সংসার, সন্তান ও স্বপ্ন: সাথীর অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প
নোয়াখালী থেকে সাভার: এক সংগ্রামী নারীর শিক্ষার পথে যাত্রা
আমি নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা, নাম সাথী। আমার এক বড় ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছে। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি সাভারে আমার এক আন্টির বাসায় বেড়াতে যাই। সেখানে আন্টির এক পরিচিতের বাসায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। পরে নোয়াখালী ফিরে আসি।
হঠাৎ করে, আন্টির পরিচিত এক পরিবার থেকে আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে। আমার পরিবার প্রস্তাবটি মেনে নিলেও আমি রাজি ছিলাম না, কারণ আমি আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। তবে পরিবারের ইচ্ছায় এবং ছেলের পরিবারের আশ্বাসে যে বিয়ের পর আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারব, আমি রাজি হয়ে যাই। এক মাসের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের পর আমি সাভারের একটি কলেজে ভর্তি হই। প্রথমে শ্বশুরবাড়ির সবাই আমার প্রতি খুব ভালো আচরণ করত। আমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন এবং কোনো কাজ করতে দিতেন না। ২০২০ সালে আমি এইচএসসি পাস করি। কিন্তু হঠাৎ করে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আচরণে পরিবর্তন আসে। আমার শ্বাশুড়ি আগের মতো আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেন না এবং সংসারের কাজেও সাহায্য করেন না। বাসায় কোনো কাজের লোক না থাকায় সব কাজ আমাকেই করতে হয়। এরপর আমার এক মেয়ে হয়।
সংসার এবং মেয়েকে নিয়ে আমার দিন কেমন করে যায়, তা বুঝতে পারি না। অন্যদিকে, আমি সাভার সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। আমার শ্বাশুড়ি আমার অনার্সে পড়াকে ভালোভাবে নেননি এবং ভেবেছিলেন যে মেয়ে হওয়ার পর আমি আর পড়াশোনা করব না।
কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সংসারের সব কাজ করে, মেয়েকে গোসল খাওয়া-দাওয়া করিয়ে কলেজে যাই ক্লাস করার জন্য। কলেজ থেকে ফিরে আবার সংসার এবং মেয়ের দেখাশোনা শুরু হয়। পড়ার জন্য সময় পাই না, তবে যতটুকু সময় পাই, ততটুকু পড়ি।
পরীক্ষার আগে পড়ে পরীক্ষা দিই। পরীক্ষার সময় কাজে বা মেয়েকে নেওয়ার সময় কারোর নেই। আমার কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির জন্য আজও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।