Disclaimer: This novel is entirely fictional. It has no resemblance to reality. If by chance any character or any particular event of this novel matches with anyone’s life, then this novel will not be responsible for that in any way. Moreover, this novel is not written to hurt anyone’s religious and political sentiments.
স্নেহা হাসান ‘ইবনে সিনা ক্লিনিক ও হাসপাতাল’ এর একটি ওয়ার্ডের বেডে বসে আছে। একেবারে তার পাশের বেডে ইকবাল হাসান কে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। স্নেহার নিজের মধ্যে এক ধরণের খারাপ লাগা কাজ করছে। কারণ স্নেহার মন বলছে হাসানের সাথে ওমন ঝগড়া করা ঠিক হয়নি।
স্নেহার এক পায়ে এক রড প্রবেশ করেছিলো। গত একমাসে ডাক্তার সেটা থেকে স্নেহা কে মুক্তি দিয়েছে। হাড়গুলো এখনো পুরোপুরি জমাট বাধেনি। কিন্তু হাসানের মাথার বেন্ডেজ দেখে ওর চিন্তা হচ্ছে, হতে পারে হাসান আর কখনোই সুস্থ হবে না।
গত একমাস এভাবেই হাসান বেডে পড়ে আছে; কমায়। এরমধ্যে অন্তত একত্রিশবার স্নেহার মা মিসেস স্মৃতি দত্ত হাসান কে দেখে গেছেন। আজ রাতেও এখানে একবার আসার কথা।
সময় রাত দশটা
মিসেস স্মৃতি দত্ত স্নেহার দিকে একবার মায়ার চোখে তাকালেন আর বললেন, “এত ক্লিনিক রেখে এই সামান্য বস্তাপচা ক্লিনিকে হাসান কে ভর্তি করার কারণ? তার উপর এরা মুসলিম, এদের চিকিৎসা নিয়ে খুব বেশি জানাশোনাও নাই! তারপরেও কেন?” স্নেহা প্রত্যুত্তরে বললো, “এর জন্য দায়ী তো আপনি! মিসেস স্মৃতি দত্ত। বড় যেকোন প্রাইভেট ক্লিনিক এখন আর হাসানের জন্য সুরক্ষিত নয়। প্রশ্নটা নিজেই নিজেকে করুন একটু? কিন্তু আমার স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে দেবার কারণ?”
মিসেস দত্ত: স্নেহা, ভুল সেটা নয় যা তুমি দেখতে পাওনি, বুঝতে পারো নাই। তুমি তো জানো কিছু মানুষ একটু স্পেশ্যাল হয়। ওরা শুধু সাধারণ রুটিন জীবন চালিয়ে যাবার জন্য জন্মগ্রহণ করে না। না বিশেষ কোন সামাজিক পেশা। চারপাশে যত শয়তান আছে তাদেরকে রক্তস্নান করানোর জন্য এমন একজন কে দরকার যে প্রয়োজনে নিজেও শয়তান হতে পারে।
স্নেহা: কিন্তু আমার সাথেই এমন কেন হয়! মা? অমিতের সাথে আপনি যা যা করেছেন তা কি ঠিক ছিলো? অমিত কেও আমার জীবন থেকে হটালেন। আমি তো এবার অন্তত হাসানের সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম! তাছাড়া মানুষ কোন ব্রয়লার ফার্মের মুরগী নয় যে তাকে তিনবেলা খাবার দাও, যত্ন নাও তাহলে জীবিত থাকবে। মানুষ এর বাইরে গিয়ে বেঁচে থাকার জন্য উদ্দেশ্যের প্রয়োজন হয়।
মিসেস দত্ত: আমি ভালোই অমিত কে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছি। কিন্তু আমি আশ্বাস দিচ্ছি, হাসান তোমারই থাকবে। তাছাড়া হাসান আমার নিজের ছেলের মতোই। আমার কিয়ামতের পর হাসানের সাথে দূরে কোথাও চলে যেও।
স্নেহা: মনে হচ্ছে কোন যুদ্ধে যাচ্ছেন?
মিসেস দত্ত: হুম… সময় আসলে টের পাবে। কিন্তু ডাক্তারগুলো কি সব মরেছে?
একটুবাদে এক জোকার মত ব্যক্তি গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলাতে ঝুলাতে ওয়ার্ডে প্রবেশ করলেন। মিসেস দত্ত ‘হা’ করে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। চোখেমুখে প্রচন্ড বিরুক্তির ছাপ। স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলাতে ঝুলাতে জোকার মত ঐ ব্যক্তি এসেই বললেন, “মি. ইকবাল হাসানের প্রকৃত অভিভাবক আসলে কে?” মিসেস দত্ত নির্বিকার এবং বিরুক্ত হয়ে বললেন, “কিন্তু মহাশয়, আপনি আবার কে?” স্নেহা মাথা নাড়ালো এতে মিসেস দত্ত বুঝলেন, এটাই হলো হাসানের ডাক্তার।
‘কিন্তু এই ব্যক্তি এতদিন কই ছিলো! হাসানের চিকিৎসা করছিলেন একজন সিরিয়াস ডক্টর, এই জোকার নয়’ – ভাবছিলেন মিসেস দত্ত।
মিসেস দত্ত: সরি, ডাক্তার বাবু… ওহ্… ডাক্তার সাহেব… আপনার নাম?
ডাক্তার: আমার নাম ইবনে সিনা। আমার পুরো নাম আবু আলি হুসাইন বিন আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান বিন আলী ইবনে সিনা।
মিসেস দত্ত: আপনার মনে হয় না যে, আপনার এই নাম প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি বড়? আর ইবনে সিনা! আপনি তাঁর জীবনীও কি ভালো করে পড়ে দেখেছেন? যত্তসব!
ডাক্তার: ওহুম… আমার কাজ নয় সেটা… আমার কাজ হলো রুগীর সেবা করা। আর ঠিক এই মূহুর্তে এই রুগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনাকে অবগত করানো।
মিসেস দত্ত: সে তো জেনেই ছাড়বো, কিন্তু তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো, আপনারা মানে এই পুরো মুসলিম কমিউনিটি কি আজীবন ইতিহাসের গৌরব গেয়ে যাবেন? নতুন কিছু করার ইচ্ছে হয় না?
ডাক্তার: শুনুন, মিসেস দত্ত, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা উচিত নয়।
মিসেস দত্ত: ঠিকাছে, হাসানের কথা বলুন? আর কতদিন লাগবে ওর সুস্থ হতে? আমাদের হাতে অনেক অনেক কাজ…
ডাক্তার: রাজনীতিবিদরা সবসময় তাই বলে… কিন্তু যত বলে তার অর্ধেকও যদি করতো তাহলে বঙ্গদেশে এত সমস্যা কখনোই হত না! যাকগে, কার অ্যাক্সিডেন্টে হাসানের মাথায় খুব জোরে আঘাত লেগেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী কেউ হাসান কে একেবারে মারার চেষ্টা করেছিলো। এ যাত্রায় বেঁচে গেছে কিন্তু…
মিসেস দত্ত: কিন্তু কি? বাংলা সিনেমার মত স্মৃতিশক্তি লোপ পায়নি তো আবার!
ডাক্তার: না, মিসেস স্মৃতি দত্ত, আপনি থাকতে স্মৃতি হারানোও তো খুব মুশকিল। কিন্তু হাসানের স্মৃতি দুই অংশে ভাগ হয়ে গেছে।
মিসেস দত্ত: মানে!
ডাক্তার: মানে হলো হাসান এখন থেকে দুটো ব্যক্তিত্ব বহন করতে পারে। এক হাসান যে ইকবাল হাসান ছিলো আর আরেক হাসান যে শুধু স্নেহার প্রেমিক। এই রোগ কে বলা হয় ‘ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার’।
মিসেস দত্ত: ওয়াও! ইকবাল হাসান! মানে সিরিয়াল কিলার! আবার স্নেহার প্রেমিকও! একইসাথে দুটো ব্যক্তিত্ব কি সিনক্রোনাইজ হবে?
ডাক্তার: আজকাল টিভি সিরিয়াল বেশি দেখেন তাই না? মানে রাজনীতিবিদরাও সিরিয়াল দ্যাখে!
মিসেস দত্ত: মি. ইবনে সিনা, সোজা বাংলায় কি দাঁড়াচ্ছে সেটা ঝেড়ে কাশা যায় না?
ডাক্তার: ক্লাউড… হাসানের মাথায় এখন এক ধরণের মেঘ দেখা যাচ্ছে। উনার অতীতের অংশ শুধু মনে আছে। প্রথম প্রথম তিনি শুধু ইকবাল হাসান হিসেবেই নিজেকে জানবেন। আবার আপনাদের চেহারা চিনতে পারলেও আপনাদের স্মৃতি মনে করতে সময় লাগবে। তাই যতদিন এই মেঘ তার মস্তিষ্ক থেকে পুরোপুরি না যাচ্ছে ততদিন তিনি স্নেহার প্রেমিক হাসান হতে পারবেন না। এটাকে ইংরেজিতে ‘Dissociative Amnesia’ বলে।
মিসেস স্মৃতি দত্ত ঠিক বুঝতে পারছেন না তিনি এই সমস্যার সাথে কীভাবে সমঝোতা করবেন। ইকবাল হাসান আর শুধু হাসান তো এক ব্যক্তি নয় তাহলে মিসেস দত্তের আদেশ কেন পালন করবে? এক পর্যায়ে স্নেহা পাশে এসে দাঁড়ালো।
স্নেহা: মিসেস দত্ত, ইকবাল হাসানও আপনার কথা শুনবেন। আপনি দুঃশ্চিন্তা করবেন না।
মিসেস দত্ত: তোমাকে শুধু বলেছিলাম হাসানের সাথে প্রেমের নাটক করতে। কিন্তু আমার-ই মেয়ে বলে কথা। নাটকে এত মসলা মেশানো হলো যে, প্রেমের নাটক কম একটা হর’র থ্রিলার সিনেমা করেছো। তার উপর নাটক করতে করতে সত্যিকার অর্থেই প্রেমেও পড়ে গেছো!
স্নেহা: হুম, হাসানের মত ছেলের প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা খুব কঠিন ছিলো। বহুত ইন্টারেস্টিং!
মিসেস দত্ত: ফলাফল দুজনের জীবনে এক ভয়ানক হামলা…
স্নেহা: না, ভালোবাসা এক তীব্র অনুভূতি। মৃত্যু আর ভালোবাসা এই দুই বস্তু মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র।
মিসেস দত্ত: এক মিনিট! কি বলার চেষ্টা করছো?
স্নেহা: চাই ও ইক-বাল হোক বা হাসান… সাচ্চা প্রেম আমাদের। সুতরাং ও ওটাই করবে যেটা আমি চাইবো।
মিসেস দত্ত: একি! তুমি সাইকোলজিতে কবে ডিগ্রী নিলে? নাকি একেবারে প্রেমিকের শোকে পাগলী হয়ে গেছো?
স্নেহা: হা… হা… হা…
হঠাৎ হাসান বেড থেকে সোজা হয়ে বসলো। তারপর স্নেহা কে শুধু বললো, “একটা হাতুড়ি হবে?” স্নেহা, “হ্যাঁ, কতবড় লাগবে?” হাসান, “এক আঘাতে একজন মানুষের মস্তিষ্ক চূর্ণ করতে যতবড় লাগতে পারে ততবড়।” স্নেহা শান্তভাবে, “কিন্তু তোমার পুরো শরীরে লাগানো ভেন্টিলেটর, ইনট্রাক্র্যানিয়াল প্রেশার (ICP) মনিটর, ইনফিউশন পাম্প, কার্ডিয়াক মনিটর, ফিডিং টিউব, ক্যাথেটার সব হঠালে বাঁচবে তো?” হাসান প্রতুত্তরে শুধু বললো, “রেয়ার মিররে ঐ ট্রাকের নম্বর কত ছিলো?” স্নেহা, মিরর ভিউ থেকে যতদূর মনে করতে পারছি “র-২৩৪৫৭”। হাসান শুধু বললো, “শেষে ৭ নয়, ওটা ৯ হবে।”
খানিকবাদে ‘ইবনে সিনা ক্লিনিক ও হাসপাতাল’ এর রাস্তায় হাসান রুগীর পোশাক পরে হাতে একটি হাতুড়ি নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এক কারে উঠে শাঁ…শাঁ… করে রাজবাড়ীর দিকে চললো…
দত্ত পরিবার উপন্যাসের ১২তম পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ১৩)