স্বাস্থ্য

আর্থ্রাইটিস: জানুন লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়

আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তির উপায়

বিজ্ঞাপন

আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথা কি? এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন। অস্টিওআর্থ্রাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় জানুন।

আর্থ্রাইটিস কি?

আর্থ্রাইটিস (Arthritis) বলতে সাধারণত অস্থি সন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহ কেই নির্দেশ করে। এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়। এই রোগ এক বা একাধিক অস্থি সন্ধি তথা জয়েন্ট কে আক্রান্ত করতে পারে। অনেক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রতি পাঁচ জনের একজনই আর্থাইটিস বা প্রচলিত শব্দে বাত ব্যথা রোগে আক্রান্ত।

আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ কি? কি কি ধরনের আর্থ্রাইটিস আছে? এবং এর থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব? এসব বিষয়ে আজ আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো।

আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ কি কি?

১. চিকিৎসকরা বলছেন আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ তথা সাধারণ উপসর্গগুলো হাড়ের অস্থিসন্ধি অর্থাৎ হাড়ের জয়েন্ট তথা গিট এর সাথে সম্পর্কিত।

২. সাধারণত জয়েন্টে অতিমাত্রায় ব্যথা অনুভূত হয় এমনকি জয়েন্ট ফুলেও যায়।

বিজ্ঞাপন

৩. হাতের আঙ্গুল, কোনুই, কাঁধ, পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ব্যথা অনুভূত হয়।

৪. শরীরের দুই পাশে একসাথে ব অনুভূত করা যথা, হাত এই রোগে আক্রান্ত হলে দুই হাতের অস্থিসন্ধি একই সময়ে ব্যাথা করে ও অনেকক্ষেত্রেই ফুলে যায়।

৫. মাঝে মধ্যেই শরীরে দুর্বলতা অনুভব হয় এবং জ্বর জ্বর অনুভূতি হয়।

৬. সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি আর্থ্রাইটিস তথা বাত রোগ এর ঝুঁকিতে ভোগেন।

৭. পরিবারে মা বাবা ভাই-বোনদের আর্থ্রাইটিস এর ইতিহাস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

আর্থ্রাইটিস এর ধরণ

চিকিৎসকরা বলছেন আর্থ্রাইটিস এর সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো ১. অস্টিও আর্থ্রাইটিস ও ২. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। তাদের ভাষায় আর্থাইটিস মূলত অনেকগুলো প্রকারের সমন্বিত রূপ। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ধরনের আর্থ্রাইটিস সমস্যার কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কিছু সাধারন ধরন খুব বেশি পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে, অস্টিওথ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।

এছাড়া রক্তের কনিকাগুলোর মাধ্যমে জীবাণু যখন হাড়ের সন্ধিতে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে তখন তীব্র ব্যথা হয়- এটাকে সেপটিক আর্থ্রাইটিস বলে। এছাড়া বেশকিছু আর্থ্রাইটিস আছে যেগুলো ইনফ্লামেটরি আর্থ্রাইটিস। এটা হল আমাদের শরীরের ভেতরে রক্তের মধ্যে কিছু উপাদান তৈরি হয় যেই উপাদান গুলোর আমাদের শরীরের জয়েন্টের প্রতি আসক্তি থাকে। তারা গিয়ে জয়েন্ট গুলোকে আক্রান্ত করে।

এই আর্থ্রাইটিস গুলো ব্লাড টেস্ট করে ধরা পড়ে। ব্লাড টেস্ট করে যখন ওই কেমিক্যাল গুলোকে পাওয়া যায় তখন এই ধরনের আর্থ্রাইটিস সনাক্ত করা হয়। কোন কোন আর্থ্রাইটিস ছোট জয়েন্ট কে আক্রান্ত করে আবার কোন কোন আর্থ্রাইটিস বড় জয়েন্ট কে আক্রান্ত করে। কিছু কিছু আর্থ্রাইটিস আছে যেগুলো অল্প বয়স্ক বাচ্চাদের হয়। আবার কিছু কিছু আছে বয়স্কদের হয় আবার কিছু কিছু আছে বংশগতভাবে রোগী পেয়ে থাকে।

এমনইভাবে অন্য কিছু রোগ যেমন যাদের ডায়াবেটিস থাকে বা মেটাবলিজমজনিত অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত কিছু আর্থ্রাইটিস আছে। এগুলো হচ্ছে সাধারণত কমন ধরনের অ্যাথ্রাইটিস। এছাড়া কিছু আনকমন আর্থ্রাইটিসও হতে পারে। যেগুলো নিয়ে সচরাচর আলোচনা করার অতটা প্রয়োজনীয়তা নেই।

অস্টিও আর্থ্রাইটিস কি?

