বিশেষ প্রতিবেদন

আইটি পার্ক: বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের নতুন দিগন্ত

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ, তরুণদের জন্য সম্ভাবনা

বিজ্ঞাপন

আইটি পার্কের প্রয়োজনীয়তা

বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো সেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে শেখেনি। বর্তমান বিশ্বেও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাদের দেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে নিজেদের গতিশীল করার জন্য সরকার বেশ কয়েকটি আইটি পার্ক করার পরিকল্পনা করেছেন।

বর্তমানে দেশে আইটি পার্ক তৈরি হয়েছে। সেখানকার দক্ষ জনবল এখন বৈশ্বিক বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসছে। ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল হয়েছে নতুন এই ক্ষেত্রের জন্য।

আইটি পার্ক কি?

তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো কাজ একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে সম্পন্ন করার নাম আইটি পার্ক। যেখানে বিদেশি বা দেশি যে কোনো কোম্পানি তাদের শাখা খুলে দক্ষ জনবলের মাধ্যমে নিজেদের ‘সেবা’ উৎপাদন করে নিতে পারবেন। এখানে অনলাইন ভিত্তিক সকল কাজের জন্য দক্ষ এক ধরণের জনবল থাকবেন যারা সর্বদা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকেন।

এখান থেকে যে কোনো কোম্পানি তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি ও সেবা গ্রাহকদের কাছে দিতে পারেন। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান, যেখানে বৈশ্বিক সকল কাজের জনবল সর্বদা প্রস্তুত।

বাংলাদেশের আইটি পার্ক কোথায় কোথায়?

দেশে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে বৈশ্বিক মানের পণ্য ও সেবা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় আইটি/হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের হাইটেক পার্ক অথরিটি সূত্র অনুসারে, বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে মোট ১২ জায়গায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরির কাজ চলছে। এসবের মধ্যে কালিয়াকৈরে ২৩২ একর জমির উপর একটি ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ পার্ক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর জনতা টাওয়ারে ৭২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক মানের আইটি পার্ক তৈরির ঘোষণা দেন।

সে অনুযায়ী যশোরের বেজপাড়ার নাজির সংকরপুর নামক স্থানে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ তলা বিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ তৈরি করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যে পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। সিলেটে ১৬৩ একর জমির উপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বিশ্বমানের হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটির পার্কের কাজে আগ্রগতি দেখা যায়। এছাড়াও ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ১১টি উপজেলায় ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

যেমন – সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, জয়পুরহাটের কালাই, দিনাজপুর সদর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, কিশোরগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, চাঁদপুরের মতলব, বান্দরবানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ভোলা সদর, কুষ্টিয়া সদর, মেহেরপুর সদর।

আইটি পার্কের সুবিধা

প্রযুক্তির কল্যাণ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আইটি পার্ক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এইসব পার্কের ফলে দেশের প্রযুক্তিবিদরা বিদেশি বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এভাবে তারা সেগুলো প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সুযোগ পাবেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও আমাদের দেশ যেহেতু এখনো বিশ্বের প্রথম সারির দেশ নয়, ফলে সে সব দেশের কোম্পানির সাথে কাজ করে প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কি ধরনের আপডেট আসছে তা বিস্তারিতভাবে জানা যাবে। যেসব আপডেট বিষয়ে দেশে জনবল তৈরি করা।

এতে করে বিশ্ব বাজারে নিজেদের কর্মীরা আরো বেশি কাজের জন্য জায়গা পাবে। ফলে আমরা বিশ্বের অন্যান্য কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগে নিজেদের দক্ষ করতে পারবো।

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ

দেশে বর্তমানে ৫টি হাইটেক পার্ক কাজের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটিতে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন হাইটেক পার্কে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার তরুণ-তরুণীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। হাইটেক পার্ক অথরিটি আশা করছে, আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় ৫০ হাজার জনের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

এসব পার্কে বর্তমানে প্রায় ১১০টি কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। যার সুফল পাওয়া শুরু করেছে সরকার। দেশের সবগুলো পার্কের কাজ শেষ হলে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য জনবল দরকার হবে। বিশেষ করে যারা প্রযুক্তির দিক থেকে একটু বেশি জানেন তারা বেশি সুবিধা ভোগ করবেন।

এই পার্কগুলোর মাধ্যমে তারা বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এতে তারা পেশা হিসেবে নতুন একটি জায়গায় এসে দাঁড়াতে পারবেন। সবগুলো পার্ক চালু হলে দেশে যে বেকারত্বের একটি অভিশাপ আছে তার অনেকাংশই দূর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে আশা করা যাচ্ছে।

উদ্যোক্তা তৈরি

প্রযুক্তির কল্যাণের মাধ্যমে নতুন অনেক ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি জায়গায় থেকে গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে সেবা প্রদান করা যায়। দেশের চলমান বিভিন্ন আইটি পার্ক তৈরির কাজ শেষ হলে এই ক্ষেত্রের উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ।

তারা নিজেরা বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করে নিজেদের বৈশ্বিকভাবে দক্ষ করতে পারবেন। এতে তারা বিশ্বের চাহিদা অনুসারে নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন অনেক কিছু করতে পারবেন। ফলে যে সব তরুণ আগে প্রযুক্তি নিয়ে নানা ধরনের স্বপ্ন নিজেদের মধ্যে লালন করতেন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো এইসব পার্ক।

এখান থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাবেন যার মাধ্যমে নিজেদের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ছোট পরিসরে কোম্পানি তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য বর্তমান সরকার ইনোভেটিভ আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা রেখেছেন। তারা যাতে বিশ্বের বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

আইটি পার্কের ভবিষ্যৎ

আইটি পার্কের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই পার্কগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্ম আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এছাড়াও, এই পার্কগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে তারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

পরিশেষ

পৃথিবী যেভাবে প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে গতিশীল না হতে পারলে টিকে থাকা অসম্ভব। আইটি সেক্টরের বিশ্বে যে বড় বাজার তৈরি হয়েছে সেখানে কাজ করার জন্য হাইটেক পার্ক তৈরি খুব জরুরি। এই ধরনের পার্ক তৈরি করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি আগের সবকিছু দিয়ে গতিশীল বা স্বয়ংসম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

ফলে এসব পার্কের কল্যাণে আমরা দ্রুতই বিশ্বের প্রযুক্তির বাজারে নিজেদের স্থান করে নিতে পারবো। এটির মাধ্যমে দেশের যেসব তরুণ-তরুণী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারা সফলতা পাবেন। এছাড়াও, দেশের অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

ছবি: Bangladesh Hi-Tech Park Authority

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading