সম্পাদকীয়

ডিজিটাল আইডি কার্ড ও ই-পাসপোর্ট: আধুনিক নাগরিক সেবার নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশে ডিজিটাল আইডি কার্ড ও ই-পাসপোর্টের সুবিধা ও প্রভাব

বিজ্ঞাপন

গত দশকে এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেবার জন্য নাগরিকদের প্রদান করা হত এনালগ আইডি কার্ড। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সেবা ডিজিটাল হওয়ার ফলে নাগরিকদের প্রদান করা হচ্ছে ই-পাসপোর্ট ও ডিজিটাল আইডি কার্ড।

ডিজিটাল আইডি কার্ড

ডিজিটাল আইডি কার্ড কি?

প্রতিটি দেশের নাগরিকদের এক ধরনের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, যেটি দিয়ে দেশের সকল নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিটাল সংস্করণকেই বলা হয় ডিজিটাল আইডি কার্ড বা স্মার্টকার্ড।

ডিজিটাল আইডি কার্ডের সুবিধা

এই কার্ডের মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিক বিভিন্ন সেবা ডিজিটালভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। এই কার্ডের ভিতরে একটি নাগরিকের সকল ধরনের তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকবে। নাগরিক তথ্যগুলো হলো:

  • ব্যক্তির নাম
  • বাবার নাম
  • মায়ের নাম
  • পেশা
  • স্থায়ী ঠিকানা
  • বর্তমান ঠিকানা
  • বয়স
  • বৈবাহিক অবস্থা
  • জন্মতারিখ
  • রক্তের গ্রুপ
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • লিঙ্গ
  • জন্মস্থান
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন
  • ধর্ম

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্মার্টকার্ডে থাকবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি। এছাড়াও এই কার্ডে বিভিন্ন তথ্য খুব সহজে আপডেট করা যায়।

ই-পাসপোর্ট

ই-পাসপোর্ট কি?

পৃথিবীতে বর্তমানে স্বাধীন প্রায় ১৯৭টি রাষ্ট্র আছে। কোন রাষ্ট্রের নাগরিক চাইলে একটি দেশে থেকে অন্যদেশে যেতে পারে না। কোন রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রে যেতে চাইলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়ার চাবিকাঠি হলো নিজ দেশের পাসপোর্ট। বর্তমানে নাগরিকদের বিদেশগমন সহজ করতে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হয়েছে। এটি একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে।

বিজ্ঞাপন

ই-পাসপোর্টের সুবিধা

মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফি ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্যসহ মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। এতে বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকবে।

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশ সরকারও ই-পাসপোর্ট প্রদান করতে শুরু করেছে। গত বছরের ২২ জুলাই এই ধরনের পাসপোর্ট দেওয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পদ্ধতির পাসপোর্ট নিয়ে দেশের যে কোন নাগরিক খুব সহজে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এই পাসপোর্টের ভিতরে একটি চিপ থাকবে যাতে নাগরিকদের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ফলে একটি দেশের নাগরিক অন্যদেশে ভ্রমণে বা ব্যবসার কাজে গেলে ওই দেশ কোন ধরনের সন্দেহ করলে তার সম্পর্কে সকল তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন খুব সহজে। ব্যাংকে এখনো যেমন গ্রাহকের স্বাক্ষর যাচাই করে কর্মকর্তারা টাকা প্রদান করেন, কিন্তু এটিএম বুথে কোন ধরনের স্বাক্ষর যাচাই না করে মেশিনের মাধ্যমে গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে টাকা দেওয়া হয়। তেমন ই-পাসপোর্ট নিয়ে একটি দেশের নাগরিক বিমানবন্দরে গিয়ে ভিসা চেকিংয়ের লাইনে না দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন গেট দিয়ে নিজের পাসপোর্ট ভিসা যাচাই করে দেশে প্রবেশ ও ত্যাগ করতে পারবেন।

এতে করে একজন নাগরিকের মূল্যবান অনেক সময়ের অপচয় রোধ হবে। এই পাসপোর্টধারীরা খুব সহজে ই-গেট ব্যবহার করে বিশ্বের সকল দেশে নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।

বাংলাদেশে ডিজিটাল আইডি সেবা

বাংলাদেশের নাগরিকদের বহুল প্রতীক্ষিত উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) বিতরণ শুরু হয়েছিলো ২০১৬ সালে। বর্তমানে জেলা ও থানা পর্যায়ের সাধারণ মানুষদের মাঝে বিতরণ শেষে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ চলছে।

বিজ্ঞাপন

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল সেবা দেশের নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা ভাবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মেয়াদে দেশের সকল নাগরিকদের এই কার্ড দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়, যা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এই কার্ড সকলের কাছে বিতরণ করা সম্পন্ন হলে দেশের সকল সেবা ও কার্যক্রম ডিজিটালভাবে সম্পন্ন করা যাবে। এতে অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে একজন নাগরিক প্রায় দেশের ৩২টি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন খুব সহজে। যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ব্যাংক, কর, চিকিৎসা, শিক্ষা সব জায়গার বিল খুব সহজে নিজের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন।

যে কোন চাকরি ক্ষেত্রে খুব কাগজ-পত্র দেখিয়ে এই কার্ডের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত সকল তথ্য প্রদান করতে পারবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত সার্কভুক্ত দেশে যদি ভিসা তুলে দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশের নাগরিক খুব সহজে নিজের পরিচয়পত্র যাচাই করিয়ে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।

সরকার বা কোন সংস্থা কোন ব্যক্তিকে নিজের সংগঠনে যুক্ত করার আগে খুব সহজে এই কার্ডের নম্বর নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো যাচাই করে নিতে পারবেন। এই কার্ড জালিয়াতি করা প্রায় অসম্ভব।

কারণ এই কার্ডে ব্যক্তির সব আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি থাকে ফলে নাগরিকদের একজনের সেবা অন্যজন চুরি করতে পারবেন না। এছাড়াও অন্যদেশের কোন নাগরিক এসে খুব সহজে বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় পেতে পারবে না, যা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

পরিশেষ

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে সে দেশের উন্নয়নের গতি কমে যায়। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে বিশ্বের সকল দেশের থেকে পিছিয়ে পড়তে হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের মত নিজেদের সকল সেবা ডিজিটালভাবে প্রদানের লক্ষ্যে নানা কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশের নাগরিকরা স্বল্পউন্নয়নশীল দেশে থেকে নিজেরা প্রথম সারির উন্নয়নশীল দেশের মত সেবা পেতে যাচ্ছে।

বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর অন্যতম দুটি সেবা হলো ডিজিটাল আইডি (স্মার্ট কার্ড) এবং ই-পাসপোর্ট যার মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা বিশ্ব নাগরিকের মর্যাদা পান। খুব সহজে সারা বিশ্ব ঘুরতে পারেন। তাই এই দুই সেবা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।

Related Articles

Leave a Reply

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading