ছোটগল্প

অনন্যা: রহস্যের রাজকন্যা

বিজ্ঞাপন

অনন্যা: রহস্যের রাজকন্যা (ছোটগল্প)

ধরণ: সায়েন্স ফিকশন

আমার বয়স তখন মাত্র বারো বছর। যতদূর মনে পড়ে সময়টা ছিলো শীতকাল। আমি আমার দাদুর সাথে এক মেলায় যাই। সেখানে নতুন অনেককিছুই দেখেছিলাম কিন্তু কালের আবর্তে সেসবের অনেক কিছুই বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ঐ মেলায় এমন কিছু দেখেছিলাম যা আমি আজও ভুলতে পারিনি অথবা, আমি ঠিক ভুলতে চাইনি। আমরা যখন মেলা ঘুরে দেখছিলাম তখন হঠাৎ করে এক মেয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, তারপর বললো, “তুমি কি আমার বন্ধু হবে?”

কালো জামা পড়ে সুন্দরী ঐ মেয়েটিকে বেঢপ লাগছিলো। এমন পোশাক আমি আজও কাউকে পরতে দেখিনি। কালো পোশাকের উপর সাদা জ্যাকেট। চুলগুলো বাঁধা নয়। পায়ে দামী জুতো তাও হলুদ রঙের। সে-সময় এসবের সবই অভিজাত্যের প্রতীক মানা হত কিন্তু কোনভাবেই গোছানো মনে হচ্ছিলো না।

দাদুর দিকে তাকালাম, দাদু সায় দিলো তাই হাত মেলালাম। ওর হাত এত ঠান্ডা ছিলো যে বরফ হার মেনে যাবে। কিন্তু হাত মেলানোর সাথে সাথে ওর মন আনন্দে যেন ভরে উঠলো। রীতিমতো সবার সামনে লাফালাফি শুরু করে দিলো। আর আমি প্রচুর বিব্রতবোধ করলাম। এমনকি সেদিন ফেরার রাস্তায় দেখলাম, মেয়েটি খুবই রাগান্বিত আর ওর হাতে থাকা একটি টিয়া পাখির পালক একটার পর একটা ছিঁড়ছে। কি নিষ্ঠুর এই মেয়ে!

আমার বয়স এখন প্রায় তিরিশ বছর। দাদু এখন আর নেই। দাদী তার একমাত্র ছেলে মানে আমার বাবা কে জন্ম দিতেই মারা যান। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা এ শহরে মাত্র এক যুগ আগেও খুব বাজে ছিলো। দুনিয়া যখন এআই নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত তখন এখানে সিজারিয়ান পদ্ধতিও ছিলো না।

একটা কার অ্যাক্সিডেন্টে আমার বাবা-মা দুজনেই মারা যান। মাত্র এক লাখ টাকা জীবন বীমা থেকে পাই। কিন্তু ওটা দিয়ে বাকি জীবন কীভাবে কাটাবো মাথায় ঢুকছিলো না। দাদু তার মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত আমাকে সাহায্য করেছেন, পয়সা দিয়ে আমার পকেট খরচ থেকে শিক্ষার ব্যয় চালিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সুনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পরেও কোথাও চাকুরী হয়নি। অবশ্য আমার চাকুরী নিয়ে দাদুর বিন্দুবিসর্গ আফসোস ছিলো না। তার আফসোস শুধু ছিলো, তিনি আমাকে হয়তো বিয়ে দিয়ে যেতে পারতেন! দাদু বহু মেয়ে দেখেছেন, আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু আর্থিক ঝুট-ঝামেলায় বিয়েটা করা হয়ে ওঠে নাই। খুব সম্ভবত দাদু ভাবতেন, তিনি মারা যাবার পর আমি অনেক একা হয়ে যাবো; বাস্তবতাও তাই। এখন অবশ্য আমার আফসোস হয় যে, ইস! দাদুর কথা যদি একবার শোনতাম তাহলে আজ এই আফসোস হয়তো হত না।

কিন্তু এসববাদেও আমার দাদুর আমার বিষয়ে একটি ধারণা ছিলো যে, কম্পিউটার বক্স (দাদুর মতে) যতদিন আমি চালাবো ততদিন অর্থের সমস্যা হবে না। দাদু সময় সময় এটাকে ‘জাদুর বক্স’ বলতেন। সর্বশেষ, ‘বেলাশেষে’ সিনেমা এই বক্সে দেখার পর অনেক অবাক হয়েছিলেন। কারণ জীবনে প্রেক্ষাগৃহে সাদাকালো সিনেমা ছাড়া তিনি আর বেশি কিছুই দ্যাখেন নাই।

আর একদিন তো এআই দিয়ে একটি ফিকশনাল সিনেমা নির্মাণ করছিলাম, এক ক্লায়েন্টের কাজ ছিলো। এই ফিকশনাল সিনেমা এত জীবন্ত ছিলো তাই ভেবেছিলাম দাদুকে একবার দেখাই। কিন্তু এটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি জীবনের শেষদিকে শুধু এই ফিকশনাল এআই সিনেমার চরিত্রের নাম মনে রাখতে পেরেছিলেন।

আজ শুক্রবার। কিন্তু আমাদের ছুটি নেই; আমি ফ্রিলান্সার তার উপর ডেভেলপার। কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজও জানি। কলিংবেল তিনবার পর্যন্ত বাজলো। সময় দেখলাম দুপুর ১২টা। মানে আমাদের জন্য মাত্র ভোর-সকাল। শার্টটা কোনরকম গায়ে দিয়ে দরজা খুললাম। একজন যুবতী মেয়ে, বেঢপ জামা, সাথে চারপাশে কি সব পালক দেখতে পাচ্ছি। সবমিলিয়ে আস্ত একটা কাক কিন্তু সুন্দরী কাক।

আমি বললাম, “আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?” মেয়েটি উত্তর দিলো, “হুমম… একদম নিজেকে এআই বানিয়েছো। আমার হাতে সময় কম। একটা প্রজেক্ট আছে। কিন্তু এখানে ব্যাখ্যা করতে পারবো না!” কিন্তু আমি সবসময় আমার ক্লায়েন্টের কাজ গোপনে করি তাও অনলাইনে আলাদা আলাদা প্রক্সি দিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে। কিন্তু এই জমিদারিনী আমাকে রীতিমতো আদেশ দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সমবয়সী মনে হয় কিন্তু আবার ‘না’ -ও বলতে পারছি না। নির্বিকার আমি বললাম, “ঠিকাছে, কিন্তু তোমার বাজেট জানা আমার জন্য বেশি জরুরী।” মেয়েটি বললো, “পাঁচ লাখ ডলার! চলবে?” আমি ‘হা…’ করে শুনছিলাম নিশ্চয় কোন ফাঁদ তো আছে নতুবা কেউ এত টাকা দেয় নাকি!

আমি এখন মেয়েটির সাথে কারে করে তার নির্দিষ্ট জায়গায় যাচ্ছি তার প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবার জন্য। প্রায় তিন ঘন্টার লং ড্রাইভিং এ মেয়েটি আমাকে একটি কথাও বললো না। তাছাড়া আমিও খুব কম কথা বলি।

এরপর এক ভাঙাচোরা আস্তবড় রাজবাড়ির মধ্যে কার নিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম বেশ কয়েক জায়গায় লাল দাগ কিছুটা রক্তের দাগের মতন। মনে হচ্ছে কাউকে হত্যার পর টেনেহিঁচড়ে এখানের গেট থেকে কোন এক রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মেয়েটির সাথে আমার এক অদ্ভুত কানেকশন অনুভব করছি। খুব সম্ভবত সুন্দরী মেয়েদের দেখলে সব ছেলেরাই অল্প-বিস্তর হলেও কানেকশন অনুভব করে।

বিশাল রাজবাড়ির একপাশে গাড়ি থামিয়ে আমাকে নামতে বললো আর রুম নং ৩০১ তে গিয়ে অপেক্ষা করতে বললো। আমি ল্যাপটপ ব্যাগ নিয়ে নেমে ওর জন্য রুম নং ৩০১ তে গিয়ে উপস্থিত; হতে পারে আজকে আমার জীবনের শেষদিন কিন্তু এত সুন্দরীর হাতে আমি হত্যা হতে যাচ্ছি তা ভেবেও ভালো লাগছে।

এমনিতেও জীবনের অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। হয় পাঁচ লাখ ডলার, নতুবা মৃত্যু, মঞ্জুর! কিন্তু এক সেকেন্ড! পুরো রুম জুড়ে ইলেক্ট্রিক তারের বিন্যাস এবং একাধিক কম্পিউটার সহ ডেস্কে ‘রাহুল ব্যানার্জি’ নেমট্যাগ কেন? তার উপর বড় একটি স্ক্রিন কোন প্রেজেন্টেশন দেবার জন্য দেয়ালে সাঁটানো আছে।

বিজ্ঞাপন

রুমে প্রবেশ করতেই মেয়েটি নিজের পরিচয় দিলো এভাবে, “আমি অনন্যা ব্যানার্জি, আমাদের তামাকের বিশাল ইন্ডাস্ট্রি আছে, এই কোম্পনির নাম…” আমি তাকে এখানেই আটকে দিয়ে বললাম, “ওহ্, মায়া বিড়ি! অনেক বড় কোম্পানি বৈ কি!” মেয়েটি বিরুক্ত হয়ে বললো, “না!” আমি ফের বললাম, “তাহলে নিশ্চয় আকিজ বিড়ি! তাই না? অনন্যা ব্যানার্জি!” অনন্যা ব্যানার্জি রাগে এখন ফুঁসছে আর বলছে, “মি. ফারহান আহমেদ, আমি আগে আমার কথাগুলো সম্পন্ন করি তারপর না-হয় আপনি আপনার মোটা মস্তিষ্ক দিয়ে একটু ভেবে দেখবেন! ঠিকাছে?”

আমাকে ছোটবেলা থেকে এই মেয়ে চেনে! কিন্তু কে এই মেয়ে? ওহো, আমার পাঁচ লাখ ডলার আগে দরকার। তাই আমি বললাম, “আমি খুবই দুঃখিত! অনুগ্রহ করে আপনার প্রজেক্টের ব্যাপারে বলুন। আমি শুনতে রাজী আছি।”

অনন্যা ব্যানার্জি এখন কিছুটা শান্ত হয়ে কথা বলা শুরু করলো, “আমাদের কোম্পানি অনেক বড় হলেও আমাদের কোম্পানির বিশেষ কোন নাম নাই। মানুষ এটাকে ‘ব্যানার্জি এন্ড কোঃ’ হিসেবেই জানে। বাংলাদেশে যতগুলো বিড়ি বা সিগারেটের ফ্যাক্টরি আছে সেসবে আমরাই তামাক সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে আমার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আমিই এখন এই কোম্পানির একমাত্র শেয়ার হোল্ডার। কিন্তু আমার মোট শেয়ার ৩৫% শতাংশ এবং এখানে তোমার মোট শেয়ার আছে ১০% শতাংশ। আমি চাই ৫০% শতাংশ আমাদের নামে থাক। কিন্তু এজন্য আমার বাবাকে রাস্তা থেকে হটাতে হবে। হটেও ফেলেছি। ফলে তার ১০% শতাংশও আমার নামে যুক্ত হবে। এখন প্রজেক্ট শেষ হলেই তোমার শেয়ার তুমি পেয়ে যাবে আর আমি হবো এই কোম্পানির সিইও। কারণ আমি এক জীবনে শুধু অন্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবন চালিয়েছি কিন্তু আর পারছি না।”

আমি জীবনে খুব বেশি অবাক হই নাই। কিন্তু মিস ব্যানার্জি যা বলছেন তা শুধু আমাকে অবাক করছে না বরং আমাকে অনেককিছু ভাবাচ্ছে। নাম না জানা কোম্পানিতে আমার ১০% শতাংশ শেয়ার আছে! আবার আমাকে একটি ‘হত্যা’ কে ন্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে! কিন্তু সেটাও বা কীভাবে? নিশ্চয়, বড়সড় জাল আছে।

একে তো এই অনন্যা ব্যানার্জি কে আমি চিনি না, জানি না। তার উপর এই ভাঙাচোরা রাজবাড়িতে কেন যে এসেছি তাও জানিনা। কিন্তু এরকম কেন মনে হচ্ছে, মিস ব্যানার্জি কিছু না করেই আমার হৃদয় জিতে নিয়েছে আর ঐ পাঁচ লাখ ডলার তো আমি এক জীবনে উপার্জন করতে পারবো না। তাই প্রত্যুত্তরে আমি বললাম, “হয়ে যাবে, কিন্তু আমার কাজ কি?”

