সম্পাদকীয়

মশার প্রকোপ: ঢাকা সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা

দুর্নীতির জালে আটকে মশা নিধন প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

প্রথম প্রকাশ: ২০ জুলাই, ২০২৩

বাংলাদেশের সবচেয়ে কমন একটি পতঙ্গের নাম হলো মশা। দেশের প্রায় সব জায়গায় এটির দেখা মিলে। ছোট এই পতঙ্গের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ ভয়ংকর কিছু রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পতঙ্গের আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এটির ব্যাখ্যা অবশ্য আমাদের দেশের বড় কিছু সিটি করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিরা দিয়েছেন।

তারা জানান, শীত কালে যেমন মশা থাকে না, তেমনি শীতের আবহওয়া যেসব দেশে সারা বছর থাকে তাদের ওখানে মশা থাকে না। তবে বিশ্বের সব দেশ শীতল আবহাওয়ার নয়। অনেক মরুভূমি ও গরমের দেশ রয়েছে। তাদের দেশেও আমাদের অনেক পরিচিত মানুষ গিয়েছে যারা মশার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

তবে আমাদের দেশের রাজধানীতে প্রতি বছর শত কোটি টাকা ব্যয়েও মশার বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। গত প্রায় দুই দশক থেকে বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিরা শহরের দায়িত্ব থেকে মশার মতো ছোট একটি প্রাণীর বিস্তার রোধ করতে পারেনি তারা। এটির জন্য অবশ্য কিছু কারণ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে মশা মারতে ঢাকা উত্তর সিটি  করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৭০ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এক বছরে এত কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ঢাকায় হুরহুর করে মশাবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানেও ঢাকায় কয়েক হাজারের বেশি মানুষ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখেছে বাংলাদেশ। সেবার শুধু মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হয়ে প্রায় ১৬৪ জন মানুষ মারা যায়। চলতি বছর ডেঙ্গুতে ১৯২ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি ঢাকার বাসিন্দা।

আরো জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজধানীর মশক নিয়ন্ত্রণ খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের পরও নগরবাসী কোনো সুবিধা পায়নি। বরং প্রতি বছর এসব রোগী ও মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মশক নিধনের নামে এসব অর্থ লুটপাটও করেছে দুই সিটির দুর্নীতিবাজ চক্র। এজন্য নগরবাসী ও কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা ঢাকার মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়ে বরাবর অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।

বর্তমানে মশার আচরণ ও বিস্তারের ধরণ কয়েক ভাবে পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই আগের আমলের পদ্ধতিতে মশক নিধনের চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে শুধু একটি গোষ্ঠী নানা ভাবে লাভবান হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মশক নিধনের নেতৃত্ব দেন একদল বিজ্ঞানী যারা কিটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু আমাদের দেশের বড় কোনো সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কমিটির মধ্যে কীটতত্ত্ববিদরা রয়েছে বলে জানা নাই।

তবে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মধ্যে ড্রেন, কালভার্ট ও বেশ কিছু বদ্ধ জায়গা রয়েছে। যার ফলে সেগুলায় কোনো ধরনের কাজ করতে পারে না মশক নিধন কমিটির লোকজন। এদিকে মশক নিধনের আধুনিক কাজের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ড্রেন ও নালায় মাছ-ব্যাঙ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বিভিন্ন দুর্গোম জায়গায় ড্রোনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। তবে এভাবে আসলে শতভাগ মশক নিধন করা সম্ভব নয় বলে জানান কীটতত্ত্ববিদরা।

মশা মারার জন্য যেটি প্রয়োজন

মশক নিধনের জন্য আগে প্রয়োজন মশার আচরণ ও বংশ বিস্তারের পদ্ধতি খোঁজ করা। তারপর সে অনুসারে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এটি ছাড়া আসলে শতভাগ মশক নিধন সম্ভব নয়। আসলে মশক নিধনের বিষয়টি আমাদের দেশের পদ্ধতি সম্পূর্ণ সঠিক নয় বলে স্বীকার করেছেন এক মেয়র। তবে সেটি করার পরও মশক নিধন কমিটিতে আমাদের দেশের কীটতত্ত্ববিদরা জায়গা পাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সার্বিক ভাবে বলা যেতে পারে যে, আমাদের দেশের মশক নিধনের জন্য আগে সবার সম্মিলিত একটা কমিটি করা প্রয়োজন। তারপর বিভিন্ন ভাবে মশার আচরণ বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করার পর সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মশক নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এটির পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার করতে হবে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধনের ব্যাপারে সকল বয়সীদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সবাইকে সামাজিক ভাবে সবাইকে সচেতন করবে। এসব সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলে দেশের মশক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ছবি: Image by jcomp on Freepik

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading