Disclaimer: This novel is entirely fictional. It has no resemblance to reality. If by chance any character or any particular event of this novel matches with anyone’s life, then this novel will not be responsible for that in any way. Moreover, this novel is not written to hurt anyone’s religious and political sentiments.
হঠাৎ সেখানে স্নেহার উদয়। আচমকা সে আমার কাছে এসে আমার ঠোঁটে এমনভাবে চুমু খেলো যেন অক্সিজেনের জন্য কয়েকদিন আর ভাবতে হবে না। তারপর আবার অদৃশ্য হয়ে গেল। পুরোটা নিয়ে একটু মাথায় চিন্তার অবকাশ দেখা দিলেও আস্ত একটা লাশ, না লাশ বলা হয়তো ঠিক হবে না। কারণ মৃত ব্যক্তি কথা বলতে পারে না। তিনি এসেই যেন ফিসফিস করে বলতে লাগলেন,
– এই যে, হাসান? স্বাধীন দেশের পরাধীন নাগরিক কেমন আছো?
– জি, আমি ভাল আছি। দোহায় আপনার! আমাকে মারবেন না।
– আরেহ্, আমি আর তোমাকে কি মারবো! বেকারত্বের ভার নিয়ে তুমি নিজেই তো একটা জীবন্ত লাশ।
– এভাবে কেন বলছেন? আমি মিসেস দত্তের দেখাশোনা করি তো!
– সে তো দেখছি-ই। তোমার তো ঐ সভ্য সমাজে ঠাঁই হচ্ছে না, এজন্য এসব ভূতের কাছে আশ্রয় নিয়েছো। দেশে এরকম শিক্ষিত বেকার থাকুক সেজন্য আমরা জীবন দেইনি। মরে গিয়ে ভূত হয়েও তোমাদের মত বেকারদের পুষতে হচ্ছে। বলো? আর কত দেবো এই দেশকে!
– না, আপনি ভুল চিন্তা করছেন। হয়তো আমার চাকুরী হয়নি। বাকিদের তো হয়েছে। তাই না?
– ক’জনের হয়েছে? আর প্রতিদিন এদেশে ক’জন আত্মহত্যা করছে সে খবর রাখো? হো… হো… হা…
– এমন অদ্ভূত ভাবে হাসবেন না। আমার সত্যিই ভয় করছে, দাদু!
– এই আমি তোর দাদু কি করে? কোন সম্পর্কে? একেবারে গলা টিপা দিয়ে এখানেই ঝেড়ে রাখবো।
– মুক্তিযুদ্ধে মরলে আমার দাদু-ই তো হচ্ছো?
– এই তোর ভূতে ভয় নেই!
লাশের সাথে এই আলাপ চলাকালে একসময় বাস্তবতার সাথে উনার কথা মেলাতে শুরু করলাম। উনি খারাপ কিছুই বলছেন না। যদি একটা চাকুরী জুটে যেত তাহলে অন্তত নিজের পরিবারকে দেখভাল করতে পারতাম। বিশেষ করে বৃদ্ধ মায়ের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎ স্নেহার আবির্ভাব ঘটলো আবার। এবার সে আমার হাতটা ধরে এক হ্যাঁচকা টানে ডোবার বাহিরে তুলে আনলো। আর হাঁপাতে লাগলো। আর একটুবাদে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলো,
– আপনাকে কতবার বলেছি যে, এই জঙ্গলে আসবেন না… কতবার?
– স্নেহা আমি তোমাকেই খুঁজতে এখানে এসেছিলাম।
– আমি আমার রুমে অ্যানাটমির বই ঘাঁটছিলাম। সামনে আমার পরীক্ষা। দেখা করার এত তীব্র ইচ্ছে যখন, তখন তুমি আমার রুমে আসলেই পারতে। দুঃখতি আপনি…
– কিন্তু মিসেস দত্ত তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই আমি এখানে এসেছি।
– মা গতকাল উনার এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছেন। ভদ্রমহিলা অসুস্থ। আপনি কার কথা বলছেন হাসান? বাদ দিন… আমার সাথে আসুন… কিহ্! এভাবে চেয়ে থাকলেন কেন! আসুন?
– চুমুটা বোধ করি তুমিই খেয়েছিলে?
