মনোবিজ্ঞান

Maladaptive Daydreaming: কল্পনার অতলে হারিয়ে যাওয়া

দিবাস্বপ্নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক এবং এর প্রভাব

নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে আমাদের যে কৌতুহল তা যেন শেষ হবার নয়। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি নতুন কোন টপিকে লেখবার জন্য। আমার আজকের টপিক হচ্ছে, “Maladaptive Daydreaming” নিয়ে। হয়তো ইতোমধ্যেই অনেকেই এই বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবুও আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা থাকবে এই বিষয়ে আলোকপাত করবার।

Daydreaming থেকে Maladaptive Daydreaming কীভাবে ঘটে?

দিবাস্বপ্ন আমরা কমবেশি সবাই দেখে থাকি। আর যারা দেখেন না বলে দাবী করেন একটু খোঁজ নিলে দেখবেন জীবনের কখনো কখনো আপনি দিবাস্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন এই দিবাস্বপ্ন দেখা বেশি হয়ে যায়/এক্সেস হয়ে যায় তখন সাইকোলজিক্যাল ভাষায় একে বলা হয় “Maladaptive Daydreaming” ।

“Maladaptive Daydreaming” এর নেতিবাচক দিক

প্রচুর দিবাস্বপ্ন দেখায় প্রথম যে সমস্যা দেখা দেয় সেটা হলো আমাদের মনোযোগের অবস্থা বেহাল হয়ে যায়। মানে কোন বিষয়ে বিশেষ কোন মনোযোগ থাকে না। এরপর “OCD”, “Anxiety” ও “Depression” এর মত মারাত্মক মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

“Maladaptive Daydreaming” এর ইতিবাচক দিক

Excessive/Maladaptive Daydreaming -এর শুধু নেতিবাচক দিক আছে তেমন নয়। এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। সৃজনশীল ব্যক্তির জন্য এটা খুব কাজের। যিনি কিনা গল্প লিখছেন, কবিতা লিখছেন, সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখছেন অথবা ধরুন কোন সিনেমার স্ক্রিনপ্লে কল্পনা করছেন তাদের জন্য এটা বেশ দরকারি। কারণ এসবের জন্য প্রচুর কল্পনা মিশ্রিত মস্তিষ্ক থাকতে হয়।

একজন পেইন্টার কোথাও কোন অবজেক্ট দেখেছেন এখন তিনি যদি চান তো ঐ অস্পষ্ট অবজেক্ট কে ক্যানভাসে পেইন্টিং এর রুপ দেবেন তবে তার প্রখর কল্পনাশক্তি ছাড়া কিন্তু সম্ভব নয়।

“Maladaptive Daydreaming” এর উদাহরণ

ছোটবেলায় আমরা কত কত স্বপ্ন দেখেছি। সব কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখেছি? নিশ্চয় নয়। ক্লাসের মধ্যে হোক বা ক্লাসের ফাঁকে আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখেছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছি যে, একদিন বড় হয়ে ডাক্তার হবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো, গায়ক হবো, অভিনেতা হবো, ক্রিকেটার হবো ইত্যাদি।

এই সব অবাস্তব চিন্তা কিন্তু বড় হয়েও আমরা কম বেশি কল্পনা করি। হয়তো বাস্তব জীবনে ওটা সম্ভব নয়, কিন্তু অবাস্তব জীবনে হোক তাও সই। আর এই সব দিবাস্বপ্ন আমাদের কিছুদূর হলেও ভালো থাকতে দেয় তো! না কি? যদি আমি আমার কথা বলি, তাহলে ছোটবেলায় সালমান শাহ্‌ হবার প্রচন্ড ইচ্ছে ছিলো। হয়তো এখনো হৃদয়ের কোথাও কোথাও এই স্বপ্ন দেখে থাকি।

হ্যাঁ, দিবাস্বপ্ন। যদিও জানি যে, সালমান শাহ্‌ বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি আসবে না। কিন্তু এই অদ্ভুত দিবাস্বপ্নের মধ্যে যে ভালোলাগা আছে তা অনস্বীকার্য।

অনেক সময় এরকম হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছি কিন্তু আমার পরবর্তী নাটকের স্ক্রিপ্ট বা নিজের অভিনয় নিয়ে ভেবেছি। হুবহু অনেক সময় সেটা লেখবার চেষ্টাও করেছি। মানে ক্লাসে তো আমি আছি কিন্তু ক্লাসে স্যারের দেয়া লেকচারের প্রতি মনোযোগ নেই। অথবা ভেবেছি আজ রেডিওতে কি বলা যায়!

