মনোবিজ্ঞান

বিষণ্ণতা: কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠুন

বিজ্ঞাপন

বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন শব্দটির সাথে কম বেশি প্রায় সবাই পরিচিত। এই শব্দটি আমরা বিভিন্ন কারণে প্রায় সময়ই বলে থাকি। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন শুধুমাত্র একটি সাধারণ সমস্যা নয়? চলুন আজ এই বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন সম্পর্কেই জেনে আসি।

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কি?

বিষণ্ণতাকে বলা হয় একটি মেজাজ ব্যাধি সমস্যা। এটি একটি সাধারণ এবং গুরুতর চিকিৎসা রোগ যা মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। যেমন, দুঃখ, ক্ষতি বা রাগের অনুভূতি হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে এই বিষণ্ণতাকে। ফলে একজন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ঠিকভাবে করতে পারে না।

অনেকেই বিষণ্ণতা বলতে আবার মন খারাপ করাকে বোঝায় না। অনেকেরই মন খারাপ থাকলেই সে মনে করে সে ডিপ্রেশনে আছে। আসলে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন এবং মন খারাপ এক নয়।

একটি উদাহরণ

ধরুন, একজন ব্যক্তির অল্প সময়ের জন্য অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিষণ্ণ বোধ হতে পারে। তার পরিবারের সদস্যের ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি আঘাতমূলক বা বেদনাদায়ক ঘটনা হতে পারে। এবং এতে অল্প সময়ের জন্য হতাশ হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করা হয়।

কিন্তু যদি এটি দীর্ঘসময় পর্যন্ত থাকে তবে এটিকে আর স্বাভাবিক বলা যাবে না। এর জন্য অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।

বিজ্ঞাপন

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো কি কি?

বিষণ্ণতার ৯টি লক্ষণের কথা উল্লেখ করেন ‘আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক অ্যাসোসিয়েশন’। তারা জানান, “যদি কারও মধ্যে এই লক্ষণগুলোর অন্তত পাঁচটি লক্ষণ টানা দু’সপ্তাহ বা তারচেয়ে বেশি সময় দেখা যায় তবে সেটাকে বিষণ্ণতা বলা যেতে পারে।”

১. দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ করে থাকা ২. আনন্দময় কাজগুলোর প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া ৩. ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া। অর্থাৎ তা অস্বাভাবিক কম বা বাড়ে যেতে পারে ৪. খাবারের প্রতি অরুচি আসা বা রুচি বেড়ে যাওয়া ৫. ওজন কমে যাওয়া ৬. কাজ ও চিন্তার গতি কমে যাওয়া ৭. নিজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হওয়া এবং সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করা ৮. সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ৯. আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কেন আসে?

১. শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক কারণ: সাধারণত বিষণ্ণতা হয়ে থাকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক কারণে।

২. দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগ: বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, শ্বাসকষ্টের সমস্যা ইত্যাদির কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।

৩. মানসিক চাপ এবং ব্যক্তিত্বের গড়ন: মানসিক কোনো চাপ এবং ব্যক্তিত্বের গড়নও এই বিষণ্ণতার জন্য দায়ী।

বিজ্ঞাপন

৪. সামাজিক বৈষম্য, অস্থিরতা, বঞ্চনা এবং দারিদ্র্য: সামাজিক বৈষম্য, অস্থিরতা, বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের জন্যও মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে। সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

৫. শিশু অবস্থায় নির্যাতন: শিশু অবস্থায় যদি কেউ কোনো ধরণের নির্যাতনের শিকার হয় তবে ভবিষ্যতে সেই শিশুও বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে।

৬. জেনেটিক কারণ: এছাড়াও জেনেটিক কারণেও অনেকেই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।

৭. ব্রেক-আপ বা ডিভোর্স: আবার ব্রেক-আপ অথবা ডিভোর্স কিংবা পরিবারের কেউ অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে সেখান থেকেও মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।

৮. পরিবেশগত কারণ: চারপাশের অন্তর্গত নানা কারণে একজন মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কাটানোর উপায় কি?

১. নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন: একটু সময় নিয়ে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করা। অর্থাৎ নিজেকে জানা। কোন বিষয়গুলোতে আপনি বিষণ্ণতায় তলিয়ে যাচ্ছেন তা খুঁজে বের করা।

২. শরীরচর্চা করা: নিয়মিত ব্যায়াম করা। এর জন্য একটি ভালো ব্যায়াম ক্লাব বা জিমে ভর্তি হওয়া অথবা বাড়িতে কিংবা পার্কে নিয়মিত শরীরচর্চা করা। একজন সুদক্ষ ব্যায়াম প্রশিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া।

৩. সুষম ডায়েট অনুসরণ করা: অনেকেই আছেন যারা শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে স্লিম হওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছামতো ডায়েট করে থাকেন। এতে খাওয়া-দাওয়া অনেক কমিয়ে ফেলেন এবং নানা রোগ বাধিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু এটা কখনই শরীরের জন্য ভালো না। কম বা বেশি নয় বরং পরিমিত মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াটা জরুরি। এজন্য প্রথমে একটি সুষম ডায়েট চার্ট করে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা উত্তম।

৪. পর্যাপ্ত ঘুমানো: হতাশা, উদ্বেগ এর জন্য ঘুমের সময়ে সমস্যা হতে পারে। এই সময়ে কেউ হয়তো বেশি ঘুমায় আবার কেউবা কম। কেউ কেউ আবার অনিদ্রার সমস্যায় ভোগে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে ৮ ঘন্টার বেশি ঘুম নয়, আবার কমও নয়। মনে রাখা উচিত ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।

৫. প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা: যতটা সম্ভব প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা উচিত। শহরে থাকলে এই প্রকৃতির সংস্পর্শ পাওয়াটা বেশ কঠিন। তবুও আশপাশে বড় বা ভালো কোন পার্ক থাকলে ভোরের সময়টা উপভোগ করা এবং দিনে অন্তত ৩০ মিনিট এভাবে সময় ব্যয় করা উচিত।

বিজ্ঞাপন

৬. সৃজনশীল হয়ে ওঠা: নিজের চিন্তাধারাকে বিকশিত করা জরুরি। এজন্য নিজের হাতে কিছু করতে পারেন। যেমন; ছবি তোলা বা ভিডিও করা, ছবি আঁকা, ছড়া-কবিতা, গল্প বা ডায়েরি লেখা ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

৭. বই পড়া: বই পড়লে মন সবসময়ই ভালো থাকে। এজন্য লাইব্রেরি বা পাঠাগারে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানো উচিত।

৮. মানুষের উপকার করা: মানুষকে নিয়ে ভালো চিন্তা করা এবং উপকার করার চেষ্টা করা। এতে মনে প্রশান্তি মিলে। নিজেকে খুব হালকা লাগে।

৯. সমস্যার কথা শেয়ার করা: নিজের কথাগুলো শেয়ার করা উচিত। সবার সাথে না হলেও খুব কাছের কয়েকজনের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে নিজের সমস্যার কথাগুলো মন খুলে বলা জরুরি। এতে একদিকে যেমন সমাধান পাওয়া যায়, অন্যদিকে অনেক বেশি হালকা অনুভবও হয়।

পরিশেষ

তবে দৈনন্দিন জীবন যাপনের কাজগুলো যদি বেশি বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা পড়ালেখা বা পরিবারের সাথে সম্পর্কটা যদি খারাপ হতেই থাকে অথবা কেউ যদি ক্রমাগত নিজে গুটিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

ছবি: Image by yanalya on Freepik


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সেলিনা আক্তার শাপলা

আমি একজন লেখিকা ও ব্লগার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি।

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading