রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা
জানুন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে সবকিছু
আজ আমরা আলোচনা করবো আর্থাইটিসের আরো একটি পরিচিত ধরণ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে। এবং আর্থাইটিস এর উপযুক্ত চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা অবহিত হব।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কি?
এটাকে অটো ইমিউন বা প্রদাহ জনিত রোগ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন চিকিৎসকরা। এতে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে শরীরের কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অস্থি সন্ধির বাইরের আবরণে প্রদাহ হয়। এই কারণে এই রোগে আক্রান্ত হলে হাড়ের জয়েন্ট এবং এর আশেপাশে ব্যথা হয়।
এছাড়াও জড়তা তৈরি হয় ফুলে যেতে পারে এবং আক্রান্ত অঞ্চল লাল হয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি শরীরে জ্বর জ্বর অনুভূতি থাকতে পারে। টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ব্যথা অনেক বেড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্রনিক ব্যথা অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য তথা ব্যালেন্স বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এবং শরীরে জড়তা তৈরি হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ জেনে নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী নিচে এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ কি?
১. রোগটি দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক তাই কখনো কখনো লক্ষণ প্রকাশ পায় আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুদিন কোনো লক্ষণ প্রকাশই পায় না।
২. ঘুম থেকে ওঠালে হাড়ের জয়েন্ট সহ শরীরে কিছু অংশে ব্যথা ও জড়তা দেখা দিতে পারে।
৩. হাতের আঙ্গুল, কোনুই, কাঁধ, পায়ের গোড়ালি ও পাতায় বেশি সমস্যা হয়।
৪. সাধারণত শরীরের উভয় পাশ একসঙ্গে আক্রান্ত হয় অর্থাৎ যদি হাত আক্রান্ত হয় তবে দুই হাতের জয়েন্টই একসঙ্গে ব্যথা করে এবং ফুলে যায়। শরীর অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫. মাঝেমধ্যেই জ্বর জ্বর অনুভূতি হয়।
৬. শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে।
আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধের উপায়
১. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। যেমন, নিয়মিত হাঁটা এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটার রুটিন করে নিতে পারেন। এটা শুধু আর্থ্রাইটিসই নয় আপনাকে আরো অনেক লাইফ স্টাইল ডিজিজ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।
২. মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৩. প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
৪. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
৫. যেকোনো ছোটখাট ব্যথার চিকিৎসা করাতে হবে।
৬. ধূমপান এবং মধ্যপ্রাণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে কারণ নিকোটিন ও অ্যালকোহল হাড়ের স্বাস্থ্য ও কাঠামো দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেয়।
৭. নিয়মিত দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে টক দই। কেননা টক দই য়ে এমন কিছু উপাদান থাকে যেগুলো হাড়ের গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে টক দই রাখতে ভুল করবেন না।
৮. কারো যদি ল্যাকটোস জাতীয় তথা দুগ্ধ জাত খাবার হজম করতে সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ব্রকলি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
৯. মেনোপজের পর অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১০. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
১১. প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট শরীরে রোদ লাগাতে হবে। কেননা হাড়ের গঠনে ভিটামিন ডি এর অবদান অনস্বীকার্য। আর রবি একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রাকৃতিক উৎস যেখান থেকে ভিটামিন ডি বিনা খরচে খুব সহজেই আর্ন করা সম্ভব। তবে যদি কারো রোদে যাওয়ার মতো সিচুয়েশন না থাকে সেক্ষেত্রে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারবেন।
১২. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের ভিটামিন সি পাউডার একজন নিউট্রিশনিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারেন। অনেকেই হয়তো জানেন না ভিটামিন সি হাড়ের গঠনে মাস্টারমাইন্ড এর ভূমিকা পালন করে।
আর্থ্রাইটিস হলে এর চিকিৎসা কি?
১. কারো যদি আর্থ্রাইটিস এর সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
২. রোগীর ইতিহাস ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
৩. পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিপোর্ট চিকিৎসক দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার চিকিৎসা কিভাবে করা উচিত।
৪. অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে হবে নচেৎ এটার সমাধান সম্পূর্ণরূপে পাওয়া সম্ভব হবে না।
৫. সর্বোপরি একজন দক্ষ এবং উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন সঠিক সময় হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একসময় এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে অল্প ভোগান্তিতেই যেকোনো রোগের সমাধান করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসও এর বাইরে নয়। তাই আর্থাইটিস এর ক্ষেত্রেও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আর আরো একটি বিষয় আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে শরীরে কোথাও ব্যথা হলেই ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যথার ওষুধ কিনে এনে খাওয়া যাবেনা। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বীকৃতি প্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ব্যথার ওষুধ নিজে নিজে মাতব্বরি করে খাওয়া যাবেনা। কেননা আপনার জন্য কত মাত্রার ওষুধ প্রয়োজন সেটা আপনি নয় বা আপনার এলাকার পরিচিত ফার্মাসিস্ট নয় একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ই সঠিক ভাবে তা জানেন।
আর যদি অতিরিক্ত মাত্রার ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে সেবন করেন সেই ক্ষেত্রে আপনার কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল এবং কঠিন রোগের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই একজন সার্টিফাইড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
ছবি: Image by krakenimages.com on Freepik