ছোটগল্প

রানুশ্রীর সকাল: শাশুড়ি, শশুর এবং সংসারের গল্প

একটি সাধারণ সকালে রানুশ্রীর সংগ্রাম এবং পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন

তখনও বাজেনি সাতটা সুপ্রভা রানুশ্রীর ঘরে এসে দেখেই তাঁর গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। হাঁক পেড়ে বললেন, “কি ব্যাপার রানু, ওঠোনি এখনও?” রানু কাপড় সামলে উঠে বলে, “এই তো মা!” – বলে খাট থেকে নেমে আসে।

শাশুড়ীমা আবারও বলেন, “দেখো গিয়ে তোমার শশুর কখন থেকে চা চা করে হা পিত্যেশ করছেন।” রাণুশ্রী কিছু বলার আগেই অরুণাশিষ বাথরুম থেকে বার হয়ে বলে, “মা কি হয়েছে। কাল সিনেমা দেখে ফিরতে রাত হয়েছিল। দেখছো না রানু শাড়ীটা পর্যন্ত পাল্টাতে পারেনি।” মা কড়া চোখে ছেলের দিকে তাকালেন, বাব্বা! অরুণ খুব যে বউয়ের সাইড নিচ্ছিস! তিন মাসেই বউয়ের ভেড়া হয়ে গেলি বাবা!

“কি বল মা!” একটু একদিন দেরী তো হতেই পারে মা! তুমিও তো বাবা কে চা টা বানিয়ে দিতে পারতে মা!

“কি বললি! আমি চা বানিয়ে দেব! বউ এনে আমায় খেটে খেটে মরতে হবে! কেন বউ মা কি বাপের বাড়ী থেকে এইটুকু শিখে আসতে পারেনি, সকালে ঘুম থেকে ওঠা, চা বানিয়ে দেওয়া, তাহলে কেন ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ আনা আমার বাবা!”

মা আমি সে কথা বলিনি, তা ছাড়া লিলি কি করছে তার না ন’টায় কলেজ বেরোতে হবে! এখনো আটটা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে! সে-ও তো বাবা কে চা টা দিতে পারে! সংসারের কোন কাজটা করে সে?

মায়ের মুখ থমথম করে ওঠে। রানুশ্রী এতোক্ষণ চুপ করে ছিলো, এবার বলে, “আমি যাচ্ছি মা। কাপড়টা ছেড়েই। বাবাকে চা দিচ্ছি।”

সুপ্রভা বলতে বলতে যান, “এসো মা একটু পা চালিয়ে এসে চা দাও।” কেন যে এতো চেঁচামেচি কে জানে! সুপ্রভা বউ এনেছেন বলে তো বুড়ো হয়ে যান নি, ৪৫/৪৬ বছর বয়স তাঁর, বউয়ের দেরী দেখে কর্তাকে চা টুকু তিনি এতোক্ষণে দিতে পারেননি! না কি ছেলের বউই সংসারের উনকোটি চৌষট্টি কাজ করতে শপথবদ্ধ!

মেয়ের ঘরে এলেন সুপ্রভা। লিলি তো তখনও সুখনিদ্রায় মগ্ন। সুপ্রভা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দুনিয়ার যতোটা মায়া, মমতা, কোমলতা হতে পারে গলায় এনে বলেন, “মা রে উঠবিনা মা! ও লিলি কলেজ যাবি না রে! ন’টা বাজে, ওঠ মা!”

ন’টা বাজে শুনেই লিলি ধড়মড় করে উঠে বসে, “ন’টা আজ আবার আমার এসবির ক্লাস মিস হবে। অতো সুন্দর লেকচার মিস করবো। কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, “এলার্ম দিই কেন বাজে না?”

নির্মলেন্দু ঘরে এসে বলেন, “এলার্ম ঠিকই বেজেছিলো খুকু, তুই তখন রুপকথার স্বপ্নে মজেছিলি। তাই না! বলে হাসতে লাগলেন। গিন্নির কথানুয়ায়ী চা না পেয়ে তাঁর মুখে কোন ক্রোধের অভিব্যক্তির চিহ্ন নজরে এলো না তো!

এই সময়ে চা নিয়ে রানুশ্রী ঘরে এসে বলে, “বাবা চা।” চায়ে এক সিপ দিয়ে শশুর মুখে আঃ! উচ্চারণ করে বলেন, “আহ! বউমা যেন অমৃত! এতো ভালো চা বানাও তুমি মা!” তখন যদি নিজের বউয়ের মুখশ্রী একবার দেখতেন তিনি তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যেত তাঁর!

রাণুশ্রী বললো, “মা, লিলি তোমরা এসো, চা জলখাবার রেডি হয়ে গেছে। লিলি তোমার কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে!” সে চলে গেলো। সুপ্রভা স্বামীর দিকে চেয়ে বলেন, “কি এতো দিন তো আমার হাতের চা তোমার অমৃত সমান লাগতো কবে থেকে বউমার এতো তরফদারী!”

তাঁর ভালোমানুষ পতিদেব আশ্চর্য হয়ে বলেন, “আহ! কি বলো অরুনের মা! তোমার হাতের চায়ের তো তুলনা নেই। এখন বেচারী বউ তোমার ধমক খেয়ে চা টস এনে দিলো। এ ছাড়া পুরো সংসারটা তোও মাত্র তিনমাসে কেমন সামলে নিয়েছে দেখো গিন্নি। ওকে একটু এনকারেজ করতে হবে কিনা।”

সুপ্রভা গম্ভীর মুখে বলেন, “হুঁ সবই দেখছি। তিন মাসে শশুর, বর কে একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছে। এর একটা উপায় করতে হবে!”

মেয়ে, বাবা হাঁ করে বাড়ীর কর্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো।

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button