সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস্ তৈরি করে আয়: কৌশল, কন্টেন্ট এবং সাফল্যের রহস্য
কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সৃজনশীলতা ব্যবহার করে আপনার রিলস্কে ভাইরাল করবেন?
বর্তমানে ফেসবুক ও টিকটকে রিলস্ শেয়ার করে সবচেয়ে বেশি আয় করা যায়। ইউটিউবেও শর্ট ভিডিও দিয়ে আয় করা যাচ্ছে। তবে সমস্যা হলো, রিলস্ তৈরি করলে মানুষকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কিনা? এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ছবি/ভিডিও/অ্যানিমেশন দিয়ে রিলস্ তৈরি করে প্রচুর টাকা আয় সম্ভব কিনা?
কৌশল ও পরিশ্রম
উত্তর হলো, কৌশলের সাথে কঠোর পরিশ্রম ও ভাগ্য। কৌশল হাজারো মানুষ আপনাকে জানাবে, হয়তো আপনি কঠোর পরিশ্রম করতেও রাজী। কিন্তু ভাগ্য যদি সহায় না-হয় তাহলে কোনোভাবেই আপনি অন্তত প্রচুর টাকা এসব সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম থেকে উপার্জন করতে পারবেন না। তবে, একটি উপায় আমার জানা আছে, হতে পারে এই উপায়ে আপনি আপনার কম পরিশ্রমে আপনার ভাগ্যকে সাফল্যের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন।
প্রাসঙ্গিকতা ও অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট
প্রথমেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে, বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাসঙ্গিক থাকাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তার উপর আপনাকে এমন কিছু ছবি বা অ্যানিমেশন তৈরি করতে হবে যা মানুষের নজর কাড়বে। এবং, আমার প্রথম পয়েন্ট হলো, মানুষকে অন্তত ৩০ সেকেন্ড আপনার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত ছবি/অ্যানিমেশন/ভিডিওতে ধরে রাখতেই হবে। কারণ অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট এখানে খুবই জরুরী।
তথ্যের বোমা
চারপাশে এখন গুগল সার্চ করলে হাজারো অথেনটিক ছবি/অ্যানিমেশন/ভিডিও মিলে যায় তাও সেকেন্ডে। আমরা এতগুলো চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল দেখতে পাচ্ছি যে একটি ছবি/ভিডিও/রিলস্ না দেখতেই ওরকম হাজারো ছবি/ভিডিও/রিলস্ চোখের সামনে এসে হাজির। এ যেন এক তথ্য বোমা সার্বক্ষণিক ভাবে আমাদের ঝালাচ্ছে ও জ্বালাচ্ছে। এখানে স্ট্যান্ড-আউট করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও মনে হতে পারে সময় সময়।
অডিয়েন্সের ধৈর্য্য
২০০০ সালের একটি গবেষণা মতে তখন মানুষকে ধরে রাখা যেত নূন্যতম ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত। ২০১৩ সালে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ৮ সেকেন্ডে। বর্তমানে জেন-জি প্রজন্মের ধৈর্য্য আরো কম। ধরুন, ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড (সর্বোচ্চ)। সেখানে আমাদের টার্গেট হলো ৩০ সেকেন্ড!
আবর্জনামুক্ত সোশ্যাল মিডিয়া
প্রচুর তথ্যের কারণে বর্তমানে সবাই আনফলো ও একাধিক ফিল্টার অপশন ব্যবহার করছেন। কারণ প্রত্যেকদিন যে পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা আমাদের সীমিত জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে ছেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আবর্জনামুক্ত সোশ্যাল মিডিয়া চাইছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল কে আবর্জনামুক্ত করছেন। সার্বক্ষণিক হাজারো/লাখো তথ্যের ভীড়ের মধ্যে মানুষ চাইছেন শুধু মূল্যবান কিছু তথ্য। তথ্যহীন হতে কেউ চাইছেন না, চাইছেন মূল্যবান তথ্য।
গল্প বর্ণনা
প্রত্যেকটি ছবি/রিলস্/ভিডিও সুকৌশলে একটি গল্প বলার চেষ্টা করে। সুতরাং আপনাকে এমন একটি ছবি/রিলস্/ভিডিও তৈরি করতে হবে যা একটি সুন্দর গল্প উপহার দিচ্ছে। এখন হয়তো বলবেন, সেনশেশন/সেক্স নিয়ে চটিগল্পও তো ভালো চলছে! অস্বীকার করছি না, কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য যদি এমন হয়, আমাদের চিন্তা যদি এমন হয় (যা অবশ্য চলমান) তাহলে আমাদের ধ্বংস হতেও বেশি সময় লাগবে না।
গল্প উপহার
আমি সুকৌশলে ভালো মানের গল্প উপহার দিতে বলছি। মনে করুন, জাপানীজ সিরিজ ‘ডেথ নোট (Death Note)’ এর সংক্ষিপ্তসার আপনি ৩০ সেকেন্ডের একটি রিলস্ এর মধ্যে দেখানোর চেষ্টা করলেন। এতে করে এই সিরিজের বেশ কিছু কপিরাইট ফ্রি ছবি নিতে পারেন, কিছু ফ্রি এডিটিং টুলস্ দিয়ে টেক্সট বসাতে পারবেন এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কপিরাইট ফ্রি মিউজিক বসিয়ে দিলেন। আপনার রেসিপি তৈরি। এখন এই ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি ছবিও হতে পারে এবং এই গল্প আপনার নিজের লেখা গল্পও হতে পারে।
ভিডিওর কোয়ালিটি
এবার আশা যাক, ভিডিও’র ‘ক্লাস’ বা কোয়ালিটি নিয়ে। খেয়াল করে দেখবেন ভালো রেজ্যুলিউশন, ভালো মানের এডিটিং, ভালো মানের গল্প সবসময় সবার আগে স্ট্যান্ড-আউট করে। মানে অস্পষ্ট ছবি, খাপছাড়া টেক্সট, সাউন্ডের সাথে ভিডিও’র বিশেষ কোনো সম্পর্ক নাই এমন ভিডিওতে খুব বেশি সময় আপনি মানুষকে ধরে রাখতে পারবেন না।
অ্যানিমেশন ও কালার
অ্যানিমেটেড হওয়ার অংশ, কালার, ছবির পেছনের দৃশ্য ইত্যাদিতে জোর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের কন্টেন্টে সর্বশেষ যেটা লাগে সেটা হলো ‘আবেগ’। হ্যাঁ, প্রচুর আবেগ থাকা জরুরী। তবুও, একটি প্রশ্ন মিস করে গেলাম, “একটি সিরিজ কে ৩০ সেকেন্ডে বোঝাবেন ক্যামনে?” চিন্তা নাই, এখানেও আমরা এআই ব্যবহার করবো।
A/B টেস্ট
এরপরের বিষয় হলো ‘A/B টেস্ট’ করা। মানে দশদিনে আপনি এরকম ১০টি রিলস্ বানিয়ে ফেলেছেন এবং সেটা ফেসবুক বা টিকটক বা ইউটিউবে আপলোডও করেছেন। এখন সকল প্লাটফর্মে আপনাকে খেয়াল করে দেখতে হবে, অডিয়েন্স কোথায় স্কিপ করেছে বা ড্রপ করেছে?
আপনার চোখে হয়তো ঐ অংশ খুবই চমৎকার লাগছে কিন্তু ঐ অংশ অন্যকিছু দিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, অডিয়েন্স পুনরায় ড্রপ করছে কিনা! যতক্ষণ ঐ অংশে ড্রপ করবে ততক্ষণ ঐ অংশে নতুন নতুন কিছু যুক্ত করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
রিলস্ আপলোড
এছাড়াও দিনে ১-৫ টির বেশি রিলস্ আপলোড দিলে দর্শক বিরুক্ত হতে পারে। চেষ্টা করুন ৩টি রিলস্ উপহার দিতে এবং বিভিন্ন ফ্রি প্লাটফর্ম থেকে কিছু সময়ের বিরতির পর একটির পর আরেকটি নিয়মিত প্রকাশ (আপলোড) করতে। যদি এই প্রক্রিয়াকে অটোমেটিক করতে চান সেক্ষেত্রে ব্যবহার করুন ‘Buffer’, এছাড়াও পেইড সার্ভিস দেয় এমন প্লাটফর্ম হচ্ছে ‘Planly’ ব্যবহার করতে পারেন।
গল্পের বিষয়বস্তু
সর্বশেষ যে প্রশ্নটি আসতে পারে, আমরা তো সবাই গল্প জানিনা! বা, গল্প বর্ণনা করতে পারিনা। সেক্ষেত্রে কি বিষয় নিয়ে কাজ করবো? এক্ষেত্রে নিচের এই টপিকগুলো দেখতে পারেন:
- কুইজ
- খাবার
- বিপজ্জনক পরিস্থিতি
- যৌনতার আবেদন (আমি রেকোমেন্ড করি না)
- দুটো বস্তু/ব্যক্তি/স্থানের মধ্যে তূলনা করুন (ভালো বা মন্দ অপশন যুক্ত)
- প্রকৃত মূল্য আছে এমন তথ্য। যেমন, বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর (Highly Recommended)
- ভ্রমণ সংক্রান্ত
- ন্যারেটিভ ইত্যাদি
পরিশেষ
আমি এই ধারণা বিশেষ করে তাদের জন্য লিখেছি যারা ডেটা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। সারাদিন বসে বসে শুধু স্ক্রল করেন তাদের জন্য। এসব আইডিয়া যারা প্রফেশনাল এবং প্রকৃত মূল্য যুক্ত করছেন বিভিন্ন ফিল্ডে তাদের জন্য নয়। কিন্তু একজন নারী-পুরুষ সারাদিন শুধু স্ক্রল করছেন আপনারা চাইলে আপনাদের স্মার্টফোন হয়ে উঠতে পারে ম্যানি মেশিন। সুতরাং আর দেরি কীসের? এখনই লেগে পড়ুন।
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.