ডিআইডি (Dissociative Personality Disorder – DID): সমস্যা নাকি সুপারন্যাচারাল ঘটনা? একটি মনোবিজ্ঞানীয় পর্যালোচনা
Disclaimer of Dissociative Personality Disorder (DID): The information presented in this article is for educational and informational purposes only and is not intended as a substitute for professional medical advice, diagnosis, or treatment. The views and opinions expressed herein are those of the author and do not necessarily reflect the official policy or position of any medical institution or authority. The article discusses Dissociative Identity Disorder (DID), previously known as Multiple Personality Disorder, and its portrayal in various media. It also addresses common misconceptions and cultural beliefs related to mental health issues in Bangladesh. Readers are advised to consult qualified health professionals regarding any questions or concerns about mental health conditions. The author does not hold a specialized degree in psychology and the content is based on personal research and understanding. The medical treatments and drugs mentioned should only be used under the guidance of a licensed healthcare provider. The article also includes references to movies and statistics without providing specific sources for verification. Readers should exercise critical judgment and seek additional sources when evaluating the information provided.
স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া এবং নিজের মধ্যে একের অধিক ব্যক্তি বা আইডেন্টিটির খোঁজ পাওয়া মানসিকভাবে সাধারণ প্রক্রিয়া হলেও এটি এক ধরণের মানসিক সমস্যা। সাধারণত এই ধরণের রোগের ক্ষেত্রে কখনো কখনো একটি আইডেন্টিটি বিদ্যমান আইডেন্টিটির উপর ভর করতে পারে, তারপর ঐ বিদ্যমান আইডেন্টিটির স্মৃতি লোপ করে পুরো ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। এই কড়া নিয়ন্ত্রণের ফলে ব্যক্তির সামান্য স্মৃতিশক্তির লোপ পেয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা যায় না। এই মানসিক রোগের নাম হচ্ছে ‘Dissociative Personality Disorder (DID)’।
এই ধরণের মানসিক সমস্যা কারো মাঝে তীব্র আকার ধারণ করলে বাংলাদেশের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের শরণাপন্ন না হয়ে হুজুর/কবিরাজ/তান্ত্রিক/ফকিরদের কাছে যায়। কারণ হুট করে মানুষের আইডেন্টিটি বদলে গেলে তার আচরণও ভয়ানকভাবে প্রভাবিত হয়। ফলে একই মানুষ একটু আগে যা বলছিলেন, যা করছিলেন, যা ভাবছিলেন তা কিছুপর হঠাৎ পাল্টে গেলে তার কাছের মানুষজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং ঘাবড়ে যান।
প্রথম দিকে এই মানসিক সমস্যার নাম ছিলো ‘Multiple Personality Disorder’। কিন্তু এই একাধিক ব্যক্তিত্ব কীভাবে একজন বহন করে তার একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি দেখানো যেতে পারে,
একজন ২৭ বছর বয়সী তরুণী একইসাথে দুটো ব্যক্তিত্ব যদি বহন করেন তাহলে হতে পারে একটি আইডেন্টিটি তার ছোটবেলার, যখন তার বয়স ছিলো মাত্র সাত বছর। হঠাৎ করে যখন এই আইডেন্টিটির প্রকাশ ঘটে তখন তিনি সাত বছরের বাচ্চার মতন হয়ে যেতে পারেন, বাচ্চাদের মত আচরণ করতে পারেন, বাচ্চাদের মতন রাগ-অভিমান-ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন, বাচ্চাদের মতন খেলতেও পারেন।
এবার আরেক আইডেন্টিটি যেটা তার ত্রিশ বছরে বৈবাহিক অবস্থা বুঝাতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি তার সাত বছরের এক বাচ্চা আছে বলে মনে করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তিনি এক্ষেত্রে কোন বাচ্চাকে দেখা মাত্রই তার নিজের বাচ্চা বলে মনে করতে পারেন। আচরণে একজন সত্যিকারের মায়ের ভূমিকা উপস্থাপন করতে পারেন, যত্নের দিক থেকে, দেখভালের দিক থেকেও। কিন্তু তার প্রকৃত আইডেন্টিটি হচ্ছে ২৭ বছয় বয়সী একজন তরুণী এবং অবিবাহিত।
এখন প্রথম আইডেন্টিটি কে ‘ক’ এবং দ্বিতীয় আইডেন্টিটি কে ‘খ’ বিবেচনায় নিলে তার একটি তৃতীয় আইডেন্টিটি বিদ্যমান; যা তার প্রকৃত আইডেন্টিটি এবং আমি সেটাকে এখানে ‘গ’ নাম দিচ্ছি। উল্লেখ্য, একজন মানুষ এই মানসিক সমস্যায় ভুগলে এরচেয়েও বেশি আইডেন্টিটি তার মধ্যে দেখা দিতে পারে। এই ক+খ+গ = ৩টি আইডেন্টিটির মালিক কিন্তু একজনই। এবং তিনি হঠাৎ করে এক আইডেন্টিটি থেকে আরেক আইডেন্টিটিতে সুইচ করতে পারেন যা সাধারণ কোন স্মৃতিভ্রম নয়, মায়া নয়। এটি এক ধরণের মানসিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশে এমন মানসিক সমস্যাকে যুগে যুগে জ্বীনের আছর/আত্মার ভর ইত্যাদি সুপারন্যাচারাল বিষয়ের সাথে যুক্ত করে অনেকেই ভেবেছেন।
একাধিক সমস্যার কারণে একজন ব্যক্তি এই ধরণের মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন,
১. শৈশবের ট্রমা
মনে করা হয় কোন ব্যক্তির শৈশবে বা কৈশোরে এমন কিছু যদি ঘটে যেটা তার সহ্যের বাইরে ছিলো এবং ভয়ানক ট্রমাটিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে সেক্ষেত্রে এই মানসিক সমস্যা তার পরবর্তী জীবনে দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভয়ানক সেক্সুয়াল বা ফিজিক্যাল এবিউজ, যুদ্ধপরিস্থির মধ্যে দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
২. ডিফেন্স মেকানিজম (Defense Mechanism)
সিগমুন্ড ফ্রয়েড বেশ কিছু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে দিয়ে ডিফেন্স মেকানিজম (Defense Mechanism) কে সমৃদ্ধ করেছেন বহু আগে। কিন্তু কোন ব্যক্তির বেড়ে উঠার পরিস্থিতি যদি এত ভয়াবহ হয় যে, পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তখন সে পালিয়ে যেতে না পেরে বরং বাস্তব বিবর্জিত কোন আইডেন্টিটি তৈরি করে যার মাধ্যমে সে স্বস্তি পায়। এই ধরণের মানুষ পরবর্তীতে ভালো সময় আসলেও তার মধ্যে এই আইডেন্টিটি থেকে যেতে পারে। কারণ সে সবসময় চাইবে নিজেকে রক্ষা করতে, সবকিছু থেকে দূরে থাকতে, বাস্তবতার সাথে অসংযুক্ত থাকতে।
৩. Formative Years
একজন বাচ্চার পূর্ণতা বা স্মৃতি কে মনে রাখার প্রবণতা সাধারণত ১-৯ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। দেখা যায়, এ সময়ে আপনি আপনার বাচ্চাকে যা শেখাবেন তা পরবর্তীতে মোটেই ভুলবে না। এই ফরমেটিভ বছরগুলোতে কোন বাচ্চার সাথে সামাজিক, আর্থিক, বায়োলজিকাল সমস্যা যদি ঘটে তাহলে তার প্রভাব হিসেবে সে তার মধ্যে ‘Dissociative Personality Disorder (DID)’ তৈরি হতে পারে। এবং যখন সে বড় হয়েছে তখন তার মধ্যে এই দ্বান্দ্বিক ব্যক্তিত্বের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
মোটাদাগে পরিবার, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্স একজন মানুষের মধ্যে ‘DID’ উৎপন্ন করতে পারে। সাধারণত বায়োলজিকাল সমস্যা যা জিনগত সেটা পরিবার থেকে পেতে পারে আবার পরিবার ও পরিবেশের দ্বারা সেক্সুয়াল এবিউজ ও শারীরিক নির্যাতন অন্যতম। কথাগুলো যত সহজে লিখছি তত সহজে হজম করা হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু জ্বীনে বা ভূতে বা আত্মার আছরের ধারণা থেকে এই ধরণের ব্যক্তিকে দূরে রাখুন, সেটা আরো বড় রকমের ভুল হবে। কারণ আপনি তাকে আরো বাজে অভিজ্ঞতা দিচ্ছেন এর ফলাফল আরো ভয়ানক হয়ে একদিন দেখা দিতে বাধ্য।
স্মৃতিলোপ পাওয়া এই ব্যক্তিগুলো ভিন্ন ভিন্ন আইডেন্টিটিতে গিয়ে নিজেকে অনেকটা একটি সিনেমার মধ্যে কোন বিশেষ চরিত্রে দেখতে পায়। ‘Derealization’, ‘Depersonalization’ এবং এর সাথে যুক্ত ‘Anxiety’ ও ‘Depression’ পাশাপাশি মুড সুইং ও স্মৃতিভ্রম মিলে দিশেহারা মেঘাচ্ছন্ন মস্তিষ্কের মালিক এরা। যদি পড়তেই আপনার দাত ভাঙ্গার মত অবস্থা হয় তাহলে ভাবুন এই সমস্ত মানসিক রোগীরা কীভাবে দিন যাপন করছেন?
এই মানসিক সমস্যা হলিউড ও বলিউড সহ একাধিক ইন্ডাস্ট্রি একাধিক নাটক, সিনেমা ও সিরিজ তৈরি করেছেন। এক নজরে হলিউডে এই মানসিক সমস্যা নিয়ে ৫টি সিনেমার তালিকা,
১. ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘Split’ এ এক ব্যক্তির ২৩ ধরণের আইডেন্টিটি বা ব্যক্তিত্ব দেখানো হয়েছে।
২. ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Fight Club’ এ ২টি আইডেন্টিটি/ব্যক্তিত্বের স্বরুপ টানা হয়েছে।
৩. ১৯৯৬ সালে ‘Primal Fear’ সিনেমা তেও মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজওর্ডার দেখানো হয়েছে।
৪. ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘Sybli’ তে ১৬টি আলাদা আলাদা আইডেন্টিটি/ব্যক্তিত্ব টানা হয়েছে। আরো ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, এই সিনেমা ছিলো বাস্তত ঘটনা অবলম্বনে।
৫. ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘A Three Faces of Eve’ সিনেমায় এক মহিলার ৩ ধরণের আইডেন্টিটি দেখানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ০.১%-২% শতাংশ মানুষ এই মানসিক সমস্যার মধ্যে প্রতি বছর ভুগে থাকেন। আর মানসিক রোগীদের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৬%-১০% শতাংশ পর্যন্ত। সাইকিয়াট্রিস্ট/ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঔষধগুলো সেবন করতে পারেন,
১. Antidepressants: Such as Fluoxetine, to manage episodes of depression
২. Anti-anxiety drugs: Like Clonazepam and Lorazepam, to manage anxiety attacks
৩. Tranquilizers: For example, Chlordiazepoxide, to reduce states of anxiety and tension
৪. Mood stabilizers: Medications like Lithium and Valproic acid can help regulate mood changes
অন্তত জ্বীন/ভূত থেকে আপাতত আমাকে মুক্তি দিন এবং নিজেরাও একটু মুক্ত হোন। কারণ সুপারন্যাচারাল বা প্যারানরমাল একটিভির কোনো বিশেষ কিছু বিজ্ঞানের কাছে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। আর সুপারন্যাচারাল বা প্যারানরমাল একটিভিটি সম্পর্কে আমাদের দেশে যারা ভন্ড ফকির/তান্ত্রিক/কবিরাজ/হুজুর আছেন তাদের উপর ভর করবেন না। কারণ এদের ৯৯% শতাংশ মূর্খ এবং অজ্ঞ। ভারতীয় উপমহাদেশে এ নিয়ে ইতিহাস অনুযায়ী একসময় চিকিৎসা বিদ্যমান ছিলো কিন্তু বর্তমানের এসব ভন্ডরা সেসব জানেন না।
ফুটনোট: আমার মনোবিজ্ঞান নিয়ে বিশেষ কোনো ডিগ্রী নাই। যেটেকু পড়ি সেটুকুই জানানোর চেষ্টা করি। আজ এ পর্যন্তই, খোদা হাফেজ!
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.