মনোবিজ্ঞান

তথ্যের অবাধ প্রবাহ (Overloaded Information) এবং চিন্তায় প্রতিবন্ধকতা

- Advertisement -
Disclaimer: The views expressed in this article are solely those of the author and do not necessarily reflect the opinions or policies of any other person or entity. The information provided is for general informational purposes only and is not intended as professional advice. While the article discusses the impact of social media and overloaded Information on individuals and society, it should not be taken as a comprehensive analysis of the subject matter. Readers are encouraged to critically evaluate the content and seek additional sources of information. The author and publisher are not responsible for any actions taken by individuals based on the information provided in this article. Any statistical data, quotes, or other representations about a phenomenon should be verified with the original source.

আমাদের মনে হতে পারে যে, সোশ্যাল মিডিয়া কাজের ফাঁকে ব্রেক নেবার জন্য একটি ভালো মাধ্যম। ইউটিউবে বাছাইকৃত কন্টেন্ট দেখার মধ্যে রয়েছে তথ্যবহুল মানুষ হবার বিরাট সম্ভাবনা। অন্তর্জাল এখন সুবিশাল; তথ্যের ভান্ডার।

আমরা আমাদের মতামত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারছি! নাকি সেটা প্রকাশ করার জন্য মস্তিষ্কের যেটুকু পরিশ্রম এবং সময় দরকার সেটুকুও দিচ্ছি না! আমি বাজি ধরে বলতে পারি আমাদের মধ্যে ৯০% শতাংশের অধিক মানুষ তাদের চিন্তায় যে মতামত তৈরি হতে পারতো সেটা প্রকাশ করা তো দূর, সেজন্য যে সময় প্রয়োজন সেটাও হাতে পাচ্ছেন না।

খেয়াল করে দেখলাম, পার্থিব জগতে এমন কিছু বিষয় আর বাকি নাই যা অনলাইন দুনিয়ায় উপস্থিত নাই। বরঞ্চ আমাদের কল্পনার বাইরে এমন এমন সব বিষয়ের উপস্থিতি বিদ্যমান যা আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজন নিয়ে পর্যন্ত প্রশ্ন তুলছে। একাধিক তথ্য মতে, বর্তমানে অন্তর্জালে যে পরিমাণ তথ্য রয়েছে তা প্রায় ৫৭,১৪৩টি ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস (যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় লাইব্রেরী)’ এর সমান। দিনদিন এই সংখ্যা খুব দ্রুত বেড়েই চলেছে।

আমরা কতটা জ্ঞানী হতে পারছি তারচেয়ে আমরা কতটা তথ্যবহুল সেটা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমদের দেশে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে দেখুন। সেখানে আর যাই হোক, আমাদের কোনোভাবেই চিন্তাশীল মানুষ হবার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে না। যদিও আমরা আমাদের সন্তানকে ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে তৈয়ার করতে চাই। কিন্তু আপনার সন্তান যদি চিন্তা করতেই না শিখে তাহলে ‘মানুষ’ হবে কি করে? প্রশ্নটা পাশে রইলো।

বাংলাদেশীরা ফেসবুক বেশি ব্যবহার করেন অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায়। কিন্তু এই ফেসবুকে সমসাময়িক বিষয়ে একাধিক মতামত ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। ফেসবুকে প্রবেশ করে হয়তো ভাবছেন যে, এ বিষয়ে আমি এই মতামত দিতে চাই বা লিখতে চাই। কিন্তু যদি ফেসবুকে একটু নিয়মিত হোন তাহলে দেখবেন, আপনি যে বিষয়ে মতামত দেবেন বলে ভাবছেন সে বিষয়ে হাজারো মতামত সহ ব্যাখ্যা পর্যন্ত দেওয়া হয়ে গেছে। এমনকি এমন অন্তত আরো দশটি নতুন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যেসব বিষয়ে আপনি প্রায় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।

এখন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলোতে ‘ডিজিটাল ওয়েল বিয়িং (Digital Wellbeing)’ নামক একটি নতুন অপশন যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে স্ক্রিন টাইম কত? মানে কত সময় আপনি আপনার স্মার্টফোন দেখছেন তার হিসাব-নিকাশ রয়েছে। আপনি যখন প্রয়োজনের বেশি সময় স্মার্টফোনকে দিচ্ছেন তখন এটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনাকে এলার্ট করছে। সুইচ অফ বা স্ক্রলিং করতে নিষেধ করছে।

- Advertisement -

কিন্তু আমরা কি অদৌ সেটা খেয়াল রাখি! এই অ্যাপ্লিকেশনের জন্য গুগল বাহবা পেতেই পারে কিন্তু সত্যিই কি আপনি এই আসক্তি থেকে বের হতে পেরেছেন? কি লাভ হয়েছে? কতটুকু স্ক্রিন টাইম কমাতে পেরেছেন? পারেন নি, তাই না! সুতরাং এই অ্যাপ্লিকেশনের সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস সমূহ বুঝুন এবং ম্যানুয়ালি আপনি স্মার্টফোন থেকে প্রতিদিন কিছু সময় করে দুরত্ব তৈরি করতে পারেন।

আরো একটি বিষয় আমি বিভিন্ন ব্লগে/প্রবন্ধে বলার চেষ্টা করেছি, সেটা হলো ‘সেল্ফ জাস্টিফিকেশান’ বন্ধ করুন। আপনি যা চিন্তা করছেন হুবহু সেরকম চিন্তাকে ন্যায় ঘোষণা করছে এমন একাধিক পোস্ট, ভিডিও এবং রিলস্ পর্যন্ত পেয়ে যাবেন। ফেসবুকের এ রাজ্যে যেন সবাই বিচারক, সবাই সুশীল, সবাই বুদ্ধিজীবী (আমি সহ), সবাই সব জানেন! যিনি কোনো এক বিষয় কেন ঘটেছে? বা কি হয়েছে? তার পুরোটা না জেনে বা উক্ত বিষয়ে জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও নিজের মতামত প্রকাশ করছেন। আর তার বা তাদের এই গ্রহণযোগ্যতা লাইক/শেয়ার এর মাধ্যমে আরো বেশি হয়ে যাচ্ছে; যা অত্যন্ত ভয়াবহ।

নিউরোলজিস্ট ড. অলোক বলছেন, “আপনি কত তথ্য কনজিউম করছেন তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেসব তথ্য প্রসেস হবার জন্য আপনি আপনার মস্তিষ্ককে কেমন সময় দিচ্ছেন? (বাংলায় অনূদিত)”

আমরা যারা খুবই নিয়মিত ফেসবুক বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং আমরা যত বেশি তথ্য গ্রহণ করছি তা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। এত এত তথ্যের মধ্যে প্রায় ৮০% শতাংশ তথ্য আপনার ব্যক্তি জীবনে কোনো মূল্য যুক্ত করে না, করবে না। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। উল্টো আপনার মস্তিষ্কে এক ধরণের ক্লাউড জন্ম দিচ্ছে। ফলে একসময় খুব বেগ পেতে হবে এটা ভেবে যে, আমি কে? আমি কি করতে চাই? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি?

কারণ, এখানে সবাই লাইফস্টাইল নিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে, পয়সা উপার্জন নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছেন, বলেই যাচ্ছেন… একসময় যে ব্যক্তির কথায় মুগ্ধ হয়ে যেতেন পরবর্তীতে তার কথা আর তেমন ইন্টারেস্টিং (মজাদার) মনে নাও হতে পারে। ফলে ফোকাশ টা আস্তেধীরে সরে যাচ্ছে। কিছু করবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন। এবং এতে করে আপনি ঠিক কিছুই করে উঠতে পারছেন না। আপনার ‘Productivity’ শুধু নিচের দিকে যাচ্ছে। আপনি নিজের উপর, নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর বারবার ‘Give Up’ করে দেওয়ায় একসময় ভয়ানক হতাশার দিকে এগিয়ে গেছেন। কারণ, দিনশেষে ঠিক কি করবেন তার পূর্ণ ক্লারিটি (স্বচ্ছতা) আপনার কাছে নাই।

- Advertisement -

এমনকি একটি চিন্তা খাতায় হোক, মাথায় হোক বা ডায়েরীতে হোক, তা পিন করে রাখার পূর্বেই আরো হাজার খানেক চিন্তা অন্তর্জাল আপনাকে উপহার দিচ্ছে। সারারাত ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্ট্রাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ঘেঁটে এবং একটি সিনেমা/সিরিজ দেখে আপনি তা মাথায় গেঁথে নিতে পারছেন না কারণ পরের দিনই আরেক দফা হাজারো চিন্তাকে মোকাবিলা করার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক বা আবশ্যিক হয়ে যাচ্ছে।

এই ‘Overloaded Information’ নিয়ে আমরা এখন মাতালের মতন টলমল করছি। আমরা নিশ্চয় কিছু বিষয়ে মতামত, অভিযোগ, আন্দোলন জানাতে/করতে চাই কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশের পূর্বেই আমাদের কাছে আরো ১০টি বিষয় অবতারণা হয়ে গেছে। ফলে মানসিকভাবে আমরা অনুভূতিহীন এবং নীতিবিবর্জিত হয়ে পড়ছি। ব্যক্তিত্ব নামক বস্তুটি আর তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

যত ফিল্টার লাগান, যত আনফলো বাটনে প্রেস করুন, যত আন-সাবস্কাইব করুন এর থেকে আমাদের বোধহয় আর মুক্তি নাই। যদি আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য কনজিউম করেন এবং কাজে লাগান তাহলে মুক্তি আসলে আসতেও পারে। কিন্তু যেভাবে বিষয়গুলো চলছে তাতে আমি/আপনি তথ্যের ব্যাপকতার সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো ক্ষুদ্র নৌকা ছাড়া আর কিছুই নই; যে জানেনা, “কই আছে?”, “কই যাচ্ছে?”, “কেন যাচ্ছে?”

- Advertisement -

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান

পরিচয়: আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। আমি একজন বহুমুখী ব্যক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার পেশাগত জীবন বিস্তৃত। লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, অডিও ও ভিডিও সম্পাদক, ছবি সম্পাদক, ইউটিউবার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে কাজ করি। মাইক্রোসফটের একজন ডেভেলপার এবং অ্যাপ ডেভেলপারও আমি। More »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button