বিজ্ঞাপন

অনন্যা ব্যানার্জি বললো, “আপনাকে এমন একটি লিংক তৈরি করতে হবে যে লিংকে ক্লিক করা মাত্রই আমার বাবা চলে যাবেন অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। এই মহাদেশের যেখানে বরফ বেশি এবং মানুষ এক ঘন্টার বেশি বাঁচতে পারবে না এমন জায়গায়। শুধু তাই নয়, এটা আইন অনুযায়ী আপনাকে কোর্টে বৈধ প্রমাণ করতে হবে।”

আমার ধাতস্থ হতে কিছু সময় লাগলো, আমি শুধু বললাম, “কিন্তু তুমি কি করে জানো যে, এমন কিছু নিয়ে আমি আজকাল কাজ করছি?” অনন্যা, “জানিনা, কিন্তু বিশ্বাস ছিলো। ছোটবেলায় তোমার হাতে একবার হাত রেখেছিলাম। অনেক ভরসা ছিলো সেখানে। তবে আমি পাশবিক বা কোন সাইকো নই, আমার পরিবারের সবাইকে আমিই মেরে ফেলেছি কিন্তু এসব পরেও ব্যাখ্যা করা যাবে। তোমার নকশা দেখাও?”

আমি বেশিকিছু ভাবলাম না আবার এমনও হতে পারে বেশিকিছু ভাবার সময় পেলাম না। সরাসরি চলে গেলাম রুমে সাঁটানো বড় সেই স্ক্রিনে।

আমি শুরু করলাম, “আমি একটি নতুন ধরনের যাত্রা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি, যার নাম দিয়েছি ‘কোয়ান্টাম জড়িত টেলিপোর্টেশন লিঙ্ক’ বা QETL। এই পদ্ধতিটি কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের একটি বিশেষ নীতি ব্যবহার করে, যা মানুষকে খুব দ্রুত, প্রায় মুহূর্তেই, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতিতে, দুটি কণা এমনভাবে জড়িত হয় যে, একটি কণার অবস্থা অন্য কণার অবস্থাকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করতে পারে, তাদের মধ্যে যত দূরত্বই থাকুক না কেন। এই পদ্ধতিতে, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জড়িত কণাগুলির একটি নেটওয়ার্ক থাকবে, এবং QETL একজন ব্যক্তির কোয়ান্টাম তথ্যকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত পাঠাতে পারবে।

QETL ব্যবহার করতে, একজন ব্যবহারকারী কেবল একটি ডিজিটাল পর্দায় তাদের গন্তব্য নির্বাচন করবে এবং একটি বোতামে চাপ দিবে। তারপর, একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI ব্যবহারকারীর শারীরিক এবং কোয়ান্টাম তথ্য স্ক্যান করবে, এবং তারপর সেই তথ্যকে গন্তব্যের জড়িত কণার কাছে পাঠাবে। গন্তব্যে, একটি বিশেষ চেম্বার ব্যবহারকারীকে পুনরায় তৈরি করবে, যেন তারা সেখানে উপস্থিত হতে পারে। QETL-এর AI সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করবে, এবং কোনো ভুল হলে তা ঠিক করবে। এই পদ্ধতিতে নিরাপত্তা খুব জরুরি, তাই এতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে যাতে কেউ অনুমতি ছাড়া এই পদ্ধতি ব্যবহার না করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

QETL আসলে ভ্রমণ, বাণিজ্য এবং মানব সম্পর্কের উপর বড় প্রভাব ফেলবে। এটি বিশ্বকে আরও ছোট করে দেবে, এবং মানুষ খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে। এই প্রযুক্তি আমাদের বিশ্বকে একটি সত্যিকারের গ্লোবাল গ্রামে পরিণত করবে, যেখানে সবাই একে অপরের কাছাকাছি থাকবে। তো, তুমি কি ভাবছো, আমার এই আইডিয়া কেমন?”

অনন্যা ‘হা…’ আমার কথাগুলো শুনছিলো। তারপর আমার জিজ্ঞাসায় ওর সজ্ঞান ফিরলো। বললো, “দেখো, ফারহান, আমি কিছুই বুঝি নাই। তুমি ব্যস! একটি লিংক তৈরি করে দাও আর এখান থেকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মুক্তি কীভাবে পাবে? হাজারহোক একজন মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন?”

আমি মাথা নাড়ালাম এবং আইন অনুযায়ী ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করলাম, “এই প্রযুক্তি একাধিক ‘API’ চুরি করে আমি তৈরি করেছি। জীবনের দশ বছর এখানে লাগিয়ে দিয়েছি। সফলতাও এখন হাতের মুঠোয়। সুতরাং আইন অনুযায়ী আমার কাছে এখান থেকে বের হবারও ব্যাখ্যা আছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো প্রোগ্রামার ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে বিপদে পাঠানোর জন্য এমন একটি লিংক পাঠায়, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২ অনুযায়ী, এমন কার্যকলাপ যা অন্য ব্যক্তিকে বিপদে ফেলে তা অপরাধমূলক কার্যের মাধ্যমে অর্জিত বা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত সম্পৃক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই ধরনের অপরাধের জন্য প্রোগ্রামারকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হতে পারে, এবং তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হতে পারে। তবে, প্রোগ্রামার যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি অজ্ঞাতসারে বা ভুলবশত এমন কিছু করেছেন, তাহলে তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারেন। এছাড়াও, যদি প্রোগ্রামারের কাছে যথাযথ নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং ব্যবহারকারীর সম্মতি থাকে, তাহলে তিনি আইনি দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

তবে, এই ধরনের যুগান্তকারী প্রযুক্তির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো আইনি প্রাবধান থাকবে না। তবুও আমি আপনার বাবার ই-মেইলে এই লিংক নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী পাঠাতে পারি। আর হ্যাঁ, আগে আমি এই আইনী জটিলতা নিয়ে এত ভাবি নাই। তাই খুব দ্রুত মুক্তি পেতে আমি এই যুগান্তকারী প্রযুক্তিতে নতুন করে মাত্র দুটো অপশন যুক্ত করছি, “১. সম্মতি দিন অথবা, ২. এড়িয়ে যান।”

তাহলে বিচারের সময় এই লিংকে ক্লিক করলে এই দুই অপশন স্পষ্টভাবে জানাবে যে, আমি অপরাধী নই। তিনি এই লিংকে ক্লিক করেছেন এবং সম্মতি জানিয়েছেন। ব্যস! আমাকে শাস্তি দেবার রাস্তা নাই। কিন্তু মিস. ব্যানার্জি, পাঁচ লাখ ডলারের জন্য নিজের বাবাকেও মেরে ফেলবেন? মানে মেরে তো ফেলেছেন এখন সেটাকে ন্যায় করতে চাইছেন!”

অনন্যা ব্যানার্জি আমার কাছে এসে বসলেন আর কিছু কথা বললেন, “ফারহান, তুমি আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু। তোমাকে সংক্ষেপে কিছু তিতা কথা জানাতে চাই। আমি অনেক সুন্দরী। চাই যত খারাপ পোশাক পরি না কেন আমাকে সুন্দরী দেখায়। আমি যখন কৈশোরে তখন আমার বাবা আমাকে ধর্ষণ করেছে তাও বহুবার। আমার দাদু এই প্রতিষ্ঠান কষ্টকরে দাঁড় করালেও তার বাকি ছেলে আর মেয়েরা শুধু টাকা উড়াতো। ছোটবেলায় আমি আমার দাদুকে বলে আমার ৫% শতাংশ শেয়ার তোমার নামে করে দিই। দাদু মৃত্যুর পর কোম্পানির প্রফিট বহুগুণে বেড়ে যায় আর তোমার প্রফিট বেড়ে হয়ে যায় ১০% শতাংশ।

আমার পিসি’রা আর বড় বাবারা মিলে টাকা জলের মত উড়াতেন। এতে করে কোম্পানির মোট শেয়ার ব্যানার্জি বংশের ৮০% শতাংশ থেকে কমে হয়ে যায় মাত্র ৫৫% শতাংশ। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই, দাদুর দেওয়া শেষ কথা রক্ষায় যে, চাই জীবন চলে যাক আমি যেন এই কোম্পানি টিকে রাখি।

প্রথম ধাপে, আবহাওয়া দেখি একদিন খুব খারাপ, ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু আমি আমার পিসিদের নিয়ে প্যারাসুটে কক্সবাজারের আকশে উড়ার পরামর্শ দিই। পরিকল্পনা মোতাবেক ওরা এখন বঙ্গোপসাগরের জলের তলে। আর এটা এক দূর্ঘটনা বলে ঔষধ হিসেবে স্লো পয়জন ‘অ্যাকোনাইট’ আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। বড় বাবাদের এটা নিয়মিত খাওয়াতে থাকি। কারণ সবাই আমাকে বিশ্বাস করতো। কিছুদিন আগে ওরা শ্মশানের ঘাট পার করেছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বাবা টের পেয়ে যায়। তাই তাকে চাকু দিয়ে হত্যা করি। বাকি কাজিনরা বাইরে পড়াশোনা করছে। কিন্তু দাদু বড় বাবাদের এবং পিসিদের মৃত্যুর পর এই কোম্পানির মোট শেয়ার আমার নামে উইল করে দিয়েছিলেন।”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না, শুধু বললাম, “আমার কোম্পানিতে যদি ১০% শতাংশ শেয়ার থাকে তবে নিশ্চয় তার ডকুমেন্ট থাকবে, তুমি কি সেটা একবার আমাকে দেখাবে?” আমি বলা মাত্রই অনন্যা একটি ফাইল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, “জানতাম, তুমি এটা জিজ্ঞেস করবে। তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ভালো রেজাল্ট কামনা করেছিলাম। কিন্তু আফসোস নাই, আমি জীবনে অন্তত একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমাকে যা ভেবেছিলাম তুমি তারচেয়েও অনেক বেশি মেধাবী।”

তিন মাস পর

“A&F Co. (মানে ফারহানের ‘F’ এবং অনন্যার ‘A’ যুক্ত করে একটি কোম্পানি)” নামক একটি বড়সড় নেমপ্লেট এই মফস্বল শহরে টাঙানো হলো। ফারহানের অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ ডলার উপস্থিত। কিন্তু তবুও জীবনের এই গল্প ফারহানের কাছে অসমাপ্ত মনে হচ্ছিলো। যেহেতু মেয়েটা শেয়ার ওর নামে দিয়েছে সেহেতু বাকি তথ্যগুলোও সত্য হতে বাধ্য। কারণ কৈশোরের বন্ধুত্বকে যে এত দাম দেয় সে নিশ্চয় মিথ্যে বলে না। তাও সামান্য এক হ্যান্ডশেক!

একটুবাদেই ফারহান লক্ষ্য করলো তার দোতালা বাড়ির দিকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ আসছে। অনন্যা ব্যানার্জি এই প্রথমবার লাল রঙের ড্রেস পড়েছে। গাড়ির আলোয় কোন নাটকীয় দৃশ্যের সুন্দরী রমণীর কথা মনে আসা স্বাভাবিক।

এই প্রথম ঢঙের পোশাক পরে কাছে আসতেই অনন্যা বললো, “রাজবাড়িতে আনুমানিক চারশো’র অধিক রুম আছে কিন্তু আমি তোমার এই দোতালা বাড়িতে থাকতে চাই, অনুমতি পাবো?” আমি অবাক হয়ে বললাম, “হ্যাঁ, নিশ্চয়! কিন্তু একটা হাসপাতাল তৈরি করতে চাই যেখানে মানুষ ফ্রি-তে তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করার ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে পারে।”

অনন্যা ব্যানার্জি শুধু বললো, “ফারহান! ওটাও হয়ে যাবে… কিন্তু এখন আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমার জন্য কিছু রান্না করতে পারবে?


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মেহেদি হাসান

পরিচয়: আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। আমি একজন বহুমুখী ব্যক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার পেশাগত জীবন বিস্তৃত। লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, অডিও ও ভিডিও সম্পাদক, ছবি সম্পাদক, ইউটিউবার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে কাজ করি। মাইক্রোসফটের একজন ডেভেলপার এবং অ্যাপ ডেভেলপারও আমি।

Leave a Reply

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading