সম্পাদকীয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: গণতন্ত্রের মূল ভিত

সরকারি হস্তক্ষেপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকিতে

বিজ্ঞাপন

প্রথম প্রকাশ: ৯ মে, ২০২৩

গণামাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। একটি দেশে বা সমাজের প্রতিফলন দেখা যায় গণমাধ্যমে। তবে বর্তমান মুক্ত অর্থনীতির যুগে উন্নয়নের মডেল ধরা হয় অটোক্রেটিক শাসন ব্যবস্থাকে। ফলে স্বৈরাশাসক হিসেবে ক্ষমতাশীনদের প্রধান কাজ হয়ে উঠে গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরা। এটি না করতে পারলে তাদের সকল কুকর্ম ফাঁস হওয়ার যেমন ভয় থাকে তেমনি ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

বিশ্বের সব দেশে বর্তমানে গণমাধ্যমের ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। তবে এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও অনেক দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশ রয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা এ সূচকে খুবই বাজে। হুট করে ১ বছরের মাথায় ১০ ধাপ পিছিয়ে গেছে আমাদের দেশ।

আজকে আলোচনার বিষয় হলো এটির কারণ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে।

সারাবিশ্বের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) করা প্রতিবেদন অনুসারে বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে গত ছয় বছরে ক্রমেই অবনতি হতে দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ তম, স্কোর ৩৫ দশমিক ৩১। যেখানে ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২ তম। স্কোর ছিল ৩৬ দশমিক ৬৩। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন হয়েছিল। বরাবরের মতো সূচকের শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। স্কোর ৯৫ দশমিক ১৮। নরওয়ের পরে রয়েছে আয়ারল্যান্ড (২য়), ডেনমার্ক (৩য়), সুইডেন (৪র্থ), ফিনল্যান্ড (৫ম)।

সূচকে অবনতির কারণ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবনতির কয়েকটি কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো কয়েকটি হলো- সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ, মতের অমিলকে যেকোনো কৌশলে দমিয়ে রাখার চেষ্টা, গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করা প্রমুখ।

এসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাপার হলো আইনের মাধ্যমে দমন। বর্তমানে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এই আইনের কিছু ধার আছে যে এসব করলে একজন ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে কিন্তু সেটির কোনো মাপকাঠি নেই। আবার আইনের কিছু ধারার সাজা এমন যে কোনো ভাবেই জামিন পাবেন না। অন্যদিকে ফাঁসির আসামীরও জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এটি হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। যেটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাশীনদের পক্ষ থেকে বার বার ইন্টারনেট মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ দমনের জন্য এ আইন করা হয়েছে বললেও এটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ হয়েছে সাংবাদিকদের ওপর। আবার এক মন্ত্রী বলেছিলেন সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হবে না।

কিন্তু পরবর্তীতে নানা সময়ে সরকারের বিপক্ষে লেখা প্রকাশিত হলে সেটির জন্য মামলা দায়ের হয়েছে। এমন আরও চারটি আইন খসড়া পর্যায়ে আছে। আরও নতুন নতুন আইন প্রণয়নে তোড়জোড় চলছে। এসব আইন সংসদে পাশ হলে সূচকে আরও অবনতি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যম বন্ধ

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় সংবাদপত্র সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করে। কিন্তু এটির বিপরীত চিত্র আমাদের দেশে দেখা গেছে যে, সরকারী চাপে গণমাধ্যমই বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ‘দৈনিক দিনকাল’ এর প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এর প্রকাশক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, একজন দণ্ডিত আসামি। এবং বাংলাদেশের আইনে একজন দণ্ডিত অপরাধী কখনও গণমাধ্যমের প্রকাশক হতে পারেন না।

এই অভিযোগে গত বছরের ২৬ শে নভেম্বর পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের আদেশ জারি করে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

একটি রাষ্ট্র যখন গণমাধ্যমকে আর প্রতিপক্ষ মনে করবে না তখনই প্রকৃতি স্বাধীনতা পাবে গণমাধ্যম। এতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা আরো বেশি দৃষ্টিগোচর হবে। এমনকি ক্ষমতশীন দলেরও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে বেশ সহজ হবে। অনেক সময় উচ্চ আসন থেকে নিচের অনেক ছোট বিষয় বোঝা যায় না। কিন্তু গণমাধ্যমে সব কিছুর তথ্য উঠে আসে সেদিক থেকে গণমাধ্যম আরো সরকারের বন্ধুপ্রীতম কিছু হয়ে উঠতে পারে একটু ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে উন্নতির জন্য এবং দেশে ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করার জন্য মুক্ত গণমাধ্যম অতি জরুরী। বাংলাদেশে এমন সময় দ্রুত আসুক সেই কামনা।

ছবি: Image by freepik

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading