Disclaimer: This novel is entirely fictional. It has no resemblance to reality. If by chance any character or any particular event of this novel matches with anyone’s life, then this novel will not be responsible for that in any way. Moreover, this novel is not written to hurt anyone’s religious and political sentiments.
গল্প শেষে দুজনে গ্রামের চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখা শুরু করলাম। ঠিক যেন বাচ্চাদের মত করে। একসময় চিরচেনা দীঘির পাড়ে এসে দুজনে দাঁড়ালাম। ছোট্ট এক নৌকায় করে এক ছোকরা মাছেদের খাবার দিচ্ছে। আর আমরা সবুজে বিলীন হয়ে যাওয়া দুই আত্মা নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছি, লুকোচুরি চলছে চোখের ইশারায়।
সেদিনের সেই ফোনকল হঠাৎ ড্রপ করার পর থেকে স্নেহার প্রতি এক ধরণের সন্দেহ আমার মনে জেঁকে বসে। তবে কি অমিতের সাথে স্নেহার কোনো ধরণের সম্পর্ক থাকতে পারে! যদি তাই হয় তাহলে আমার বন্ধু অমিত হলো স্নেহার সেই মৃত ভালোবাসার মানুষ ‘সৌরভ’।
অমিতের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো সেদিনের ঐ ঘটনার পর থেকে। কিন্তু অমিত তো আমার বন্ধু; খুব কাছের বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বন্ধু যাকে নিঃসন্দেহে আমি বিশ্বাস রেখে চলতে পারতাম। কিন্তু যখন ‘প্রিয়তমা’ শব্দের ভাগাভাগির প্রশ্ন আসে তখন ‘বন্ধুত্ব’ কেমন জানি ফিকে হয়ে যায়। এই ‘প্রেমই পরম মর্ম (Love is The Ultimate Essence)’ কাউকে তোয়াক্কা করে না; কোনো বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলে না।
মুঠোফোনে হঠাৎই ক্ষুদে বার্তা, “কোথায়?” (অমিত)। আমিও ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, “দীঘির পাড়, স্নেহার সাথে…।” আমি হয়তো অমিত কে নিয়ে বেশি ভাবছি আর এজন্যই হয়তো এমন ভুল বুঝছি। সমস্ত চিন্তার সূতো বিশেষ কোনো এক জায়গায় মিলিত হতে পারছে না। স্নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আমার চিন্তাগুলো পড়বার চেষ্টা করছে। খুব কৌতুহল নিয়ে চেষ্টা করছে আমার মনের গহীনে প্রবেশ করবার। কিন্তু ও কে আমি সে সুযোগ দিলাম না।
– স্নেহা, তুমি ক্লিনিকে কবে পা রাখছো?
– হুট করে এমন প্রশ্ন… যাকগে, তুমি যেদিন চাইবে, হাসান
– না মানে ঘরে একজন বেকার ইতোমধ্যেই মজুদ আছে। আরো একজনের শুধু শুধু বেকার থাকা জরুরী নয়। আমি চাই তুমি দ্রুত কাজটা শুরু করো।
– তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
– কেন? কীসের ভয়?
– হুমম, আমাকে হারানোর…
– এমন কেন মনে হলো?
– ছাড়ো!
স্নেহা এই ‘ছাড়ো!’ বলেই নিজের মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। দুটো শালিক পাখি একসাথে আকাশে উড়ছে। ও ওদিকে চোখ ফেরালো। দীর্ঘ মাঠ। কৃষকেরা মাত্র ধানের চারা গাছ রোপন করেছে। আহ্, কি সবুজ!
অবশ্য স্নেহার মত রহস্যময় মেয়ে আমার চোখে এই প্রথম। জীবনে কম মেয়ের সাথে পরিচিত হইনি কিন্তু শুধুমাত্র চোখের চাহনি দেখে কারো মন টের পাওয়া সহজ হলেও আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। আমি একজন ‘Pathetic Liar’। চোখে চোখ রেখে মিথ্যে কথা বলতে পারি।
বিকেল গড়িয়ে এখন প্রায় সন্ধ্যা। কিছুদূরে অমিত কে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দিকে আসছে বেশ আস্তে ধীরে। গায়ে কালো পাঞ্জাবি আর ঢিলেঢালা জিন্স। পায়ে এক চিলতে স্যান্ডেল। বেশ গুছানো লাগছে অমিত কে। আর আমার ও কে দেখেই যেন আজ বিরুক্ত লাগছে। এছাড়া স্নেহার প্রতি আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আছে। ওদের মধ্যে যে কোনো পরিবর্তন! ব্যস, এরপর স্নেহা তার অবস্থান বুঝে পাবে আমার হৃদয়ে। ছুঁড়ে না ফেলতে হয়! – এই ভয় কাজ করছে।
অমিত কে দেখেই স্নেহা আমার হাত ধরলো। তারপর সরাসরি আমার ঠোঁটে আলতো চুম্বন। স্নেহার এই আচানক স্টেপ আমার চিন্তাকে বেশ ঝিমিয়ে দিলো। কিন্তু প্রিয়তমা, উঞ্চতার রাজ্যে তুমি যদি ঐশ্বরিয়া রায় হয়ে থাকো তবে আমি ইমরান হাশমী।
অতঃপর কাছে এসে অমিত একটু বিব্রত হয়ে বললো,
– বন্ধু, আমি বোধহয় ভুল সময়ে এসে পড়েছি। অন্য কোনো সময় দেখা করি?
– না, ঠিকাছে। আমি তোকেই প্রত্যাশা করছিলাম… পরিচয় হ, স্নেহা, আমার বান্ধবী।
স্নেহা একটু অবাক হয়ে, “বান্ধবী! না, অমিত, আমরা সম্পর্কে আছি। হাসান বোধহয় বলতে লজ্জা পাচ্ছে।”
আমি: ইংরেজিতে কি যেন বলে? গার্লফ্রেন্ড! মানে ‘মেয়েবন্ধু’। সুতরাং ‘বান্ধবী -ই’ তো হচ্ছো। অবশ্য, রাবা খানের লেখা বই ‘বান্ধobi’ নয় কিন্তু।
অমিত মৃদু মৃদু হাসছে…
অমিত: হাসান, শোনলাম তুই নির্বাচনে দাড়াচ্ছিস?
আমি (একটু অবাক হয়ে): স্বাভাবিক, বামনেতা যদি অতি বামদের সাথে একটু সম্পর্কই না রাখে তবে ব্যাপারটা কেমন জানি পানসে লাগে…
অমিত: নাহ্, আমি ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস।
স্নেহা: হাসান, তুমি কি আমার মায়ের রাজনৈতিক দলের সমর্থক? আর নির্বাচন সামনে, তুমি রাজী হয়ে গেছ?
অমিত: না, ও রাজী হয় নি… মিসেস দত্ত রাজী করিয়েছেন…
আমি: তো! কি হয়েছে? রাজনীতিতে আজকাল পাপ ঢুকলো কীভাবে? তুই রাজনীতি করতিস না? এখন কি বলার চেষ্টা করছিস?
অমিত: দ্যাখ পুরনো সেই পাপ আজও ছাড়ছে না আমাদের… আমাদের এ-থেকে দূরে থাকা উচিত।
স্নেহা: হ্যাঁ, হাসান… তাছাড়া তুমি তো রাজনীতি-বিমুখ একজন মানুষ।
অমিত: স্নেহা, সেটা যদি সময় মত তুমি ও কে বুঝিয়ে বলতে পারো তাহলে তোমাদেরই সুবিধে… বাকি ঝামেলায় পড়লে আমি নেই।
স্নেহা: অমিত, তুমি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো।
ওদের কথাগুলো শুনছিলাম আর মনে মনে হাসছিলাম। শুধু এই কথপোকথনে একটি সুযোগের অপেক্ষা মাত্র। তারপর সরাসরি আসল প্রশ্নটা জিগ্যেস করবো।
আমি: অমিত, আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব দ্রুতই আমি স্নেহা কে বিয়ে করতে চাই।
অমিত (একটু ম্লান হয়ে): হ্যাঁ… নিশ্চয়…
স্নেহা: এই সিদ্ধান্তের কথা আমায় তো জানাওনি হাসান?
আমি: ঠিকাছে, আজ জানালাম… বিয়ে করলে সব ল্যাটা চুকে যাবে।
অমিত: আমার মনে হয় তুই একটু তাড়াহুড়ো করছিস।
স্নেহা: আমারও সেরকম মনে হয়।
আমি: আচ্ছা, স্নেহা, তুমি অমিত কে কি আগে থেকেই চিনতে?
স্নেহা: কার মধ্যে কি? হঠাৎ এ কেমন প্রশ্ন?
আমি: আমি বলেছি, তুমি কি অমিত কে আগে থেকেই জানতে? বা চিনতে?
স্নেহা: না চেনার কি আছে! অমিত সেই সময় রাজবাড়ির অনেক বড় একজন ছাত্রনেতা ছিলো। সবাই ও কে চেনে।
আমি: অমিত, তুই? মাথা নিচু করে আছিস যে?
অমিত: বন্ধু, ওটা অতীত। কেন আজ এসব নিয়ে কথা!
আমি: তাহলে তুই ‘সৌরভ!’ তাই তো?
স্নেহা: হাসান, অনেক হয়েছে… প্রত্যেক মানুষের সহ্যর এক সীমা থাকে।
আমি: জানি… আমি শুধু পরিষ্কার হতে চাই যে, অমিতের নাম শোনা মাত্র-ই ফোন সেদিন কেটেছিলে কেন? স্নেহা?
স্নেহা: তোমার আচরণে বিরুক্ত হয়ে। গ্রামে ফেরা মাত্রই একজন মানুষ কীভাবে এত বেয়ারা হয়ে যেতে পারে। রাগ হচ্ছিলো।
আমি: প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই হচ্ছিলো… কিন্তু কেন?
ওরা (স্নেহা ও অমিত) জানে ‘হাসান’ সম্পর্কে। আর ওদের রাস্তাও নেই এই উত্তর না দিয়ে উঠে যাবার। কারণ এতে আমার ওদের প্রতি সন্দেহের পারদ আরো তীব্র হবে। সম্পর্ক এখানেই শেষও হয়ে যেতে পারে। অবশ্য সেটাই বরং ভালো। আজীবন এই অনলে ভোগার চেয়ে একেবারে আজ শেষ হয়ে যাওয়া। এতক্ষণের খোঁচাখুঁচি তে এটুকু স্পষ্ট যে, অমিতের সাথে স্নেহার কিছু তো ছিলো। খুব সম্ভবত অমিত-ই ঐ ‘সৌরভ’।
এরপর হঠাৎ স্নেহা উঠে দাঁড়ালো। সে রাগে হিস-হিস করছে…
স্নেহা: অমিত, লুক অ্যাট মি! তুমি যেদিন রাজবাড়ি থেকে গ্রামে ফিরে চলে এসেছিলে সেদিনই আমি তোমাকে ভুলে গেছি। তোমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব আমি সাগ্রহে গ্রহণ করেছিলাম। দারিদ্রতায় এক জীবন কাটানো লাগলেও তোমার হাত ধরতে পিছপা হইনি। বরং নিজে কিছু করতে চেয়েছি। আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু ভীরু কাপুরুষের মত ওমন প্রস্থান আমি আজও মেনে নিতে পারিনি আর কোনোদিন পারবোও না। আর হাসান, আমি দুঃখিত! পুরো বিষয়টি তোমার কাছে গোপন রাখার জন্য। আমায় মাফ করে দিও…
এরপর চোখে জল নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো স্নেহা। আর আমার চোখে সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর ঝলমল করছিলো।
– তা, অমিত! বিশ্বাস কর বন্ধু আমরা কিন্তু এখনোও শুইনি!
– তুই এত অশ্লীল!
– গুরু, সব তোমার কাছে থেকেই শেখা। কি যেন বলছিলি! ‘৪৭! দেশভাগ! হা হা হা…
– তুই একটা পাগল, হাসান। নিজের দিকে তাকা। একটা মেয়ে নিজের জীবন নতুন করে শুরু করতে চাইছে তোর সাথে। সব ভুলে… আর তোর কাছে তার কোনো কদরই নেই!
– বন্ধু, প্রিয়তমার কি ভাগ হয়? মানে তুই অর্ধেক আর আমি অর্ধেক?
– জানিনা
– ওকে, তোকে জানানোর জন্য বলছি, প্রিয়তমার ভাগ হয় না রে… তুই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিম্পেথাইজ করলি, এখন আরো এক ধাও এগিয়ে কি ইম্পেথাইজ করছিস! এখনো স্নেহা তোর… আর মাফ কর ভাই, আমি ইতোমধ্যেই ভাঙাচোরা আর ভাঙতে পারছি না।
– তুই বাড়িতে যা, আগে স্নেহা কে মানা। তোরা খুব ভালো থাকবি বিশ্বাস কর! আমি ওর জীবনে এক অতীত মাত্র। যার বিন্দুমাত্র অংশ আর বাকি নেই কারো মনে। নিজ নিজ জীবনে আমরা দুজনই সামনে এগিয়ে গেছি।
– ঠিকাছে… তবে আমার এক শর্ত আছে।
– যে কোনো শর্ত। আমি রাজি আছি।
– তুই আমার সাথে নির্বাচনে দাঁড়াবি… আমার রাজবাড়ি শহরের পুরো ২০টি সিট চাই। আর এই বিশাল কাজ আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার সেই জনপ্রিয়তাও নেই। রাজী?
– আবার সেই রাজনীতি!
– ‘হ্যাঁ?’ নাকি ‘না?’
– ওকে, আমি রাজি। কিন্তু স্নেহার সাথে কোনো অন্যায় আমি দেখতে চাই না।
আমি জানতাম কোথাও না কোথাও পূর্বে থেকেই এক নিখুঁত জাল ছড়িয়ে ছিলো আমাকে জুড়ে। তার কিছুটা আজ খোলাসা করা গেল। এবার আমায় রাজবাড়ীতে রাজ করতে কেউ ঠেকাতে পারবে না। হ্যান্ডশেক করে অমিত কে বিদায় জানালাম।
মাঝপথেই, মিসেস দত্তের ফোন…
মিসেস দত্ত: হাসান, কি বুঝলে? অমিত কি ফিরবে?
হাসান: সব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে… চিন্তা করবেন না।
মিসেস দত্ত: পরশু দিন তোমার একটি সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। নতুন মুখ ঘোষণা করতে যাচ্ছি। চলে এসো…
হাসান: নিশ্চয়, মিসেস দত্ত। অনুগ্রহ করে শুধু সময়টা ম্যাসেজ করে দেবেন।
মিসেস দত্ত: নো প্রবলেম!
‘দত্ত পরিবার’ উপন্যাসের ১০ম পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব – ১০)