করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব: বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
ডলার সংকট, মুদ্রার মান পতন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উপায়
প্রথম প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৩
২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরু হলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়। তবে ১ বছর পরই এই মন্দা কাটানোর জন্য প্রতিটি দেশ কার্যক্রম শুরু করে। তবে সব দেশের পক্ষে নিজেদের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।
করোনা মহামারীর প্রভাব
অতিমারির সময় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে প্রায় সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। যাতে আমদানি নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। অন্যদিকে করোনার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার না হতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে আসে আরেক ধাক্কা। তবে এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি ছিল ভিন্ন – তাদের মূল লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাই দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জেরোমি পাওয়েল সুদের হার আধা শতাংশ বাড়িয়ে দেন।
এই সিদ্ধান্তে মার্কিন অর্থনীতি আরো বেশি চাঙ্গা হয়ে যায়। সার্বিক ভাবে ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি এখন। পরিসংখ্যান দেখলে, ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের মান কমেছে ১১.৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোর দাম কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে, টাকার মান কমেছে ১৫.৯৯।
আন্তর্জাতিক লেনদেনে মুদ্রার ভূমিকা
আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিনিময়ের মাধ্যম একটা কারেন্সির প্রযোজন হয়। যেটা বর্তমানে ডলার হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন মধ্যবর্তী মুদ্রা হচ্ছে ডলার। তবে স্বাধীনতার পর থেকে মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড।
টাকার বিনিময় হারের ইতিহাস
বছর | ঘটনা | বিনিময় হার (পাউন্ডপ্রতি টাকা) |
---|---|---|
স্বাধীনতার পর | পাউন্ডের বিনিময় হার | ১৩.৪৩ টাকা |
পরবর্তীকাল | ভারতের মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে | ১৮.৯৬৭৭ টাকা |
১৯৭৩ | আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে তেলসংকট | ৩০ টাকা |
১৯৮৩ | মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে পাউন্ডের পরিবর্তে ডলার | – |
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণ
অর্থনীতির সবচেয়ে কঠিন সত্য হলো – কোনো কিছুর সরবরাহ কমে গেলে বা চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বস্তুটির দাম বাড়বে। ডলারের বেলায়ও এমনটিই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ডলার আয় কম করলেই ডলারের দাম বেড়ে যাবে এবং টাকার দাম পড়ে যাবে। সম্প্রতি ঠিক এমনটিই হয়েছে।
আমদানি ও রপ্তানির তুলনা
সময়কাল | আমদানি বৃদ্ধি | রপ্তানি বৃদ্ধি | বাণিজ্য ঘাটতি |
---|---|---|---|
জুলাই-আগস্ট ২০২৩ | ৪৬ শতাংশ | নিম্নমুখী | ৪১২ কোটি ডলার |
গত বছর | – | – | ৬৯.৭ কোটি ডলার |
বৈদেশিক বিনিয়োগ
গত কিছু দিন থেকে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও ছিল নিম্নমুখী। একটি দেশ থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ বিদেশে যায় এবং বিদেশ থেকে যেই পরিমাণ দেশে আসে, তার পার্থক্যই হচ্ছে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ মিলিয়ন ডলার কম। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে আমরা ডলার-সংকটে আছি এবং এই কারণেই টাকার মূল্য কমে গেছে।
সমাধানের পথ
তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের বেশ কিছু পথ রয়েছে। সবচেয়ে কার্যকরী পথ হলো আমাদের দেশের রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ রপ্তানি বৃদ্ধি হলে ডলারের আয় বাড়বে। এতে সামগ্রিক ভাবে দেশের ডলার সংকট কেটে যাবে ও স্থায়ীভাবে অর্থনীতির সমাধান হবে।
অন্যদিকে স্বল্প মেয়াদী পথ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তরল ডলার কেনা। যেটি দিয়ে ডলারের চাহিদা মেটানো যাবে। তবে এই পথে দীর্ঘদিন থাকলে দেশের অর্থনীতি সংকটের মুখে পড়বে। তাই কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী পথ বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। যেটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরো টেকসই হবে।
অতিরিক্ত তথ্য
বিশ্ব অর্থনীতির উপর করোনার প্রভাব
করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে পর্যটন, বিমান ও হোটেল শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও, লকডাউনের কারণে বিভিন্ন শিল্পের কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে উৎপাদন কমে যায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির উপর আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে আসে। এই যুদ্ধের ফলে খাদ্য ও শক্তির দাম বেড়ে যায়, যা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডলারের অধিপত্য
ডলার বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কারণে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি ডলারের উপর নির্ভরশীল। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য মুদ্রার মূল্য কমে যায়, যা দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উপসংহার
বিশ্ব অর্থনীতি একটি জটিল ব্যবস্থা। করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ঘটনাবলি এই ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে সঠিক নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব। আমাদের দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করে ডলার সংকট কেটে যাবে ও স্থায়ীভাবে অর্থনীতির সমাধান হবে।
আমরা সবাই মিলে এই সমস্যাগুলো দূর করতে পারি। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সবাই একত্রে কাজ করতে হবে।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.