নগদ vs বিকাশ: কোনটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় মোবাইল ফিনান্স?
বিস্তারিত তুলনা: নগদ ও বিকাশের সুবিধা ও অসুবিধা
বিকাশ নাকি নগদ? কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত? এই আর্টিকেলে দুটি জনপ্রিয় মোবাইল ফিনান্স অ্যাপের বিস্তারিত তুলনা পাবেন। সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট এবং অন্যান্য ফিচারের দাম, সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানুন।
নগদ (Nagad) কি?
নগদ হলো অর্থ আদান প্রদান এর জন্য ব্যবহারিত ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান। এটি ডাক টেলিযোগাযোগ তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধিনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান।
নগদ এটি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড কতৃক, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পূর্বে চালুকৃত পোস্টাল ক্যাশ কার্ড ও ম্যানি ইলেকট্রনিক টান্সফার সিস্টেম (ইএমটিএস) নতুন সংস্করণ হলো নগদ। এটিকে সংস্করণ করা হয় ১১ নভেম্বর ২০১৮ সালে এবং ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেবা প্রদান শুরু করে সারাদেশে ২৬ মার্চ ২০১৯ সাল থেকে।
নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে গ্রাহক দেশের একপ্রান্তে থেকে আরেক প্রান্তে নিমিশের মধ্যে টাকা প্রেরণ করতে পারবে। এতে করে কোনো প্রকার হয়রানি বা ঝামেলার অবকাশ নেই নগদ এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পে বিল পরিশোধ করতে পারবেন অনলাইন মার্কেট করতে পারবেন।
নগদ (Nagad) এর গঠন
এই আর্থিক পরিসেবাটি বাংলাদেশ ডাক আইন সংশোধিত (২০১০) ধারা এর নিয়ন্ত্রিত বিশেষত বাংলাদেশ সরকার কতৃক ডাক বিভাগের একটি স্বতন্ত্র আইন। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কতৃক ১১ নভেম্বর ২০১৮ সালে এই ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান টি চালু করা হয়। এবং এটি তাদের কার্যক্রম ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৪৯ বছরে শুরু করে। নগদ এর চেয়ারম্যান রাহেল আহম্মেদ।
নগদ এর সেবাসমূহ
গ্রাহকরা *১৬৭# ডায়াল করে তার সাথে নগদ অ্যাপ দিয়েও সেবা গুলা নিতে পারবেন। নগদ অ্যাকাউন্ট ধারী তার অ্যাকাউন্টে যদি টাকা থাকে তাহলে সে নগদ এজেন্ট কতৃক যে কোনো সময় নগদ এর সেবা উপভোগ করতে পারবে।
নগদ এর বর্তমান সেবা গুলা হলো, হিসাব খোলা, (ক্যাশ ইন) – হিসেবে টাকা জমা করা, (সেন্ড ম্যানি) – একটি নগদ হতে আরেকটি নগদে টাকা পাঠানো), (ক্যাশ আউট) – নগদ থেকে টাকা উত্তোলন করা, (পেমেন্ট) – পণ্য কেনাকাটার বিনিময়ে টাকা প্রদান করা, বিল পরিশোধ করা ইত্যাদি সেবা সমূহ নগদ প্রদান করে থাকে।
নগদ অ্যাপ এর সুবিধা
নগদের বর্তমানে দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক আছে। তাই গ্রাহকের সুবিধার জন্য নগদ অ্যাপ বানানো হয়, যাতে করে সহজ ও সময় সাশ্রয় হয়। অ্যাপ দিয়ে এজেন্টরা যেমন সুবিধা পাবেন তেমন সাধারণ ব্যবহারকারী পাবেন নানা রকম সুবিধা। নগদ অ্যাপ এ আপনারা পাবেন সেন্ড মানি একদম ফ্রি আর যে কোনো নাম্বারে আর ক্যাশ আউট মাত্র ১১.৪৯ টাকা প্রতি হাজারে।
নগদ অ্যাপ ব্যবহার এর জন্য আপনার একটি স্মার্ট ফোন থাকতে হবে। আর আপনি যদি স্মার্ট ফোন না থেকে তাহলে বাটন ফোনে *১৬৭# ডায়াল করলে আপনি বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন নগদের। নগদ অ্যাপ এর নিরিবিচ্ছিন ইন্টারনেট এর প্রয়োজন পরবে একটি সক্রিয় নগদ আইডি থাকতে হবে।
নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
নগদ ব্যবহারে জন্য আপনাকে একটি নগদ আ্যকাউন্ট থাকতে হবে তাই আপনাকে আগে একটি আ্যকাউন্ট বানাতে হবে নগদে। রেজিষ্ট্রেশন করতে আপনাকে যে কোনো একটি বাংলাদেশি সিম এর প্রয়োজন হবে, ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে, ভোটার আইডি কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট থাকতে হবে।
যে ব্যাক্তি রেজিষ্ট্রেশন করবে তার বয়স ১৮ হতে হবে, আর আপনি চাইলে নগদ এজেন্ট থেকে খুলে নিতে পারেন তা হলে নিজে বাড়িতে বসে খুলতে পারবেন।
কেন আপনি নগদ ব্যবহার করবেন?
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হলো নগদ বিকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে মার্কেটে বিভিন্ন রকম সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। নগদ ব্যবহার করে নগদের সকল প্রকার সুবিধা ও অফারগুলো কে লুফে নেওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি নগদ এর কিছু সুবিধা আপনাকে দেখানো হলো।
অ্যাকাউন্ট তৈরি করা সহজ খুব দ্রুত আপনি একটি নগদ আ্যকাউন্ট বানাতে পারবেন মাত্র দুইটি ধাপে তৈরি করে নিতে পারবেন জরুরী প্রয়োজনে। পরে আবার আপনি অ্যাকাউন্টটি ভালো মতো ভেরিফাই করে ঠিক করতে পারবেন।
সেন্ড ম্যানি করা একদম ফ্রি
একটি নগদ আ্যকাউন্ট হতে যে পরিমাণ টাকাই হোক না কানো তা আরেকটি নগদ আ্যকাউন্টে সেন্ড ম্যানি করা একদম ফ্রি। এতে করে করে সেন্ড ম্যানি এর খরচ বেপার টা ভাবার প্রয়োজন নাই।
নগদে ক্যাশ আউট ফি চার্জ কম
একটি নগদ হতে আরেকটি নগদে ক্যাশ আউট করতে হাজারে ১১.৪৯ টাকা প্রদান করতে হয়। আর বিকাশে সেখানে খরচ পড়ে ১৫ টাকা হাজার প্রতি। তাই বলা চলে যে নগদ ক্যাশ আউট অনেক খরচ কম।
ডিসকাউন্ট ও অফার
নগদে বিভিন্ন রকম অফার তারা প্রদান করে থাকে তার ভিতর উল্লেখযোগ্য হলো যে, যে কোনো মোবাইল অপেরেটরে রির্চাজ করলে ৫০% ক্যাশবাক বা বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট এ কেনা কাটা করলে ৩০% শতাংশ ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা নগদ প্রদান করে থাকে।
বিকাশ বনাম নগদ
বাংলাদেশের ২টি জনপ্রিয় মোবাইল ফিনানশিয়াল সার্ভিস (MFS) হলো ‘নগদ’ আর ‘বিকাশ’। উভয়, ২টি প্লাটফর্মে আছে অসংখ্য গ্রাহক কিন্তু, তাদের অধিকাংশ গ্রাহক জানেন না প্লাটফর্ম দুইটি এর পার্থক্য। উভয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান প্রায় একই ধরনের সেবা প্রধান করে থাকে। কিন্তু আজকে আমরা দুইটি মোবাইল ব্যাংকিং এর পার্থক্য সম্পর্কে জানবো।
নগদ বনাম বিকাশ – সেন্ড ম্যানি
নগদ থেকে নগদে সেন্ড হিসেব খুব সোজা, নগদ অ্যাপ দিয়ে দেশের যে কোনো নগদ আ্যাকাউন্টে সেন্ড ম্যানি একদম ফ্রি মানে কোনো খরচ দিতে হবে না কিন্তু যদি *১৬৭# ডায়াল করে সেন্ড ম্যানি করতে জান তাহলে ৫ টাকা খরচ দিতে হবে।
বিকাশের সেন্ড ম্যানি তে একেক ধরনের টাকা সেন্ড ম্যানিতে ভিন্ন রকম সুবিধা আছে যে কোনো ৫টি প্রিয় নাম্বারে ২৫ হাজার টাকা সেন্ড ম্যানি একদম ফ্রি, এবং এই সকল নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা সেন্ড মানি করলে ৫ টাকা চার্জ দিতে হবে তার উপর গেলে ১০ টাকা দিতে হবে।
নগদ ও বিকাশ থেকে মোবাইল রির্চাজ
উভয় প্লাটফর্ম মোবাইল রির্চাজে একই ধরবের সুবিধা প্রদান করে থাকে। বিকাশ ও নগদ থেকে থেকে দেশের যে কোনো অপরেটর এ মোবাইল রির্চাজ করা যায়।
বিকাশ ও নগদ এর ক্যাশ আউট
বিকাশে ক্যাশ আউট এর একাধিক সুবিধা আছে তার ভিতর, প্রতি মাসে প্রিয় এজেন্ট নাম্বারে ২৫ হাজার টাকা আউট করলে ১.৪৯% টাকা চার্জ কাটবে, আর ২৫ হাজার টাকার বেশি করলে ১.৮৫% করে চার্জ কাটবে। প্রিয় এজেন্ট ছাড়া ক্যাশ আউট করলে যে কোনো পরিমাণ টাকায় ১৮.৫ প্রতি হাজারে চার্জ কাটবে।
অন্যদিকে নগদ দেশের সবথেকে কম ক্যাশ আউট চার্জ নিয়ে থাকে তারা। নগদ অ্যাপ থেকে ক্যাশ আউট করলে ১১.৪৮ টাকা প্রতি হাজারে চার্জ কাটে। আর নগদ ইসলামিক থেকে করলে ১৫ টাকা কাটবে আর *১৬৭# ডায়াল করে করলে হাজারে ১৫ টাকা কাটবে নগদ।
বিকাশ ও নগদ থেকে পেমেন্ট
বিকাশ দিয়ে অসংখ্য মার্চেন্ট এর কাছে পেমেন্ট করা যাবে দেশের ৪৭০০০+ আউটলেটে বিকাশ পেমেন্ট করার সুবিধা আছে। যেমন দেশের বিভিন্ন সুপার স্টোর, ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেস্টুরেন্টে, ই-কর্মাস সাইটে বিকাশ দ্বারা পেমেন্ট করতে পারবেন।
অন্যদিকে মার্চেন্ট পে এর মাধ্যমে আপনি দেশের বিভিন্ন আউটলেট এ নগদ পেমেন্ট করতে পারবেন, নগদ ও বিকাশ প্রায় একই পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে থাকে। কিন্তু বিকাশের টা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি।
বিকাশ ও নগদ এর অ্যাড ম্যানি
বিকাশ ও নগদে টাকা অ্যাড করার সুবিধা প্রায় একই রকম তারা উভয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এবং তাদের এজেন্ট থেকে টাকা অ্যাড করতে পারে।
বিকাশ ও নগদ এর পে বিল
বিকাশ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোনে, ইন্টারনেট, ইত্যাদি ইউটিলিটির বিল পরিশোধ করা যায়। মাসে চার টি বিল দেওয়া যাবে কোনো চার্জ ছাড়া। অন্য দিকে নগদেও বিভিন্ন রকম ইউটিলিটির বিল পরিশোধ করা যায়। কিন্তু আপনি দেখে নিন আপনার দরকারি বিল পরিশোধ এর কোনো সুবিধা আছে কি না?
বিকাশ ও নগদে সেভিংস
আইডিএলসি ফাইন্সাস এর মাধ্যমে বিকাশে বিভিন্ন মেয়াদি সেভিংস করা যায়। তা আবার মুনাফা সহ পরে ফেরত প্রদান করিবে। অন্যদিকে নগদে কোনো সেভিংস কোনো ফিচার নেই।
বিকাশ ও নগদে লোন
বিকাশে সিটি ব্যাংক ৩ মাস মেয়াদি লোন প্রদান করে থাকে কিন্তু নগদে কোনো প্রকার লোন প্রদান করা হয় না।
পরিশেষ
আমরা উক্ত দুইটি ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারলাম যে, তারা দুজনেই গ্রাহকদের কে মোবাইলে ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু এখানে নগদ এর থেকে বিকাশ একটু এগিয়ে আছে তাদের সব উন্নত সেবার জন্য।
আপনার কাছে কোনটি এগিয়ে আছে মনে হয় সেটা জানাতে কমেন্ট এ আপনার মূল্যবান মতামত দিন এবং ‘দ্য ব্যাকস্পেস জার্নাল’ এর সাথেই থাকুন সব রকম সঠিক তথ্য পেতে। ধন্যবাদ
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.