ছোটগল্প

বৃষ্টিতে ভেজা স্মৃতি: তন্বীর সাথে এক বিশেষ দিন

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো এবং তন্বীর সাথে মৃন্ময়ের সম্পর্কের গল্প

আপনার বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগে? আমার জন্য বিরুক্তিকর। আমি কখনোই বৃষ্টিতে ভিজিনি। কেন জানিনা অল্প একটু জল মাথায় পড়লেই জ্বর–সর্দি লেগে যায়। আর তারপর ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে তন্বীর জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু কেন অপেক্ষা করছি সেটাও জানিনা। গত এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে দীর্ঘ অপেক্ষা.

তন্বীর উপর আমার পুরো বিশ্বাস-ই শুধু নয়, একরকম ভরসাও আছে। ও যখন বলেছে তখন যে কোন ঝামেলা থাকলেও একবার অন্তত আসবেই, দেখা করবেই। কি অদ্ভুত তাই না! আমরা না বন্ধু, না প্রেমিক-প্রেমিকা কিন্তু একে অন্যের প্রতি এত ভরসার উৎস অজানা। একদিক থেকে দেখা যায়, তো, আমি মোটেই ওর মতন নই। অত চঞ্চল নই, অত উদ্যমী নই, অত পরিশ্রমী নই, অত ব্যস্তও নই।

দীর্ঘ এক ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিট পর তন্বী কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট ধরে ক্যাম্পাসের দিকে হেঁটে আসতে দেখছি। আজ বিশেষ কোন দিন নয় কিন্তু তন্বী শাড়ি পড়েছে। নীল শাড়ি। খুব সম্ভবত এই প্রথম আমি ও কে শাড়িতে দেখছি।

সত্যি বলতে এই মেয়েকে শাড়িতেও মানাতে পারে এটা হজম করতেও কষ্ট হচ্ছিলো। সারাক্ষণ টম বয় ফ্লেভারে ভালো মানায় আর আমার ঐ তন্বী কে অনেক ভালোলাগে। অবশ্য শুধুই ভালোলাগে। এর বাইরে কিছু হতে পারে কিনা তা গত তিন বছরে চিন্তাতেও আসে নাই। তন্বী তো তন্বীর মতন, আর আমি আমার মতন। এখানে মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একা সময় কাটানোর চেয়ে এমন কারো সাথে সময় কাটানো শ্রেয় মনে হয়।

তন্বী কাছে আসতেই উঠে দাঁড়ালাম আর বললাম, “তুমি দেরি করলে আমার বরং ভালোই হলো। তুমি আসতে আসতে আজ পুরো অ্যাসাইনমেন্ট লিখে ফেলেছি!” তন্বী একটু লজ্জা পেয়ে বললো, “মৃন্ময়, আমি খুবই সরি! আমার কাছে আমার এক বান্ধবী শাড়ি চেয়েছে, ওটা খুঁজতেই দেরি হয়ে গেল।”

আমি: শেষমেশ পেয়েছো?

তন্বী: হ্যাঁ… আমাকে আর পাঁচ মিনিট দিতে পারবে? মানে আমি এই শাড়িটা আমার বান্ধবীকে দিয়ে আসতাম।

আমি: নিশ্চয়, আমি এখানেই আছি।

তন্বী: কেন…? আমার সাথে চলো?

আমি: না, এসব মেয়েদের ব্যাপার।

এরপর এক রিক্সা নিয়ে নদীর পারে দুজনে বসলাম। সময় দুপুর দুটো বেজে অল্প কিছু মিনিট হবে। টান রোদে দুজনে বসে গল্প করছি। আমি অবশ্য কখনো জানার চেষ্টা করি নাই যে, তন্বী আমার সাথে প্রায় প্রায় বাইরে বের হয়, কোন আবদার করে না, কোন অধিকার খাটায় না, জেদও করে না। অথবা, তন্বী জানে যে, আমার পকেট সবসময় ফাঁকা থাকে তাই কোন প্রত্যাশাও রাখে না।

কিন্তু আজ তন্বীর সাথে কি দিয়ে আলাপ শুরু করা যায়? মানে যা নিয়েই শুরু করি না কেন ঘুরেফিরে সে তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের কাহিনী শোনাবে। গত তিন বছর ধরে ওর এই এক কাহিনী হজম করতে করতে বদহজম হয়ে যাবার মত অবস্থা। আমি আসলে আজ কি নিয়ে মুখ খুলবো জানিনা কিন্তু যেটাই বলি না কেন তা যেন ওর সহ্য হয়। অবশ্য এসব ভাবনার বেশি সময় লাগেনি ওর থেকে টপিক পেতে।

তন্বী: কাউকে পছন্দ করো না? মানে প্রেম?

আমি একটু ঘবড়ে গিয়ে: না… আবার তেমনও না… আসলে আমার টাইপের মত কেউ মিলছে না।

তন্বী: তোমার টাইপ! তোমার টাইপ কেমন?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

আমি: আমি তো তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের মতই অনেক বেশি পজেসিভ। অনেক বেশি ডোমিনেট করতে চাই… তাই হয়তো শেষমেশ কেউ থাকতে পারে না…

তন্বী: কই! তোমাকে দেখে তো এমন মনে হয় না।

আমি: আমার কথা বাদ দাও, তোমার কথা বলো…

তন্বী: আমার মনে হয় আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক-আপ করাটা উচিত হয়েছে। এখন কিছুটা ভালো আছি। কিন্তু প্রায় প্রায় বিরুক্ত করছে… অবশ্য ও তো আমার অভ্যেস হয়ে গেছে তাই ইগনোর করতে পারছি না…

আমি: আমারও তাই মনে হয়। এই ছেলেটা তোমার জন্য মোটেই ঠিক লাগে না। আমি তোমাকে অনেক আগেও এই সম্পর্ক ছাড়তে বলেছিলাম।

তন্বী: সবাই তাই বলেছিলো… ও আমার জন্য ঠিক মানুষ না।

আমি: একদম

একটু পর ভীষণ রোদে পোড়া ঘামের শরীরে হঠাৎ বৃষ্টি পড়লো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নাই। তন্বী কি যেন বলছে কিন্তু সেসবের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। শুধু অবাক হয়ে দেখছি এই মেয়েটা আমার সাথে রোদে পুড়েছে এখন বৃষ্টিতে ভিজছে। কারো সঙ্গ, কারো সাথে আলাপ এত জমে যেতে কখনো দেখি নাই। কিন্তু যখন সেটা নিজের সাথে হচ্ছে তখন বিস্ময়ে শুধু তন্বীর দিকে চেয়ে আছি।

তন্বী: হেই! তোমার সেদিনের ডিবেট ক্লাবের আমাকে হারিয়ে দেওয়াতে আমার ভালো লেগেছে। আমি: কারো হেরে যাওয়াতেও কি ভালো লাগে?

তন্বী: না, আমি এখন পর্যন্ত তুমি ছাড়া কারো কাছে হারি নাই। যাকগে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তোমার?

আমি: ঠিক জানিনা। আপাতত এই বিশ্ববিদ্যালয় নামক নরক থেকে মুক্তি পেতে চাই।

তন্বী: আসলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই দেখছি তুমি আমকে অনুসরণ করছো। মানে আমি যেখানে যাই তুমিও সেখানেই যাচ্ছো। সত্যি করে বলো তো, আমাকে তো আবার পছন্দ-টছন্দ করো না?

হৃদয়টা কয়েকটি বিট মিস করলো। আমি সত্যিই জানিনা আমি ওর সাথে থাকতে এত কমফোর্টেবল কেন বোধ করি? কিন্তু ওর সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে। এখানে পছন্দ বা অপছন্দ বলতে কিছু কি থাকতে পারে? আর যদি থাকেও তাহলে সে আমায় বেছে নেবে তো?

আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম: না… ওমন কিছুই নয়। ব্যস! তোমার সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে।

তন্বী: ও আচ্ছা… কিছু মনে করো না… আমার কিছু কিছু বন্ধু আমাকে প্রোপোজ করেছে। তুমিও ওরকম কিনা তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।

আমি: তন্বী, আমি তোমাকে কিস করতে চাই…

তন্বী: হোয়াট?

আমি: হ্যাঁ, ঠিক শুনেছো…

ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই টের পেলাম এই মেয়েটা আমাকে খুব সুন্দরভাবে আগলে রেখেছে। এতগুলো দিন একা হতে দেইনি। কিন্তু হয়তো এই ক্ষণ সাময়িক। তারপরের অংশ অজানা।

তন্বী ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে বললো, “মৃন্ময়, আমাদের আজ ফিরতে হবে। অন্য কোন একদিন আবার দেখা হবে।” উত্তরে আমি শুধু বললাম, “রাস্তার স্মৃতি রাস্তায় রেখে যেও, বাসা অবধি নিয়ে যেও না।” তন্বী আস্তে করে মাথা নাড়ালো।

সেদিন মাস্টার্সের ভাইভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট দিয়ে বাইরে যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম, “আমার আর তন্বীর গল্পটা একেবারে খারাপ গল্প নয়, চারপাশের মেয়েদের দেখে মনে হলো ওরা সবাই একেকজন তন্বী। আর ওরা যাদের হাত ধরে আছে সবাই একেকজন মৃন্ময়।”

তন্বী কে আমি আজও মিস করি, শুনেছি স্নাতক শেষে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে দেশের সুনামধন্য একটা এনজিও সংস্থার আন্ডারে ফেলোশিপ করছে। হয়তো ভালোই আছে… আর ‘হ্যাঁ’ সেদিনের বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও আমার কিন্তু জ্বর-সর্দি হয় নাই।

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button