শিক্ষা

শিক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট

শিক্ষার গুরুত্ব ও বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

একজন নবাগত মানব শিশু আর অন্যকোনো প্রাণীর সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চার সাথে কি খুব বড় রকমের তফাৎ থাকে? সামাজিক পরিবেশ ও মিথস্ক্রিয়ায় বাবা, মা, স্কুল ও অন্যান্য বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা, অধ্যয়ন, অনুশীলন ও গবেষণায় মানুষ এখন এতো উন্নত যে, লক্ষ কোটি মাইল দূরের গ্রহে বসতি স্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মরণঘাতি সব ঔষুধের প্রতিষেধক তৈরি করে মানুষের গড় আয়ুকে দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রা হয়েছে ভীষণ স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সহজ। যেকোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি আবিষ্কার হচ্ছে এখন বর্তমান সময়ে। কল্পনা করুন, এমন এক বসতি যেখানে, বিদ্যুৎ নেই। এমন কোনো অনিরাপদ বাসস্থান, যেখানে মানুষ বিভিন্ন ধরণের কীট, প্রাণী ও বৈরি আবহাওয়ার দুশ্চিন্তায় নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারে না। আগুনের কোনো ব্যবহার নেই।

সুষম খাদ্য গ্রহণের তেমন কোনো মজুদ নেই। যেখানে মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্ভিদ আর প্রাণীর কাঁচা ব্যাকটেরিয়া যুক্ত মাংসের উপর নির্ভরশীল। নিরাপদ পানির উৎস নেই। মানুষ বিভিন্ন জার্ম মিশ্রিত পানি মুখ চুবিয়ে পান করছে। স্বাস্থ্যসম্মত কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

কি বিভৎস লাগছে তাই না এটা ভাবতে? হ্যাঁ, এমন বিভৎস একটা পৃথিবীকে এতোটা বাসযোগ্য করে তুলেছে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের জ্ঞান, কৌশল, আর অকাতর পরিশ্রম। সভ্যতার বিকাশ আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। মানুষ যখন তার জ্ঞানকে তার অন্য সব সম্পদের মতো সঞ্চয় করতে শিখেছে।

মানুষ মরে পঁচে গলে আবার মৃত্তিকায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার উপলব্ধি, জ্ঞান ও কৌশল সঞ্চয় থেকে গেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের রেখে যাওয়া এসব অমূল্য জ্ঞান যখন পরবর্তী প্রজন্মকে আরো দক্ষ, যোগ্য করে তোলার জন্য শেখানোর প্রয়োজন পড়লো তখন থেকে শিক্ষা প্রতিটা মানুষের জন্য অত্যাবশকীয় হয়ে উঠলো।

এভাবেই বিশেষ জ্ঞান, কৌশল শেখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার যে জোর বিপ্লব দেখা গেলো জনসমাজে। সেখান থেকে শিক্ষা মানুষের জন্য মৌলিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত হয়। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হয়। এভাবে জীবনের প্রয়োজনে চর্চিত হওয়া জ্ঞানগুলো শিক্ষা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ নেয়। কিন্তু তারপরও এখন পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষা টার্মটি যেহেতু একটা সুবিশাল প্রেক্ষাপটকে নির্দেশ করে সেহেতু আমরা বুঝার সুবিধার্থে শিক্ষা বলতে এখানে সর্বজন স্বীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথাই ধরে নেবো।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট

আমাদের এই ব’দ্বীপে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। এতো ছোটো ল্যান্ড এরিয়ায় এতো বৃহৎ জনগোষ্ঠী অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এতো বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণের জন্য যে পরিমাণ রিসোর্স লাগবে সেই পরিমাণ সক্ষমতা আমাদের নেই।

তাই আমরা আমদানি নির্ভরতায় আমাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি। যেহেতু প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্য ও সেবা নিতে গেলে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে অর্থের প্রয়োজন পড়ে সেই হিসেবে অর্থোপার্জন আমাদের জন্য খুবই জরুরি একটা বিষয়।

আর অর্থ উপার্জন যখন মূখ্য তখন শিক্ষা ব্যাপারটাকে আমরা একটা টুল হিসেবে গ্রহণ করি যা আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবে। ছোটবেলায় একটা ছড়া বাচ্চাদের শোনানো হতো –

“লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।”

অর্থাৎ, পড়াশুনার সাথে যেনো আর্থিক উন্নতির একট বিশাল যোগসূত্র রয়েছে। কিন্তু, বাস্তবজীবনে যখন একজন শিক্ষার্থী বুজতে পারে আদতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে অর্থবিত্তের জৌলুশ ও সফলতার যে ইমেজ মাথায় ঢুকানো হয়েছে বাস্তবতা তার চেয়ে একবারে ভিন্ন। তখন আমাদের দেশ পাচ্ছে সার্টিফিকেটধারী হতাশাগ্রস্থ, নিরুৎসাহিত, মুষড়ে পড়া বিশালসংখ্যক যুব সমাজ।

কিংবা অতিরিক্ত আর্থিক টানা পোড়নে নিষ্পেষিত হয়ে আমাদের বাচ্চাদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক শিক্ষাটুকুও নিতে পারছে না? তারা, বালক বয়সেই কাজে লেগে পড়ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে বানিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো প্রতিটি স্তরে এই সেবা পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারাই এখন এতোটা একপেশে আর পুকুর কাটতে শুরু করেছে যে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের জন্য এর ব্যয় মেটানোই অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

আবার কোনো কোনো অভিভাবক শিক্ষাটাকে নেয় বিনিয়োগ হিসেবে যখন সেখান থেকে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন তুলতে পারেন না। তখন তিনি তার সেই ক্ষোভ উগড়ে দেয় তার সন্তানের উপর। তাহলে, আমরা পড়াশুনা কেন শিখি?

শিক্ষার উদ্দেশ্য কি?

এমন প্রশ্ন যদি আপনার মনেও এসে থাকে তবে, আসুন জেনে নেই শিক্ষা কি শিক্ষার উদ্দেশ্য কি।

শিক্ষা

আমাদের জীবন সহজ, সুন্দর, স্বাচ্ছন্দময় করতে এবং মানবিক ও নীতিবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে যে বিষয়গুলো আমাদের শেখানো হয় ও অনুশীলন করানো হয় তাই শিক্ষা।

শিক্ষার উদ্দেশ্য

একজন সুশিক্ষিত মানুষ অবশ্যই মানবিক ও নৈতিক হবে। শিক্ষিত মানুষ তার কর্ম, জ্ঞান, উদ্ভাবন দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করবে। শিক্ষা মানুষকে সৃষ্টিশীল ও সহমর্মি হতে শেখায়। শিক্ষা সামজিকতা রক্ষা ও মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বারবার পরিবর্তন করা হলেও এমন কোনো ফলপ্রসূ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়নি যার দ্বারা সামাজিক সমস্যাগুলোকে জয় করে জনসমস্যাকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করা যায়। একজন শিক্ষিত মানুষের সব কাজ ও পেশা কে শ্রদ্ধার চোখে ও সাদরে গ্রহণ করার কথা থাকলেও বাস্তবতার নিরীখে শিক্ষিত সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরা যেনো একধরণের সামাজিক বিভাজন তৈরি করে ফেলছেন।

১. একজন শিক্ষিত মানুষ কেন রিক্সা চালাতে পারবে না?

২. একজন শিক্ষিত মানুষ কেন কৃষিকাজ করবে না?

৩. একজন শিক্ষিত মানুষ কেন নাপিত, দর্জি বা মুচি হবে না সেটার ব্যাখ্যা হয়তো এটাই হতে পারে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা শুধু একটা অর্থবিত্ত আয়ের বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয় এবং শিক্ষাজীবন শেষে অনেকেই মনে করেন তার এই বিনিয়োগ ক্ষতিতে পরিণত হয়েছে।

ইউনুস আলী ইবনে আমজাদ

I am currently a Quality Assurance Analyst at HK - Men's Fashion, ensuring top-notch quality in every detail. Additionally, I am the Co-Founder and Producer at Nisorgo Mart, where innovation meets excellence. My academic journey took me through the halls of the Institute of Polytechnic and Textile Technology in Bogra. Beyond my professional endeavors, I am a passionate writer for Ovizatri, a news and magazine website focusing on lifestyle topics. Feel free to reach out to me via the email provided in my profile.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button