer: This novel is entirely fictional. It has no resemblance to reality. If by chance any character or any particular event of this novel matches with anyone’s life, then this novel will not be responsible for that in any way. Moreover, this novel is not written to hurt anyone’s religious and political sentiments.

কোনরকম আমার শরীরের উপর পড়ে থাকা লাশটাকে সরিয়ে নিলাম। এরপর অনাবৃত শরীরটাকে আবৃত করে দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখলাম স্নেহা দত্ত কে। বিদ্যুৎ নেই, তাই হাতে হারিকেন নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি দেখেই চমকে গেলাম। একটু আগেই আমি তাকে খুন করেছি। তার রক্ত দিয়ে আমার শরীর এখনো ভেজা। তবে এই স্নেহা দত্ত কে? জমজ বোন! কিন্তু ওরা জমজ বোন হলে নিশ্চয় মিসেস দত্ত আমাকে আগেই সেটা জানাতেন। নাকি কোন রহস্য; যা মিসেস দত্ত আমার কাছে থেকে লুকানোর চেষ্টা করছেন।

আমাকে নার্ভাস দেখে স্নেহা দত্ত ঘাবড়ে গেল। কিছুই যেন বুঝে উঠতে না পেরে নরম কন্ঠে বললো,

– আপনি ঠিক আছেন তো? একটু আগে কার সাথে যেন একা একা কথা বলছিলেন।

– মানে? একটু আগে তো তুমি-ই এখানে ছিলে স্নেহা!

– আমি সন্ধ্যায় আপনার রুমে আসি না। আপনার ভুল হচ্ছে মি. হাসান।

– হোয়াট! তাহলে এই লাশটা কার? আর আমার এই হাত ভর্তি রক্ত? দ্যাখো?

হাতদুটো জোড়া পেতে স্নেহা কে দেখালাম। কিন্তু স্নেহার চোখেমুখে কোন বিস্ময় নেই। একটুবাদে স্নেহা বললো, “আপনি কি কিছু খেয়েছেন? ভুল বকছেন আপনি… ওখানে কোন লাশ নেই। আর আপনার হাতেও কোন রক্ত নেই।”

পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম বিছানা শূন্য। সেখানে কোন লাশ নেই। আর আমার হাতেও নেই একবিন্দু রক্ত। এবার ধাতস্থ হতে অনেক সময় লাগলো আমার। একটু বিশ্রাম নেবার প্রয়োজন বোধ করছি। মাথাটা ঘুরছে। এক কাপ চা হলে খারাপ হয় না; সাথে একটা সিগারেট। তবে এই বাড়ির মধ্যে কোথাও নয়। এই বাড়ি থেকে প্রায় বেশ কিছু গজ দূরে একটা চায়ের টং দোকান আছে। ঠিক এই বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে, ‘লোকনাথ মামার স্পেশ্যাল চায়ের দোকান’।

স্নেহা কে বিদায় জানিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে সেখানে উপস্থিত হলাম। এই সব যা কিছুই আমার সাথে ঘটছে সেসব একটু রিভিশন দিয়ে নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে কি আমি আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে চলেছি!

– দাদা, এক কাপ র’চা দিন তো? আর হ্যাঁ, সাথে একটা সিগারেট দিবেন।

– কিন্তু… এমন ঘামছেন কেন? কি হয়েছে বলুন তো দেখি?

– আরেহ্, তেমন কিছুই নয়। মিসেস দত্ত, চেনো তো না কি?

– ওনার পুরো নাম কি দাদা?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

– মিসেস স্মৃতি দত্ত! তুমি তাকে চেনো না?

– দাদা, আপনার সাথে কি কিছু ঘটেছে?

– নাহ্, আর ঘটলেও বা কি! তুমি কি উনাকে চেনো?

– আপনি গত কয়েক মাস এই রাজবাড়ীতেই আছেন। এখানে কেউ টিকতে পারে না। আগে যারা এসেছিলো তারা কেউ আর ফেরেনি।

– মানে?

– দাদা? এখানে কেউ থাকেন না। ’৭১ এর পর থেকে এই রাজবাড়ী শূন্য পড়ে রয়েছে। আর মিস্টার এবং মিসেস দত্ত কে সে সময় পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করে।

– মহাবিপদ, মিসেস দত্ত ও তার মেয়ে এখানে এখনো থাকেন। আর কি সব বকছো! পাকবাহিনী ওনাদের কেন গুলি করে হত্যা করলো?

– যতদূর আমি জানি দাদা, দত্ত সাহেব জমিদার মানুষ ছিলেন। অনেক প্রভাব ছিলো তাঁর। যুদ্ধের সময় তিনি বেশ কিছু মুক্তিসেনাদের এখানে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আর তার মাশুল এভাবেই গুণতে হয়েছিলো পুরো পরিবারকে।

– আর স্নেহা দত্ত? তাকেও নিশ্চয় গুলি করে মারা হয়? আর আমি ভূতের সাথে বাস করছি এই তোমার যুক্তি?

– দাদা, রেগে যাবেন না। স্নেহা দত্তের সাথে যা হয়েছিলো সেটা আরো ভয়াবহ। পাকবাহিনী স্নেহা দত্তকে ধর্ষণ করেছিলো। এবং সবার সামনে ওনাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়।

– তোমার এসব বক্তিতা শেষ হয়েছে? শেষ হলে ঐ কোণাটায় এক কাপ র’চা আর একটা সিগারেট দিয়ে ধন্য করবে আশা করি।

চা-ওয়ালার এমন অদ্ভূত কিছু বর্ণনা শুনে প্রথম দিকে তা হজম করতেও মুশকিল হচ্ছিলো। এখন আরো দুটো সিগারেট বেশি লাগবে। আস্ত মানুষদের হত্যা আবার ধর্ষণ করার মত নৃশংস কথাগুলো কানে বাজতে আরম্ভ করলো।

একটু বাদেই টের পেলাম স্নেহা দত্ত আমার পাশেই বসে আছে,

– পাগলটার সাথে কি গুরুত্বপূর্ণ আলাপ চলছিলো?

– স্নেহা…! তুমি রীতিমত আমাকে ফলো করছো! উনাকে দেখে তো পাগল মনে হয় না!

– অনেক হয়েছে, এসব বাসায় বসেও করা যায়। দত্ত পরিবারের নাম নষ্ট করবেন না আশা করি।

– যেতে বলছো! অন্যদিকে চা-ওয়ালা বলছে এখানে কেউ থাকেই না। তবে কি আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। না কি তুমি সিজোফ্রেনিয়ার ভূত?

– সেসব নিয়ে তর্ক বাড়িতে গিয়েও করা যায় তো! না কি? এখন উঠি?

কথা না বাড়িয়ে স্নেহাকে সায় দিলাম। বেশ রেগে আছে মনে হচ্ছিলো। স্নেহার হাতে ঐ পুরনো দিনের হারিকেন টা তখনো আছে। তখন আমরা প্রায় দত্ত বাড়ির আঙিনায়। হঠাৎ ঝড়ো বাতাস উঠলো। আশেপাশে কেউ নেই। চারদিকে গাছপালা ভেঙ্গে পড়লো বুঝি অবস্থা। বাতাসের ঝাপটায় দৃষ্টি সরু হয়ে আসছে। সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না ঠিকমতন।

কিন্তু লক্ষ্য করবার মত বিষয় হচ্ছে- হারিকেনের আলো নিভে যাওয়া তো দূরের কথা, কেরোসিনের আগুনে জ্বলা সলতে একবিন্দুও এদিক-ওদিক নড়ছে না। বাড়ির প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আছেন মিসেস দত্ত। কিছু একটা বলবেন বলে মনে হলো। কিন্তু শেষ অবধি তিনি কোনো বাক্য ব্যয় করলেন না।

পরেরদিন সন্ধ্যা…

ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারলাম আমি এক অনন্তকালের ঘুম দিয়েছি। পেটে খিদে চোঁচোঁ করছে। আস্তে করে উঠে করিডর বেয়ে মিসেস দত্তের রুমের দিকে এগুলাম। হয়তো তিনি আমার জন্য খাবার প্রস্তুত করে রেখেছেন। কিছুদূর যেতেই অস্ফুট কান্না কানে আসতে শুরু করলো। কেউ যেন কাঁদতে চাইছেন না; কিন্তু নিজেকে আটকাতেও পারছেন না।

ঠিক অল্প একটু হাঁটতেই দেখা হয়ে গেলো মিসেস দত্তের সঙ্গে। তিনি অদ্ভূতভাবে হেলান চেয়ারে ঝুলছেন। কাছে যেতেই তিনি দাঁড়ালেন তারপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আমার বুকে মাথা রেখে বললেন,

– হাসান, আমি স্নেহাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

– খুঁজে পাচ্ছেন না মানে?

– হ্যাঁ, দুপুর থেকেই লাপাত্তা।

– কি বলছেন! মিসেস দত্ত, আপনি এখানেই থাকুন। আমি দেখছি…

এরপর বেড়িয়ে পড়লাম বিশাল রাজবাড়ীর আঙ্গিনায়। হাতে সেই পুরনো আমলের হারিকেন দিয়ে যতদূর দেখা যাচ্ছে তার আশপাশ কেউ নেই। তবে এই রাজবাড়ীর পিছনের অংশটায় একটা ঘন জঙ্গল আছে। সেখানে অবশ্য যেতে নিষেধ করেছেন মিসেস দত্ত।

কিন্তু এখন সেসব ভাবার মত সময় নেই। আমাকে সেখানে আজ যেতেই হবে। স্নেহাকে খুঁজে বের করতেই হবে। চারপাশে এত লতাপাতা যে সামনে এগুতেই মুশকিল হচ্ছে। চারদিকটা ঘন জঙ্গলে ছেয়ে আছে যেন। আমি আস্তে আস্তে সামনে যেতে লাগলাম। তারপর মোটামুটি একশ গজ দূরে একটা আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠলো। আমি ধমক খেলাম। ভাল করে হারিকেন নিয়ে তাকাতেই টের পেলাম তার ভিতরে স্নেহা।

স্নেহা যেন আগুনে পুড়ছে আর বাঁচার জন্য তীব্র আর্তনাদ করছে। কি করবো বুঝে উঠতে না পেরে আমি স্নেহার কাছে যেতে শুরু করলাম। একসময় হাঁটার গতি বাড়ালাম। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই পা ফেলতেই ওমনি এক ডোবার মধ্যে যেন পড়ে গেলাম। এরপর ডোবার গভীরে যেন প্রবেশ করতে লাগলাম। হারিকেনের আলোতে চারপাশে মৃত মানুষের পঁচা-গলা লাশ দেখতে পাচ্ছিলাম।

আমার শ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে কোনোভাবে এখান থকে নিজেকে উদ্ধার করতে পারলে জীবনটা থাকবে, নতুবা নয়। তাই একসময় এক রক্ত মাখা লাশের শরীরের ওপর ভর দিয়ে সামনে উঠতে শুরু করলাম।

উফ্! এসব কি বিশ্রী আর চারদিক থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। এরপর একের পর একটা লাশ বেয়ে সামনে উঠতে লাগলাম। আমার নিঃশ্বাস প্রায় ফুরিয়ে আসছিলো…

‘দত্ত পরিবার’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ০২)

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও চেক করুন!
Close
Back to top button