কলম

মিম (Meme) শিল্প: সামাজিক সংলাপের নতুন ভাষা

- Advertisement -

Meme Art: The New Language of Social Dialogue

Disclaimer: The views and opinions expressed in this article are those of the author and do not necessarily reflect the official policy or position of any agency or organization. The content provided is for informational purposes only and is not intended as a substitute for professional advice. The use of satire and memes in this article is meant to provoke thought and provide commentary on societal norms and should not be taken as personal or professional advice. The examples and references are provided for illustrative purposes and do not imply endorsement of any products or services. The author and publisher are not responsible for any actions taken by individuals as a result of reading this article. Readers are encouraged to exercise their own judgment and discretion while interpreting the satirical content.

মানুষ যখন তার মনের অভিব্যক্তি পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করতে পারেন না, সাহস করে অথোরিটির ব্যাপারে কথা বলতে পারেন না তখন বেশিরভাগ সময় মানুষ তাদের ব্যক্তি মতামতের ক্ষেত্রে ‘স্যাটায়ার (ব্যাঙ্গ)’ করে থাকেন। ফিগার অব স্পিচের মধ্যে আজ পর্যন্ত এই রেটোরিক ডিভাইসের মূল্য কোন অংশে কমে নাই। সর্বশেষ একটি সুন্দর স্যাটায়ার লেখা দেখলাম ‘The Financial Express’ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পূর্বাশা পৃথ্বীর লেখা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: করণ জহরের সিনেমার জন্য একটি দুর্দান্ত স্পট হতে পারে (বাংলা ভাবার্থ)’ শিরোনামে।

‘সাট্যায়ার (Satire)’ মানে কি? এজন্য শুধু গুগলে ‘স্যাটায়ার’ লিখে সার্চ করলেই প্রথম স্থানে আমাকে পাবেন। দীর্ঘদিন আগে আমি এই রেটোরিক ডিভাইস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি এবং যেটুকু বুঝেছি সেটুকু লিখেছি। কিন্তু আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনার বিষয় হচ্ছে ‘মিমস্ (Memes)’। কেউ কেউ এটাকে শুধু ‘মিম (Meme)’ বলে থাকেন। এই শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ তেমন ভালো খুঁজে পেলাম না। মিম (Meme) মানে হচ্ছে, স্রোত, চলমান ধারণা, ফ্যাশন, কুযুক্তি, জনপ্রিয় ধারণা, নোংরা ধারণা, মজা/মসকারা/ঠাট্টা/তামাশা করা ইত্যাদি। এই মিম কিন্তু আলিফ-লাম-মিমও নয়, আবার মিম থেকে ডিমও নয়।

কিন্তু মিমের বাংলা প্রতিশব্দ না পেলেও বাংলায় শুরু থেকেই মিম (Meme) একটা বড়সড় ক্রিঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি ছিলো। একেবারে শুরুর দিকে মিম (Meme) অনেক বেশি ‘সেক্সিষ্ট (Sexist)’ নোংরা ধারণাকে গুরুত্ব দিত। বর্তমানে মিম যতভাবে একটি ধারণা তারচেয়েও বেশি একটি সংস্কৃতিতে রুপান্তরিত হয়েছে। মিম যতটা ফ্যাশন তারচেয়েও বেশি সামাজিক যে কাঠামোবদ্ধ জীবনের রীতিনীতি ফতোয়ার মত চলমান সেটাকে শক্তভাবে মোকাবিলা করার এখন একটি অনেক বড় হাতিয়ার।

মিমের বর্তমান বিবর্তন অন্তর্জালে একধণের রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে দাঁড় হয়েছে। যেখানে মানুষ অথোরিটির বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলতে চায় না বা ভয় পায় ঠিক সেখানে নতুন এই শব্দ ‘মিম বা মেম (Meme)’ স্যাটায়ারিক হয়ে উঠছে। আমি তেমন ভালো মিম বুঝি না, টুকটাক উদাহরণ হয়তো দিতে পারবো। ভারতের একটি বিজ্ঞাপন ছিলো, ঘড়ি ডিটারজেন্ট পাউডারের। এই বিজ্ঞাপনের শ্লোগান ছিলো, “পেহলে ইস্তেমাল করে, ফের বিশ্বাস করে (হিন্দি)।” বাংলাদেশে এই ডিটারজেন্টের নাম হচ্ছে, মি. হোয়াইট ডিটারজেন্ট পাউডার এবং এখানে ঐ হিন্দির অদ্ভুত বাংলা শ্লোগান টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে চলছে, “আগে ব্যবহার করুন, তারপর বিশ্বাস করুন।”

- Advertisement -

কপোত-কপোতীদের মধ্যে চুটকীর যে ব্যাপকতা তা এই শ্লোগানের যে ডুয়াল মিনিং তা কিন্তু একবার হলেও আমাদেরকে হাসায় আবার ভাবায়ও। এমনকি আজ পর্যন্ত কোন সেলেব্রিটির মধ্যে ছাড়াছাড়ি হলে ফেসবুকে মন্তব্যের বক্সে এই শ্লোগান খুঁজে পেতে পারেন। এরপর লাইফবয় সাবানের হিন্দি শ্লোগান “বান্টি তেরা সাবান স্লো হে কিয়া?” বাংলায় অনূদিত এই বিজ্ঞাপনের শ্লোগান বিভৎস হয়ে দাঁড়ায় “বান্টি, তোর সাবান স্লো নাকি রে!?” মানে এটার কতরকমের অর্থ করা যায় তার জন্য সামান্য একটু গুগল সার্চ দিতে হবে।

এরপর আসে সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপন। সার্ফ এক্সেলের এই বিজ্ঞাপনের হিন্দি থেকে বাংলায় শ্লোগান দাঁড়ায় “বাচ্চারা মোজা নোংরা করো তো!” সাধারণত যে মেয়েটার এন্টেনা একটু দুর্বল মানে প্রেমের ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে তাদের এরকম করে বিদ্রুপ করা হত। খুব সম্ভবত সে-সময় এসব শুধু ছেলেদের আড্ডায় বেশি জমতো।

এছাড়াও সে-সময় টাইগার কনডমের শ্লোগান খুবই হাস্যকর ছিলো, শ্লোগানটা হচ্ছে, “গরমে কীসের ভয়! ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।” এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে সেনসেশন কনডম কোম্পানি, এদের শ্লোগানের শেষ নাই, কিন্তু মজার একটি শ্লোগান ছিলো, “সংঘর্ষ নয়, সহবাস-সহাবস্থান দুটোই হোক।” মানে যে সময়ে সেনসেশন এই মজাটা নিয়েছে তখন কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত ছিলো।

বিজ্ঞাপন শুধু মিম তৈরি করছে তা নয়। সিনেমার কিছু বিশেষ দৃশ্য কেটে বহু মিম তৈরি হচ্ছে। এবং এর সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ব্যাপকতা তা নিয়ে রিসার্চ পেপার পর্যন্ত লেখা হয়ে গেছে। বলিউড/হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায় বিখ্যাত অভিনেতা অক্ষয় কুমার কে নিয়ে এত মিম তৈরি হয়েছে যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। তাঁর কাছাকাছি মিমের দুনিয়ায় পাওয়া যায় নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি কে। বাংলাদেশে অনন্ত জলিল সাহেব, জায়েদ খান, হিরো আলম সাহেব’রাও অনেক মিমের সামগ্রী উপহার দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন, সাথে কিছু নায়িকাও যুক্ত হয়েছে আর দুই একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। এমনকি বাংলা থেকে ইংরেজি সাহিত্য মিমের হাত থেকে রেহাই পায় নাই।

কিন্তু আস্তেধীরে এসব নোংরামীর মাঝে কখন জানি এই মিম শিল্প একটি যৌক্তিক এবং গঠনমূলক শিল্পতে পরিণত হয়েছে। এসব নোংরামির মাঝে বিখ্যাত উপস্থাপক হানিফ সংকেতের একটি ডায়ালগ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মানে কোন লেখা বা পোস্ট বা কোন ইভেন্ট একেবারেই অর্থহীন হলে মানুষ ওখানে গিয়ে লিখছেন, “এই পোস্টের জন্য আপনার জন্য থাকছে কেয়া কসমেটিকস এর পক্ষ থেকে একটি পরিবেশ বান্ধব গাছ/বাঁশ।” এরপর উচ্চশিক্ষা বলুন, ধর্ম বলুন, কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান বলুন কেউ এই মিমের হাত থেকে রেহাই পায় নাই। বিশেষ করে, “…. লাঞ্চের পরে আসুন।” খেয়াল করুন সেক্সিষ্ট ঐ মিম এখানে ‘স্যাটায়ার’ এর সাথে মিম বানাচ্ছে, শুধু কিন্তু আর আমাদের হাসাচ্ছে না, ভাবাচ্ছেও!

ইংল্যান্ডে ‘ব্রেক্সিট (Brexit)’ নিয়ে যে মিমের বর্ষণ চলছে তা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন কেও হাসির পাত্র বানিয়েছে, ইংল্যান্ড তো বটেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মিম নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? এত আলোচনা-সমালোচনা কেন? মিম তো স্রেফ রসিকতার জন্য, তাই না? হ্যাঁ, আমিও তো সেটাই ভাবতাম। কিন্তু একদিন এক ভিডিও তে দেখলাম, একটা ছেলে বিসিএস সংক্রান্ত পড়াশোনা করছে আর ‘Split’ স্ক্রিনে ইমরান হাশমি আর সানি লিওন নাচছে ‘পিয়া মোরে’ নামক জনপ্রিয় হিন্দি গানে।

হতে পারে এতে অথোরিটির একটু অসুবিধা তো হচ্ছেই, কিন্তু আমাদের বিনোদন হিসেবে এই শিল্প হাসাচ্ছে আবার ভাবাচ্ছেও…

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান

পরিচয়: আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। আমি একজন বহুমুখী ব্যক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার পেশাগত জীবন বিস্তৃত। লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, অডিও ও ভিডিও সম্পাদক, ছবি সম্পাদক, ইউটিউবার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে কাজ করি। মাইক্রোসফটের একজন ডেভেলপার এবং অ্যাপ ডেভেলপারও আমি। More »

Leave a Reply

- Advertisement -
Back to top button