চিকিৎসকরা বলছেন সাধারণত অস্টিও আর্থ্রাইটিস আস্তে আস্তে হয়। এর প্রথম উপসর্গ হলো শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করলে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হয়। সময়ের সঙ্গে সেই ব্যথার তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। জয়েন্ট তথা অস্থিসন্ধি ফুলে যায় সাথে সাথে ব্যথাও করে। সাধারণত ঘুম থেকে উঠার পরে শরীরের জড়তা দেখা দেয় বা দীর্ঘ সময় বসে থেকে ওঠার সময় এই জড়তা দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের পর জয়েন্ট তথা অস্থি সন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, কড়মড় শব্দ হয় অনেক সময়। অস্টিও আর্থ্রাইটিস বেশি হয় হাঁটুর জয়েন্টে তথা অস্থিসন্ধিতে । হাঁটুতে বেশি চাপ লাগে উঁচু কোথাও উঠতে গেলে। যদি হাতে ভারী কোন জিনিস বা বোঝা জাতীয় কোনো জিনিস থাকে তবে তা বহন করা কষ্টসাধ্য হয় এবং একসময় হাঁটু ফুলে যায়। যদি আর্থাইটিস কোমরে হয় তবে নড়াচড়া করা কঠিন হয়, শরীরের নিচের অংশ বিশেষ করে।

ব্যথা কোমরের সঙ্গে সঙ্গে কুঁচকি, উরু এবং হাঁটুতেও দেখা দেয়। আর্থারাইটিস যাদের হাতে হয় তাদের হাতের মধ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। আঙ্গুল গুলোয় ব্যথা হতে পারে, ফুলে যায় এমনকি ঝিনঝিনও করতে পারে। জয়েন্টের আশেপাশে গুঁটিও দেখা দিতে পারে। মেরুদন্ডে হলে ঘাড় এবং কোমরের উভয় স্থানে ব্যথা অনুভব হতে পারে। মাঝেমধ্যেই হাত-পা ঝিনঝিন করে।

কারা অস্টিও আর্থ্রাইটিস এর ঝুঁকিতে আছেন?

১. যাদের বয়স বেশি অর্থাৎ বয়স যদি ৬৫ এর বেশি হয় তবে অস্টিওআর্থাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

২. ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের এবং ৪৫ অতিক্রমকারী নারীদের অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি প্রচুর।

৩. অস্থিসন্ধিতে যেকোনো ধরনের আঘাত পেলে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই কারণে যাদের পেশাগত কারণে শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতে হয় অথবা যারা আঘাতের ঝুঁকিতে থাকে তাদের এই রোগ হওয়ার পসিবিলিটি বেশি।

বিজ্ঞাপন

৪. যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদের ক্ষেত্রে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।

৫. সাধারণত স্থুল তথা মোটা মানুষের হাঁটুতে রোগটি অধিক পরিমাণে দেখা দেয়।

৬. কোনো কোনো সময় অস্টিও আর্থ্রাইটিস বংশগত কারণেও হতে দেখা যায়।

সর্বোপরি অস্টিও আর্থাইটিস এর চিকিৎসা যথাসময়ে নেওয়া হলে অনেকটাই আরাম পাওয়া সম্ভব পর হয়। তবে অল্প বয়স থেকেই একটি সুস্থ এবং পরিকল্পিত ডায়েট অনুযায়ী চললে এবং নিয়মিত ছোট থেকেই ব্যায়াম করলে বড় হয়ে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। সর্বোপরি, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই হাড়ের জন্য উপকারী খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত ৪০ এর পর থেকেই।

আর্থাইটিস নিয়ে আলোচনা এক পর্বে শেষ করার মত নয়। আমরা আগামী পর্বে আর্থাইটিসের আরো একটি প্রচলিত ধরণ রিউমাটয়েড আর্থাইটিস নিয়ে আলোচনা করব এবং এর চিকিৎসার সর্বোত্তম উপায় তথা পদ্ধতি নিয়ে আপনাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিব।

বিজ্ঞাপন

ছবি: Image by stefamerpik on Freepik


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সাদিক

My name is Abdus Sadik. I am a content writer for the online news and magazine portal ovizatri.com. Currently, I reside in Rajshahi, Bangladesh, and I am pursuing a BSc in Mathematics. I completed my intermediate studies in science at Namajgor Gausul Azam Kamil Madrasah, Naogaon. Stay updated with my informative writings and with ovizatri. As a team, we will do our best to keep you informed.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading