আপনি নিশ্চয় অফিসে যে শব্দচয়ন করেন ঠিক সেই একই শব্দচয়নের প্রয়োগ বাড়িতে ফিরে করেন না। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কেন নির্দিষ্ট একটি স্বভাব বজায় রাখার প্রবণতা দেখা যায়! কখনো কি এটা ভেবে দেখেছেন?
হ্যাঁ, আমি ‘আচরণবিধি (Code of Conduct)’ নিয়ে কথা বলছি। আমার আজকের এই আলোচনায় এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা রাখছি আপনি অন্তত হতাশ হবেন না।
আচরণবিধি (Code of Conduct) মূলত কী?
আচরণবিধি (Code of Conduct) হলো, এক ধরণের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা। এই প্রাইভেসির মধ্যে কিছু নিয়ম, নীতি, মূল্যবোধ, কর্মচারীদের প্রত্যাশা, আচরণ এবং একটি সম্পর্ক যুক্ত থাকে নির্দিষ্ট কোন কোম্পানী বা সংস্থার সাথে। এবং উক্ত কোম্পানী বা সংস্থা মনে করেন, তারা যদি এই সমস্ত কিছু মেনে চলেন তবে সেখানের সফলতা পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কোন কোম্পানীর একজন কর্মচারীর কাছে একটি নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এমনকি উক্ত কোম্পানীতে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় ‘আচরণবিধি (Code of Conduct)’ –এর ওপর। যেমন ধরুন, বাংলাদেশে কোন ‘কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস’ –এ ফোন দিলে তারা আপনাকে ‘স্যার/ম্যাম’ বলে সম্বোধন করতে বাধ্য।
কিন্তু কেন? কারণ, এতে করে কোথাও না কোথাও আপনাকে সম্মান দেওয়া হলো ফলে আপনি উক্ত কোম্পানীর কাস্টমার হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করবেন এবং শুধু তাই নয়; হয়তো এজন্য আপনি অন্যকেও ঐ কোম্পানীতে যোগ দেবার জন্য উৎসাহিত করবেন।
একটি কোম্পানী বা সংস্থার আচরণবিধি জানান দেয় যে, সেই কোম্পানী বা সংস্থা কালচার কেমন। পাশাপাশি একটি সংকেত নির্দেশ করে উক্ত কোম্পানীর কাস্টমার বা সদস্যদের মধ্যে। আর যারা বিনিয়োগ করেন তারা কিন্তু ঐ ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ দেখেই বা বিবেচনায় নিয়েই বিনিয়োগ করে থাকেন।
উক্ত কোম্পানীর বা সংস্থার নাম-ডাক অবশ্যই বিবেচ্য কিন্তু ভালো আচরণবিধি না দেখাতে পারলে অনেক সময় বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
(ফুটনোট: এখানে বোধহয় উল্লেখ করা জরুরী যে, ‘স্যার’ মানে ‘জনাব’ হলেও এই শব্দটি ভালো ব্যবহার ও সম্মান দেওয়াকে নির্দেশ করে।)
কেন আচরণবিধি (Code of Conduct) মেনে চলা জরুরী?
এই পরিভাষা ‘Code of Conduct’ সাধারণত লিখিত কোন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে তবে একই সাথে কিছু প্রত্যাশাও রাখে। তবে কিছু কিছু কোম্পানী বা সংস্থা এটাকে ‘Code of Business Ethics’ শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করে থাকেন।
ব্যবসার ক্ষেত্রে এই পরিভাষা কে যোগাযোগের টুল হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই আচরণবিধি বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও একটি ভিত্তি প্রদান করেন। কিন্তু কীভাবে? নিচে কিছু বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।
১. এটা আচরণবিধির জন্য একটি নির্দেশিকা প্রদান করে
কর্মচারীদের আচরণবিধি বা চলার নিয়ম এবং একই ধরণের পোষাক ও আচরণ তাদের কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা এনে দেয়। ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ এর মাধ্যমে কর্পোরেট জীবনের প্রবিধান সম্পর্কে ভালো ধারণা দিয়ে থাকে, এতে করে পরিবেশটা আরো সহজ হয় পরিচালিত করবার জন্য।
তাছাড়াও কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত করে। তারা একে অপরকে একই রুপে দেখতে পায়। ফলে এক ধরণের একাত্মতার বিষয়টিও চলে আসে। তাই বেড়ে যায় কাজের গতি।
২. ‘Code of Conduct’ একটি কোম্পানী বা সংস্থার মান নিশ্চিত করে
মানুষ মাত্র-ই কৌতূহলী। তাদের যেন জানার শেষ নেই। কিন্তু কোন কোম্পানী বা সংস্থার প্রতি আমাদের জানার আগ্রহ তবেই বাড়বে যদি দেখি সে কোম্পানী বা সংস্থার আচরণবিধি মন জয় করে নেবার মত। হতে পারে সেই আগ্রহ থেকে একজন ব্যক্তি উক্ত কোম্পানী বা সংস্থার ওয়েবসাইটে ঢু মেরে তাদের নীতি, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে হালনাগাদ করতে পারেন।
ফলে, কাস্টমার বাড়তেই থাকে। ভালোর জন্য ভালোটা, আর মন্দের জন্য মন্দটা।
৩. এটি কর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে তোলে
একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আচরণবিধি (Code of Conduct) হলো একটি কোম্পানীর হৃদয় এবং আত্মা। একজন কর্মচারী যখন যথাবিহিত আচরণবিধি পালন করেন তখন তার পদোন্নতির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এর ফলে কোম্পানী আরো বেশি কর্মী নিয়োগে সক্ষম হোন।
৪. এটি কর্মচারীর সাফল্য নির্ধারণ করে থাকে
দেখুন, নিয়োগকর্তা নিয়োগ দিলেও প্রথমে আপনার আচরণবিধির ওপর বেশ নজরদারি করে থাকেন। তারা খেয়াল রাখেন যে, আপনি তাদের নীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে মূল্যায়ন করছেন তো! মানে কোন কোম্পানী বা সংস্থায় পদোন্নতির জন্য অবশ্যই ভালো আচরণবিধি দেখাতে হয়।
৫. এটা আইনের আনুগত্য নিশ্চিত করে থাকে
একটি কোম্পানী বা সংস্থার একজন গ্রাহক বা সদস্যের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এটা সমস্যা নয়, বিষয় হলো উক্ত কোম্পানী বা সংস্থা আপনার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন তো! প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি। কারণ তাদের তো একটি প্রাইভেসি পলিসি থাকছে।
আচরণবিধি (Code of Conduct) এর প্রকারভেদ
বিভিন্ন কোম্পানী বা সংস্থা আলাদা আলাদা নীতি নির্ধারণ করে থাকেন। কিন্তু আপনি কিছু বিষয় কমন পাবেন। যেমন ধরুন,
(ক) অখন্ডতা
(খ) বস্তুনিষ্ঠতা
(গ) কর্মদক্ষতা
এবং
(ঘ) পেশাদারিত্ব ইত্যাদি
আচরণবিধি এবং নৈতিকতার বিধান কি একই রকম?
না, দুটো আলাদা। নীতিশাস্ত্র এবং আচরণবিধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো যে, আচরণবিধি (Code of Conduct) কোন নীতির উপর নির্ভরশীল নয় তাই এখানে শুধু নির্দেশনার বিষয় থাকে কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধ নির্দেশনার পাশাপাশি বিচার বিবেচনাও করে থাকে।
পরিশেষ
ধরুন, আমি কোন ব্লগিং সাইটে লিখছি, সেক্ষেত্রে সেখানের যে নীতিমালা আছে, প্রাইভেসি আছে, মূল্যবোধ আছে এসব মেনেই আমাকে লিখতে হবে। লেখা ভালো হলে এবং সম্পাদকীয় নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আমার লেখাটাও সেরা হয়ে উঠবে।
যাইহোক, চেষ্টার কমতি ছিলো না। কিন্তু যদি কোন ভুলক্রুটি থেকেই যায় তবে মাফ করবেন। ধন্যবাদ
ছবি: Image by jcomp on Freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.