সম্পাদকীয়

চাকুরী বনাম উদ্যোক্তা: বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ ভাবনা

চাকুরীর নিরাপত্তা বনাম উদ্যোক্তার ঝুঁকি: কোন পথ বেছে নেবেন?

আপনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এরপর স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করলেন কিন্তু এর পরবর্তী ধাপ কি? পাড়া-মহল্লায় যে গুঞ্জন, যে প্রত্যাশা, যে আলোচনা-সমালোচনা, যে পরোক্ষ চাপ আপনি সর্বপ্রথম গ্রহণ করতে একরকম বাধ্য হবেন সেটা হলো, “আপনি কি করেন?” অথবা, “আপনি কি চাকুরী পেয়েছেন?”

দেখুন, এই প্রশ্নটিকে উড়িয়ে দেবেন না। এই প্রশ্নটিকে শ্রদ্ধা করুন। কেন? কারণ চাকুরী যখন থাকে তখন নির্দিষ্ট কিছু সময় ধরে কাজ করা, একটা শুক্রবার এবং কারো কারো জন্য শুক্রবার ও শনিবার ছুটির আনন্দের তুলনা হয় না। এছাড়া ঈদ/উৎসব/সরকারী ছুটিতে বোনাস। এবং সর্বশেষ, মাস শেষে মাইনে আপনার জীবনকে কিছুটা হলেও সহজ করে তোলে; অনস্বীকার্য।

এছাড়াও (সরকারী) চাকুরীর ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কতটুকু লাভ হলো বা ক্ষতি হলো সেটাও দেখার বিষয় খুব কম থাকে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশ রেলওয়ে। আপনি মনে করতে বেগ পেতে পারেন, সর্বশেষ কবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ এসেছে? মানলাম, এটি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এবং সরকারের দায়িত্ব আছে জনগনের প্রতি কিন্তু ভীষণ ক্ষতিতে কোনো প্রতিষ্ঠান অদৌ কি চলতে পারে? জানিনা।

একই সাথে এই জীবন এবং একটি সুন্দরতম রুটিন জীবনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই। সেটা কিন্তু যারা চাকুরী করছেন তারা আমার চেয়ে বোধহয় ভালো জানেন। কারণ, আমরা সবাই এটা করি। এখানে নতুন কিছুই নাই। এ যেন খুব পরিচিত নিয়তি। মানতেই হবে, পারতেই হবে। চাকুরী না পেলে ৩০ বছর বয়েস অবধি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, চাকুরী পেলে একটা বিয়ে করতে হবে, বাসা ভাড়া নেবার পর বাচ্চা নিতে হবে, বাচ্চা কে বড় করতে হবে, ওর জন্য কিছু সেভিংস এবং পেনশনের টাকা নিয়ে রিটায়ার্ড করতে হবে।

এ জীবনের নকশা/মানচিত্রের দিকে যদি খেয়াল করেন মানে একটু তলিয়ে ভাবেন তাহলে এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম কারাগার। না পেলেও পস্তাতেন, পেলেও পস্তাবেন। বিশেষ করে প্রথম প্রথম অফিস ইউনিফর্ম পরতে কার না মন চায় বলুন! তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু অফিসের পরিবেশ নিয়ে এবং আপনার ছবির উপরিভাগে দু’চার লাইন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস! চারপাশে মানুষের আপনাকে নিয়ে গর্বের শেষ নাই।

কিন্তু ওর মধ্যেও কিছু মানুষ জীবনকে ভিন্ন অর্থ দিতে চায়। ওরা একটু জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে চায়। এরা সংখ্যা ঠিক ১০০ জনে কত জন হবেন? আমি সত্যিই ঠিক জানিনা। কিন্তু ২% শতাংশের বেশি হবেন বলে আমার মনেও হয় না। আমরা এদেরকে ‘উদ্যোক্তা’ বলি। মানে এরা সমাজের ঐ সমস্ত মানুষ যাদেরকে সমাজ দু-চোখে দেখতে পারেন না। ‘উদ্যোক্তা’ শব্দটি দিনদিন বাংলাদেশে একটি গালি তে পরিণত হয়েছে। ‘উদ্যোক্তা’ নাম করে মানুষের টাকা লোপাট করা লোকের তো অভাব নাই। সর্বশেষ, মানুষের টাকা লোপাট করে হজ্জ্ব করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে; এবং এরপর হয়তো মনে মনে গালি দিয়ে ফের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা।

একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া, বিশ্বব্যাপী ৯০% শতাংশ ‘উদ্যোক্তা’ সফলতার মুখ দেখতে পায় না। আর বাংলাদেশে এর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কিছু সূত্র মতে, প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে এখানে যেকোনো উদ্যোগ কোনো না কোনো কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে সর্বোচ্চ ১% শতাংশ উদ্যোক্তা সফলতা লাভ করেন তাও ভীষণ কষ্টে, পরিশ্রমে।

কিন্তু এরা আমার কাছে অনেক সম্মানের। কেন জানেন? আমার মনে হয়, এরাই হলো সিলেবাসের বাইরের মানুষগুলো। মুখস্ত রুটিন জীবনে এদের আছে তিক্ততা। একটু ভিন্ন কিছু, রুটিন জীবনের বাইরে একটি গল্প তৈরি করা এবং উক্ত গল্প কে মনেপ্রাণে প্রতিষ্ঠা করে এই পরিমাণ রিক্স ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে, উচ্চ সুদের টাকা নিয়ে, একরকম জীবন বাজি রেখে সামনে পা দেবার জন্য একটা দুঃসাহস লাগে; জ্ঞানত যা সবার থাকে না।

যে সেক্টরে আপনি দেখছেন সম্ভাবনা শূন্য, হতে পারে এরা সেই সেক্টরে ভবিষ্যৎ দেখছেন। শুধু চিন্তার মধ্যে কিছু ভিন্নতা। মুখস্ত জীবনে সফলতা পেলে হাততালি পাওয়া যায়, আইডেন্টিটি পাওয়া যায়, সমাজে স্বীকৃতি পাওয়া যায়, কিন্তু একজন সত্যিকারের সফল উদ্যোক্তা এসবের একটিও কি পায়? সমাজ কি তাকে মেনে নেয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে বলছিলেন, “ওদের তো বিয়ে করতেও নাকি সমস্যা হচ্ছে, নিজের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে দিতে পারছে না।” কিন্তু এই বলা পর্যন্তই তিনি থেকে গেলেন, আইডেন্টিটি আর মিললো না।

এদেশে আরো লাখো বেকার তৈরি হবে, নতুবা বিক্রয়কর্মী হয়ে উঠবে, অথবা, গার্মেন্টস কর্মী! কিন্তু এমন পরিবেশে আরো একজন সফল ‘উদ্যোক্তা’ হবার দুঃসাহস কেউ কি আর দেখাবে! চিন্তা করার প্রাকটিস কি বাড়বে? নাকি গোলামী থেকে আমার জীবনে দেখা এ চোখে হয়তো কারো মুক্তি আর মিলবে না, হয়তো আমারও না।

এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস এত জ্ঞান ঝাড়ছেই বা কেন! শুরু থেকেই একজন সফল গোলাম/চাকর হওয়ার প্রাকটিস করালে আমার মনে হয় সেটা কয়েকগুণ ভালো হত!

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও চেক করুন!
Close
Back to top button