স্বাস্থ্য

এনিমিয়া: একটি উপেক্ষিত স্বাস্থ্য সমস্যা

বাংলাদেশে রক্তস্বল্পতা: কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধ

আমরা সব সময় বড় বড় রোগ নিয়ে সচরাচর আলোচনা করি। কিন্তু আমাদের আশেপাশের অনেকেই এমন একটি রোগের শিকার, যার নাম এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা এবং শিশুরা, এই রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪৩% কিশোরী, ৪৫% গর্ভবতী নয় এমন মহিলা এবং ৪৯% গর্ভবতী মহিলা এই রোগে আক্রান্ত। শিশুদের মধ্যে ৫২% যাদের বয়স ৬-৫২ মাসের মধ্যে, তারাও এই রোগে ভুগছে।

এনিমিয়ার কারণ

সাধারণত রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে এই রোগের সৃষ্টি হয়। নারী, পুরুষ, বাচ্চা এবং সদ্যজাত বাচ্চাদের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। এর নিচে আসলে তাকে এনিমিয়া আছে বলে ধরা হয়:

  • পুরুষ: ১৩-১৮ গ্রাম/ডে.লি
  • মহিলা: ১১.৫-১৬.৫ গ্রাম/ডে.লি
  • বাচ্চা: ১৬-১৯ গ্রাম/ডে.লি
  • সদ্যজাত বাচ্চা: ১৮-২০ গ্রাম/ডে.লি

এনিমিয়ার লক্ষণ

এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কিভাবে বুঝবো একজন ব্যক্তি এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত? আমরা নিচের ধাপগুলো দেখে যে কোনো ব্যক্তিকে যাচাই করতে পারি সে এনিমিয়া আক্রান্ত কিনা:

  • চোখের কঞ্জাংটিভা বা সাদাওংশের নিচের অংশ ফ্যাকাশে নাকি লালচে তা দেখে।
  • জিহবার ডরসাম অংশ দেখে।
  • নখ ভঙ্গুর হলে।
  • হাতের তালু এবং পায়ের তালু দেখে সহজেই বোঝা যায়। এছাড়াও ত্বক দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব।

এনিমিয়ার কারণসমূহ

বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে:

১. রক্তক্ষরণ: বাহ্যিক রক্তক্ষরণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্রনিক পেপটিক আলসার ডিজিজ বা আলসার। এছাড়াও শরীরে আঘাতের ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে

২. আয়রন এবং ফলিক এসিডের ঘাটতি

৩. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

৪. অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ

৫. কিডনি রোগ

৬. পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব

বিজ্ঞাপন

৭. হুক ওয়ার্মে আক্রান্ত হওয়া

এনিমিয়ার প্রভাব

আমরা বাঙালীরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটু উদাসীন। কিছু হওয়ার আগে আমরা কোনো কিছুর সমাধান করি না। কিছু হলে তা সমাধানের জন্য ঢাল-তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এটি ভয়ানক রূপ ধারণ করার আগেই যদি আমরা সচেতন হই, তবে আমরা সহজেই নিজেদের বাঁচাতে পারি। কিন্তু এই ছোট রোগ আমাদের শরীরে বড় বড় রোগের প্রাদুর্ভাব করতে সক্ষম:

  • এটি আমাদের হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এমনকি হার্ট ফেল করাতে পারে।
  • রক্তস্বল্পতা হলে আমাদের হৃদপিণ্ডের উপর প্রচুর চাপ পড়ে, যার ফলে হৃদপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যেতে পারে।
  • শরীর যেকোনো রোগে খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।
  • শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
  • মানসিক স্বাস্থ্যও এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এনিমিয়ার প্রতিরোধ

দিনশেষে, এই রোগের স্থায়ী সমাধান একটাই: আমাদের সকলকে এটি ছোট রোগ হলেও এর ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এটি বড় আকার ধারণ করলে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমরা যদি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আয়রন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে পারি, যেমন:

  • সবুজ শাক-সবজি
  • ভাত
  • ডাল
  • মটরশুটি
  • বীজ জাতীয় খাবার
  • মাংস
  • ডিম
  • কিশমিশ
  • চিংড়ি
  • শুকনা ফল
  • কলার মোচা
  • আমিষ জাতীয় খাবার

এছাড়াও আমাদের গর্ভবতী মায়েদের এই ব্যাপারে সচেতন করতে পারি। এর সুফল-কুফল সম্পর্কে সবাইকে অবগত রাখতে পারি। তবেই নিজেদের সুস্থতার সাথে আমরা আগামী প্রজন্মকেও একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী উপহার দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

ছবি: Image by freepik

চন্দ্রকান্ত সেন

I'm Chandrakant Sen. I'm a student, striving to acquire knowledge. I'm currently studying at the Nursing and Midwifery College in Jessore (2nd year). My district is Narail. I also write for Ovizatri, a news and magazine website or online portal, focusing on health-related issues.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button