ঠিক এভাবেই কিছু কিছু বিষয় হুট করে মাথার মধ্যে আসে আর দিবাস্বপ্নে বিভর থেকে ক্লাসে থেকেও না থাকা অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। যাইহোক, জরুরী নয় সবাই আমার মত করে ভাবে। সবার পৃথিবী আলাদা আর সে অনুযায়ী এই দিবাস্বপ্নগুলোও আলাদা আলাদা হতে পারে।

একটু বড় হবার পর “Maladaptive Daydreaming” এর এডাল্ট পর্যায়

একটু বড় হলে বা এডাল্ট স্টেজে এসে মনে হয়, পছন্দের মানুষের কথা। আশা করছি কমবেশি সবারই এটা হয়েছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে কারো কাছে নায়ক বনে যাবার স্বপ্ন আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক জানা নেই তবে হতে পারে তাদেরও নায়িকা হবার স্বপ্ন জেঁকে বসতে পারে।

এটা কিন্তু বেশ কমন। ফলে রোম্যান্স মনে থাকলে দেখবেন প্রশ্নপত্র কঠিন হলেও কিছু আসে বা যাচ্ছে না। কারণ আপনার ধ্যান জ্ঞান তো অন্য কিছু নিয়ে। এতে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। আপনার যে কাজটি এখনি খুব ভালো করে করার দরকার আপনি সেটা না করে অন্যকিছুতে মেতে থাকছেন।

আরো একটি বিষয় হলো, ছোটবেলায় যে স্বপ্ন আমরা দেখে থাকি এডাল্ট স্টেজে এসে ধরা পড়ে সেটা কত কঠিন! আমার কথা বলি, সালমান শাহ্‌ হবার স্বপ্ন তো দেখেছিলাম কিন্তু বাস্তবতায় এসে বুঝছি এমন তো দূর দূর পর্যন্ত সম্ভব নয়। অনেকে হয়তো বিজ্ঞানী হবার স্বপ্নও দেখেছিলেন সেটাও বড় হয়ে মিনিমাইজ করেছেন হয়তো। ঠিক যেন HD কোয়ালিটি থেকে 3GP এর দুনিয়ায় প্রবেশ করা।

আরো একটু বড় হয়ে মনে হয়, আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবো এবং দেশের দারিদ্রতা এক নিমিষে ঝেটিয়ে দূর করে দেবো। নিদেনপক্ষে আমি একজন বিত্তবান তো হবো! এই সমস্ত বিষয় তখন আমাদের কল্পনায় ঘুরতে পারে। কমবেশি আমরা সবাই এসব ভেবে থাকি বলে আমার বিশ্বাস।

“Maladaptive Daydreaming” এর কিছু ট্রিগার পয়েন্ট

কোন কিছু দেখতেই বা শুনতেই বা পড়তেই সেটা জুড়ে থাকা স্মৃতি বা বিষয় আমাদের মনে পড়ে যেতে পারে এটাকেই দিবাস্বপ্নের ট্রিগার পয়েন্ট বলা হয়। যেমন ধরুন, কোন গান শোনা, কোন সিনেমা পুনরায় দেখা, বাবর আজমের ছক্কা দেখেও তো নিজেকে সেই স্থানে কল্পনা করতে ভালো লাগে।

গানের লিরিক্স শুনে মনে হয়, আরেহ্, চন্দ্রবিন্দুর “মধ্যবিত্ত ভীরু প্রেম” যেন আমার কথায় বলছে। “জাব উই মেট” দেখে মনে হয় কারিনা কাপুরের মত আমার জীবনেও কেউ ছিলো। আর আমি সেই গল্পে নায়ক ছিলাম। অথবা “Great Expectations” উপন্যাস পড়ে মনে হতে পারে ঐ “পিপ” চরিত্র তো আমি।

ফেসবুকে সুন্দরী মেয়ে ফ্রেন্ড রেকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। ব্যস! ধুম ২ সিনেমার আলী হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে স্বপ্নে উড়তেও পারেন। মানে মাত্র মাত্র কেউ একজন আপনাকে একটা ফ্রেন্ড রেকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে। আর আপনি সংসার পাতছেন তার সাথে।

“Maladaptive Daydreaming” এর কব্জায় কোন জেন্ডার বেশি প্রভাবিত?

এই বিষয়টি কিন্তু একেবারে পরিষ্কার। একটি রিসার্চে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা দিবাস্বপ্ন বেশি দেখে থাকেন। আরো একটি মজার বিষয় হলো, ঐশ্বরিয়া রায় কে না হতে চান। আর ছেলেরা কোন সিনেমায় ফাইট দৃশ্য দেখার পর কল্পনা করেন যে, সে তার নায়িকাকে ঠিক ওমন ভাবেই রক্ষা করছে। আর যদি সেই সিনেমা তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির হয় তাহলে তো কথায় নেই।

সিক্স প্যাক দেখে পাশপাশি ডার্ক & হ্যান্ডসাম পুরুষকে দেখে তার মত হবার ইচ্ছে কমবেশি সবারই থাকে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ফর্সা হওয়ার ক্রিম মার্কেট আউট হয়ে যায়। চুলের রঙ স্বর্ণালী করে স্বর্ণকেশী হবার যে ট্রেন্ড তা কিন্তু কাউকেই স্কারলেট জোহানসন বানাচ্ছে না। আর এর পুরোটা যুক্তিতেও ফেলে দেওয়া যায় না।

“Maladaptive Daydreaming” এর ভয়ানক সমস্যা

১. মনোযোগ থাকে না।

২. নিজের কাজে মাইনে কম হলে ডিপ্রেশন আসতে পারে।

৩. কাজে বা কোন খেলায় পারফরম্যান্স ভালো হয় না।

৪. অবাস্তব দিবাস্বপ্নের জন্য বাস্তব জীবনে মেলাতে না পেরে “Anxiety” আসতে পারে।

৫. “Insomnia” তে আক্রান্ত হতে পারেন। সেভাবে আপনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন ঠিক সেভাবে পরবর্তী দিনে হুবহু প্রতিস্থাপন করার চিন্তা পেয়ে বসতে পারে।

৬. ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, প্রত্যাশা অনুযায়ী বাস্তবতা না মেলার দরুণ। ধরুন, যেভাবে নিজের জীবন বা অফিস বা কাজ যেভাবে সাজাতে কল্পনা করেছিলেন তার উল্টো হওয়ার দরুন।

৭. বেশি প্রত্যাশা রাখা যার ফলে হতাশা ও স্ট্রেস আসতে পারে।

৮. মুড সুয়িং হতে পারে। দিবাস্বপ্ন দেখার সময় কিছু হরমোন রিলিজ হয়। যখন দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকবেন তখন সেসব হরমোন রিলিজ হয় এবং আপনাকে খুশী রাখে। কিন্তু দিবাস্বপ্ন যখন আসক্তিতে রুপান্তর হয় তখন এটা ছাড়া মাত্র-ই স্ট্রেস আসতে পারে।

“Maladaptive Daydreaming” থেকে মুক্তির উপায়

দেখুন, একজন ব্লগার বা লেখক কল্পনা না করে লিখবেন কীভাবে? এর তো ইতিবাচক দিক রয়েছে। কিন্তু এটা যখন আসক্তি হয়ে পড়ে তখন হয় ঝামেলা। তাই কিছু বিষয় অনুশীলনের মাধ্যমে এটা থেকে দূরে থাকতে পারেন। কারণ দিবাস্বপ্ন আমাকে বা আপনাকে একেবারে ছেড়ে দিবে না।

১. মেডিটেশন করুন।

২. উইল পাওয়ার কাজে লাগান।

৩. নিজেকে বুঝান যে এসব অবাস্তব বা অলীক। বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

৪. ডায়েরি লিখুন।

৫. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। হতে পারে আপনিও সালমান শাহ্‌ হয়ে যেতে পারেন কোন একদিন।

আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button