বিশেষ প্রতিবেদন

নারী শরীরের প্রতিবাদ: দ্রৌপদী মেঝেন থেকে মণিপুরের মায়েরা

বাংলাদেশ, ভারত ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নারীর প্রতিবাদের কাহিনী

বিজ্ঞাপন

দ্রৌপদী মেঝেনের শরীর কে অস্ত্র করে তোলার ভাবনা কি মনে পড়ে! তাঁর সেই অমোঘ উচ্চারণ— ‘হেথা কেউ পুরুষ নাই যে লাজ করবো। কাপড় মোরে পরাতে দিব না’—বা মহাশ্বেতা দেবী শেষে লেখেন: “দ্রৌপদী দুই মর্দিত স্তনে সেনা নায়ক কে ঠেলতে থাকে এবং এই প্রথম সেনা নায়ক নিরস্ত্র টার্গেটের সামনে দাঁড়াতে ভয় পান, ভীষণ ভয়।”

মণিপুরের মায়েরা

দ্রৌপদী মেঝেন না হয় কল্পকাহিনি কিন্তু মণিপুরের মায়েরা? থাংজাম মনোরমা গুলি লাগা লাশটি পাওয়ার পর ইম্ফলের দুর্গের সামনে অসম রাইফেলের সদর দপ্তরে বারোজন মায়ের প্রতিবাদ! মনোরমাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো অসম রাইফেলের জওয়ানরা।

প্রতিবাদের প্রকাশ

সবচেয়ে ছোট প্রতিবাদী মা (বয়স ৪৫ বছর) আর সবচেয়ে বয়স্কা ইমা (৭৩ বছরের)—একটানে খুলে ফেলেছেন গায়ের কাপড়। গোটা গোটা অক্ষরে মেলে ধরেছেন সেই দাবী—“এসো ভারতীয় সেনা আমাদের ধর্ষণ করো।” তাঁরাও তো দ্রৌপদীর মতো বলতে পারতেন, সেখানে কে পুরুষ আছে যাকে তাঁরা লজ্জা পাবেন!

প্রতিবাদের পরিণতি

মনোরমাকে জঙ্গি বলে ধরার পর এই নগ্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় আবেগের অভিঘাতে কয়েকজন মধ্যবয়সী মা নাকি রাস্তাতেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন। বিরোধ বা সংঘর্ষের সময়ে নারীদেহ হয়ে ওঠে ক্ষমতা প্রকাশের একটি অঙ্গ।

বিশ্বব্যাপী উদাহরণ

আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়ায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ছাপ মেয়েদের শরীরে। অপহরণ, ধর্ষণ, যৌনদাসী করে রাখা—সাম্প্রতিক কালে যে কোন সংঘর্ষে ‘মেয়েরা’ বলি হয়েছেন। রাজনৈতিক, ধর্মীয়, জাতপাত, ভাষাভিত্তিক যেকোন সংঘর্ষে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে শরীর

তাই তো মেয়েরা যদি শরীর কেই প্রতিবাদের অস্ত্র করেন নিষ্ক্রিয় শিকার না হয়ে তাহলে তাঁদের দোষ কি! মেয়ে মানেই কি শরীরের সমার্থক কোন প্রাণী! যাকে যে ভাবে খুশী ভোগ দখল করা যায়! এর প্রতিবাদি অস্ত্র হিসেবে তো নারীরা সচেতন প্রয়াসী হবেন তো!

বাংলাদেশের উদাহরণ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানী সেনা অসংখ্য নারীদের গণ ধর্ষণ করেছিলো তাদের স্বাধীন বাংলা দেশ ‘বীরাঙ্গনা’ অভিধা দেয়। কিন্তু তার পর! লোকের নজর তো বদলায় নি। মন তো বদলায় নি। এই সব মেয়েদের অধিকাংশের অজ্ঞাতে অবজ্ঞাতে হারিয়ে যাওয়া বা আত্মহত্যা ছাড়া উপায় কি!

আন্তর্জাতিক উদাহরণ

আমেরিকান সেনাদের জন্য শরীর দিতে বাধ্য হয়ে জাপানি কমফর্ট উইমেনদের চার দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিলো তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বীকৃতি পেতে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারে এক নারী হঠাৎ সবাইকে স্তম্ভিত করে রেড কার্পেটে দাঁড়িয়ে পড়লেন নগ্ন হয়ে, সব পোশাক খুলে।

ইউক্রেনের উদাহরণ

শরীরে ইউক্রেনের পতাকায় উর্ধাঙ্গ ঢাকা তাতে লেখা—‘স্টপ রেপিং আস’, আর নিম্নাঙ্গ লালে লাল, লেখা ‘ডোন্ট রেপ আস’।

এ বারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ সেনা অধ্যুসিত জায়গাগুলিতে শয়ে শয়ে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, শিশুকন্যারও ছাড় পায়নি। তিনি একসময়ের অভিনেতা, তাঁর দেশের হয়ে সাহায্য চেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সমাপ্তি

নারী শরীর সমাজে এখনো সহজ লভ্য নয়, সেই সমাজে নারী শরীরে প্রতিবাদের অভিঘাত হয়তো ছিন্ন হতে বাধ্য, কিন্তু তা বলে নারী শরীরই যখন আক্রমণের লক্ষ, তখন শরীর কেই হাতিয়ার করে তুলতে হবে।

দ্রৌপদী মেঝেনের মতো প্রশ্ন তুলতে হবে, “কেন কাপড় পরবো, এখানে কে আছে পুরুষ লজ্জা পাওয়ার মতো?”

তথ্যসূত্র

শাশ্বতী ঘোষ

ছবি: Image by freepik

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading