উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ০১)
একটি অদ্ভুত প্রস্তাব, নতুন জীবন এবং অজানা রহস্য
Disclaimer: This novel is entirely fictional. It has no resemblance to reality. If by chance any character or any particular event of this novel matches with anyone’s life, then this novel will not be responsible for that in any way. Moreover, this novel is not written to hurt anyone’s religious and political sentiments.
রাজবাড়ি। আমার প্রাণের শহর। কিন্তু আমার জন্য এখন এখানে টিকে থাকাটা একরকম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পূর্বে গ্রামের বাড়ি থেকে মা ফোন করেছিলেন কিছু টাকা পাঠানোর জন্য। চাকুরী নেই, আবার তাই বলে কিছুই করি না তাও নয়।
কিন্তু ঠিক কি পদে আমি চাকুরী করি সেটা ব্যাখ্যা দেবার বোধহয় প্রয়োজন আছে। ইংরেজিতে এটাকে বলা যেতে পারে, প্রক্সি ম্যান। ব্যাখ্যায় গেলে এভাবে বলা যায়, চাকুরীজীবি যারা আছেন তাদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতিতে আমি হাজিরা দিয়ে থাকি। আর এসব করে কিছু টাকা কামানো গেলেও জীবন একদমই চলছিলো না।
হোটেল ছাড়তে হয়েছে। ভাড়ার বাকি টাকা না দিতে পারায় রোজ রোজ মালিক গালিগালাজ করে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছিলো। অনেক যুক্তি-তর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। যুক্তি-তর্কেরও পেছনে একটা ঠিকঠাক যুক্তি থাকা উচিত নয় কি!
এক সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে বিনা পয়সায় খেতে বসেছিলাম। প্রচন্ড খিদে পেয়েছিলো। তাই ইচ্ছে মত অর্ডার করেছি নানাবিধ খাবারের আইটেম। গো-মাংসও বাদ যায়নি, সাথে আবার কোক ছিলো। পাশে এক সত্তর বয়সী বৃদ্ধা বসেছিলেন। ভদ্রমহিলা বারবার আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছেন। আর তাকাবেন না-ই বা কেন? যেভাবে খাবার কব্জি ডুবিয়ে মুখে পুড়ছিলাম!
বিল আসলো ৫০০ টাকা। বিল দেখে আমার চোখ তো তখন চড়াক গাছ। সর্বোচ্চ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে হবার কথা ছিলো। ওদিকে ধানের দাম কমছে, অন্যদিকে চালের দাম বাড়ছে। কৃষকদের উপর রেটোরিক অর্থে ‘স্যাটায়ারিক’ প্রভাব পড়েছে বলা যায়, আর বাকিটা ‘আইরোনি’। অবশ্য সেদিন আমি মুখেই বলে দিলাম, “দুঃখিত! আমার কাছে আপনাদের বিল পরিশোধ করার মত টাকা নেই।”
গায়ে কোর্ট-টাই দেখে হয়তো ওয়েটার বকশিস পাবেন বলে ভেবেছিলেন। সে ইচ্ছেই তো গুড়ো বালি পড়লো তার উপর রেস্টুরেন্টের মালিক অশ্রাব্য ভাষায় আমি সহ ওয়েটারকে গালি দিতে শুরু করলো।
এক সময় ব্যাপারটা ধস্তাধস্তি পর্যায়ে গড়ালো। কিন্তু না, আমি টাকা দিতে প্রস্তুত নই।
“আরেহ্ ভাই, আমার মানিব্যাগে আজ এক পয়সাও নেই। একটু তো বুঝার চেষ্টা করুন!”
এরপর এক দীর্ঘদেহী ওয়েটার মাত্র আমার শার্টের কলার ধরবে বলে সিনেমাটিক স্টাইলে হুমকি দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে। কিন্তু ততক্ষণে ঐ বৃদ্ধার খাওয়া-দাওয়া শেষ। তখন বিল দিচ্ছেন। ভদ্রমহিলা আমার এই অবস্থা দেখে রেস্টুরেন্ট মালিককে বললেন, “ওর যা বিল হয়েছে আমি দিয়ে দিচ্ছি। অনুগ্রহ করে আপনারা একটু থামুন!”
রেস্টুরেন্টের মালিক মনে হয় মনে মনে আমায় গালিগালাজ করছিলেন। সাথে ঐ ওয়েটার হয়তো আফসোস করছেন। রেস্টুরেন্টের বাহিরে পা দিতেই ভদ্রমহিলা ইশারা করলেন,
– কিহ্… সিগারেট খাও?
– হ্যাঁ, চলে…
– কিন্তু আমি পাবলিক প্লেসে স্মোক করি না। তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো আমার প্লেসে।
– কোথায়!
– কেন? আমার বাসায়। ভয় নেই, আমি একা থাকি। আর সাথে আমার ছোট এক মেয়ে থাকে।
– ওকে, চলুন? তবে আপনার সাথে গাড়ি আছে কি?
