অনলাইন

কপিরাইট: আপনার সৃজনশীলতার সুরক্ষা এবং DMCA এর ভূমিকা

কপিরাইট কি এবং কীভাবে DMCA আপনার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রক্ষা করে?

আমরা প্রাশয়ই “কপিরাইট (Copyright)” শব্দ শুনে থাকি। শুনে থাকি এই নিয়ে সমস্যার কথা। কিন্তু এই “কপিরাইট (Copyright)” বলতে কি বুঝায়? কেন আমরা এই সমস্যার মুখোমুখি হই? এই নিয়ে আমাদের মনে আসা নানান প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কপিরাইট (Copyright) এর সংজ্ঞা

“Protection of an individual’s exclusive right to publish and sell original written materials.” – Steven J. Skinner & John M. Ivancevich

এর অর্থ হচ্ছে, একজন ব্যক্তির লিখিত কোন বিষয়ের মালিকানা দেওয়া হলো সেই সাথে উক্ত ব্যক্তিকে ঐ লেখা প্রকাশ বা বিক্রি করার পুরোপুরি হকও দেওয়া হলো।

কপিরাইট (Copyright) এর ব্যাখ্যা

বস্তুর ক্ষেত্রে মালিকানা নির্ধারণ তুলনামূলক সহজ। কিন্তু কোনো ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির ক্ষেত্রে মালিকানা দেওয়া সেই অর্থে অত সহজ নয়। একজন মানুষ তার টাকা দিয়ে যা ক্রয় করেন তার মালিকানা এবং তিনি তার মেধা দিয়ে যা তৈরি করেন তার মালিকানা দুটো আলাদা বিষয়। এবং একই সাথে প্রথমটি তুলনামূলক সহজ হলেও দ্বিতীয়টি ঢের কঠিন।

ধরুন, আপনি কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট কিছু জমির মালিক। আপনার কাছে সেজন্য দলিলপত্র থাকলে কেউ আপনার ঐ জমি দখলে নিতে পারবেন না। এজন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন কার্যত বলবৎ আছে।

কিন্তু মেধা বা প্রতিভা বা বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে জিনিসটি লিখলেন বা গাইলেন বা তৈরি করলেন এবং একই সাথে সেটার উপস্থিতি অনলাইনে হলে চুরি হয়ে যাবার ভয় কিন্তু কম নয়। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যে, একজনের লেখা অতীতে এবং বর্তমানেও অন্যজন নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ একটু বুদ্ধি করে লেখাটি করছেন মডিফাই।

এজন্য অনলাইনে প্রচুর প্লাগারিজম টুলস্ রয়েছে। কিন্তু এসবকেও বাইপাস করা যায় বা যাচ্ছে। তাই রাত জেগে যিনি লিখছেন, রিসার্চ করছেন, গান গাইছেন, ওয়েবসাইট ডিজাইন থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স ডিজাইন করছেন এবং ফটো তুলছেন তারা হুমকির মুখে চলে যাচ্ছেন। তাদের কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা সম্পত্তি হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে।

তাদের কষ্ট করে এই সব লেখা বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অনলাইনে উপস্থিত থাকায় খুব সহজেই হয়ে যাচ্ছে চুরি। আর ঠিক এখানেই “কপিরাইট (Copyright)” -এর ভূমিকা এসে পড়ছে। কারণ, ক্রমাগত যদি আপনার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি চুরি হতে থাকে তবে একসময় নিজের বলে কিছুই থাকবে না।

Digital Millennium Copyright Act (DMCA) কি?

বিল ক্লিনটনের সময় Digital Millennium Copyright Act বা DMCA যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৬ সালে চালু করা হয়। এই আইন করার লক্ষ্য হচ্ছে, যে কোনো ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি কে রক্ষা করা। তবে ১৯৯৮ সালে এই আইন ইন্টারনেটে থাকা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি কেও যে রক্ষা করতে হবে সেটা বিবেচনায় নেয়া বা এই আইন মডিফাই করা হয়।

এর পূর্বে যে কেউ ইন্টারনেটে থাকা যে কোন তথ্য কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া, কর্মাসিয়াল উদ্দেশ্য হাসিল করা বা টাকা কামানো যেত। কিন্তু এই শোষণ যেন আর না ঘটে সেটাকে রক্ষা করার জন্যই DMCA আইন চলে আসে।

এখানে একটি সংস্থার নাম চলে আসে। সেটা হচ্ছে, “World Intellectual Property Organization (WIPO)” । এই সংস্থার অধীনে যতগুলো দেশ আছে সেসব দেশের কোন ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি কেউ যেন চুরি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখে বা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

Digital Millennium Copyright Act (DMCA) এটা কীভাবে কাজ করে?

এখন মনে নিশ্চয় আরো প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে… এই যেমন, ‘আইন তো হলো কিন্তু সেটা কীভাবে এক্সিকিউট করা হবে?’ মানে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা যায় ক্যামনে? এখন DMCA কাজ করে WIPO এর সাথে। আবার WIPO এর দুটো ‘Treaty’ আছে,

১. The WIPO Copyright Treaty

২. The WIPO Performances and Phonograms Treaty

১৯৯৬ সালে পৃথিবীর মোট ১৯৩টি দেশ এই আইনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ইন্টারনেটে অটো-জেনারেট করে প্রকৃত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কে জানায় এবং মিথ্যে বা চুরি করা বা মডিফাই করা কন্টেন্ট কে হঠিয়ে দেয়। আপনি নিশ্চয়, কঙ্গনা রানাউত (বলিউড অভিনেত্রী) এর টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হতে দেখেছেন বা জেনেছেন সেটাও কিন্তু এই একই ভাবে কাজ করেছে।

যদিও ‘WIPO (১৯৬৭)’ কিন্তু ‘DMCA’ এর পূর্বে থেকেই মাঠে আছে। কিন্তু ইন্টারনেটের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির ক্ষেত্রে পরে আসে। এখন ১৯৯০ সালে ইন্টারনেটের বিকাশ ঘটে এবং তখন ‘WIPO’ এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়। এখানে উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, যেসব দেশ ‘DMCA’ আইনের সাথে চুক্তিবদ্ধ সেসব দেশ কিন্তু ‘WIPO’ -এর সাথেও চুক্তিবদ্ধ।

এখন এখানে কোন ব্যক্তি যদি আপনার কন্টেন্ট ইন্টারনেট থেকে চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়, আর্থিকভাবে লাভবান হয় অথবা, ক্ষতি করে তবে আপনি এদের সাথে যোগাযোগ করে সেটার টেকডাউন নোটিশ পাঠাতে পারবেন।

অনেকক্ষেত্রে যদি সমস্যা হয় এদের সাথে যোগাযোগে তবে আপনি DMCA.com নামে থার্ড পার্টির সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। আপনার অনুমতি পেলে তবেই সেটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে।

কীভাবে কপিরাইট (Copyright) অভিযোগ দায়ের করবেন?

এজন্য আপনাকে সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অভিযোগ করতে পারবেন। যদি সেটা নাও পারেন তবে সমস্যা নেই, আপনি DMCA.com নামে থার্ড পার্টির কাছেও অভিযোগ যোগাযোগ করতে পারবেন।

যেমন ‘অভিযাত্রী’ যদি ‘প্রথম আলো’ বা ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা থেকে কোনো লেখা চুরি করে থাকে তবে তাদের পক্ষ থেকে DMCA নোটিশ আসতে পারে। অনেকক্ষেত্রে এখন আসেও বটে; যেটা ভালো একটা দিক।

যতদূর জানি এই নোটিশটি জেনারেট করে থাকে ‘WIPO’ এবং চুরি করা যে কোন কন্টেন্ট তখন হঠাতে বাধ্য থাকতে হয়।

মনে রাখবেন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি চুরি করাও এক ধরণের অপরাধ।

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button