– কীসের চুমু? ধূর! আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ঠিকাছে এটা আবার বাকি থাকবে কেন? সবকিছুই আজকাল নগদে চাই, সব পুরুষ একইরকম…
এরপর স্নেহার হাতটা ধরলাম। আমি তখন ভীত-সন্ত্রস্ত তাই শরীরটা হালকা কাঁপছিলো। হঠাৎ টের পেলাম আমার ঠোঁটে স্নেহার ঠোঁটের উঞ্চ স্পর্শ। স্নেহাকে কাছে পেতেই যেন আবার সব ভুলে গেলাম। স্নেহা আমাকে নিয়ে ওর রুমে ফিরলো।
আমি একটু অবাক হয়ে ওর রুমের চারদিকটা ঘুরে ফিরে দেখছি। বেশ সাজানো গোছানো। আর মেডিকেলের বেশ কিছু বই দিয়ে ভরা। টের পেলাম স্নেহা আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মনে হয় কিছু বলতে চায়।
– হাসান সাহেব, আপনি দেখতে ঠিক আমার এক বন্ধুর মত। বিশেষ করে আপনার চুলগুলো বেশ গোছানো। আর আপনার এই নির্জীব আত্মপ্রকাশ আমায় বেশ মুগ্ধ করে।
– বন্ধু বলতে? কোনো ছেলে বন্ধুর কথা বলছো? মানে তোমার কোনো এক্স?
– হ্যাঁ, অনেকটা সেরকমই। চাকুরী না পাওয়ায় এক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সৌরভ।
– তারপর… মানে তারপর এই নিঃসঙ্গতাকে বেছে নিয়েছো?
– একেবারে নিঃসঙ্গ বোধহয় নই। ডাক্তারি পেশাটাকে বেছে নিয়েছি। মা অনেকবার নিজস্ব ক্লিনিক খুলতে বলেছিলেন। কিন্তু বাবা যাবার পর সে শখ মিটে গেছে। নিজের করে আর কিছুই করতে ইচ্ছে করে না।
– তারমানে ফ্রিল্যান্সারদের মত তুমি ডাক্তারি প্রাকটিস করছো?
– অনেকটা সেরকমই… কিন্তু আপনাকে কাছে পাবার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। ভাবছি এবার সত্যি সত্যিই ক্লিনিক দিয়ে বসবো।
– আর সেখানে আমার ভূমিকা কি থাকবে? কম্পাউন্ডার?
– হাসালেন বটে… ধরুন, স্বামীর দায়িত্ব যেটুকু আপনি না হয় সেটুকু অন্তত করলেন!
– মনে মনে আমায় তবে স্বামী স্বীকার করেছো?
– প্রথম দেখাতেই সেটা করেছি। তা আপনার নেক্সট স্টেপ কী? বিসিএস?
– হ্যাঁ, বিসিএস। সিভিল সার্ভিস জবের ডিমান্ড বেশি তাছাড়া সুন্দরী কপালে জোটবে না।
– এসব মিথ্যে ধারণা কোথায় পেলেন?
– মিথ্যে ধারণা কোথায়? তুমিও তো তাই চাও স্নেহা! আমি বিসিএস দিবো, ক্যাডার হবো তবেই তো জাতে উঠবো।
– না, আমি সেরকমটা চাই না। আমার বরং অঢেল আছে। আপনি মূলত কী হতে চান?
– একজন লেখক…
– আচ্ছা, কী ধরণের গল্প লিখে থাকেন আপনি?
– থ্রিলার…
– ওহ্, এডগার এলান পো?
– এটা কীভাবে ধরলে? আমি তো হরর থ্রিলার বলিনি।
– আপনাকে বুঝি আমি মি. হাসান। তাছাড়া বাঙালী লেখকগণ উনার খুব ভক্ত। তা এজন্য আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
– আপাতত একটা টাইপরাইটার লাগবে। কম্পিউটারের কি-বোর্ড আমার সহ্য হয় না।
– ঠিকাছে, আমার সাথে একটু আসবেন?
– কোথায়?
– স্টোর রুমে
– কিন্তু কেন?
– আসুন তো?
এই বাড়িটার সবটুকুই আমার মন কাড়ে। তার মধ্যে এই স্টোর রুম একটি। বিশাল আর্কাইভ দেখে বাইরে থেকে বুঝার জো নেই যে, এখানে একসময় শিল্প-সাহিত্যের চর্চা তুঙ্গে ছিলো। একটুবাদে স্নেহা স্টোর রুমের নীচের দিকের একটি রুমে প্রবেশ করলো।
আমিও সাথে সাথে এগুচ্ছি। সরু এই প্যাসেজটি বেশ লম্বা; যা কিনা ক্রমাগত নীচের দিকে এগিয়েছে। কিন্তু এখানে এই রুমটাও আছে সেটা মিসেস দত্ত আমাকে পরিচয় করিয়ে দেননি।
একটুবাদেই একটা বড় হলরুমে প্রবেশ করলাম যেন। চোখ ধাঁধানো কিছু জিনিসপত্র দেখে চমকে উঠলাম। আমার কাছে এটা একটি পার্থিব স্বর্গ বলে মনে হলো। তারপর হাজারো এন্টিক জিনিসপত্রের মধ্যে থেকে একটি টাইপরাইটার বের করে আনলো স্নেহা।
– মি. হাসান, এটা আপনার জন্য।
– কিন্তু মিসেস দত্ত ব্যাপারটা ভাল ভাবে নিবেন তো?
– মা নিজেই আপনাকে এটা দিতে বলেছেন।
– কি বলছো! উনি কি জানেন যে, আমি লিখালিখি করি?
– না, তবে ৬ষ্ঠ পূর্ব পুরুষের সূত্র অনুযায়ী এটা আপনার পাওনা বলে উনি বিশ্বাস করেন। তাই আপনাকে এটা দিতে বলেছেন।
– বেশ ভারি, আর এখানে আমার ছবি পেইন্টিং করা কেন? আর দেখো? আমি মরেও গেছি। মানে মৃত্যু সালও উল্লেখ করা! তাও কবে ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দ! কিন্তু টাইপরাইটার আবিষ্কার হয়েছিলো ১৮৬০ সালে!
– ওহুম, উনি আপনার মত দেখতে ছিলেন। আর টাইপরাইটার আমার দাদুর, ওখানে পুনরায় তাঁর দাদুর ছবি আঁকানো হয়েছে।
– ঠিকাছে, মিসেস দত্ত কে তবে অনেক ধন্যবাদ। আমি আমার লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারবো এখন।
– আপনাকেও স্বাগতম। চলুন রুমে যাই?
– কার রুমে?
– মা নেই তাই দুষ্টামি চলছে!
– হ্যাঁ, ইচ্ছে করছে…
এরপর আমার দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকালো স্নেহা। বুঝলাম রাজী। আব কিয়া কারেগা কাজী!
– আচ্ছা, আপনার বাড়িতে কে কে থাকেন মি. হাসান?
– বলছি, তবে এই “মি. হাসান” আর “আপনি” বাদ দিতে হবে তোমাকে। শুধু “হাসান”, ওকে?
– কি করে দেই? অভ্যাস হয়ে গেছে যে… আচ্ছা চেষ্টা করবো…
– আমার বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন শুধু। একা থাকেন।
– অনেকদিন হলো তাহলে কোনো খোঁজ-খবর রাখেননি… তাই তো?
– হুম
– মা কে মিস করো না?
– করি… কিন্তু মিসেস দত্ত সে দুঃখ কিছুটা লাঘব করে দিয়ছেন।
– আসার সময় উপর তলা থেকে লক্ষ্য করছিলাম, তোমার হাতে একটা ফোন ছিলো। ওটা কই?
– থাকবে কোথাও! হয়তো পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে রাখা আছে। এমনিতেও তেমন কোন কাজে লাগে না।
– ঠিকাছে, শর্ত হচ্ছে মা কে ফোন দিলে আমাকে পুরো রাতটা কাছে পাবে। আর যদি…
– না, না… আমি এখুনি ফোন করছি… তুমি ব্যস তোমার কথায় আমল করো!
স্নেহার আমাকে নিয়ে এমন খেলাটা তিক্ত লাগলেও বলতে হয় সে এক মধুর তিক্ততা। এরপর ড্রয়ার হাতড়াতে লাগলাম। খানিকবাদে ফোনটা পেয়েও গেলাম। সুইচ অফ করে রাখা। ফোনটা অন করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো, “Mom is calling…”
‘দত্ত পরিবার’ উপন্যাসের তৃতীয় পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ০৩)