– হুহ্
শহর থেকে অল্প একটু দূরে। ঠিক যেনো এক জমিদার বাড়ির সামনে ড্রাইভার গাড়িটা থামালেন। গাড়ি থেকে নেমে আমি ‘হা…’ করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। একসময় বিস্ময়ে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, “এটা বাড়ি না কি ছোটখাটো প্রাসাদ!”
ভদ্রমহিলা: আমার দাদু জমিদার ছিলেন। হালকা শ্যাওলা পড়েছে তাই না? আমি একটু অবাক হয়ে, “হ্যাঁ, তা পড়েছে। কিন্তু এত পুরনো বাড়ি এখনো অক্ষয় হয়ে অমরত্বের জানান দিচ্ছে যেন।”
একটু বাদেই চমৎকার একটি রুমে আমাকে বসানো হলো। সত্যি বলতে এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব আছে। তারপর আমার সামনে এক এক করে ওয়াইনের বোতল, দামী ব্রান্ডের সিগারেট এবং একটি আশট্রে রাখা হলো।
ভদ্রমহিলা এক গ্লাসে নিজে ওয়াইন ঢাললেন উল্লেখ্য ‘র’ নিলেন। জলের বিড়ম্বনা আর না করে তিনি মস্তবড় খাটে পা দুলিয়ে বসলেন। আমি সোফায় বসে ততক্ষণে ধাতস্থ হবার চেষ্টা করছি। শুরুটা উনি করলেন,
– তা তুমি মদ-টদ খাও?
– ইয়ে মানে… কখনো কখনো…
– নাম কি তোমার?
– আমি হাসান… আপনি?
– মুসলিম?
– জন্মসূত্রে
– আমি স্মৃতি দত্ত। কি করো তুমি?
– বেকার, ঠিকঠাক কিছু করি না।
ততক্ষণে ওয়াইনের সাথে হালকা জল নিয়ে ছোট একটা পেগ আমিও বানালাম। আর সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে মনে হলো রাজ্যের সুখ আমি এখন অনুভব করছি। তিনি আবার শুরু করলেন,
– কোথায় থাকো তুমি?
– মিসেস দত্ত, সত্যি বলতে বর্তমানে আমার কোন আবাস্থল নেই।
– তোমাকে একটা অফার করতে চাই। আপত্তি না থাকলে বলবো।
– বলুন? কোন চাকুরী? না কি বাড়ির পরিচারক হতে হবে?
– উঁহু, তোমাদের এই প্রজন্ম হুট করে ভূমিকা ছাড়াই উপসংহারে চলে যায়। বলছিলাম… তুমি চাইলে এখানে থাকতে পারো। কিছু রুম এমনিতেও খালি পড়ে আছে। চাকুরী পেলে না হয় চলে যেও।
– আপনার মেহেরবানি। তা এতবড় উপকার কেনো করতে চাইছেন?
– সিক্রেট… সওদা মঞ্জুর?
– দেখুন ‘না’ বলার অপশন নেই। শুধু ভয় হচ্ছে রাত দুপুরে কেউ আমার গলা টিপে না দেয়।এরপর চার দেয়ালে হাসির শব্দ ধ্বনিত হতে থাকলো। ফ্রি খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে তার উপর চমৎকার একজন ভদ্রমহিলা। বেশ জমবে। আড্ডায়, গল্পে সময় চলে যাবে।
আমার এখানে বেশ কিছু কাজ রয়েছে। মিসেস দত্ত আমাকে কিছু কাজের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এই যেমন, সপ্তাহে একবার বাজার করা, রাতে সময়মত ঘরে ফেরা, চাকুরীর জন্য পড়াশোনা। এছাড়াও মিসেস দত্তের একটা ছোটখাটো ব্যবসা আছে। শহরের বেশ কয়েকটা দোকান ওনার নিজের। সেসবের হিসেব মেলানো। আজকাল তো কারো উপরেও বিশ্বাস করা যায় না। অবশ্য আমাকে এসব করতে একদম বেগ পেতে হচ্ছে না। কিন্তু বুঝে আসছেনা যে, ‘এতদিন এতসব দোকান কে সামলাতো?’
ওসব ভেবে অবশ্য আমার কোনো লাভ নেই। তাই কখনো এইসব ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে উঠতে পারিনি। কৌতুহল জাগেনি। আমি আমার মত চিরচেনা জীবন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বেশ তো! ভালোই আছি।
এরপর পুরো একটা মাস বসে শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। হঠাৎ একদিন কেউ একজন দরজায় কড়া নাড়লো। প্রথমে মনে হলো, মিসেস দত্ত হবেন হয়তো। উঁহু! আজকের বাজার করা হয়নি। কিন্তু না, উনি তো আমায় ঘুম থেকে ডাকেন না। কোনো সমস্যা হয়েছে মনে হচ্ছিলো। তাই খালি গায়েই দরজা খুললাম। ওমা একি! এ তো আস্ত রাজকন্যা!